আমার জন্য পুরো ব্যাপারটার বিরুদ্ধে রিডাকটিও এড অ্যাবসার্ডাম (reductio ad absurdum) যুক্তি (১৭) ব্যবহার করে তর্ক এবং গ্রুপ সিলেকশন তত্ত্বের সমস্যাগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে খুব সহজ হয়তো। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে ব্যক্তিগত স্তরে পরার্থবাদের অস্তিত্ব তারপরও ব্যাখ্যা করা বাকী থেকে যায়। আর্সে এমনকি বলেছেন, গ্রুপ সিলেকশনই হচ্ছে একমাত্র সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এমন সব আচরণের যেমন থমসন গ্যাজেলদের ‘স্টটিং’ আচরণ (১৮)। এই বিশেষ উৎসাহী এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করা লম্ফ ঝম্প করা কোনো শিকারী প্রাণীর সামনে কিন্তু মিল আছে পাখিদের সতর্ক সংকেতের সাথে, এখানে তার এই আচরণে সে তার সঙ্গীদের বিপদ সম্বন্ধে সতর্ক করছে, এবং একই সাথে তার নিজের দিকে শিকারী প্রাণীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে স্টার গ্যাজেলটি। আমাদের দ্বায়িত্ব এই লক্ষ্য ঝম্পরত গ্যাজেল এবং এধরনের একইরকম প্রাকৃতিক প্রপঞ্চগুলো ব্যাখ্যা করা। এবং এই বিষয়গুলোর মোকাবেলা আমি করবো পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে।
কিন্তু তার আগে আমাকে আমার বিশ্বাসের সপক্ষে যুক্তি দিতে হবে, যা দাবী করছে বিবর্তনকে ভালোভাবে লক্ষ করার সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে একেবারে সর্বনিম্ন স্তরে ঘটা নির্বাচনকে বোঝার চেষ্টা করা। এই বিশ্বাসে জি. সি. উইলিয়ামসের দারুণ বই, Adaptation and Natural Selection দ্বারা আমি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছি। যে মূল ধারণাটি আমি ব্যবহার করবো আমার যুক্তিতে, সেটির পুর্বাভাস দিয়েছিলেন এ. ভাইজম্যান (১৯) এই শতাব্দীর শুরুর দিকের প্রাক-জিন দিনগুলোয়– তার ‘জার্মপ্লাজমের অব্যাহত ধারা’ বা continuity of the germ-plasm মতবাদে। আমি যুক্তি দেবো প্রাকৃতিক নির্বাচনের মৌলিক একক– এবং সেই অর্থে আত্ম স্বার্থবাদের– প্রজাতি নয়, কোনো গ্রুপও নয়, কঠোরভাবে প্রজাতির একক সদস্যও নয়। আসল একক হচ্ছে জিন, বংশগতি বা হেরেডিটির একক (২০)। কোনো কোনো জীববিজ্ঞানীর কাছে প্রথমে মনে হতে পারে এটি চরমতম একটি অবস্থান।আমি আশা করি যখন তারা দেখবেন ঠিক কি অর্থে আমি সেটা বোঝাতে চাইছি, তারাও একমত হবেন যে এটি মূলত প্রচলিত ধারণা, এমনকি যদিও এটি প্রকাশ করা হয়েছে অপরিচিত একটি উপায়ে। এই যুক্তিটি তার আকার নেবে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে এবং আমাদের শুরু থেকেই শুরু করতে হবে, জীবনের সেই মূল উৎপত্তি থেকে।
.
