৭. মনেটারী অর্থনীতিতে মনেটারিজম হচ্ছে সেই মতবাদ যেখানে কি পরিমান অর্থ সঞ্চালন করবে অর্থনীতিতে সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
৮. রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্টেটিজম শব্দটি ব্যবহার করা হয় সেই মতবাদকে বোঝাতে যেখানে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক অথবা/এবং সামাজিক নীতি নির্ধারণ করবে।
৯. জন মেনার্ড স্মিথ ( ১৯২০-২০০৪) ব্রিটিশ তাত্ত্বিক বিবর্তন জীববিজ্ঞানী।
১০. কে সিলেক্টেড : এই ধারণাটি এসেছে দুই ধরনের প্রজনন কৌশলের একটি সাধারণ শ্রেণীবিন্যাস থেকে। যারা কে- সিলেক্টেড, তাদের জনসংখ্যা সেই পরিবেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা বা ক্যারিয়িং ক্যাপাসিটির কাছাকাছি থাকে। তারা অল্পকিছু প্রজন্মের জন্ম দেয়, তবে তাদের প্রজন্ম শক্তিশালী ও দীর্ঘজীবি হয়।
১১. রবার্ট লুডলো ‘বব’ ট্রিভার্স (জন্ম ১৯৪৩) যুক্তরাষ্ট্রের বিবর্তন জীববিজ্ঞানী ও সোসিওবায়োলজিস্ট।
.
দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা
‘দ্য সেলফিশ জিন’ বইটি প্রকাশের প্রায় বারো বছরের মধ্যেই এই বইটির কেন্দ্রীয় বার্তাটি পাঠ্যপুস্তকের মূলধারার একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটি বেশ ধাঁধার মতই, কিন্তু খুব সুস্পষ্টভাবে না। এটি সেই বইগুলোর মত কোনো বই ছিল না, যখন প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বৈপ্লবিক আখ্যা দিয়ে যে বইগুলোকে তীব্রভাবে তিরস্কৃত করা হয়েছে, এবং তারপরে যে বইটি পরে ধীরে ধীরে বিরোধীদের মত পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছিল, যতক্ষণ না অবধি এটি এত বেশী মূলধারার চিন্তায় তার জায়গা করে নিয়েছে যে, বইটি নিয়ে প্রথমে কেন এত সমালোচনার ঝড় উঠেছিল আমাদের পরে বিস্মিত হয়ে সেটি ভাবতে হয়। আমি বলবো দ্য সেলফিশ জিন বরং এর ব্যতিক্রমই। একেবারে শুরু থেকেই এটি বেশ সন্তোষজনক পর্যালোচনা পেয়েছে, এবং শুরুতে, এটিকে কেউই বিতর্কিত বই হিসাবে দেখেননি। তবে বিতর্কিত বিষয়বস্তু হবার তার এই কুখ্যাতিটি বাড়তে বেশ কিছু বছর লেগেছে, এবং এখন, ব্যাপকভাবে এটিকে মনে করা হয় পুরোপুরিভাবে বৈপ্লবিক, চরমপন্থী একটি কাজ। কিন্তু এই বছরগুলোতেই যখন এর চরমপন্থী বই হিসাবে কুখ্যাতি বেড়েছে, এর সত্যিকারের বিষয়বস্তু ধীরে ধীরে তার চরমপন্থী অবস্থান থেকে সরে এসেছে, এবং ক্রমান্বয়ে সাধারণ বৈজ্ঞানিক চিন্তায় স্বাভাবিক একটি অবস্থানে এর জায়গা করে নিয়েছে।
স্বার্থপর জিনের তত্ত্বই হচ্ছে ডারউইনের তত্ত্ব; এটি এমনভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যে, ডারউইন নিজে নির্বাচিত করেননি, কিন্তু তার যথার্থতা, আমি যেমন ভাবতে চাই, যদি তিনি এটি পড়তেন, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে এটি শনাক্ত করতে পারতেন এবং তৃপ্তিবোধ করতেন। এটি আসলে অর্থডক্স নিও-ডারউইনিজমের (মূলধারার নব্য-ডারউইনবাদ) একটি যৌক্তিক সম্প্রসারণ, কিন্তু নতুন দৃশ্যকল্পের অভিব্যক্তির মাধ্যমে এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কোনো একটি একক জীব সদস্যর উপর মনোযোগ না নিয়ে, এটি নজর দিয়েছে প্রকৃতির একটি জিন-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি। এটি ভিন্নভাবে দেখার একটি উপায়, ভিন্ন কোনো তত্ত্ব নয়। ‘দি এক্সটেন্ডেড ফিনোটাইপ’ বইটির শুরুর পৃষ্ঠাগুলোয় আমি এটি ব্যাখ্যা করেছিলাম নেকার কিউবের একটি রুপক ব্যবহার করে।
