কখনো কখনো দুটি বিকল্প পৃষ্ঠাই হুবহু একই রকম দেখতে, কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেমন আমাদের চোখের রঙ বিষয়ক উদাহরণে যেভাবে বর্ণনা করলাম, তারা ভিন্নতা প্রদর্শন করছে। যদি তারা বিপরীতার্থক কোনো ‘প্রস্তাব করে পরিকল্পনায়, তাহলে শরীর কি করবে? এর উত্তর ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কখনো একটি অন্যটির উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। চোখের রঙ নিয়ে যে উদাহরণটি দেয়া হলো এই মাত্র, এই মানুষটি হয়তো আসলেই বাদামী চোখের, সেক্ষেত্রে শরীরটি বানানোর সময় নীল চোখ বানানোর নির্দেশটি উপেক্ষা করা হয়েছে; তবে এটি কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মে তাদের হস্তান্তর হবার ক্ষেত্রে কোনো বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। কোনো জিন যখন এভাবে উপেক্ষিত হয় তাকে বলে ‘রিসেসিভ’ জিন। আর ‘রিসেসিভ জিনের বিপরীতটি হচ্ছে ‘ডমিন্যান্ট’ জিন। নীল চোখের জিনটির উপর বাদামী চোখের জিনটি হচ্ছে ‘ডমিন্যান্ট’। কোন ব্যাক্তির নীল চোখ হবে তখনই যদি সংশিষ্ট পৃষ্ঠা দুটি ‘নীল রঙের চোখ তৈরী করার নির্দেশ দেবার ক্ষেত্রে একমত হয়। যখন দুটি বিকল্প জিন হুবহু একই রকম থাকে না, সচরাচর হয়ে থাকে তা হচ্ছে এক ধরনের সমঝোতা– শরীর কোনো একটি মধ্যবর্তী ডিজাইনে অথবা সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনো পরিকল্পনায় তৈরী হয়।
যখন দুটি জিন, যেমন ‘বাদামী’ আর ‘নীল চোখের জিন, যারা ক্রোমোজোমে নির্দিষ্ট একটি জায়গা (লোকাস) দখল করার জন্য একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তাদেরকে পরস্পরের ‘অ্যালিল’ বলা হয়। আমাদের এখানকার আলোচনার খাতিরে, অ্যালিল শব্দটি প্রতিদ্বন্দ্বী শব্দটির সাথে সমার্থক। কল্পনা করুন স্থপতির পরিকল্পনাটি একটি আলাদা আলাদা পাতাগুলো একসাথে জড়ো করা আছে কোনো বাইন্ডারের মত, যেখান থেকে পৃষ্ঠাগুলো ইচ্ছামত খুলে সরিয়ে ফেলা যাবে এবং তাদের জায়গা অদল বদল করা যাবে। প্রতিটি ১৩ খণ্ডের (১৩ক ও ১৩খ) অবশ্যই একটি পৃষ্ঠা ৬’ থাকবে, কিন্তু ‘পৃষ্ঠা ৬ এর বেশ কয়েকটি সংস্করণ আছে, যাদের যে কোনো একটি ৫’ ও ‘পৃষ্ঠা ৭’ এর মধ্যবর্তী জায়গাটি নিতে পারে। একটি সংস্করণ হয়তো বলছে ‘নীল চোখ, আরেকটি সম্ভাব্য সংস্করণ বলছে ‘বাদামী চোখ, হয়তো আরো একটি সংস্করণ সেই জনগোষ্ঠীতে বিদ্যমান আছে যা হয়তো অন্য একটি রঙের কথা বলছে যেমন, ‘সবুজ। হয়তো প্রায় অর্ধ-ডজন বিকল্প সংস্করণ বা অ্যালিল আছে যারা ১৩ তম ক্রোমোজোমের ‘পৃষ্ঠা ৬ এর অবস্থানটিতে বসে আছে সেই পুরো জনগোষ্ঠীতে। যেকোন একক ব্যক্তির ‘খণ্ড ১৩’ ক্রোমোজোম মাত্র দুটি, সে কারণে তার পৃষ্ঠা ৬ এর জায়গায় সর্বোচ্চ দুটি অ্যালিল থাকতে পারবে, তার হয়তো, যেমন ‘নীল চোখের একজন ব্যক্তি, দুটি অ্যালিল একই সংস্করণের বা তার হয়তো যেকোনো দুটি অ্যালিল থাকতে পারে, সেই জনগোষ্ঠীর জিনপুল (জিন সম্ভারে) বিদ্যমান অর্ধ ডজন অ্যালিল থেকে বাছাইকৃত।
