‘কোনো একটি বেশী ঘনত্বের মাধ্যম দিয়ে আলোকরশ্মি অতিক্রম করার সময় তার আচরণ ঠিক এরকমই। কিন্তু আলো কিভাবে সেটি জানে, আপাতদৃষ্টিতে বেশ আগে থেকেই, কোনটি সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম পথ? এবং আর যাই হোক, কেনই বা এটি তা করার কথা ভাববে?’
চমৎকার একটি ব্যাখ্যার বিশ্লেষণে তিনি এই সব প্রশ্নগুলো করেছিলেন, যার অনুপ্রেরণা কোয়ান্টাম তত্ত্ব।
এই ধরণের ব্যক্তিকরণ আরোপ শুধুমাত্র পুরোনো শিক্ষাপ্রদান কৌশলই নয়। ভুল করার প্রতারণাপূর্ণ প্রলোভনের চ্যালেঞ্জের মুখে এটি পেশাগত বিজ্ঞানীদেরও সঠিক উত্তরটি খুঁজে বের করার জন্য সয়াহতা করে। পরার্থবাদীতা আর স্বার্থপরতা, সহযোগিতা, প্রতিশোধ বিষয়ক ডারউইনীয় হিসাব নিকাশগুলোএমনই একটি ক্ষেত্র, ভুল উত্তরে পৌঁছানো খুব সহজ। জিনকে ব্যক্তিকরণ আরোপ করার মাধ্যমে, যদি সঠিক সতর্কতা ও সংযমের সাথে সেটি করা হয়, প্রায়ই দেখা যায় এটি আসলেই জটিলতার মধ্যে ডুবতে থাকা কোনো ডারউইনীয় তাত্ত্বিককে বাঁচানোর সবচেয়ে সহজতম উপায়। এই সতর্কতাটি মনে রেখেই আমি ডাবলিউ. ডি, হ্যামিলটনের (৪) দক্ষ উদাহরণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, তিনি আমার এই বইয়ে উল্লেখ করা চার বীরোচিত চরিত্রের একজন। ১৯৭২ সালে। প্রকাশিত তাঁর একটি প্রবন্ধে (যে বছর আমি ‘দ্য সেলফিশ জিন’ লিখতে শুরু করেছিলাম) হ্যামিলটন লিখেছিলেন:
‘কোনো একটি জিন, যা প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার দ্বারা সুবিধাপ্রাপ্ত হয়, যদি তাদের অনুলিপিদের সমষ্টি সামগ্রিক জিন। সম্ভারে ক্রমবর্ধিষ্ণু একটি অংশ গঠন করে। আমরা চিন্তিত হবো সেই জিনগুলো নিয়ে, তাদের বাহকের সামাজিক আচরণের উপর যাদের প্রভাব ফেলার কথা, সুতরাং, সাময়িকভাবে জিনগুলোর উপর বুদ্ধিমত্তা এবং স্বাধীনভাবে বাছাই করার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আরোপ করার মাধ্যমে আসুন আমরা চেষ্টা করি এই যুক্তিটাকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলতে। কল্পনা করুন একটি জিন তার অনুলিপিগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি করার সমস্যাটি বিবেচনা করছে এবং কল্পনা করুন যে এটি বাছাই করে নিতে পারে…’
সত্যিকারভাবে এটাই সেই সঠিক মেজাজ যা দিয়ে ‘দ্য সেলফিশ জিন’ বইটির বেশীর ভাগ অংশ পড়া উচিৎ।
