এখন, এখানে কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়টি হচ্ছে, যদিও আমি আমার কোনো জিনের আলিল জোড়ার একেবারে সঠিক কোয়ালেসেন্স পয়েন্ট প্রতিষ্ঠা করতে পারবো না, কিন্তু জিনতত্ত্ববিদরা নীতিগতভাবে একজন একক ব্যক্তির শরীরের সব জিনে জোড়া অ্যালিলি নিয়ে অতীত অভিমূখে সম্ভাব্য সব পথ বিবেচনা করে ( আসলে সব সম্ভাব্য পথ ব্যবহার করে না, কারণ অনেক বেশী সংখ্যক পথ আছে, বরং সেগুলো থেকে পরিসংখ্যানমূলক একটি নমুনায়), পুরো জিনোম জুড়ে একটি কোয়ালেসেন্স প্যাটার্ন প্রস্তুত করতে পারেন। হেঙ লি এবং রিচার্ড ডুরবিন, কেমব্রিজের স্যাঙ্গার ইন্সস্টিটিউটের এই দুই গবেষক একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় অনুধাবন করেছিলেন: কোনো একটি একক ব্যক্তির জিনোমের জিনজোড়াগুলোর মধ্যে কোয়ালেসেন্স প্যাটার্ন আমাদের একটি পুরো প্রজাতির প্রাগৈতিহাসের নির্দিষ্ট সময় পরিমাপযোগ্য মুহূর্তের একটি জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বিবরণ পুনর্গঠন করার জন্যে যথেষ্ট পরিমান তথ্য দেয়।
জিন জোড়গুলোর মধ্যে কোয়ালেসেন্স নিয়ে আমাদের আলোচনায়, যে জিন জোড়ার একটি এসেছে বাবা থেকে আর একটি মা থেকে; ‘জিন’ শব্দটির মানে, যেভাবে আণবিক জীববিজ্ঞানীরা শব্দটি ব্যবহার করেন তার চেয়ে খানিকটা নমনীয়। আসলেই আপনি হয়তো বলতে পারেন যে, কোয়ালেসেন্স জিনতত্ত্ববিদরা খানিকটা সেই পুরানো সংজ্ঞায় প্রত্যাবর্তন করেছেন, যা খানিকটা আমার সেই ‘ক্রোমোজোমের স্বার্থপর বড় টুকরো এবং ক্রোমোজোমের আরো বেশী স্বার্থপর ক্ষুদ্র টুকরো’ সংজ্ঞার মত। কোয়ালেসেন্স বিশ্লষণ ডিএনএর সেই টুকরোগুলো বিশ্লেষণ করে গবেষণা করছেন, যেগুলো হয়তো বড় এবং ছোটো হতে পারে আণবিক জীববিজ্ঞানীদের একটি একক জিন বলতে কি বোঝান তার থেকে, কিন্তু সেগুলো পরস্পরের আত্মীয় হতে পারে তা সত্ত্বেও, যারা ভাগ করে নেয়া একটি সাধারণ পূর্বসূরি থেকে পৃথক হয়েছে কোনো একটি সুনির্দিষ্ট সংখ্যক প্রজন্ম আগে।
যখন একটি জিন (সেই অর্থে) এর দুটি কপি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দুটি সন্তানের প্রত্যেককে একটি করে দেয়, ঐ দুটি কপির উত্তরসূরিরা হয়তো, সময় অতিক্রান্ত হলে মিউটেশনের কারণে নিজেদের মধ্যে পার্থক্য পুঞ্জিভূত করে। এগুলো হয়তো ‘ধরা পড়ে না‘ কারণ ফিনোটাইপের পার্থক্যে সেগুলো দৃশ্যমান হয়না। মিউটেশনের কারণে সৃষ্ট পার্থক্যগুলো তাদের মধ্যে যা আমরা পাবো সেটি তাদের পৃথক হবার সেই সময়ের পর থেকে অতিক্রান্ত হওয়া সময়ের সমানুপাতিক, একটি বাস্তবতা যা জীববিজ্ঞানীরা নানা বিশ্লেষণে ব্যবহার করতে পারেন, আরো বেশী সময়ের পরিক্রমায়, তথাকথিত মলিকুলার ক্লকে (আণবিক ঘড়ি)। এছাড়াও, সেই জিনজোড়াগুলো যাদের আত্মীয়তা আমরা পরিমাপ করছি তাদের পরস্পরের মত একই ফিনোটাইপিক প্রভাব থাকার প্রয়োজন নেই। আমি আমার বাবার কাছ থেকে একটি নীল চোখের জিন পেয়েছি, একটি বাদামী চোখের জিন আমার মায়ের কাছ থেকে। যদিও এই জিনগুলো ভিন্ন, এমনকি তাদেরও অবশ্যই অতীতে একটি কোয়ালেসেন্ট পয়েন্ট ছিল: সেই মুহূর্ত যখন একটি সুনির্দিষ্ট জিন আমার বাবা-মার কোনো একটি সাধারণ পূর্বসূরির শরীরে পৃথক হয়ে একটি করে কপি দুটি সন্তানের মধ্যে প্রবেশ করেছিল। সেই কোয়ালেসেন্স (ভিক্টোরিয়ার দুই কপি নীল চোখের জিনের ব্যতিক্রম) ঘটেছিল বহু দিন আগে, এবং এই এক জোড়া জিন বহু সময় পেয়েছে পার্থক্য জমা করার জন্যে, বিশেষ করে তাদের মাধ্যমে সংকেত করা চোখের রঙের ভিন্নতা।
