যে যুক্তিটি এই মাত্র উল্লেখ করা হলো, সেই যুক্তির ‘ইন্ডিভিজুয়াল সিলেকশনবাদী’ কোনো দ্রুত উত্তর যা বলা হলো তা হয়তো এরকম হতে পারে। এমনকি পরার্থবাদীদের গ্রুপে, সেখানে অবশ্যই কিছু সংখ্যালঘু ভিন্ন মতাবলম্বী থাকবে, যারা কোনো ধরনের আত্মত্যাগ করতে রাজী হবে না, যদি সেখানে একজন স্বার্থপর বিদ্রোহী থাকে, সে বাকীদের পরার্থবাদী আচরণ ব্যবহার করতে পারবে নিজের স্বার্থে। তাহলে সে, সংজ্ঞানুযায়ী বাকীদের চেয়ে বেশী দিন বেঁচে থাকবে এবং সন্তানের জন্ম দেবে। তার প্রতিটি সন্তানও এই স্বার্থপর বৈশিষ্ট্যটি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার প্রবণতা থাকবে। এবং বেশ কিছু প্রজন্মান্তরে, এই প্রাকতিক নির্বাচনের ফলাফলে ‘পরার্থবাদী’ গ্রুপটি স্বার্থপর সদস্যদের সংখ্যাধিক্যের মুখোমুখি হবে, এবং যাদের আসলে কোনো স্বার্থপর গ্রুপ থেকে আলাদা করা সম্ভব হবেনা। এমনকি যদি আমরা সেই অসম্ভাব্য ঘটনাচক্রে এমন কোনো গ্রুপের অস্তিত্ব মেনে নেই, যে গ্রুপের প্রতিটি সদস্য বিশুদ্ধভাবেই পরার্থবাদী, যেখানে কোনো স্বার্থপর ভিন্নমতাবলম্বী বিদ্রোহীর কোনো অস্তিত্ব নেই, তারপরও চিন্তা করা খুবই কঠিন, এমন কি আছে যা স্বার্থপর কোনো গ্রুপ থেকে কোনো স্বার্থপর সদস্য এসে তাদের মধ্যে ভিড়ে যাওয়া থেকে বাধা দিতে পারে, এছাড়া আন্তঃগ্রুপ সম্পর্ক স্থাপন যেমন, বিয়ে তো আছেই, তার দ্বারাও কোনো বিশুদ্ধ পরার্থবাদী গ্রুপের বিশুদ্ধতাও নষ্ট হতে পারে।
ইন্ডিভিজুয়াল সিলেকশনবাদীরা স্বীকার করবেন যে গ্রুপ আসলেই বিলুপ্ত হয় এক সময় এবং কোনো একটি গ্রুপ বিলুপ্ত হবে, কি হবে না, সেটি সেই গ্রুপের একক সদস্যদের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। তিনি হয়তো এটাও স্বীকার করবেন যে, যদি শুধুমাত্র কোনো গ্রুপের সদস্যরা ভবিষ্যতে কি হতে পারে সেটি দেখার জন্য প্রয়োজনীয় দূরদর্শিতার গুণে আশীর্বাদপুষ্ট হতেন, তারা হয়তো দেখতে পেতেন ভবিষ্যতে তাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য ভালো হবে তাদের স্বার্থপর লোভ সংবরণ করা, যা তাদের পুরো গ্রুপটি ধ্বংস হওয়া থেকে প্রতিরোধ করবে। ব্রিটেনের শ্রমজীবি জনগণকে কতবার এই কথাটি আবশ্যিকভাবে বলা হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে? কিন্তু কোনো গ্রুপের বিলুপ্তি খুবই মন্থর একটি প্রক্রিয়া যদি আপনি একক সদস্যদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মারমুখী দ্বন্দ্ব আর রক্তপাতের সাথে তুলনা করেন। এমনকি যখন কোনো গ্রুপ ধীরে এবং অবশ্যম্ভাবীভাবে পতন অভিমূখে থাকে, স্বার্থপর মানুষরা স্বল্প সময়ের জন্য পরার্থবাদীদের কল্যাণে বেশ ভালো থাকে; ব্রিটেনের নাগরিকরা দুরদর্শিতার আশীর্বাদপুষ্ট হতে পারেন আবার নাও পারেন কিন্তু বিবর্তন ভবিষ্যতের প্রতি অন্ধ।
