অথবা এই আত্মীয়তার বিষয়টি আমরা মাইটোকন্ড্রিয়া’র দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লক্ষ করতে পারি, আমাদের সব কোষে প্রচুর পরিমানে ছোট যে অঙ্গাণুটি থাকে, আমাদের বেঁচে থাকার জন্যে যারা অপরিহার্য। তারা প্রজনন করে অযৌন উপায়ে, তাদের নিজেদের জিনোমে অবশিষ্টাংশ তারা ধরে রাখে (বহুদিন আগে তারা স্বাধীনভাবে বাস করতো এমন ব্যাকটেরিয়ার উত্তরসূরি)। উইলিয়ামসের সংজ্ঞায়, একটি মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোমকে একটি একক ‘জিন’ হিসাবে ভাবা যেতে পারে। আমরা শুধুমাত্র আমাদের মায়েদের কাছ থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া পাই। সুতরাং যদি আপনি এখন আমার কাছে জানতে চান রানির মাইটোকন্ড্রিয়ার সাথে আপনার মাইটোকন্ড্রিয়ার আত্মীয়তা কতটা নিকটবর্তী, তাহলে এর একটি একক উত্তর আছে। আমরা হয়তো জানতে পারবো না এর উত্তরটা, কিন্তু আমরা জানি আপনার আর রানির মাইটোক্রোন্ড্রিয়া একটি মাত্র উপায়ে কাজিন হতে পারে, বহু শত উপায়ে না যেমনটা ঘটে যদি আমরা পুরো শরীরের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়টি দেখি। আপনার বংশধারার অতীত অনুসরণ করুন প্রজন্মান্তরে, কিন্তু শুধুমাত্র আপনার মায়ের বংশধারা ধরে। নিরন্তর শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হওয়া পুরো জীবদের’ বংশধারার ব্যতিক্রম এখানে আপনি একটি সংকীর্ণ সুতা অনুসরণ করবেন (মাইটোকন্ড্রিয়াল)। রানির সাথে একই করতে হবে, তার মায়ের বংশধারার সংকীর্ণ সুতা বহু প্রজন্ম ধরে অতীতমুখী। কোনো না কোনো একসময় দুটি সুতো এক জায়গায় মিলবে এবং এখন, সেই দুটি সুতা ধরে প্রজন্মগুলো গণনা করে আপনি সহজেই রানির সাথে আপনার মাইটোকন্ড্রিয়াল আত্মীয়তা পরিমাপ করতে পারবেন।
যা আপনি মাইটোকন্ড্রিয়া দিয়ে করতে পারবেন, নীতিগতভাবে সেটি আপনি যেকোনো জিনের সাথে করতে পারবেন, আর এটাই জিন দৃষ্টিভঙ্গি আর পুরো জীবের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্যটি প্রদর্শন করে। পুরো একটি জীবের দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার একজন করে বাবা ও মা আছেন, চারজন পিতামহ/মহী, মাতামহ/মহী, আটজন প্রপিতামহ/মহী, প্রমাতামহ/মহী ইত্যাদি। কিন্তু, একটি মাইটোকন্ড্রিয়নের মতই প্রতিটি জিনের একজন বাবা অথবা মা, একজন পিতামহ/মহী বা মাতামহ/মহী, গ্রেট প্রপিতামহ/মহী বা প্রমাতামহ/মহী আছে এবং এভাবে চলতে থাকবে। যেমন, নীল চোখের জিন আমার আছে একটি, কিন্তু রানির আছে দুটি। নীতিগতভাবে আমরা বংশধারায় আগের প্রজন্মগুলো ধারাবাহিকতা লক্ষ করলে আমার নীল জিন আর রানির দুটি নীল জিনের প্রত্যেকটির সাথে আত্মীয়তা আবিষ্কার করতে পারি। এই দুটি জিনের সাধারণ পূর্বসূরিকে বলে ‘কোয়ালেসেন্স পয়েন্ট। কোয়ালেসেন্স অ্যানালাইসিস