কোনো একটি জীবের উপর ব্যক্তিকরণ আরোপ করার প্রক্রিয়া সমস্যার কারণ হতে পারে। এর কারণ, কোনো জীবের, জিনের ব্যতিক্রম, মস্তিষ্ক আছে এবং সেকারণে তাদের স্বার্থপর বা পরার্থবাদী উদ্দেশ্য আছে, কিছুটা যেমন, ব্যক্তিক চিন্তা অর্থে, যা আমরা শনাক্ত করতে পারবো। দ্য সেলফিশ লায়ন বা স্বার্থপর সিংহ হয়তো আসলেই সংশয়ের কারণ হয়, এমন একটি উপায়ে, যে সংশয় দ্য সেলফিস জিন সেটি কখনো সৃষ্টি করে না। ঠিক যেমন করে কেউ পারে তার নিজেকে কাল্পনিক সেই আলোক রশ্মির অবস্থানে ভাবতে, যে কিনা বুদ্ধিমত্তার সাথে লেন্স আর প্রিজমের ধারাবহিক সারির মধ্যে তার উপযুক্ত পথটি বেছে নিতে পারে অথবা একটি কাল্পনিক জিন যে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হস্তারিত হবার জন্য সুবিধাজনক একটি পথ অনুসন্ধান করে। সুতরাং আমরা প্রস্তাব করতে পারি, দীর্ঘ মেয়াদী ভবিষ্যতে তার জিনের টিকে থাকার লক্ষ্যে একটি একক সিংহী, তার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক আচরণের কৌশল হিসাব নিকাশ করতে পারে। জীববিজ্ঞানে হ্যামিলটনের প্রথম উপহার হচ্ছে সুনির্দিষ্টভাবে সেই নিখুঁত গাণিতিক ব্যাখ্যা, যা একজন সত্যিকারের ডারউইনীয় সদস্য, যেমন, কোনো সিংহ, কার্যত, তার কাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হয়, যখন সে হিসাব নিকাশ করে সিদ্ধান্ত নেয় কিভাবে তার জিনের দীর্ঘদিন টিকে থাকার ব্যপারটি সর্বোচ্চভাবে সে নিশ্চিৎ করতে পারে। এই বইতে দুটি স্তরে আমি এধরনেরই হিসাব নিকাশের সমতূল্য নানা অনানুষ্ঠানিক মৌখিক শব্দাবলী ব্যবহার করেছি। (মূল বইয়ের) ১৬৮ পৃষ্ঠায় আমরা খুব দ্রুত এক স্তর থেকে অন্য স্তরে চলে গেছিঃ ‘আমরা সেই সব পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেছি, যখন তার দুর্বলতম সন্তানকে (বা রান্ট) মরতে দিলে কোনো একটি মায়ের জন্য আসলেই সুবিধাজনক হয়। আমরা হয়তো সহজাতভাবে মনে করতে পারি, এই দুর্বলতম সন্তানের নিজেরই উচিৎ টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখা, কিন্তু তত্ত্বটি আবশ্যিকভাবে এ-সম্বন্ধে কোনো পূর্বধারণা দেয়না। যখন কোনো একটি দুর্বলতম সন্তান এতই ছোট আর দুর্বল হয়ে যায় তার জীবনের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও হ্রাস পায় এমন একটি পর্যায় অবধি যখন তার প্রতি পিতামাতার বিনিয়োগের ফলে সৃষ্ট সুফল অন্য সন্তানদের প্রতি একই পরিমান সম্ভাব্য বিনিয়োগের ফলে প্রাপ্ত প্রত্যাশিত সুফলের অর্ধেকের চেয়ে কম হয়। সেই দুর্বল সন্তানের মরে যাওয়া উচিৎ স্বেচ্ছায় এবং সন্মানের সাথে। সে এভাবেই তার জিনের জন্যে সবচেয়ে উপকারী কাজটি করতে পারে।
এটি পুরোপুরিভাবে একক ব্যক্তি পর্যায়ে আত্মবীক্ষণের মত। এর মানে কিন্তু এমন কোনো ধারণা না যে দুর্বলতম শিশুটি সেটাই নির্বাচন করবে যা তাকে তৃপ্তি দেবে, বা যে কাজটি করলে সে ভালো অনুভব করবে। বরং একটি ডারউইনীয় পৃথিবীতে একক সদস্যরা মনে করা হয় এক ধরনের ‘এস-ইফ’ বা ‘এটা করলে কি হতে পারে বা না হতে পারে এ ধরনের হিসাব নিকাশ করে, যা কিনা তাদের বহন করা জিনদের জন্য সবচেয়ে ভালো পরিণতি নিশ্চিৎ করে।