গ্রুপ সিলেকশন তত্ত্বে বিশেষ আবেদনের একটি কারণ হয়তো এটি আমাদের অধিকাংশের ধারণকৃত নৈতিক ও রাজনৈতিক আদর্শের সাথে পুরোপুরিভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। হয়তো আমরা একক ব্যক্তি হিসাবে প্রায়শই স্বার্থপরের মত আচরণ করি কিন্তু আমাদের আদর্শবাদী মুহূর্তগুলোতে আমরা সম্মান ও বিশেষভাবে প্রশংসা করি সেই সব মানুষদের যারা অন্যদের কল্যাণ নিজেদের কল্যাণের আগে স্থাপন করে থাকেন। আমরা যদিও খানিকটা গুলিয়ে ফেলেছি কত বিস্তৃতভাবে আমরা আসলে অন্যদের সংজ্ঞায়িত করবো। প্রায়শই কোনো গ্রুপের অভ্যন্তরের পরার্থবাদীতা বিভিন্ন গ্রুপের প্রতি স্বার্থপরতার সাথে বিদ্যমান। এটাই ট্রেড ইউনিয়নবাদের মূল ভিত্তি, কোনো একটি ভিন্ন পর্যায়ে জাতি হচ্ছে আমাদের পরোপকারিতা বা পরার্থবাদী আত্মত্যাগের মূল সুবিধাভোগী এবং প্রায়শই দেশের সন্মানের জন্য তরুণরা তাদের নিজেদের জীবন উৎসর্গ করবে এমনটাই আশা করা হয়; উপরন্তু, তাদের উৎসাহিত করা হয়। অন্যদের হত্যা করার জন্য, যাদের সম্বন্ধে তারা কিছুই জানে না শুধুমাত্র তারা অন্য একটি দেশের নাগরিক এই তথ্যটি ছাড়া। (কৌতূহলোদ্দীপক একটি মজার ব্যপার হচ্ছে, শান্তির সময় নিজেদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য সামান্য কিছু আত্মত্যাগের আহবান যুদ্ধের সময় জীবন উৎসর্গ করার আহবানের চেয়ে অনেক কম কার্যকরী।)।
সম্প্রতি বর্ণবিদ্বেষ আর দেশপ্রেমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ করেছি এবং একটি প্রবণতা, যা সমস্ত মানব প্রজাতিকে আমাদের সবার ভাতৃপ্রেমের নিশানা হিসাবে প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টা করছে। আর আমাদের পরার্থবাদের নিশানার এই মানবতাবাদী সম্প্রসারণ একটি কৌতূহলোদ্দীপক অনুসিদ্ধান্ত, যা আবারো বিবর্তনের প্রজাতির জন্য কল্যাণকর ধারণাটিকে জোরালো করে। রাজনৈতিকভাবে উদারপন্থী যারা সাধারণত প্রজাতির নৈতিকতা নিয়ে সবচেয়ে বেশী মাত্রায় আত্মবিশ্বাসী মূর্খপাত্র, এখন তারা প্রায়শই তাদের প্রতি সবচেয়ে বেশী ঘৃণা পোষণ করে, যারা তাদের পরার্থবাদের সীমানা আরো প্রশস্ত করে সামনে এগিয়ে গেছে এমনভাবে যাদের মধ্যে অন্য প্রজাতিরাও অন্তর্ভুক্ত। যদি বলি মানুষের বাসস্থানের উন্নতি করার চেয়ে আমি বেশী আগ্রহী তিমি মাছ হত্যা প্রতিরোধ করা করার জন্য, কোনো সন্দেহ নেই আমার অনেক বন্ধুকে তা হতবাক করবে।
নিজেদের প্রজাতির সদস্যরা অন্য প্রজাতির সদস্য অপেক্ষা বিশেষ নৈতিক বিবেচনার যোগ্য এই অনুভূতিটা খুবই প্রাচীন আর মনস্তত্ত্বের অনেক গভীরে প্রোথিত। