.
প্রকৃতির খেলা
ডাবলিউ ডি, হ্যামিলটন, সায়েন্স, ১৯৬:৭৫৭–৫৯ (১৩ মে। ১৯৭৭) (আংশিক)
এই বইটি পড়া উচিৎ, আর প্রায় যে কেউই এই বইটি পড়তে পারবেন। এটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিবর্তন তত্ত্বের একটি নতুন রুপের বিবরণ দিয়েছে। যথেষ্ট হালকা, ভারমুক্ত একটি শৈলী সমৃদ্ধ– যা ইদানীং জনগণের কাছে নতুন এবং ভ্রান্ত জীববিজ্ঞান বিক্রি করছে– এই বইটি, আমার মতে, একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এটি সফল হয়েছে সরল, অকারিগরী ইংরেজী ভাষা ব্যবহারের করে সাম্প্রতিক বিবর্তন জীববিজ্ঞানের কিছু অস্পষ্ট, জটিল এবং প্রায় গাণিতিক মূল ধারণাগুলোকে উপস্থাপন করার আপাতদৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব কাজটি সম্পাদন করতে। অবশেষে, এই বইটির মাধ্যমে সেই ধারণাগুলোর বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে, ধারণাগুলো বিস্মিত ও কৌতূহলী করে তুলবে এমনকি অনেক গবেষণারত জীববিজ্ঞানীকেও, যারা নিজেরাই হয়তো মনে করেছেন ইতিমধ্যেই তারা সব জানেন। অন্ততপক্ষে, এই কারণে বইটি এই পর্যালোচনাকারীকে বিস্মিত করেছে। তারপরও, পুনরাবৃত্তি করলে, এই বইটি খুব সহজেই পাঠযোগ্য যে কারো পক্ষেই যাদের ন্যূনতম পর্যায়ে বিজ্ঞান ধারণা আছে।
এমনকি আত্মম্ভরিতা প্রকাশ করার কোনো উদ্দেশ্যই ছাড়াই, কারো। গবেষণার বিষয়বস্তুর নিকটবর্তী কোনো বিষয়ে জনপ্রিয় কোনো বই পড়লে, এর পাঠককে আসলেই বাধ্য করে ভ্রান্তির একটি তালিকা করার জন্য, যেমন: এই উদাহরণটি প্রযোজ্য নয়, এই বিষয়টির অস্পষ্ট ব্যাখ্য দেয়া হয়েছে, সেই ধারণাটি ভুল, বহু আগেই তাদের পরিত্যাগ করা হয়েছে ইত্যাদি। আমার জন্য এই বইটির সেই তালিকা প্রায় শূন্য একটি কাগজ। এর মানে এই না যে এখানে সম্ভাব্য কোনো ভ্রান্তি নেই– সেটি কদাচিৎ ঘটতে পারে এমন কোনো কাজে, যেখানে অনুমান নির্ভর ধারণা এক অর্থে অপরিহার্য মূল বিষয়বস্তু– কিন্তু সামগ্রিকভাবে এর জীববিজ্ঞান দৃঢ়ভাবে সঠিক এবং এর প্রশ্নবিদ্ধ প্রস্তাবণাগুলো নিদেনপক্ষে মতবাদর্নিভর নয়। নিজের ধারণাগুলো সম্বন্ধে লেখকের বিনয়ী পর্যালোচনা সমালোচকদের নিরস্ত্র করার প্রবণতা আছে এবং বইটির নানা জায়গায় পাঠক নিজেই তৃপ্তি খুঁজে পান লেখকের প্রস্তাবনায়, যেমন পাঠকের উচিৎ হবে আরো উত্তম মডেল নিয়ে কাজ করা, যদি প্রদত্ত মডেলটি তাকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়। এ ধরনের কোনো আমন্ত্রণ যে আন্তরিক গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করা যেতে পারে কোনো জনপ্রিয় বইয়ে, এই বিষয়টি প্রাণবন্তভাবে প্রতিফলিত করে বইটির বিষয়বস্তুর নতুনত্বকে। বিস্ময়করভাবে, আসলেই বেশ কিছু সম্ভাবনা আছে প্রস্তাবিত সরল ধারণাগুলো যা এখনও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি, তারা হয়তো খুব শীঘ্রই বিবর্তনের পুরোনো কিছু ধাঁধার সমাধান করবে।
