(১৮) “স্টটিং’ চতুষ্পদী প্রাণী বিশেষ করে গেজেদের মধ্যে দৃশ্যমান একটি আচরণ, যখন তারা লাফ দিয়ে শূন্যে ভেসে ওঠে, মাটি থেকে চার পা তুলে একসাথে, সাধারণ পাগুলো শক্ত সোজা হয়ে থাকে, ধনুকের মত বাঁকানো পিঠ এবং মাথা নীচের দিকে মুখ করে দেখে।
(১৯) ফ্রিডেরিখ লিওপোল্ড অগাস্ট ভাইজমান (১৮৩৪-১৯১৪): জার্মান বিবর্তন জীববিজ্ঞানী। আর্নস্ট মায়ার তাকে ডারউইনের পর উনবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিবর্তন তাত্ত্বিক বলে উল্লেখ করেছিলেন।
(২০) জিন নির্বাচনের আমার এই ম্যানিফেস্টোটি লেখার পর, আমার পরবর্তীতে ভিন্ন একটি ভাবনা হয়েছিল– আরো কি কোনো ‘ধরনের উচ্চতর পর্যায় আছে যেখানে প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করে কিনা বিবর্তনের দীর্ঘ সময় জুড়ে। আমি দ্রুত সেটা যোগ করার চেষ্টা করলাম, যখন আমি বলি “উচ্চতর পর্যায়, আমি কিন্তু সেটি বলতে কোনো ‘গ্রুপ সিলেকশন বা নির্বাচন’ বোঝাচ্ছি না। আমি কথা বলছি আরো সূক্ষ্ম আর আরো বেশী কৌতূলদ্দেীপক একটি বিষয় নিয়ে। আমার এখন মনে হয় শুধুমাত্র কিছু একক সদস্য অন্যদের চেয়ে বেশী ভালোভাবে টিকে থাকেই না, পুরো একটি শ্রেণীর জীবরাও অন্যদের চেয়ে বেশী দক্ষতার সাথে বিবর্তিত হতে পারে। অবশ্যই যে বিবর্তিত হবার কথা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি এখানে সেটা সেই একই বিবর্তন প্রক্রিয়া, যা ঘটে নির্বাচনের মাধ্যমে, আর নির্বাচনটি হয় জিন পর্যায়ে। মিউটেশনগুলো বিশেষ সহায়তা পায় এখনও কারণ একক সদস্যদের উপর বেঁচে থাকা আর তাদের প্রজনন সাফল্যের উপর তাদের প্রভাব আছে। কিন্তু কোনো একটি বড় নতুন মিউটেশন, মূল জণতাত্ত্বিক পরিকল্পনায় আরো অসংখ্য নানামুখী বিবর্তন ঘটার পথটি উন্মুক্ত করে দেয় ভবিষ্যত বহু মিলিয়ন বছর ধরে। সুতরাং একধরনের উচ্চ পর্যায়ের নির্বাচন ঘটতে পারে ভ্রূণতত্ত্বে যা নিজেদের উন্মুক্ত করে দেয় বিবর্তনের জন্য: কোনো একটি নির্বাচন বিবর্তনশীলতার পক্ষে, যা বিবর্তন হবার সপক্ষে কাজ করে। এই ধরনের নির্বাচন এমনকি হতে পারে পুঞ্জীভূত এবং সেকারণের ধাপে ধাপে অগ্রসর এমনভাবে যা গ্রুপ সিলেকশনে দেখা যায় না। এই ধারণাটি আরো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে আমার The Evolution of Evolvability শীর্ষক একটি প্রবন্ধে, যেটি লেখার জন্য আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম Blind Watchmaker নিয়ে কম্পিউটারে কাজ করার সময়। Blind Watchmaker একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা বিবর্তনের বিশেষ ক্ষেত্রগুলোর মত কাল্পনিক পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে।
০২. অনুলিপনকারীরা
অধ্যায় ২: অনুলিপনকারীরা