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের বাইরে মানব হত্যাকে সাধারণত সংঘটিত হতে পারে এমন অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত আর ভয়ঙ্কর হিসাবে বিবেচিত। আমাদের সংস্কৃতিতে নরহত্যার চেয়ে আর একটি কাজ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ সেটি হচ্ছে নরমাংস ভক্ষণ (এমনকি যখন তারা মত); যদিও আমরা অন্য প্রজাতির সদস্যদের হত্যা করে খেতে উপভোগ করি। আমাদের অধিকাংশই এমনকি কোনো ভয়ঙ্কর মানব অপরাধীকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় হত্যা করার ঘটনাতেও আৎকে উঠি, অথচ আমরা খুব আনন্দের সাথে বিনা বিচারে বেশ মৃদু স্বভাবের প্রাণীদের বিনা বিচারে হত্যা করাকে সমর্থন করি। আসলেই আমরা শুধু খেলা হিসাবে আনন্দ লাভের জন্য নীরিহ প্রজাতিদের হত্যা করি। একটি মানব ভ্রূণ, কানো একটি অ্যামিবার চেয়ে যার বেশী কিছু অনুভব করার ক্ষমতা নেই, সেটি যে সন্মান আর আইনীর সুরক্ষার সুফল ভোগ করে, তেমন কোনো কিছু প্রাপ্ত বয়স্ক শিম্পাঞ্জির ভাগ্যেও জোটে না। অথচ শিম্পাঞ্জিরা অনুভব করতে পারে, তারা চিন্তাও করতে পারে এবং সাম্প্রতিক কালের কিছু গবেষণা অনুযায়ী এমনকি তারা একধরনের মানুষের ভাষা শিখতেও সক্ষম। মানব ভ্রূণ আমাদের প্রজাতির সদস্য এবং তাই সেটি সাথে সাথেই বিশেষ সুবিধা পাবার যোগ্য ও সেটা পাবার অধিকারও রাখে সেই কারণেই। প্রজাতিবাদের এই নৈতিকতাটিকে আমরা, রিচার্ড রাইডারের শব্দ ‘স্পেসিসিজম’ ব্যবহার করে বর্ণবাদের মত একই পরিমান যৌক্তিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দেয়া যায় কিনা, আমি জানি না। আমি যা জানি সেটা হচ্ছে বিবর্তন জীববিজ্ঞানে এর কোন সঠিক ভিত্তি আছে।
ঠিক কোন স্তরে পরার্থবাদ কাঙ্খিত সেই মানবিক নৈতিকতার জটিলতা আর বিশৃঙ্খলায়– পরিবার, জাতি, বর্ণ, প্রজাতি বা সমস্ত জীবিত প্রাণী– এর প্রতিবিম্ব আমরা একই সমান্তরালে দেখতে পাই জীববিজ্ঞানেও, সেই একই সংশয়ে, ঠিক কোন স্তরে পরার্থবাদ আমরা আশা করতে পারি বিবর্তনবাদের তত্ত্ব অনুযায়ী; এমনকি গ্রুপ সিলেকশনবাদীরা খুব একটা অবাক হবেন না বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দেখে: এভাবে, ট্রেড ইউনিয়নবাদীদের মত বা সৈন্যদের মত, তারা নিজেদের গ্রুপের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে যাচ্ছেন সীমিত সুযোগের মধ্যে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার সংগ্রামে। কিন্তু তারপরও জিজ্ঞাসা করাটা অর্থহীন না, কিভাবে গ্রুপ সিলেকশনবাদীরা আসলে ঠিক করেন, ‘কোন’ স্তরটি আসলে গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো একটি প্রজাতির নানা গ্রুপে, এবং প্রজাতিগুলোর মধ্যে নির্বাচন কাজ করে, তাহলে সেটা কেনই বা বড় বড় গ্রুপের মধ্যে কাজ করবে না? প্রজাতির গ্রুপ করা হয়েছে গণ বা জেনেরায়, জেনেরারা বর্গ বা অর্ডারে, বর্গ বা অর্ডাররা ক্লাস বা শ্রেনীতে, সিংহ আর অ্যান্টেলোপ কিন্তু স্তন্যপায়ী হিসাবে একই গ্রুপে, দুটোই স্তন্যপায়ী শ্রেণীর সদস্য, যেমন আমরা। তাহলে কি উচিৎ হবে সিংহদের অ্যান্টেলোপদের হত্যা করা থেকে বিরত থাকা, ‘স্তন্যপায়ীদের কল্যাণে’? নিশ্চয়ই তারা এর বদলে পাখি বা সরীসৃপদের শিকার করতে পারে, তাদের নিজেদের শ্রেণীর বিলুপ্তি ঠেকাতে; কিন্তু তাহলে,পুরো মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পর্বটির টিকে থাকার ব্যাপারে কি করা যেতে পারে?