যদিও গ্রুপ নির্বাচন তত্ত্ব এখন খুব সামান্যই সমর্থন আদায় করতে পারে সেই সব জীববিজ্ঞানীদের শিবিরে, যারা বিবর্তন বোঝেন, কিন্তু তত্ত্বটির আমাদের সহজাত বোধের কাছে এখনও খুবই আবেদনময়। ধারাবাহিক প্রজন্মের প্রাণিবিজ্ঞানের ছাত্ররা বিস্মিত হয়, যখন তারা স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় আসেন, যখন তারা আবিষ্কার করেন এটি আসলে জীববিজ্ঞানের প্রচলিত বা অর্থোডক্স ধারণা নয়। এর জন্য আসলেই তাদের দোষ দেয়া সম্ভব নয়, কারণ নাফিল্ড বায়োলজি টিচার্স গাইড, যা উচ্চতর শ্রেণীর জীববিজ্ঞানের পাঠ্য হিসাবে লেখা হয়েছে ব্রিটেনের স্কুল শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য, সেখানে আমরা এই বাক্যটিকে দেখতে পাই: “উচ্চতর প্রাণীদের মধ্যে, আচরণ রুপ নিতে পারে যেমন আত্মহননেরও প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। এই গাইডটির বেনামী লেখক অত্যন্ত আনন্দের সাথে অজ্ঞ সেই বাস্তব সত্যটি সম্বন্ধে, তিনি এই বাক্যে এমন কিছু বলেছেন যা বেশ বিতর্কিত একটি বিষয়। অবশ্য এই ক্ষেত্রে তিনি নোবেল জয়ী বিজ্ঞানীদের সংসর্গে অবস্থান করছেন। কনরাজ লরেঞ্জ, তার ‘অন অ্যাগ্রেসন’ বইটিতে, আলোচনা করেছেন, আগ্রাসী আচরণের ‘প্রজাতি সংরক্ষণ’ সংশ্লিষ্ট কাজের বিষয়ে, যাদের একটি কাজ হচ্ছে নিশ্চিৎ করা যে শুধু মাত্র যে সবচেয়ে উপযুক্ত বা ফিট, সেই সদস্যরাই সুযোগ পায় প্রজননের। এটি সার্কুলার বা আবদ্ধ যুক্তির একটি আদর্শ উদাহরণ। কিন্তু আমি যে বক্তব্যটি বোঝাতে চাইছি এখানে সেটি হলো যে গ্রুপ সিলেকশন এর ধারণাটি চিন্তার এত গভীরে প্রোথিত যে, লরেঞ্জ, নাফিল্ড গাইডের লেখকের মতই স্পষ্টতই অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তার বক্তব্য মূলধারা ডারউইনীয় তত্ত্বেরই বিরোধিতা করছে।
খুব সম্প্রতি আমি একই বিষয়ে একটি চমৎকার উদাহরণ শুনেছিলাম, আর বাকী সব দিক দিয়ে বিচার করলে অস্ট্রেলীয় মাকড়শাদের নিয়ে বিবিসির একটি সুনির্মিত টেলিভিশন প্রামাণ্যচিত্রে। এই প্রোগ্রামে বিশেষজ্ঞ লক্ষ করেন যে বিশাল সংখ্যক শিশু মাকড়শারা অন্য প্রজাতিদের খাদ্যে পরিণত হয়, এরপর তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, হয়তো এটাই তাদের অস্তিত্বের কারণ, কারণ অল্প কিছু সদস্যের শুধুমাত্র বেঁচে থাকতে হবে প্রজাতির ধারা সুরক্ষা করার জন্য। রবার্ট আর্জে, তার “দি সোস্যাল কনট্রাক্ট’ বইটিতে পুরো সামাজিক বিন্যাসকে সাধারণভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য এই গ্রুপ সিলেকশন’ তত্ত্ব ব্যবহার করেছিলেন। তিনি খুব স্পষ্টভাবে মানুষকে প্রজাতি হিসাবে দেখেছেন, যারা পশুর নৈতিকতার পথ থেকে সরে এসেছে; অন্তত আর্সে তার গবেষণা ঠিক মত করেছিলেন, প্রচলিত মূলধারা তত্ত্বের সাথে তার ভিন্ন মত পোষণ করার সিদ্ধান্ত একটি সচেতন সিদ্ধান্ত এবং এর জন্য তিনি কৃতিত্বের দাবী রাখেন।