আমার থেকে যতটা সে শিখেছিল, তার কাছে থেকে আমি আরো বেশী শিখতে শুরু করার আগে ঘটনাক্রমে ইয়ান, অক্সফোর্ডের নিউ কলেজে আমার আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্র ছিল। এরপর সে অ্যালান গ্রাফেনের অধীনে গ্রাজুয়েট ছাত্র ছিল, অ্যালান গ্রাফেন আন্ডারগ্রাজুয়েট থাকাকালীন আমিও তার শিক্ষক ছিলাম, পরবর্তীতে যে আমার গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী হয়েছিল এবং যার বিবরণ আমি দিয়েছি এখন আমার বৌদ্ধিক গুরু হিসাবে। সুতরাং ইয়ান একই সাথে স্টুডেন্ট এবং গ্রান্ডস্টুডেন্ট, একটি চমৎকার মিমগত সমরুপ উদাহরণ আমার ইতিপূর্বে উল্লেখিত বক্তব্যটির, যে আমারা বহু উপায়ে পরস্পরের আত্মীয়, যদি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের দিক আরো বেশী জটিল, এই সাধারণ সরলীকরণ যা ইঙ্গিত দিচ্ছে তার চেয়ে।
সারাংশ যদি করি, জীবনের জিনকেন্দ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি, এই বইটির কেন্দ্রীয় প্রস্তাবনা, শুধুমাত্র পরার্থবাদিতা আর স্বার্থপরতা বিবর্তনের বিষয়টির উপরেই আলোকপাত করেনি, এর পূর্ববর্তী সংস্করণ যা ব্যাখ্যা করেছে। এটি গভীর একটি অতীতের উপর আলোকপাত করেছে এমন কিছু উপায়ে যখন আমি প্রথম ‘দ্য সেলফিশ জিন’ লিখেছিলাম, সে সম্বন্ধে আমার সাধারণ কোনো ধারণাই ছিলনা। যা ব্যাখ্যা করা হয়েছে আরো প্রাসঙ্গিক কিছু অনুচ্ছেদে ( সহলেখক হিসাবে ইয়ানের সাথে মূলত সেগুলো লেখা), দি অ্যানসেস্টর টেইলের দ্বিতীয় সংস্করণে। জিনকেন্দ্রীক দৃষ্টিভঙ্গি এতই শক্তিশালী, ঐতিহাসিক জনসংখ্যাতত্তেএকজন একক ব্যক্তির জিনোমই যথেষ্ট পরিমাপসূচক বিস্তারিত উপসংহারে উপনীত হতে পারে। এটি আর কি করতে সক্ষম? নাইজেরিয়ার তুলনামূলক উদাহরণের সাথে যার পুর্বাভাস পেয়েছি, পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার ব্যক্তিদের জিনোমে ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ অতীত থেকে আসা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক সংকেতগুলোর একটি ভৌগলিক মাত্রা দিতে পারে।
এই জিনকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দূর অতীতে হয়তো আরো অন্য উপায়ে কি প্রবেশ করতে পারে? আমার বেশ কিছু বই একটি ধারণা প্রতিপালন করেছে, যার নাম আমি দিয়েছিলাম, ‘দ্য জেনেটিক বুক অব দ্য ডেড। কোনো একটি প্রজাতি জিনপুল হচ্ছে পরস্পরের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ জিনদের একটি সফল জোট, যা অতীতের কোনো একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে বেঁচে ছিল, বহু অতীতে এবং বর্তমানে। আর এই বিষয়টি জিনপলটিকে ঐসব পরিবেশের একটি ‘নেগেটিভ’ ছাপের মত ভাবা সম্ভব হতে পারে। যথেষ্ট পরিমান জ্ঞানী কোনো জিনতাত্ত্বিকের পক্ষে কোনো একটি প্রাণীর জিনোম থেকে, তার পূর্বসূরিরা যে পরিবেশ বেঁচে ছিল সেটি পড়তে পারার দক্ষতা থাকা উচিৎ। নীতিগতভাবে, কোনো একটি মোলের (Talpa europaea) মধ্যে থাকা ডিএনএ মাটির নীচের একটি জগতের বিবরণে খুবই দক্ষ হওয়া উচিৎ, আর্দ্র, মাটির নীচের সেই অন্ধকার, কেঁচোদের, পচা-পাতা আর বীটল লার্ভাদের গন্ধ চারিদিকে। একটি উটের জিনোম (ড্রোমেডারি, Camelus Dromedarius), যদি আমরা জানি কিভাবে পড়তে হয়, এটি প্রাচীন পূর্বসূরিদের মরুভূমি, ঝুলোঝড়, বালিয়াড়ি, আর তৃষ্ণার একটি সাংকেতিক ব্যাখ্যা প্রকাশ করবে। সাধারণ বটল নোজ ডলফিনের (Tursiops truncatus) ডিএনএ প্রদর্শন করবে এমন ভাষায়, যা আমরা হয়তো একদিন মর্মোদ্ধার করতে পারবো, ‘উন্মুক্ত সাগর, দ্রুত মাছ ধরার জন্যে এর পিছু নাও, কিলার হোয়েল বা তিমিকে এড়িয়ে চলো’। কিন্তু সেই একই ডলফিনের ডিএনএ তে সেই অনুচ্ছেদও থাক, সেই প্রাচীনতর বিশ্বগুলোর কথা, যেখানে জিনগুলো টিকে ছিল:স্থলে পূর্বসূরিরা যখন টাইনোসর আর আলোসরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এড়িয়ে যথেষ্ট দীর্ঘ সময় অবধি বেঁচে থাকত হতো যেন তারা প্রজনন করতে পারে। তারপর, এরও আগে, ডিএনএ কিছু অংশ নিশ্চয়ই টিকে থাকার জন্যে এমনকি আরো আগের দক্ষতার বিবরণ দেয়, যখন সাগরে, পূর্বসূরিরা ছিল মাছ, যাদের আক্রমণ করতো হাঙ্গর, এমনটি ইউরাইপটেরিডরা (জায়ান্ট সি স্করপিয়ন)। অনাগত ভবিষ্যতে ‘দ্য জেনেটিক বুক অব দ্য ডেড’ নিয়ে সক্রিয় গবেষণার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি কি ‘দ্য সেলফিস জিনের’ পঞ্চাশত প্রকাশনা জয়ন্তীর এপিলোগকে প্রভাবিত করবে?
১৫. পর্যালোচনা থেকে বাছাইকৃত কিছু অংশ
পর্যালোচনা থেকে বাছাইকৃত কিছু অংশ
প্রো বোনো পুবলিকো (জনগণের কল্যাণে)
পিটার মেদাওয়ার, দ্য স্পেক্টেটর, ১৫ জানুয়ারী, ১৯৭৭
জীববিজ্ঞানে অপেশাদারীরা– একটি শ্রেণী, যার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় সমাজবিজ্ঞানীরা অন্তর্ভুক্ত– যখন আপাতদৃষ্টিতে পরার্থবাদী অথবা প্রাণীদের কোনো না কোনোভাবে নিঃস্বার্থ আচরণের মুখোমুখি হন, খুব সহজেই তারা বলতে প্রলুদ্ধ হন, এই “আচরণটি বিবর্তিত হয়েছে, “প্রজাতির কল্যাণের জন্য।
একটি সুপরিচিত পুরাণ কাহিনী আছে, যেমন, লেমিংরা (১)– এই প্রয়োজনীয়তার প্রতি আমাদের চেয়েও যারা স্পষ্টতই অনেক বেশী সচেতন– হাজারে হাজারে পাহাড় থেকে নীচে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দেবার মাধ্যমে তাদের অতিরিক্ত জনসংখ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এমনকি সবচেয়ে বিশ্বাসপ্রবণ প্রকৃতিবিদও নিশ্চয়ই নিজেকে অবশ্যই প্রশ্ন করবেন, প্রজাতির আচরণ সম্ভারে কিভাবে এই ধরনের পরার্থবাদীতামূলক কাজ অংশ হতে পারে, যদি সেই বাস্তব সত্যটি বিবেচনা করা হয়, এই ধরনের আচরণে সহায়ক জিনগত গঠনের বহনকারীদের এই সুবিশাল জনসংখ্যাতাত্ত্বিক আত্মাহুতির (প্রকাশ্য প্রায়শ্চিত্ত) মাধ্যমে তো অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাওয়ারই কথা। এটিকে পুরাণ কাহিনী হিসাবে প্রত্যাখ্যান করা মানে কিন্তু এটিকে অস্বীকার করা নয়। যদিও, এই জিনগত স্বার্থপর কাজগুলো হয়তো কখনোও নিঃস্বার্থ অথবা পার্থবাদী আচরণে প্রকাশ ( যেভাবে ডাক্তাররা বলেন) পেতে পারে। পিতা/মাতামহী সুলভ পশ্রয়, অসংবেদনশীল নির্বিকারতার বীপরিতে বিবর্তনে জয়ী হতে পারে কারণ দয়ালু পিতা/মাতামহীরা স্বার্থপরভাবেই তাদের নিজেদের জিনের অংশকে বিস্তার করতে বিশেষভাবে সহায়তা করছেন, যা তাদের নাতীনাতনীরা তাদের শরীরে বহন করছে।