ইতিমধ্যে ব্যর্থ আক্রোশ আর গোটা সমাজের ওপর তীব্র একটা ঘৃণায় অন্তঃকরণ ভরে উঠেছে অ্যালবার্ট নেরির। কর্তব্যপালন করতে গিয়ে একটা বেশ্যার দালালকে, একটা নিগ্রো খুনীকে মেরে ফেলেছে বলে তাকে কিনা জেলে পুরে দিল। এত বড় স্পর্ধা! এর নাম বিচার। দু দুটো মেয়েমানুষকে ক্ষুর দিয়ে কেটে চিরকালের জন্যে পঙ্গু করে দিয়েছে বেনস, সেই বেনসকে খুন করায় তাকে সবাই ফুলের মালা পরাবে, তা না উল্টো কঠিন সাজা দিয়ে মজা দেখছে। তার মানে ভাল কাজের কোন দাম নেই সমাজে? জেল খাটাকে ভয় পায় না নেরি। তার ধারণা, হাজার হোক পুলিশে ছিলাম, ভাল ব্যবহারই করা হবে আমার সাথে। তাছাড়া, জেল কর্তৃপক্ষ আর কর্মচারীরা তার অপরাধের প্রকৃতিটাও তো দেখবে। কয়েকজন পুলিশ অফিসার ইতিমধ্যে আশ্বাস দিয়ে বলেছে, তারা তাদের বন্ধুবান্ধবকে নেরির সাথে ভাল ব্যবহার করার জন্যে অনুরোধ করবে। একমাত্র ওর শ্বশুর, একটা মাছের বাজারের মালিক তিনি, গম্ভীর মুখে বললেন, জেলে বোধহয় এক বছরও বাঁচবে না নেরি। হয় কোন কয়েদী ওকে মেরে ফেলবে, নয়তো, ওর হাতে মারা পড়বে তারা কেউ।
জামাইয়ের ওপর অদ্ভুত একটা টান ছিল ভদ্রলোকের। মেয়েটা এমন ভাল একটা স্বামীকে মেয়েলী ঢং দেখিয়ে ছেড়ে দেয়ায় নিজে তিনি অপরাধবোধে ভোগেন। কর্লিয়নি পরিবারের সাথে যোগাযোগ আছে তাঁর, বাজারটার নিরাপত্তার জন্যে পরিবারটিকে নিয়মিত টাকা দেন তিনি। তার ওপর বড় মাছগুলো উপহার হিসেবে প্রায় রোজই তো পাঠানো হচ্ছে। একজন ন্যায়পরায়ণ জামাইয়ের শ্বশুর হিসেবে নিজে কর্লিয়নিদের সাহায্য ভিক্ষা চাইলেন তিনি।
অ্যালবার্ট নেরির কথা এরই মধ্যে জানা হয়ে গেছে কর্লিয়নিদের। ন্যায়ের ধ্বজাধারী একজন ব্যতিক্রমী পুলিশ হিসেবে কিংবদন্তীর নায়ক হয়ে গেছে সে। সবাই বলাবলি করে,নেরি এমন একটা মানুষ যাকে তুচ্ছ জ্ঞান করা চলে না। পুলিশের ইউনিফর্ম আর সাথে আগ্নেয়াস্ত্র থাকত বলে লেকে ওকে ভয় করত তা নয়, এসব ছাড়া শুধু ওর ব্যক্তিই এমন যে ভয় না করে উপায় থাকে না কারও। ওর হিংস্রতার কথাটাই ধরা যাক। এতটুকু উত্তেজিত না হয়ে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ সারার ভঙ্গিতে, শুধু খালি দুটো হাত দিয়ে অনায়াসে মানুষ মারতে পারে সে। তার জন্যে। পরে কোন অনুতাপও বোধ করে না। এই জাতের লোক সম্পর্কে কর্লিয়নিরা সব সময়ই আগ্রহ প্রকাশ করে এসেছে। নেরি যে পুলিশের লোক; এটাকে তারা তেমন গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন বোধ করল না। তাদের জানা আছে নিয়তির নির্দিষ্ট করে রাখা লক্ষ্যে অনেক যুবক ভুল পথ ধরে পৌঁছে যায়। সময় এবং ভাগ্য তাদেরকে সাহায্য করে।
গন্ধ শুঁকে ভাল কর্মী খুঁজে বের করার একটা আশ্চর্য গুণ আছে পীট ক্লেমেঞ্জার। টম হেগেনের নজরে নেরিকে সেই আনল প্রথমে। পুলিশের তৈরি করা বিবৃতি পড়ে আরক্লেমেঞ্জার বর্ণনা শুনে হেগেন বলল, এখানে যেন আরেকটা লুকা ব্রাসির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে?
