এই বিষয়টি সংক্রান্ত পরিচ্ছন্ন উদাহরণের একটি হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক প্রপঞ্চটি যা পরিচিত ‘মিমিক্রি’ নামে। কিছু প্রজাপতির স্বাদ খুবই বাজে, সাধারণত তাদের রঙ উজ্জ্বল আর খুব বৈশিষ্ট্যসূচক এবং সেই সতর্কতামূলক রঙ দেখেই পাখিরা সাধারণত তাদেরকে খাওয়া থেকে বিরত থাকে। এখন অন্য প্রজাতির প্রজাপতি যাদের স্বাদ খারাপ না তারা এই কৌশলটি নিজেদের কাজে লাগায়। তারা খারাপ স্বাদের প্রজাপতিদের ‘মিমিক’ বা অনুকরণ করে। তারা আকারে ও রঙে ঠিক খারাপ স্বাদের প্রজাপতিদের মত দেখতে হয়। কিন্তু স্বাদে নয়), এভাবে তারা প্রায়শই মানব প্রকৃতিবিদদের বোকা বানায়তো বটেই, তারা পাখিদেরও বোকা বানায়। কোনো একটি পাখি যে একবার সত্যিকারের খারাপ স্বাদের প্রজাপতি মুখে নিয়েছে, সাধারণত সেই একই রকম দেখতে আর কোনো প্রজাপতি খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলে। এবং এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সেই অনুকরণকারী বা মিমিক প্রজাতিগুলোও। সুতরাং যে জিনগুলো এই অনুকরণ বা মিমিক করতে সাহায্য করে সেই জিনগুলো প্রাকৃতিক নির্বাচনের আনুকুল্য পায়। এভাবে মিমিক্রি বিবর্তিত হয়।
‘বাজে’ স্বাদের বহু প্রজাতির প্রজাপতি আছে, এবং তারা সবাই একই রকম দেখতে নয়। একটি মিমিক বা অনুকরণকারী প্রজাতি তাদের সবার মত দেখতে হতে পারেনাঃ তাকে একটি মাত্র খারাপ স্বাদের কোনো প্রজাপতিকে অনুকরণ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয়। সাধারণত, কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির অনুকরণকারী বা মিমিক, একটি নির্দিষ্ট বাজে স্বাদের প্রজাপতিকে অনুকরণ করতে বিশেষজ্ঞ। কিন্তু আরো কিছু প্রজাতির মিমিক বা অনুকরণকারী আছে, যারা আরো অদ্ভুত কিছু কাজ করে। তাদের কোনো কোনো সদস্য একটি বাজে স্বাদের প্রজাতিকে মিমিক করে, কিন্তু সেই প্রজাতির অন্য সদস্য হয়তো অন্য একটি প্রজাতির বাজের স্বাদের প্রজাতিকে মিমিক করে। সেই প্রজাতি জনগোষ্ঠীর কোনো সদস্য যারা দুজনকেই মিমিক বা অনুকরণ করার চেষ্টা করে বা আর কেউ যদি এর মাঝামাঝি একটি অবস্থানে থাকে, তারা বেশ তাড়াতাড়ি পাখিদের খাদ্যে পরিণত হয়, কিন্তু এমন ধরনের মধ্যবর্তী কারো জন্ম হয়না। ঠিক যেমন কোনো একক সদস্য হয় নির্দিষ্টভাবে পুরুষ বা নারী। সুতরাং কোনো একটি একক সদস্য প্রজাপতি যা কোনো কোনো একটিমাত্র বাজে স্বাদের প্রজাপতির ‘মিমিক’ হয়। একটি প্রজাপতি হয়তো প্রজাতি ‘ক’ কে অনুকরণ করে আর তার ভাই হয়তো প্রজাতি ‘খ’কে অনুকরণ করে।
