অন্যান্য সমালোচককে মধ্যে বার্তাবাহককে গুলি করার একই ধরনের প্রবণতা দৃশ্যমান, যারা তাদের দৃষ্টিতে ‘দ্য সেলফিশ জিন’ বইটির মূল ধারণা যে ক্ষতিকর সামাজিক,রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে, তার প্রতিবাদ করেছেন। ১৯৭৯ সালে মিসেস থ্যাচারের নির্বাচনে (যুক্তরাজ্যে) জয়লাভ করার পর খুব শীঘ্রই, আমার বন্ধু স্টিফেন রোজ, নিউ সায়েন্টিস্ট পত্রিকায় এই মন্তব্য করেছিলেন:
‘আমি ইঙ্গিত করছিনা যে, সাচ্চি অ্যান্ড সাচ্চি সামাজিক জীববিজ্ঞানীদের একটি টিমকে নিয়োগ করেছেন থ্যাচারের (৬) বক্তৃতা লেখার জন্য, এমনকি অক্সফোর্ড এবং সাসেক্সের কিছু পণ্ডিত এখন আনন্দ করতে শুরু করেছেন স্বার্থপর জিনের সরল সত্যের এমন ব্যবহারিক প্রকাশে, আমাদের যা বোঝাতে তারা সংগ্রাম করেছিলেন। চটকদার কোনো তত্ত্ব আর রাজনৈতিক ঘটনা কাকতলীয় যোগাযোগ সাধারণত এর চেয়ে জটিল হয়ে থাকে। আমি যদিও বিশ্বাস করি, যখন ১৯৭০ এর দশকের শেষে যখন ডানপন্থী মতবাদের উত্থানের ইতিহাস লেখা হবে, আইন শৃঙ্খলা থেকে মনেটারিজমের (৭) দিকে সরে আসা এবং (আরো বিতর্কিত) স্টেটিজমের (৮) উপর আক্রমণের সূত্রপাত, সেদিন বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার ফ্যাশনে, শুধুমাত্র যদি বিবর্তনের তত্ত্বে গ্রুপ থেকে কিন সিলেকশন মডেলে সরে আসা বিষয়টি দেখা হবে সেই পরিবর্তনের অংশ হিসাবে, যা থ্যাচারপন্থীদের ও তাদের স্থির, উনবিংশ শতাব্দীর প্রতিযোগিতামূলক ও মানববিদ্বেষী অসহিষ্ণু মানবিক চরিত্রের ধারণাটি ক্ষমতা দখল করতে সহায়তা করেছে।
সাসেক্সের ডন হচ্ছেন প্রয়াত জন মেনার্ড স্মিথ (৯), যার গুণমুগ্ধ ছিলেন স্টিফেন রোস এবং আমি, দুজনেই। এবং বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে তিনি এর উত্তর দিয়েছিলেন। নিউ সায়েন্টিষ্টকে লেখা তাঁর একটি চিঠিতে তিনি প্রতিমন্তব্য করেছিলেন: “আমরা তাহলে কি করা উচিৎ ছিল? কাঙ্খিত উত্তর পাবার আশায় সমীকরণগুলো প্রভাবিত করাই কি তাহলে উচিৎ ছিল আমাদের?’ ‘দ্য সেলফিশ জিন’ বইয়ের একটি প্রধানতম বার্তা হচ্ছে (এ ডেভিলস চ্যাপলিন’ বইয়ের শীর্ষ প্রবন্ধটি আরো জোরালো করে যা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিল) যে, ডারউইনবাদ থেকে নৈতিকতা আর মূল্যবোধ শেখা আমাদের উচিৎ হবে না, যদি না সেটি নেতিবাচক অর্থে হয়ে থাকে। আমাদের মস্তিষ্ক যথেষ্ট পরিমান বিবর্তিত হয়েছে, আমরা আমাদের স্বার্থপর জিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে সক্ষম। বাস্তব সত্যটি হচ্ছে, আমরা যে সেটি করতে পারি আমাদের জন্মনিরোধক ব্যবহারের আচরণটি সেটি সুস্পষ্ট করে। সেই একই মূলনীতি আরো বড় পরিসরে কাজ করতে পারে এবং সেটাই করা উচিৎ। ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় সংস্করণের ব্যতিক্রম, এই বার্ষিকী সংস্করণ এই ভূমিকাটি ছাড়া আর নতুন কোনো কিছু এই বইয়ে যুক্ত করা হয়নি এবং পর্যালোচনা থেকে কিছু অংশ নির্বাচন করেছেন আমরা তিনবারের সম্পাদক ও সমর্থক লতা মেনন। তা ছাড়া আর কেউই পারবেন না মাইকেল রজার্স এর জায়গা নেবার জন্য, অসাধারণ মেধাবী ‘কে (k) সিলেক্টেড’ (১০) সম্পাদক, যার অদম্য বিশ্বাস যে এই বইটি প্রথম সংস্করণের ট্রাজেক্টরীর জন্য বুস্টার রকেট হিসাবে কাজ করবে।
এই সংস্করণটি যদিও– এবং আসলেই আমার জন্য বিশেষ আনন্দের কারণও– এখানে রবার্ট ট্রিভার্স (১১) এর মূল প্রাককথনটি পুনপ্রতিষ্ঠিত করেছে তার মূল জায়গায়। আমি বলেছিলাম যে, বিল হ্যামিলটন হচ্ছেন এই বইয়ে চার বৌদ্ধিক বীরোচিত চরিত্রের একজন, রবার্ট (বব) ট্রিভার্স হচ্ছে আরো একজন। নবম, দশম এবং বারোতম অধ্যায়ে মূলত তার ধারণাই প্রাধান্য পেয়েছে। তার লেখাটি এই বইয়ের জন্য খুব যত্ন সহকারে সৃষ্ট ভূমিকাই শুধু না, তিনি এই মাধ্যমটিকে বেছে নিয়েছিলেন তাঁর আরেকটি অসাধারণ ধারণা সবাইকে জানাতে, আত্ম-প্রবঞ্চনার (সেলফ ডিসেপশন) বিবর্তন সংক্রান্ত তত্ত্বটি। বার্ষিকী সংস্করণের এই বইটিকে সম্মানিত করতে তার মূল ভূমিকাটি ব্যবহার করার অনুমতি দেবার জন্য আমি তার প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
রিচার্ড ডকিন্স,
অক্সফোর্ড, অক্টোবর ২০০৫
পাদটীকা:
১. পটল্যাচ হচ্ছে উপহার দান করার ভোজসভা যা প্রচলন আছে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর পশ্চিম উপকূলের আদিবাসীদের মধ্যে।
২. অস্টিন বার্ট এবং রবার্ট ট্রিভার্স (২০০৬) Genes in Conflict: The Biology of Selfish Genetic Element ( Harvard Univesity Press) বইটি প্রকাশিত হয়েছিল পরে, সেকারণে এই বইটিতে প্রথম সংস্করণ প্রকাশের পর সেখান থেকে তথ্য যুক্ত করা হয়নি। কোনো সন্দেহ নেই বইটি এই বিষয়ে চূড়ান্ত নির্ধারণী হিসাবে প্রমাণিত হবে।
৩. জ্যাক লুসিয়েন মনো (১৯১০-১৯৭৬) ফরাসী জীববিজ্ঞানী।
৪. উইলিয়াম ডোনাল্ড বিল’ হ্যামিলটন (১৯৩৬-২০০০) ইংরেজ বিবর্তন জীববিজ্ঞানী, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা তাত্ত্বিক জীববিজ্ঞানী হিসাবে যাকে মনে করা হয়ে থাকে।
৫. Unweaving the Rainbow (subtitled “Science, Delusion and the Appetite for Wonder”)– 1998; Richard Dawkins)
৬. মার্গারেট হিলডা থ্যাচার (১৯২৫-২০১৩) ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, যুক্তরাজ্যের প্রধান মন্ত্রী (১৯৭৯-১৯৯০)।