এই বিশেষ অনুচ্ছেদটি আরো সুস্পষ্ট করে তোলে জিন পর্যায়ে ব্যক্তিকরণের ধারণাটি দ্রুত পরিবর্তন করার মাধ্যমে:
‘তার মানে হচ্ছে এমন কিছু বলা যে, একটি জিন যে কিনা এমন নির্দেশনা দেয়, “শরীর, যদি তোমার অন্য ভাইবোন থেকে তুমি যদি খুব বেশী ছোট হও, তাহলে বেঁচে থাকার সংগ্রামের জন্য হাল ছেড়ে দাও এবং মারা যাও’– জিন সম্ভারে তার সফল হবার সম্ভাবনা রাখে। কারণ তার এই আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাঁচানো তার প্রতিটি ভাই এবং বোনদের শরীরে সেই জিনটি থাকার ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে। কোনো একটি দুর্বলতম সন্তানের শরীরে এই জিনটির টিকে থাকার সম্ভাবনা এমনিতে যথেষ্ট কম।
এবং এরপর অনুচ্ছেদটি তাৎক্ষণিকভাবে ফিরে আসে আত্মবীক্ষণরত দুর্বল সন্তানটির দিকে:
‘কোনো একটি দুর্বলতম সন্তানের জীবনের এমন কোনো মূহুর্ত আসে যা অতিক্রম করে গেলে ফিরে আসার আর কোনো উপায় থাকে না। এই অবস্থানে পৌঁছানোর আগ অবধি তার উচিত টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখা। কিন্তু যখনই সে সেখানে পৌঁছায় তার উচিৎ হাল ছেড়ে দেয়া এবং সম্ভব হলে তার নিজেকে তার সঙ্গী ভাইবোন কিংবা তার পিতামাতার খাদ্য হিসাবে বিসর্জন দেয়া।’ আমি আসলেই বিশ্বাস করি এইসব দুই স্তরের ব্যক্তিকরণ প্রক্রিয়া কোনো সংশয়ের কারণ না যদি আমরা এটি সেই প্রসঙ্গেই পুরোপুরিভাবে পাঠ করি। কি হলে কি হবে– এই ধরনের হিসাব নিকাশের দুটি স্তরই ঠিক একই উপসংহারে পৌঁছায় যদি সঠিকভাবে কাজটি করা হয়। আসলেই একটি মানদণ্ডের নির্ভুলতা প্রমাণের জন্য সেটি হচ্ছে। সুতরাং আমি মনে করিনা যে ব্যক্তিকরণ এমন কোনো কিছু আমি তা ফিরিয়ে নেবো যদি আজ বইটা আমি আবার নতুন করে লিখতে বসি।
কোনো একটি বই না লেখার পর সেটি আবার না লেখা একটি ব্যপার, আর পড়ার পর না সেটি পড়ার প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি প্রতিবর্তন করা ভিন্ন আরেকটি ব্যপার। নীচে উল্লেখ করা অষ্ট্রেলিয়ার কোনো এক পাঠকের প্রদত্ত রায়টির বিষয়ে আমরা কি বলতে পারি?