দৃশ্যত মনে হয় যেন একটি একক কোনো জিন নির্ধারণ করছে কোন একক সদস্যটি প্রজাতি ‘ক’ বা প্রজাতি ‘খ’ কে অনুকরণ করবে। কিন্তু কিভাবে একটি একক জিন মিমিক্রির এই বহুমাত্রিক কাজটি করতে পারে– রঙ, আকার, স্পটের বিন্যাস, ওড়ার ভঙ্গিমায়? এর উত্তর হচ্ছে কোনো একটি জিন, একটি সিসট্রোন অর্থে সম্ভবত সেই কাজটি পারেনা। কিন্তু সচেতন নয় এমন কোনো স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্জিত সম্পাদিত বা এডিটিং হওয়া জিন যা ঘটতে পারে জিন উপাদানের ইনভারশন বা অন্যান্য দূর্ঘটনাবশত পুনবিন্যাস প্রক্রিয়ায়। প্রাক্তন কোনো বিচ্ছিন্ন জিনের একটি বড় সমষ্ঠী একসাথে কাছাকাছি এসে একটি দৃঢ় সংযোগ বা লিংকেজ গ্রুপ তৈরী করে কোনো একটি ক্রোমোজোমে। পুরো গুচ্ছ বা ক্লাস্টারটি একটি একক জিন হিসাবে আচরণ করে আসলেই, আমাদের সংজ্ঞানুযায়ী সেটি এখন একটি একক জিন ও তার একটি অ্যালিল বা বিকল্প রুপ আছে, যেটি আসলেই আরেকটি জিন গোষ্ঠী বা ক্লাষ্টার। একটি ক্লাস্টার হয়তো সেই সব সিসট্রোনগুেলো ধারণ করে যারা প্রজাতি ‘ক’ কে অনুকরণ করতে সাহায্য করে এবং বিকল্প অন্যটি হয়তো প্রজাতি ‘খ’ কে অনুকরণ করতে সাহায্য করে। এবং প্রতিটি ক্লাষ্টার ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে খণ্ডিত হবার সম্ভাবনা খুব কম, আর তাই যেকোনো মাঝামাঝি রুপের কোনো প্রজাপতিকে আমরা প্রকৃতিতে কখনো দেখতে পাবো না। কিন্তু এই সব মাঝামাঝি রুপের প্রজাপতিদের মাঝে মাঝে আমরা দেখতে পাই যদি বহু সংখ্যক প্রজাপতিদের আমরা ল্যাবরেটরীতে প্রজনন করি।
আমি জিন শব্দটি ব্যবহার করছি একটি জেনেটিক ইউনিটকে বোঝতে। এবং বহু সংখ্যক প্রজন্ম টিকে থাকার জন্য তারা যথেষ্ট পরিমানে আকারে ছোট এবং অনেক সংখ্যক প্রতিলিপি হিসাবে এটি জনগোষ্ঠীতে বিদ্যমান। এটি কিন্তু খুব আটোসাটো অলঙ্ঘনীয় কোনো সংজ্ঞা নয়, বরং এক ধরনের ধীরে ধীরে মিশে যাওয়া সংজ্ঞার মত, ঠিক ‘বড়’ আর ‘পুরাতন’ এর সংজ্ঞার মত। ক্রোমোজোমের কোনো একটি দৈর্ঘ্যের ক্রসিং ওভার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খণ্ডিত হবার বা নানা ধরনের মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হবার যতই সম্ভাবনা থাকবে, ততই এটি একটি ‘জিন’ হিসাবে চিহ্নিত হবার গুণাবলী হারায় ঠিক সেই অর্থে, যে অর্থে আমি ‘জিন’ শব্দটি ব্যবহার করছি। আনুমানিক হিসাবে কোনো একটি সিসট্রোন হয়তো এই নামের যোগ্য, কিন্তু একইভাবে যোগ্য আরো বড় ইউনিটগুলোও। এক ডজন সিসট্রোন হয়তো একে অপরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে কোনো একটি ক্রোমোজোমে, সেটি আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য পুরণ করে একটি একক দীর্ঘায়ু জেনেটিক ইউনিট হিসাবে। প্রজাপতির মিমিক্রি ক্লাষ্টার ভালো একটি উদাহরণ। সিসট্রোন একটি শরীর ত্যাগ করে এবং অন্য একটি শরীরে প্রবেশ করে যখন তারা শুক্রাণু বা ডিম্বাণুতে আরোহণ করে পরবর্তী প্রজন্ম বরাবর যাত্রা শুরু করে। সম্ভাবনা আছে তারা সেই ক্ষুদ্র নৌযানে তাদের আগের যাত্রায় নিকটতম প্রতিবেশী খুঁজে পাবে, পুরোনো অভিযান সঙ্গী, যাদের সাথে তারা একটি দীর্ঘ যাত্রা শুরু করেছিল দুরবর্তী কোনো পূর্বসুরির শরীর থেকে। একই ক্রোমোজোমে পাশাপাশি থাকা ক্রোমোজোমগুলো একটি খুব দৃঢ় বন্ধনযুক্ত অভিযান সঙ্গীদের গ্রুপ তৈরী করে, যখন মাইওসিস কোষ বিভাজনের সময় হয় যাদের কেউ খুব কদাচিৎ একই জাহাজে উঠতে ব্যর্থ হয়।