শক্তিশালী এবং চিন্তা উদ্রেককারী, পাঠক হয়তো ভাববেন, কিন্তু এটি খুব নতুন কোনো ধারণা? বেশ, আপাতত হয়তো না, কিন্তু অবশ্যই বিবর্তন শেষ হয়ে যায়নি আমাদের শরীরগুলোয় এসে। আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জনাকীর্ণ এই জগতে টিকে থাকার কৌশল দেখা গেছে অপ্রত্যাশিতভাবে সূক্ষ্মতাপূর্ণ, জীববিজ্ঞানীরা সেই প্রাচীন অপসৃয়মান প্রজাতির কল্যাণের জন্য অভিযোজন মতবাদের অধীনে যতটুকু কল্পনা করতে প্রস্তুত তার চেয়েও বেশী সূক্ষ্ম। এই সূক্ষ্মতা, জুলভাবে, বাকি বইটির মূল বক্তব্য। পাখিদের গানের সরল উদাহরণটির কথা ভাবুন। মনে হতে পারে খুবই অদক্ষ একটি বন্দোবস্ত : কোনো একজন সরল বস্তুবাদী যিনি সেই কৌশলগুলোর অনুসন্ধান করছেন, যার মাধ্যমে কিভাবে টুরডুস (৫) এর কোনো একটি প্রজাতির পাখি কঠোর শীতকাল, খাদ্য স্বল্পতা, এবং ইত্যাদি নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করে টিকে থাকে, তিনি হয়তো এদের পুরুষ সদস্যদের বর্ণিল সঙ্গীত পরিবেশনকে মনে করতে পারেন অশরীরী আত্মার সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করার অনুষ্ঠান বা সিয়ন্সে এক্টোপ্লাজমের (৬) মতই কোনো অসম্ভাব্য কিছু। (যদি আরো খানিকটা চিন্তা করেন, তিনি হয়তো এমনকি কোনো প্রজাতিতে পুরুষ সদস্যরাই বা কেন আছে সেই বিষয়টিকেও সমানভাবে অসম্ভাব্য মনে করতে পারেন, এবং এটি আসলেই এই বইয়ের আরেকটি প্রধান বিষয়: পাখিদের গানের মতই, লিঙ্গের ভূমিকা খুব সরলভাবেই যুক্তিযুক্ত করা হয়েছে অতীতে); তারপরও কোনো একটি পাখি প্রজাতির মধ্যে অনুলিপনকারীদের একটি পুরো দল এই কর্মটি সম্পাদনের জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। কোনো একটি জায়গায় ডকিন্স হাম্পব্যাক তিমিদের এমনকি আরো অসাধারণ সঙ্গীতের কথা উল্লেখ করেছেন, যা নিজেকে শ্রাব্য করে তোলে পুরো মহাসাগর জুড়ে। কিন্তু টুরডুসদের গানের চেয়ে এই সঙ্গীতের ব্যপারে আমরা আরো কম জানি, যেমন, এটি কিসের জন্য, কি বিষয়ে, কার প্রতি নির্দেশিত। আপাতত প্রমাণ যা বলছে তা হলো এটি হয়তো মানব জাতির বিরুদ্ধে সিটাসিয়ান বা তিমিদের ঐক্যতা, যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে সেটি তিমিদের জন্য কল্যাণকর হতো। অবশ্যই, অনুলিপনকারীদের টিমগুলোর অন্য টিমগুলো এখন সিম্ফোনী কনসার্ট সৃষ্টি করছে, এবং সেই সঙ্গীতগুলো অবশ্যই মাঝে মাঝে বহু সাগর পাড়ি দেয়– মহাশূন্যে থাকা বিশেষ যন্ত্রে প্রতিফলিত হয়ে, যা তারা নিজেরাই তৈরী করেছে এবং যেটি প্রদক্ষিণ করছে আরো জটিল কিছু দলের নির্দেশনায়। জাদুকর আয়না নিয়ে যা করেন, তা প্রকৃতি যা করতে পারে তার কাছে কিছুই না, যখন প্রকৃতি, যদি ডকিন্স ঠিক হয়ে থাকেন, শুরু করেছিল জমাট বাঁধা আদিম সুপের মত প্রতিশ্রুতিশীল নয় এমন কোনো সূচনা দ্রব্য থেকে। এটি তার দ্বায়িত্ব পালন করবে এই বইয়ের মধ্যে, যে জীববিজ্ঞান আছে তার নতুন রুপ হিসাবে এবং কিছু সাম্প্রতিক বইকে (যেমন, ই, ও, উইলসনের সোসিওবায়োলজি (৭)) বলার সুযোগ দেবে, এটি দুত্যি ছড়ায় এমন একটি আশা নিয়ে যা এসবই জীবনের সবচেয়ে দূরবর্তী সম্প্রসারণ হয়তো খুব শীঘ্রই বোধগম্যভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এর মূল বক্তব্যে, যদি খুঁটিনাটি বিষয়ে নাও হতে পারে (ধর্মীয় ব্যক্তি এবংনব্য-মার্কসবাদীরা হয়তো সেই বাক্যটিকে উল্টে দেবেন, যদি সেটি তাদের জন্য বেশী সুবিধাজনক মনে হয়, এটি একটি সাধারণ প্যাটার্নের সৃষ্টি করবে যার মধ্যে আছে সাধারণত কোষের পর্দা, সাধারণতম বহু কোষী শরীর এবং ব্ল্যাকবার্ডদের (টুরডুস জিনাসের পাখিরা) গান।