নোটস (অধ্যায় ১)
(১) জর্জ গেলর্ড সিম্পসন (১৯০২-১৯৮৪) যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্মবিদ, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী জীবাশ্মবিদ, এবং মডার্ন ইভেন্যুশনারী সিনথেসিস এর একজন গুরুত্বপূর্ণ অগ্রদূত।
(২) বহু মানুষ, এমনকি ধার্মিক নন এমন মানুষরাও জর্জ গেলর্ড সিম্পসনের এই উদ্ধৃতিটি পড়ে মর্মাহত হয়েছেন। আমি স্বীকার করছি, যখন আপনি এটি প্রথমবারের মত পড়বেন, আপনার এটিকে খুব অমার্জিত আর কাণ্ডজ্ঞানহীন আর অসহিষ্ণু বলেই মনে হবে, কিছুটা হেনরী ফোডের সেই উদ্ধৃতির মত: ‘ইতিহাস কম বেশী ধাপ্পাবাজী ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু ধর্মীয় উত্তরগুলো বাদে (আমি সেই উত্তরগুলো সম্বন্ধে অবগত আছি, দয়া করে আমাকে ডাকে চিঠি পাঠিয়ে আপনার ডাকটিকিট নষ্ট করবেন না), সত্যিকারভাবে যদি আপনি, ‘মানুষ কি?” “জীবনের কি কোনো অর্থ আছে?” “আমাদের এই অস্তিত্বের কারণই কি? এই প্রশ্নগুলোর প্রাক-ডারউইন উত্তরগুলো ভাববার একটি চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেন, আপনি কি পারবেন, সত্যিকারভাবে এমন কোনো উত্তর ভেবে বের করতে যা কিনা এখন অর্থহীন নয়, শুধুমাত্র তাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়া? এমন কিছু জিনিস আছে যা একেবারেই স্পষ্টভাবেই ভুল, এবং ১৮৫৯ সালের আগে, এই প্রশ্নগুলোর সব উত্তরই হচ্ছে ঠিক সেটাই। উল্লেখ্য, ১৮৫৯ সালে চার্লস ডারউইন তার দি অরিজিন অব স্পিসিস বইটি প্রকাশ করেছিলেন।
(৩) কনরাড যাকারিয়াস লরেন্দ্র (১৯০৩-১৯৮৯) অষ্ট্রিয়ার প্রাণিবিজ্ঞানী, প্রাণি-আচরণবিদ এবং পক্ষীবিশারদ। তিনি ১৯৭৩ সালে নিকোলাস টিনবার্গেন ও কার্ল ভন ফ্রিশ-এর সাথে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন। তাকে আধুনিক প্রাণীআচরণবিদ্যা বা ইথথালজীর একজন জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
(8) On Aggression (German: Das sogenannte Böse zur Naturgeschichte der Aggression) ১৯৬৩
(৫) রবার্ট আর্সে (১৯০৮-১৯৮০) যুক্তরাষ্ট্রের নৃতত্ত্ববিদ।
(৬) The Social Contract: A Personal Inquiry into the Evolutionary Sources of Order and Disorder, 1890
(৭) ইরেনাউস আইবেল-আইবেসফেল্ট (জন্ম ১৯২৮) হিউমান ইথোলজী বিষয়টির প্রতিষ্ঠা। কর্মক্ষেত্র অষ্ট্রিয়া ও জার্মানী।
(৮) Love and Hate: The Natural History of Behavior Patterns. (১৯৭০)।
(৯) অ্যাশলে মনটেণ্ড (১৯০৫-১৯৯৯) বৃটিশ আমেরিকান নৃতত্ত্ববিদ।
(১০) Who trusted God was love indeed/ And love Creation’s final law
Tho’ Nature, red in tooth and claw/ With ravine, shriek’d against his creed./(Alfred Lord Tennyson’s In Memoriam A. H. H. ১৮৫০)
(১১) আলফ্রেড টেনিসন (১৮০৯-১৮৯২) ইংলিশ কবি।