‘বিস্ময়কর, কিন্তু মাঝে মাঝে আমি ভাবি যদি বইটি পড়ার পর সেটি পড়ার মত করে মুছে ফেলতে পারতাম। একটি স্তরে, আমি অনুভব করতে পারি বিস্ময়ের সেই অনুভূতিকে, যা ডকিন্স এত সুস্পষ্টভাবে দেখেছেন এই সব জটিল প্রক্রিয়াগুলোর সমাধান করতে গিয়ে। কিন্তু সেই একই সাথে, আমি অনেকাংশে দ্য সেলফিশ জিনকেই এক দশকের বেশী সময় ধরে আমার বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার সেই ধারাবাহিক পর্বগুলো জন্য দায়ী করবো। কখনোই জীবনের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আমি সুনিশ্চিৎ হতে পারিনি, কিন্তু চেষ্টা করেছি গভীর কোনো কিছু অনুসন্ধানের জন্য, কোনো কিছুর উপর বিশ্বাস করার চেষ্টায়, কিন্তু কখনোই সেটি করে উঠতে পারিনি পুরোপুরি– আমি অনুভব করেছি যে এই বইটি এই ধরণের কোনো চিন্তাধারা অনুসরণের সব অস্পষ্ট ধারণাই বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছে, তাদের কখনোই আর আমার মনে জমাট বাধতে দেয়নি। এটি কয়েক বছর আগে আমার জীবনের একটি ভয়ঙ্কর ব্যক্তিগত সমস্যার কারণ হয়েছিল।’
পাঠকদের কাছ থেকে পাওয়া এমন আরো দুটি প্রতিক্রিয়া আমি এর আগে বর্ণনা করেছিলাম।
‘আমার প্রথম বইয়ের একজন বিদেশী প্রকাশক স্বীকার করেছিলেন যে, এই বইটি পড়ার পর তিনি তিন রাত ঘুমাতে পারেননি, তার মতে বইটির শীতল, নৈরাশ্যবাদী বার্তায় তিনি এতটাই অস্থির হয়েছিলেন। অন্যরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে কিভাবে আমি সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠার মত কাজটি সহ্য করি। অনেক দুরের একটি দেশের এক শিক্ষক আমাকে তিরষ্কারের সুরেই লিখেছিলেন, এই একই বই পড়ে তার এক ছাত্র তার সাথে দেখা করতে এসেছিল কাঁদতে কাঁদতে। কারণ এই বইটি তাকে প্ররোচিত করে বোঝাতে পেরেছে যে, জীবন হচ্ছে শূন্য এবং অর্থহীন। তিনি তাকে উপদেশ দিয়েছেন, সে যেন তার কোনো বন্ধুকে বইটি না দেখায়, কারণ শঙ্কা আছে এটি তাদের মনকে সংক্রমিত করতে পারে সেই একই নাস্তিবাদী নৈরাশ্যবাদ থেকে (Unweaving the raindbow) (৫)।
যদি কোনো কিছু আসলেই বাস্তব সত্য হয়ে থাকে, কোনো ধরণের ইচ্ছা প্রণোদিত ভাবনা সেটিকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবেনা। এটি হচ্ছে প্রথম কথা যা বলতে পারি কিন্তু দ্বিতীয়টি প্রায় সমপরিমানেই গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটি আমি লিখেছিলাম:
‘সম্ভাবনা আছে যে আসলেই এই মহাবিশ্বের চূড়ান্ত নিয়তির কোনো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নেই, কিন্তু আমরা কেউ কি সত্যি আমাদের জীবনের আশা-আকাঙ্খকে মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতির সাথে সংযুক্ত করে এমন কোনো ভাবনায় জীবন কাটাই? অবশ্যই আমরা সেটি করিনা। যদি না আমরা নিজেদের মানসিকভাবে সুস্থ বলে দাবী করি। আমাদের জীবন নিয়ন্ত্রিত হয় বহু ধরণের নিকটবর্তী, উষ্ণতর মানবিক আকাঙ্খ আর অনুভূতির দ্বারা। জীবনের এই উষ্ণতা, যা। আমাদের জীবনকে বেঁচে থাকার জন্য যোগ্য করে তোলে, সেই উষ্ণতাকে ছিনিয়ে নেবার জন্য বিজ্ঞানকে অভিযুক্ত করা খুবই অযৌক্তিভাবে ভ্রান্ত, এত বেশী চূড়ান্তভাবে বিপরীত আমার নিজের এবং অধিকাংশ কর্মরত বিজ্ঞানীদের অনুভূতির সাথে, যা আমাকে গভীরভাবে হতাশ হতে বাধ্য করে। ভ্রান্তভাবে যে ভূলের অভিযোগ আমাকে করা হয়েছে।