যে ধারণাটি এড়ানো উচিৎ হবে, সেটি হচ্ছে, এই বইটি একধরণের অবিশেষজ্ঞ পাঠকদের সোসিওবায়োলজী বই হিসাবে ভাবা। প্রথমত, এখানে অনেক মৌলিক ধারণা আছে এবং দ্বিতীয়ত, এটি উইলসনের সেই সুবিশাল সৃষ্টির কিছু সুনির্দিষ্ট কিছু ভারসাম্যহীনতাকে স্থিতিশীল করে গেম-থিওরী নির্ভর সামাজিক আচরণের উপর শক্তভাবে গুরুত্বারোপ করে। যা উইলসন উল্লেখ করেননি বললেই চলে।গেম থিওরী নির্ভর সঠিক শব্দ নয় পুরোপুরি, বিশেষ করে সামাজিক বিবর্তনের অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরে, কারণ জিনরা নিজেরা তাদের কর্মপ্রক্রিয়ায় কোনো যৌক্তিকতা খোঁজে না। তবে যাইহোক, এটি এখন স্পষ্ট যে, প্রায় সব স্তরেই উপযোগী সমরুপতা আছে: গেম তত্ত্বের ধারণাগত এবং সামাজিক বিবর্তনের কাঠামোতে। এই আন্তনিষিক্তকরণ এখানে ইঙ্গিত দেয় এটি নতুন এবং এবং এখনও এর প্রক্রিয়া চলমান: শুধুমাত্র সাম্প্রতিক সময়ে, যেমন, আমি জেনেছি যে গেম থিওরী ইতিমধ্যে এমন ধারণার একটি নতুন নাম দিয়েছে, ন্যাশ ইকুইলিব্রিয়াম (Nash equilibrium)। যা মোটামুটি evolutionary stable strategy ধারণার সমতুল্য। বিবর্তনের স্থিতিশীলতার বিষয়টি ডকিন্স সঠিকভাবেই দেখেছেন তার সোস্যাল বায়োলজি ব্যাখ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে। সামাজিক আচরণে ও সামাজিক অভিযোজনের গেম সুলভ উপকরণগুলো আসে নির্ভরতা থেকে, যেকোনো সামাজিক পরিস্থিতিতে, কোনো একটি একক সদস্যের কৌশলের সাথে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াকারীদের কৌশলগুলোর বিরুদ্ধে এর সফলতার উপর। অভিযোজনের অন্বেষণ, সার্বিক মঙ্গলের কথা চিন্তা না করে যা কোনো একটি পরিস্থিতি থেকে যতটুকু সম্ভব ততটুকু সুবিধা আদায় করে নেয়, সেটি খুব বিস্ময়কর ফলাফলের জন্ম দিতে পারে। কে ভেবেছিল, যেমন, সেই ভারী বিষয়টি, কেন মাছদের নানা প্রজাতির মধ্যে, অন্যান্য প্রায় সব প্রাণীদের ব্যতিক্রম, পুরুষরাই সাধারণত ডিম ও বাচ্চাদের পাহারা দেয়, যদি দুটি লিঙ্গের কেউ সেই কাজটি আদৌ করে থাকে, হয়তো নির্ভর করে কিছু তুচ্ছ বিষয়ের উপর যেমন কোন লিঙ্গটি বাধ্য পানিতে তার জনন কোষ আগে ছড়াবার জন্য? তারপরও ডকিন্স এবং তার এক সহকর্মী, আর, এল, ট্রিভার্স এর একটি ধারণাকে অনুসরণ করে চমৎকার একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন যে, সময়ের সূক্ষ্মতম বিষয়, এমনকি সেকেন্ড পরিমান তারতম্য, এই পুরো বিষয়টির জন্য একান্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আবারো, আমরা কি এমন প্রত্যাশা করতাম না যে, একগামী পাখি প্রজাতির স্ত্রী সদসদ্যের, যারা সঙ্গীর সাহায্যে আশীর্বাদপুষ্ট, তারা বেশী ডিম পাড়বে, বহুগামী প্রজাতির স্ত্রী সদস্যদের চেয়ে? আসলে এর উল্টোটাই সত্য। ডকিন্স, তার খানিকটা শঙ্কা জাগানো অধ্যায়,আন্তঃলিঙ্গ যুদ্ধে আবারো সেই বিবর্তনীয় স্থিতিশীলতার ধারণাটি প্রয়োগ করেছেন, কারো দ্বারা ব্যবহৃত হবার প্রতিরোধ হিসাবে ( এই ক্ষেত্রে পুরুষ) এবং হঠাৎ করেই এই অদ্ভুত যোগসূত্রতাকে স্বাভাবিক হিসাবে প্রতীয়মান করেছেন। তার ধারণাটি, তার বেশীর ভাগ অন্য ধারণার মত, অপ্রমাণিত, হয়তো আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকতে পারে, কিন্তু তিনি যা প্রস্তাবনা করেছেন, সেটি তার নতুন করে দেখার অবস্থান থেকে এত সহজেই দেখা যায়, যে এটি দৃষ্টি আকর্ষণের দাবী রাখে।