(১২) স্বার্থপরতাকে বেঁচে থাকার একটি মূলনীতি হিসাবে গ্রহন করা উচিৎ এমন মতবাদের পক্ষে ওকালতি করার করছে বলে সমালোচকরা কখনো কখনো ‘দ্য সেলফিশ জিন’ বইটিকে ভুল বুঝেছেন,! অন্যদের ক্ষেত্রে, হয়তো তার কারণ, তারা বইটার শুধু শিরোনামই পড়েছেন বা প্রথম এক দুই পাতার বেশী আর তারা অগ্রসরই হননি; তারা ভেবেছেন, আমি বলছি যে, আমরা পছন্দ করি বা না করি, স্বার্থপরতা ও অন্যান্য নোংরা আচরণ আমাদের প্রকৃতির অপরিহার্য অংশ। এই ভুলের ফাঁদে পড়াটা খুব সহজ, যদি আপনি ভাবেন, যেমন বহুমানুষই অকারণেই মনে করেন, জিনগত ‘ডিটারমিনেশন’ বা পূর্বনির্ধারণ চিরকালের জন্য, অমোচনীয়– চূড়ান্ত, অপ্রতিবর্তনযোগ্য। কিন্তু বাস্তবিকভাবে জিন শুধুমাত্র পরিসংখ্যানগতভাবে কোনো আচরণ নির্ধারণ করে (মূল বইয়ের পৃষ্ঠা ৪৬-৫০ দ্রষ্টব্য); একটি ভালো সমতুল্য উদাহরণ হতে পারে যেমন: ব্যাপকভাবে যে সাধারণীকরণকে মেনে নেয়া হয়েছে, “রাতের বেলায় লাল আকাশ মেষপালকের জন্য আনন্দ। হয়তো পরিসংখ্যানগতভাবেও এটি বাস্তব সত্য হতে পারে যে, ভালো লাল কোনো সুর্যাস্ত পরের দিনটিও সুন্দর হবে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করে। কিন্তু আমরা সেই ভবিষ্যদ্বাণীর উপর অনেক পরিমান টাকা বাজী রাখবো না কখনোই। আমরা খুব ভালো করে জানি আবহাওয়া খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়ায় নানা উপাদানের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। যেকোনো আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ভুল হবার সম্ভাবনা আছে। এটি একটি পরিসংখ্যানগত পূর্বাভাস মাত্র। আমরা কিন্তু দেখি না লাল সুর্যাস্ত কোনো রকমের ব্যতিক্রম ছাড়াই বা অনিবার্যভাবে এর পরের দিনের ভালো আবহাওয়া নিশ্চিৎ করে এবং আমাদেরও এমন কোনো কিছু ভাবা উচিৎ না যে জিনও অনিবার্যভাবে কিছু নির্ধারণ করতে পারে। কোনো কারণই নেই কেন জিনের প্রভাব সহজেই অন্য কিছুর প্রভাবে বাতিল বা ভিন্ন হবে না। জিনগত ডিটারমিনিজম নিয়ে এবং ভুল বোঝার বিষয়টি কেন এখানে ঘটে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য The Extended Phenotype বইটির দ্বিতীয় অধ্যায় ও আমার 69777, Sociobiology: The New Storm in a Teacup দেখুন; আমাকে এমন কি অভিযুক্ত করা হয়েছে যে আমি নাকি দাবী করেছি সব মানুষই মূলত শিকাগো গ্যাঙ্গস্টার! কিন্তু আমার শিকাগো গ্যাঙ্গস্টারের তুলনামূলক উদাহরণটির (প্রথম অধ্যায়, মূল বইয়ের পৃষ্ঠা ২ এ বর্ণিত) মূল বক্তব্যটি অবশ্যই যা ছিল: ‘কি ধরনের পৃথিবীতে কোনো একটি মানুষের বিশেষ ভালো করছে, সেই বিষয়ে আমাদের জ্ঞান কিন্তু আপনাকে সেই মানুষটি সম্বন্ধে কিছু ধারণা দেয়। এটি সেই শিকাগো গ্যাঙ্গস্টারের কোনো বিশেষ গুণাবলীর সাথে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই উদাহরণটায় আমি অনায়াসে ব্যবহার করতে পারতাম এমন কোনো মানুষের কথা, যিনি চার্চ অব ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানে আরোহন করেছেন বা কোন অ্যাথিনিয়ামে (কোনো প্রাচীন বিদ্যামন্দিরে) নির্বাচিত হয়েছেন। যাই হোক না কেন, কোনো ক্ষেত্রেই এটি মানুষটি নয় বরং জিনরা হচ্ছে আমার অনুরুপ উদাহরণের বিষয়।