আমারও ঠিক তাই মনে হচ্ছে, উৎসাহের সাথে মাথা নেড়ে বলল ক্লেমেঞ্জা এদিকে একটু খেয়াল দেয়া উচিত মাইকেলের।
অস্থায়ীভাবে একটা কারাগারে রাখা হয়েছে নেরিকে, কিছুদিনের মধ্যে অন্য রাজ্যে বদলি করা হবে তাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটল। তাকে জানানো হলো, উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারদের পেশ করা নতুন কিছু তথ্য আর হলফনামার ওপর নির্ভর করে বিচারক তার রায় রদবদল করেছেন। পুনর্বিচার করে আগের রায় বাতিল করে দিয়েছেন তিনি, নেরি খালাস পেয়েছে।
নেরি বোকা নয়, আর তার শশুর ভদ্রলোকটিও লাজুক বনফুলটি নন, সব কথা শুনল নেরি। বিটার ওপর তার দাবি-দাওয়া ছেড়ে দিয়ে ঘরের সমস্ত ঋণ পরিশোধ করল সে। তারপর রওনা হলো লংবীচের উদ্দেশে। যারা তার এত বড় উপকার করেছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যে। সব ব্যবস্থা আগেই করা হয়েছে। তার সাথে লাইব্রেরিতে দেখা করল মাইকেল কর্লিয়নি।
খুব একটা গদগদ ভাব না দেখিয়ে সাধারণভাবে ধন্যবাদ জানাল নেরি। কিন্তু তার এই সামান্য ধন্যবাদকে এমন আন্তরিক সহৃদয়তার সাথে গ্রহণ করল মাইকেল, নেরি যেমন আশ্চর্য হলো তেমনি কৃতার্থও হয়ে গেল।
আমি একজন সিসিলীয়, তাকে বলল মাইকেল, আরেকজন সিসিলীয়র সাথে ওই রকম অন্যায় ব্যবহার ওদেরকে আমি করতে দেই কিভাবে? সোনার একটা মেডেল দেয়া উচিত ছিল তোমাকে, তা না দিয়ে, ওরা তোমাকে জেলে ভরে দিল। এ কি সহ্য করার মত একটা ব্যাপার? আসলে কি জানো, শালার রাজনীতিকরা দলীয় চাপ ছাড়া আর কোন ব্যাপারেই মাথা ঘামায় না। সমস্ত খবর নিয়ে যখন বুঝলাম যে সত্যি সত্যি তোমার ওপর অন্যায় অবিচার করা হয়েছে, তখন আর নাক না গলিয়ে পারলাম না। তুমি যদি সত্যি অপরাধী হতে, কিছুই এসে যেত না আমার, তোমাকে নিয়ে এতটা মাথা ঘামাতাম না। তোমার বোনের সাথেও কথা বলেছে আমার লোক। শুনলাম বোনের জন্যে অনেক কিছু করেছ তুমি, তার ছেলেটাকেও জন্মের মত সিধে করে দিয়েছ। তোমার শ্বশুর তো নিজে আমাকে এসে বলে গেছেন, তোমার মত ভাল মানুষ তিনি নাকি আর দেখেননি। যাই বলো, একজন মানুষ সম্পর্কে সবাই শুধু ভাল ভাল কথা বলছে, এমন বড় একটা দেখা যায় না। নেরির স্ত্রী যে তাকে ছেড়ে চলে গেছে, বুদ্ধি করে সেটা আর উল্লেখ করল না মাইকেল।