একেবারে শুরুতে ছিল শুধু সরলতা। কিভাবে একটি খুব সরল সাধারণ মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিল সেটি ব্যাখ্যা করাও যথেষ্ট কঠিন একটি কাজ। আর আমি ধরে নিচ্ছি সবাই একমত হবেন যে, আরো বেশী কঠিন হবে ব্যাখা করা, যে কিভাবে পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত, আর জটিলভাবে বিন্যস্ত, জীবন বা এমন কোনো সত্তা যা কিনা জীবন সৃষ্টি করতে পারে, হঠাৎ করে আবির্ভূত হতে পারে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত হচ্ছে একটি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা, কারণ এটি আমাদের একটি উপায় দেখাতে সক্ষম যেখানে সরলতা জটিলতায় রূপান্তরিত হতে পারে, কিভাবে অবিন্যস্ত এলোমেলো অণুরা একসাথে গুচ্ছাকারে জড়ো হয়ে ক্রমান্বয়ে আরো অনেক বেশী জটিল কোনো রুপের সৃষ্টি করে চলতে যতক্ষণ না অবধি তারা মানুষ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। ডারউইন একটি সমাধান আমাদের দিয়ে গেছেন, আর আমাদের অস্তিত্বের গভীরতম সমস্যাটির সমাধানে আপাতত প্রস্তাব করা হয়েছে এমন সমাধানগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে সম্ভাব্য সমাধান। আমি এই মহান তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো সাধারণত যেভাবে করা হয় তার চেয়ে আরো খানিকটা সাধারণীকরণ করে, বিবর্তন প্রক্রিয়াটি নিজেই শুরু হবার আগের সেই সময় থেকে।
ডারউইনের ‘সবচেয়ে যোগ্যতমদের টিকে থাকা’ প্রস্তাবনাটি আসলেই আরো বেশী সাধারণ ‘স্থিতিশীলদের টিকে থাকা’ সূত্রটিরই বিশেষ একটি কেস। মহাবিশ্ব পুর্ণ নানা স্থিতিশীল জিনিসে। স্থিতিশীল কিছু বোঝাতে আমরা বুঝি, অণুদের একটি গুচ্ছ যার যথেষ্ট স্থায়িত্ব আছে বা যথেষ্ট সাধারণ এর উপস্থিতিতে যে তারা একটি নাম পাবার যোগ্যতা রাখে। হতে পারে এরা আসলেই অনন্য অণুদের স্বতন্ত্র একটি সম্ভার, যেমন, ম্যাটারহর্ন (সুইজারল্যান্ড এবং ইতালীর মাঝখানে আল্পসের একটি পর্বত, একটি নাম পাওয়ার জন্য যা যথেষ্ট পরিমান দীর্ঘসময় টিকে থাকে। বা হতে পারে এটি কোনো এক শ্রেণীর কিছু, যেমন, বৃষ্টির ফোঁটা, যারা বেশ উচ্চ হারেই অস্তিত্বশীল হয় বলে তারা সামগ্রিকভাবে একটি নামের দাবী রাখে, যদিও তাদের মধ্যে কেউ কেউ যথেষ্ট পরিমান স্বল্পস্থায়ী। যা কিছু আমরা আমাদের চারপাশে দেখি এবং যা কিছু আমরা মনে করি ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে– পাথর, ছায়াপথ, সাগরের ঢেউ– এসব কিছুই কম বেশী মাত্রায় অণুদের নানা স্থিতিশীল রুপ– সাবানের ফেনায় সৃষ্টি বুদবুদ সাধারণত গোলাকার হয় কারণ এই ধরণের গ্যাস পূর্ণ পাতলা স্তরের কোনো কিছুর জন্যে এটাই সবচেয়ে স্থিতিশীল একটি রুপ। কোনো মহাশূন্যযানেও পানি স্থিতিশীল গোলাকার গ্লোবিউল হিসাবে, কিন্তু পৃথিবীতে যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে, পানির স্থিতিশীল উপরি পিঠটা চ্যাপটা আর আনুভূমিক। লবনের স্ফটিকগুলো সাধারণ ঘণ কিউবাকৃতির হয় কারণ, সোডিয়াম আর ক্লোরাইড আয়নকে বেধে রাখার জন্য এটাই সবচেয়ে স্থিতিশীল রুপ। সূর্যের সবচেয়ে সাধারণতম অণুগুলো হচ্ছে। হাইড্রোজেন পরমাণু, যারা পরস্পরের সাথে মিশে তৈরী করে হিলিয়াম পরমাণু, কারণ যেখানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করে যেখানে হিলিয়াম পরমানুর গঠনটি আরো বেশী স্থিতিশীল। অন্যান্য আরো জটিল অণুরা নক্ষত্রে তৈরী হচ্ছে সারা মহাবিশ্ব জুড়ে, সেই ‘বিগ ব্যাঙ্গ’ এর অল্প কিছু সময় পর থেকেই, বিদ্যমান তত্ত্ব অনুযায়ী যে মুহূর্তে মহাবিশ্বের সূচনা করেছিল। এবং আমাদের পৃথিবীর সব মৌলগুলো মূলত এখান থেকেই এসেছিল।