অবশ্যই, আক্ষরিকার্থে, পুরো জনগোষ্ঠীর জিন সম্ভার থেকে নিজের ইচ্ছামত আপনার জিন বাছাই করে আনতে আপনি পারবেন না। যেকোনো একটি সময়ে সব জিনই কোনো একক টিকে থাকা বা সারভাইভাল মেশিনের মধ্যে বন্দী। আমাদের জিনগুলো আমাদের প্রদান করা হয় ঠিক যে মুহূর্তে মাতৃগর্ভে পিতার শুক্রাণুর দ্বারা মায়ের ডিম্বাণু নিষিক্ত হবার মাধ্যমে সৃষ্ট একটি মাত্র কোষ হিসাবে আমরা যাত্রা শুরু করি। আমাদের এখানে বাছ বিচার করার কোনো উপায়ই নেই। যাইহোক, এক অর্থে, যেখানে, দীর্ঘ মেয়াদী একটা রুপে, সাধারণভাবে কোনো জনগোষ্ঠীতে বিদ্যমান জিনগুলোকে গন্য করা যেতে পারে ‘জিনপুল বা জিন সম্ভার হিসাবে। তবে জিনপুল শব্দটিতে আসলেই একটি কারিগরী’ শব্দ, যা জিনতত্ত্ববিদরা ব্যবহার করে থাকেন। জিনপুলের ধারণাটি যুক্তিযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা, কারণ, যৌন প্রজনন জিনগুলোর মিশ্রণ ঘটায়, যদিও খানিকটা সতর্ক পদ্ধতিগত উপায়ে। নির্দিষ্টভাবে, এমন কোনো কিছু– যেমন সেই খোলা পাতার বাইন্ডারের কোনো একটি বা একসাথে একগুচ্ছ পৃষ্ঠা আলাদা করে সরিয়ে অন্য কোনো স্থানে প্রতিস্থাপিত করার প্রক্রিয়াটা আসলেই চলতে থাকে, আমরা এখন যা দেখবো।
আমি একটি কোষের দুটি নতুন কোষে বিভাজিত হবার সাধারণ প্রক্রিয়াটি নিয়ে আগে আলোচনা করেছিলাম, প্রত্যেকটি কোষই একটি সম্পূর্ণ সেট, ৪৬ টি ক্রোমোজোমের সবকটি ক্রোমোজোম পায় সেখানে। এই সাধারণ কোষ বিভাজন পরিচিত ‘মাইটোসিস’ হিসাবে। কিন্তু আরো একধরনের কোষ বিভাজন আছে যাকে বলা হয় ‘মাইওসিস। এটি ঘটে শুধু মাত্র জনন কোষগুলি তৈরী হবার সময়: জনন কোষ হচ্ছে: শুক্রাণু ও ডিম্বাণু। শুক্রাণু ও ডিম্বাণু আমাদের সব কোষগুলোর মধ্যে অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন, সেখানে ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকার বদলে থাকে মাত্র ২৩ টি ক্রোমোজোম। এটি অবশ্য, ঠিক ৪৬ এর অর্ধেক –এবং বেশ সুবিধাজনক, কারণ তারা একসাথে সংযুক্ত হয়, যৌন প্রজনেনর নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়ায় একটি নতুন জীব সদস্য তৈরী করার জন্য। মাইওসিস হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের কোষ বিভাজন, যা ঘটে শুধুমাত্র অণ্ডকোষ আর ডিম্বাশয়ে, যেখানে কোনো কোষ যার পুরো সেট, অর্থাৎ ২৩ জোড়া বা ৪৬টি ক্রোমোজোম আছে, বিভাজিত হয়ে ‘জনন কোষ তৈরী করে, যেখানে শুধু একটি সেট, বা ২৩টি ক্রোমোজোম থাকে (উদাহরণ হিসাবে আমি এখন সব সময়ই মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যাই উল্লেখ করছি)।