এটি পাতায় কালি দিয়ে আকা একটি দ্বি-মাত্রিক প্যাটার্ন বা নকশা, কিন্তু এটিকে স্বচ্ছ, ত্রি-মাত্রিক কিউব হিসাবে অনুভূত হয়। এটার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন, এটি বিভিন্ন দিক বরাবর তার মুখ পরিবর্তন করবে। তাকিয়ে থাকুন এবং এটি আবার মূল কিউবের রুপে ফিরে আসবে। উভয় কিউবই রেটিনায় দ্বি-মাত্রিক উপাত্তের সাথে সমানভাবে সঙ্গতিপূর্ণ, সুতরাং মস্তিষ্ক শুধু আনন্দের সাথে এই দুটি রুপ পালাবদল করে। কোনটাই অন্যটির চেয়ে বেশী সঠিক নয়। আমার মূল বক্তব্যটি হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের বিষয়টি আমরা দুই ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি: জিনের দৃষ্টিকোণ থেকে, এবং একক জীব সদস্যদের দৃষ্টিকোণ থেকে। যদি অনুধাবনটি সঠিক হয় তারা সমার্থক। একই সত্যের দুটি দৃষ্টিভঙ্গি। আমি একটি থেকে অন্যটিতে অনায়াসে যেতে পারবেন এবং তারপরও এটি সেই একই নিও ডারউইনিজমই থাকবে।
আমি এখন মনে করি এই রুপক আসলে খুব বেশী সতর্ক রুপ ছিল। নতুন কোনো তত্ত্ব প্রস্তাব করার পরিবর্তে বা কোনো নতুন বাস্তব তথ্য উদঘাটন ছাড়াও একজন বিজ্ঞানী প্রায়শই পুরোনো কোনো তত্ত্ব বা বাস্তব সত্যকে নতুন কোনো উপায়ে দেখার পথ উদঘাটনের মাধ্যমে খুব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। নেকার কিউব মডেলটির উদাহরণ কিছুটা বিভ্রান্তিকর কারণ এটি প্রস্তাব করছে যে দুইটি উপায়ে কোনো কিছু দেখা আসলে সমানভাবে উত্তম। নিশ্চিভাবে, এই রুপকটি বিষয়টিকে বোঝাতে আংশিক সফল হয়: দৃষ্টিকোণ, যা তত্ত্বের ব্যতিক্রম, কোনো পরীক্ষা দ্বারা যাচাই করা সম্ভব না। এমন কোনো কিছুর সত্যতা নির্ণয় এবং মিথ্যা প্রমাণে আমরা আমাদের পরিচিত মানদণ্ডের আশ্রয় নিতে পারিনা। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, তার সবচেয়ে সেরা অবস্থানে, কোনো একটি তত্ত্বের চেয়ে বড় কিছু অর্জন করতে পারে। এটি চিন্তার জগতে সম্পূর্ণ নতুন কোনো পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে, যেখানে অনেক উত্তেজনা আর পরীক্ষাযযাগ্য তত্ত্বের জন্ম হয় এবং কল্পনা করা হয়নি এমন বাস্তব তথ্যও উন্মোচিত হতে পারে। নেকার কিউবের রুপকটি এই বিষয়টিকে পুরোপুরিভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। এটি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ধারণাটি সঠিকভাবে উপস্থাপন করে, কিন্তু এর সত্যিকারের মূল্যটি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। আমরা যে বিষয় নিয়ে কথা বলছি সেটি সমরুপ দৃষ্টিভঙ্গির অদল বদল নয়, বরং চূড়ান্ত ক্ষেত্রে একটি ট্রান্সফিগারেশন বা রূপান্তর। আমার এই সামান্য অবদানের জন্য এমন কোনো মর্যাদার দাবী দ্রুততার সাথে অস্বীকার করছি। তবে যাই হোক, এই ধরনের কারণে আমি বিজ্ঞান এবং জনপ্রিয়করণের মধ্যে কোনো সুস্পষ্ট বিভাজন সৃষ্টি করা সপক্ষে নই। এ যাবৎ যে ধারণাগুলো শুধুমাত্র টেকনিকাল বা পেশাগত জার্নালেই আবির্ভূত হয়েছে, সেই ধারণাগুলোকে ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন একটি শিল্প। এর জন্য ভাষার দুরদর্শিতাপূর্ণ নতুন ব্যবহার এবং দৃষ্টি উন্মোচনকারী রুপক উদাহরণ প্রয়োজন।