বেশ, তাহলে বিবর্তনের নতুন রুপটি কি? একটি নির্দিষ্ট পর্যায় অবধি এটি অনেকটাই শেক্সপিয়ারের নতুন ব্যাখ্যার মত: মূল পাণ্ডুলিপি পুরোটাই ঠিকই আছে, কিন্তু কোনো না কোনোভাবে গবেষকদের নজর এড়িয়ে গেছে। আমার এখানে সংযুক্ত করা উচিৎ, যদিও, ডকিন্সের আলোচনার সেই নতুন দৃষ্টিভঙ্গিটি কিন্তু তেমন সুপ্ত ছিলনা। ডারউইনের বিবর্তনের পাণ্ডুলিপিতে যেমন, প্রকৃতির পাণ্ডুলিপিতেও তেমন; এবং সময়ের মাত্রায় এই বিষয়টির উপর মনোযোগ দেবার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা শত বছরের প্রাচীন নয় বরং বিশ বছরে কাছাকাছি হবে। যেমন, ডকিন্স শুরু করেছিলেন, সেই সব বৈচিত্র্যময় সর্পিলাকার অণুগুলো থেকে, যে বিষয়ে আমরা এখন খুব ভালো করেই জানি। ডারউইন এমনকি ক্রোমোজোম সম্বন্ধে অথবা যৌন প্রজনন প্রক্রিয়ায় তাদের অদ্ভুত নৃত্য সম্বন্ধে তার কিছুই জানা ছিলনা। কিন্তু এমনকি বিশ বছরও যথেষ্ট দীর্ঘ সময় বিস্ময় সৃষ্টি করার জন্য।
প্রথম অধ্যায়ে, বইটি যে প্রাকৃতিক ঘটনাটি ব্যাখ্যা করতে চাইছে, সাধারণভাবে সেটির বৈশিষ্ট্যগুলোর বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়েছে এবং মানব জীবনে তাদের দার্শনিক এবং প্রায়োগিক গুরুত্ব প্রদর্শন করেছে। কিছু কৌতূহদ্দেীপক এবং শঙ্কা উদ্রেককারী প্রজাতির উদাহরণ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা তাদের সেই আদিম মিশ্রণ বা সুপে প্রথম রেপ্লিকেটর বা অনুলিপনকারীদের আলোচনায় ফিরে যাই। আমরা দেখি এরা সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং আরো বিস্তৃত হয়। তারা সীমিত কাঁচামাল উপাদানের জন্য পরস্পরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যুদ্ধ করে, এবং একে অপরকে পরিপাক কিংবা খেয়ে ফেলে। তারা নিজেদের এবং তাদের অর্জন আর অস্ত্রগুলো প্রতিরক্ষা মূলক প্রাচীরের পেছনে লুকিয়ে রাখে; এটাই পরবর্তীতে ব্যবহৃত হয় আশ্রয় হিসাবে, শুধুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাল্টা কৌশল বা আগ্রাসী শিকারীদের কাছ থেকেই নয়, পরিবেশের নানা প্রতিকূল চাপ থেকেও, অনুলিপনকারীরা ক্রমশ যাদের এড়াতে আরো দক্ষ হয়ে ওঠে। এভাবেই তারা গড়ে ওঠে, স্থিতিশীল হয়, অদ্ভুত সব রুপের কাঠামো গঠন করে, সাগর পাড়ে ছিটকে পরে, স্থল অতিক্রম করে, মরুভূমি আর চিরন্তন বরফে। এই সব সীমানাগুলোর মধ্যে, যা অতিক্রম করে, জীবন বেশীক্ষণ টিকতে পারেনা। আমি সেই সুপ বার বার ঢালা হয়েছে লক্ষ কোটি বছর বিচিত্র থেকে ক্রমশ বিচিত্ৰতর ছাঁচে। অবশেষে, এটি ঢালা হয়েছে পিপড়ায় এবং হাতিতে, মানড্রিল ও মানুষে। দ্বিতীয় অধ্যায় শেষ হয়, এইসব আদি অনুলিপিকারকদের কিছু চূড়ান্ত সেই উত্তরসূরি জোট। সংক্রান্ত ভাবনায়: “তাদের সুরক্ষা করার আমাদের অস্তিত্বের চূড়ান্ত যৌক্তিকতা, তারা এখন পরিচিত জিন নামে আর আমরা হচ্ছি তাদের টিকে থাকার যন্ত্র।