আমি বলেছিলাম, একজন একক ব্যক্তির জিনোমে কোয়ালেসেন্স প্যাটার্ন নিয়ে অনুসন্ধানটিকে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক প্রাগৈতিহাসের খুঁটিনাটি পুনর্গঠন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেকোনো ব্যক্তির জিনোমই সেটি করতে পারে। বাস্তবে, আমি পৃথিবীর সেই মানুষগুলোর একজন, যাদের পুরো জিনোম অনুক্রম করা হয়েছে। এটি করা হয়েছিল ‘সেক্স, ডেথ অ্যান্ড দি মিনিং অব লাইফ’ শীর্ষক একটি টেলিভিশন প্রোগ্রামের জন্যে, যা ২০১২ সালে চ্যানেল ফোরের জন্যে আমি উপস্থাপনা করেছিলাম। ইয়ান ওং, ‘দ্য আনসেস্টর টেল’ এ আমার সহলেখক, যার কাছ থেকে কোয়ালেসেন্স তত্ত্ব এবং এছাড়া এ-সংক্রান্ত যা কিছু তার সবটাই শিখেছি, এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছিলেন, এবং প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ করেছিলেন। আমার জিনোম ব্যবহার করে লি/ডারবিন সদৃশ হিসাব-নিকাশ করেছিলেন শুধুমাত্র আমার জিনোম নিয়ে মানব ইতিহাস সম্বন্ধে যুক্তিনির্ভর কিছু উপসংহারে পৌঁছাতে।
প্রায় ৬০,০০০ আগে তিনি বহু সংখ্যক কোয়ালেসেন্স খুঁজে পেয়েছিলেন। এটি প্রস্তাব করে যে প্রজননশীল জনগোষ্ঠী, যার মধ্যে আমার পূর্বসূরিরা ছিলেন, সেটি ৬০,০০০ বছর আগে ছোট ছিল। তখন বেশী কেউ ছিল না, সুতরাং এক জোড়া আধুনিক জিনের একই পূর্বসূরির মধ্যে একাঙ্গীভূত হবার সম্ভাবনা ছিল অনেক বেশী। ৩০০,০০০ বছর আগে কোয়ালেসেন্স এর পরিমান ছিল কম, যা প্রস্তাব করছে কার্যকরী জনগোষ্ঠীর আকার ছিল অপেক্ষাকৃত বড়। এই সংখ্যাগুলো গ্রাফ হিসাবে সময়ের সাথে প্লট করা যায় একটি কার্যকর জনগোষ্ঠীর আকারের সাথে। এই প্যাটার্নটি তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন, এটি সেই একই প্যাটার্ন, এই টেকনিকটি যারা আবিষ্কার করেছিলেন, তারা কোনো ইউরোপিয় জিনোমে যা পাওয়ার প্রত্যাশা করতেন।
কালো রেখাটি (ছবি ১ দেখুন) ইতিহাসের নানা সময়ে একটি কার্যকর জনগোষ্ঠীর সম্ভাব্য আকার দেখাচ্ছে আমার জিনোমের উপর ভিত্তি করে (আমার বাবা ও মায়ের জিনের কোয়ালেসেন্সের)। এটি দেখাচ্ছে যে প্রায় ৬০,০০০ বছর আগে আমার পূর্বসূরি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কার্যকর জনগোষ্ঠীর আকার কমে গিয়েছিল। ধূসর রেখাটি একই সমতুল্য প্যাটার্ন, যার উৎস একজন নাইজেরিয়ীয় ব্যক্তির জিনোম। এটিও সেই একই সময়ে জনগোষ্ঠীর আকারে নিম্নমুখী পতন দেখাচ্ছে, কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম নাটকীয়তায় মাত্রায়। হয়তো যে বিপর্যয় এই নিম্নমুখী পতনের জন্যে দায়ী সেটি ইউরেশিয়ায় চেয়ে আফ্রিকায় কম প্রভাব ফেলেছিল।