প্রজাতির জন্য ভবিষ্যতে শিকার করা যায় এমন প্রাণীদের মজুদ বাড়ানোর লক্ষ্যে তাদের শিকার করার আচরণকে সংযত করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ডারউইনবাদে সর্বব্যাপী বিদ্যমান ভ্রান্তি মূলত আমাকে এই বইটি লেখার জন্যে প্ররোচিত করেছিল। অথবা, প্রাকৃতিক নির্বাচন– যেমন আমি এখানে যা দাবী করছি– কি জিনদের মধ্য থেকে নির্বাচন করে? এই ক্ষেত্রে আমরা খুব অবাক হবো না এমন কিছু দেখে যখন একক কোনো জীব সদস্য তাদের ‘জিনের কল্যাণের জন্যে পরার্থবাদীতার সাথে আচরণ করে, যেমন, আত্মীয়দের খাওয়ানো এবং সুরক্ষার করার মাধ্যমে, যারা তাদের মত একই জিনের প্রতিলিপি বহন করে। এই ধরনের ‘কিন’ আলট্রইজম বা জিনগত আত্মীয়দের প্রতি পরার্থবাদীতা শুধু একটি মাত্র উপায়, যার মাধ্যমে জিনের স্বার্থপরতা একক জীব সদস্যদের পরার্থবাদী আচরণের মাধ্যমে এর নিজেকে অনুদিত করতে পারে। এই বইটি ব্যাখ্যা করেছে কিভাবে এটি কাজ করে, প্রজননের সাথে, ডারউইনের তত্ত্বের যা আরেকটি (প্রজনন) প্রধানতম পরার্থবাদীতা সৃষ্টিকারী। যদি কখনো আমাকে এই বইটি আবার লিখতে হয়, জাহাভী/গ্রাফেনের ‘হ্যান্ডিকাপ প্রিন্সিপালের’ (মূল বইয়ের ৪০৬ ১২ পৃষ্ঠা, অধ্যায় নয়ের টীকা দেখুন) একজন বিলম্বে-রূপান্তরিত অনুসারী হিসাবে, আমোতস জাহাভীর ধারণাটিকে আরো কিছুটা জায়গা দেয়া আমার উচিৎ হবে, যেখানে তিনি প্রস্তাব করেছেন, পরার্থবাদী কোনো দান সম্ভবত ‘পটল্যাচ’ (১) ধরনের একটি প্রাধান্য বিস্তার করার (বা ডমিনেন্স) সংকেত: ‘দেখো আমি তোমার চেয়ে কত শ্রেষ্ঠ, আমি তোমাকে কোনো কিছু দান করার ক্ষমতা রাখি!”
শিরোনামে ব্যবহৃত ‘সেলফিশ’ শব্দটি ব্যবহারের যৌক্তিকতার বিষয়টি আমাকে পুনরায় ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়া হোক। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে জীবনের প্রাধান্য পরম্পরায় কোন স্তরটিকে অবশ্যম্ভাবীভাবে স্বার্থপর স্তর হিসাবে আমরা দেখতে পারি; যে স্তরে
প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করে? স্বার্থপর প্রজাতি? স্বার্থপর গ্রুপ? স্বার্থপর একক জীব? স্বার্থপর ইকোসিস্টেম বা প্রাকৃতিক পরিবেশ? অধিকাংশ ক্ষেত্রে যুক্তি দেয়া যেতে পারে এবং অধিকাংশ স্তরই কোনো গভীর পর্যালোচনা ছাড়াই প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাজ করার একক হিসাবে কোনো না কোনো লেখক তাদের যুক্তিতে প্রস্তাব করেছেন, কিন্তু প্রত্যেকেই তাদের চিন্তায় ভ্রান্ত। যেহেতু ডারউইনীয় বার্তাটি খুব সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশিত করা সম্ভব হবে স্বার্থপর কোনো কিছু হিসাবে, সেই কোনো কিছুটি হচ্ছে ‘জিন’, এবং যুক্তিসঙ্গত কারণে এই বইটি যা প্রস্তাব করছে। আপনি সেই যুক্তির সাথে একমত পোষণ করেন কিংবা না করেন, এটাই আসলে শিরোনামটির মূল ব্যাখ্যা। আমি আশা করছি এটি আরো গভীর ভুল বোঝাবুঝির বিষয়গুলো বুঝতে সহায়তা করবে। তবে যাই হোক, এখন অতীত পর্যালোচনা করা সম্ভব এমন দৃষ্টির কারণে এই একটি বিষয়ে আমার নিজের কিছু ঘাটতি আমি লক্ষ করতে পারি। এইগুলো পাওয়া যাবে প্রথম অধ্যায়ে। যা বিশেষভাবে প্রকাশিত হয়েছে বৈশিষ্ট্যসূচক বাক্যটিতে, ‘আসুন দয়াশীলতা এবং পরার্থবাদীতা শিক্ষা দেবার জন্যে আমরা চেষ্টা করি, কারণ আমরা জন্মগতভাবে স্বার্থপর। অবশ্যই দয়াশীলতা আর পরার্থবাদীতা শেখানো দোষের কিছু নয়, কিন্তু আমরা ‘জন্মগতভাবে স্বার্থপর’ শব্দটি এখানে বিভ্রান্তিকর। আংশিক ব্যাখ্যা হিসাবে, ১৯৭৮ সালের আগে না যদিও, আমি ‘ভেহিকল বা বাহক’ (সাধারণত জীব) এবং “রেপ্লিকেটর বা অনুলিপনকারী’ যারা তাদের মধ্যে বাস করে, এই দুটির মধ্যে পার্থক্যগুলো (ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কার্যত তারা জিন, পুরো ব্যপারটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে তেরোতম অধ্যায়ে, দ্বিতীয় সংস্করণে যুক্ত করা হয়েছে) স্পষ্টভাবে ভাবতে শুরু করেছিলাম। দয়া করে মানসিকভাবে সেই সমস্যা সৃষ্টিকারী বাক্যটিকে এবং একই ধরনের অন্য বাক্যগুলোও মুছে
ফেলুন, এবং এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত ধারণাগুলো দিয়ে সেগুলো প্রতিস্থাপিত করুন। শৈলীর ভ্রান্তি সংক্রান্ত বিপদের কথা মাথায় রেখে, আমি খুব সহজেই দেখতে পাচ্ছি কিভাবে এবং কেন এই শিরোনামটিকে ভুল বোঝা হতে পারে। এবং এটি একটি কারণ, কেন আমার উচিৎ ছিল ‘দি ইমোর্টাল জিন’ নামটি নির্বাচন করা। ‘দি আলট্রইস্টিক ভেহিকল’ আরেকটি সম্ভাবনা হতে পারতো। হয়তো এটি বেশ রহস্যময় হতো, কিন্তু, যেকোনো ক্ষেত্রেই, প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনিট হিসাবে জিন এবং জীবের মধ্যকার আপাতদৃষ্টিতে বিদ্যমান। বিতর্কটির সমাধান হয়েছে (যে দ্বন্দ্বটি প্রয়াত আর্নষ্ট মেয়ারকে তার জীবনের শেষদিন অবধি ব্যস্ত রেখেছিল)। প্রাকৃতিক নির্বাচনের দুই ধরনের ‘একক’ আছে এবং তাদের মধ্যে কোনো ধরণের বিতর্ক নেই। জিন হচ্ছে ‘একক’ রেপ্লিকেটর বা অনুলিপনকারী অর্থে, অর্গানিজম বা জীব হচ্ছে ‘একক’, এর ‘বাহন’ অর্থে। দুটোই গুরুত্বপূর্ণ, কোনটাকেই অবমূল্যায়ন করা যাবে না। তারা দুটি সম্পূর্ণ পৃথক ধরনের একককে প্রতিনিধিত্ব করছে এবং যদি আমরা এই পার্থক্যটি শনাক্ত করতে না পারি অযথাই নৈরাশ্যজনক সন্দেহের শিকার হবে। ‘দ্য সেলফিশ জিন’ শিরোনামের আরেকটি ভালো বিকল্প হতো ‘দ্য