জিনতত্ত্বের খুবই দ্রুত বর্ধনশীল একটি শাখা এবং খুবই বিস্ময়কর। আপনি কি দেখতে পারছেন কিভাবে জিন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি এটি অনুকূল, যা এই পুরো বইটি সমর্থন করছে? আমরা আর পরার্থবাদ নিয়ে কোনো কথা বলছি না। জিন দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সব দৃষ্টিভঙ্গির উপর তার প্রাধান্য প্রদর্শন করছে, এই ক্ষেত্রে অতীত বংশ ঐতিহ্যের দিকে তাকিয়ে।
আপনি এমনকি একটি একক শরীরের মধ্যে ধারণ করা দুটি অ্যালিলের মধ্যে কোয়ালেসেন্স’ পয়েন্টও পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। প্রিন্স চার্লস এর নীল চোখ আছে আর আমরা ধরে নিতে পারি, এক জোড়া নীল চোখের অ্যালিল পরস্পরের মুখোমুখি বসে আসে তার ক্রোমোজোম ১৫ র উপর। প্রিন্স চার্লসের দুই নীল চোখের জিন অ্যালিলগুলো পরস্পরেরর কতটা নিকটবর্তী, যার একটি তার বাবা, অন্যটি তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া? এই ক্ষেত্রে আমরা একটি সম্ভাব্য উত্তর জানি, আর সেটি আমরা জানি শুধুমাত্র তার কারণ রাজবংশলতিকা খুব সতর্কতার সাথে সংরক্ষণ করা হয়, যা অন্য কোনো বংশলতিকার সাথে সাধারণত করা হয়না। রানি ভিক্টোরিয়ার নীল চোখ ছিল, এবং প্রিন্স চার্লস দুটি উপায়ে রানি ভিক্টোরিয়ার উত্তরসূরি। তার মায়ের দিক থেকে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের মাধ্যমে এবং প্রিন্স এলিস অব হেসের মাধ্যমে তার বাবার বংশ থেকে। সুতরাং ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে ভিক্টোরিয়ার নীল চোখের জিনের দুটি অনুলিপি আলাদা হয়েছিল পরস্পরের থেকে, তাদের একটি প্রবেশ করে সপ্তম এডওয়ার্ডের শরীরে, অন্যটি গিয়েছিল তার মেয়ে প্রিন্সেস এলিসের শরীরে। এই দুটি সহোদর জিনের আরো অনেক কপি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ একদিকে আর অন্যদিকে প্রিন্স ফিলিপের বংশধারায় সহজেই এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে হস্তান্তরিত হয়েছিল, এবং তারপর তারা আবার একত্রিত হয় প্রিন্স চার্লসের শরীরে। এর মানে এই দুটি জিনের ‘কোয়ালেসেন্স পয়েন্ট ছিল ভিক্টোরিয়া। আমরা জানি না, আর জানতেও পারবো না, চার্লসের নীল চোখের জিনের জন্যে এটি সত্য কিনা। কিন্তু পরিসংখ্যানগতভাবে এটি সত্য হতে হবে যার বহু জোড়া জিনের কোয়ালেসেন্স পয়েন্ট ছিল ভিক্টোরিয়া। আর একইভাবে বিষয়টি প্রযোজ্য আপনার এবং আপনার জিনজোড়াদের সাথে। যদিও আমাদের প্রিন্স চার্লসের মত এত বিস্তারিত বংশলতিকা নেই যাচাই করার জন্যে, আপনার যেকোনো একজোড়া জিন নীতিগতভাবে, তাদের সাধারণ পূর্বসূরির বরাবর অনুসরণ করা যেতে পারে, সেই ‘কোয়ালেসন্স পয়েন্ট যেখানে এটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে একই প্যারেন্ট জিন থেকে।