সূক্ষ্ম ও শুদ্ধ গণনায় আল বেরুনী একটি বিস্ময়কর পন্থা আবিষ্কার করেন যার বর্তমান নাম The Formula of Intarpolation. পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ এটিকে নিউটনের আবিষ্কার বলে প্রচার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অথচ নিউটনের জন্মের ৫৯২ বছর পূর্বেই আল বেরুনী এটি আবিষ্কার করেন এবং একে ব্যবহার করেন বিশুদ্ধ সাইন তালিকা প্রস্তুত করেন। এরপর এ ফর্মুলা পূর্ণতা দান করে তিনি একটি ট্যানজেন্ট তালিকাও তৈরি করেন। তিনিই বিভিন্ন প্রকার ফুলের পাপড়ি সংখ্যা হয়, ৩, ৪, ৫, ৬ এবং ১৮ হবে কিন্তু কখনো ৭ বা ৯ হবে না; এ সত্য আবিষ্কার করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও তার অবদান ছিল সর্বাধিক। চিকিৎসা বিজ্ঞানে তিনি একটি অমূল্য গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থে তিনি বহু রোগের ঔষধ তৈরির কলাকৌশল বর্ণনা করেছেন। অধ্যাপক হামারনেহ বলেছেন, “শুধু মুসলিম জগতেই নয় পৃথিবীর সমস্ত সভ্য জগতের মধ্যে আল বেরুনীই সর্ব প্রথম ব্যক্তি, যিনি খ্রিস্টপূর্বকাল থেকে তাঁর সময়কাল পর্যন্ত ঔষধ তৈরি করার পদ্ধতি ও তার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বিজ্ঞানী আল বেরুনী বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। মৃত্যুর ১৩ বছর পূর্বে তিনি তাঁর রচিত গ্রন্থের যে তালিকা দিয়েছেন সে অনুযায়ী তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা ১১৪টি। পরবর্তী ১৩ বছরে তিনি আরো বহু গ্রন্থ রচনা করেন। উপরে উল্লেখিত গ্রন্থগুলো ছাড়া উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে–”কিতাবুত তাফহিম। এটি ৫৩০ অধ্যায়ে বিভক্ত। এতে অংক, জ্যামিতি ও বিশ্বের গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ‘ইফরাদুল ফাল ফিল আমরিল আযলাল’–এটিতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ছায়াপথ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ‘আল আছারুল বাকিয়া আলাল কুবানিল কালিয়া’–এটিতে পৃথিবীর প্রাচীন কালের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। যিজে আবকন্দ (নভোমণ্ডল ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত)। আলাল ফি যিজে খাওয়ারিজমি (যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে) তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। বিশাল আকৃতির শতাধিক গ্রন্থ এক ব্যক্তির পক্ষে রচনা করা কত যে দুঃসাধ্য ব্যাপার তা ভাবতেও অবাক লাগে।
আল বেরুনী ছিলেন সর্বকালের জ্ঞানী শ্রেষ্ঠদের শীর্ষ স্থানীয় এক মহাপুরুষ। তাঁর ও অন্যান্য মুসলিম বিজ্ঞানীদের মৌলিক আবিষ্কারের উপরই গড়ে উঠেছে আধুনিক বিজ্ঞান। আল বেরুনী আজ বেঁচে নেই; কিন্তু তাঁর নাম জেগে থাকবে উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। দশম শতাব্দীর শেষ এবং একাদশ শতাব্দীতে যার একান্ত সাধনায় জ্ঞান বিজ্ঞানের দিগন্ত এক নব সূর্যের আলোতে উদ্ভাসিত হয়েছিল তিনি হলেন আল বেরুনী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। তিনি বিশ্বাস করতেন আল্লাহই সকল জ্ঞানের অধিকারী। এ মনীষী ৬৩ বছর বয়সে গুরুতর রোগে আক্রান্ত হন। আস্তে আস্তে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন। কোন চিকিৎসাই তাকে আর সুস্থ করে তোলা যায়নি। অবশেষে ৪৪০ হিজরীর ২ রজব মোতাবেক ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর রোজ শুক্রবার ৭৫ বছর বয়সে আবু রায়হান মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল বেরুনী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১০০. স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭)
বিজ্ঞানের আশ্চর্য প্রতিভা নিউটন মাত্র সাত মাস বয়সেই মায়ের গর্ভ থেকে জন্মে নিশ্চিত মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন আশ্চর্যভাবে। নিজের প্রতিভায় জগৎকে আশ্চর্য করবার, চমকিত করবার পালা শুরু হয় তাঁর তখন থেকেই। এরপর দীর্ঘ জীবনে একের পর এক আশ্চর্যের মালা গেঁথে বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসকে স্বকীয় কৃতিত্বের মালিকায় ভূষিত করেছেন।
জন্মের তিন মাস আগেই বাবা মারা গিয়েছিলেন। দুবছর বয়স হতে না হতেই মা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে বসলেন।
নিউটনের নতুন বাবা ছিলেন পাদ্রী। তিনি রোগা পটকা নিউটনের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। ফলে উলসথরপের খামার বাড়িতে ঠাকুমার কাছেই মানুষ হতে থাকেন তিনি।
বাবাকে হারিয়েছেন, মা নেই, নেই কোন ভাইবোন। এই অবস্থায় একাকীত্বের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি আসবার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। চারপাশের সবকিছু খুঁটিয়ে দেখার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল তখন থেকেই।
আর এই অভ্যাসের ফলেই তো পরিণত বয়সে একদিন গাছ থেকে আপেল পড়ার সামান্য ঘটনা থেকে মাধ্যাকর্ষণের সূত্র আবিষ্কার করে গোটা পৃথিবীকে চমকে দিয়েছিলেন।
বয়স বারো বছর পূর্ণ হতেই ঠাকুমা নিউটনকে পাঠিয়ে দিলেন গ্রাণঘাম শহরে তাঁর পরিচিতি ক্লার্ক নামে এক ভদ্রলোকের বাড়িতে।
ক্লার্ক-এর স্ত্রী ছিলেন নিউটনের মায়ের বান্ধবী। সেই সূত্রে এখানেই প্রথম তিনি মাতৃস্নেহের স্বাদ পান।
ক্লার্ক ভদ্রলোক ওষুধের ব্যবসা করতেন। নিজেই বাড়িতে তৈরি করতেন সেসব। বিজ্ঞানের বিশেষ করে রসায়ন ও পদার্থ বিদ্যায় যথেষ্ট পড়াশোনা ছিল তাঁর। পারিবারিক অবস্থাও স্বচ্ছল।
এখানে চার বছর ছিলেন নিউটন। এখানেই বিজ্ঞানী নিউটনের জীবনের ভিত তেরি হয়েছিল বলা যায়।
বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে হঠাৎ একদিন রত্নভান্ডার আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন নিউটন। চিকিৎসাবিদ্যা, রসায়ন, সৌরজগতের বিষয়ে প্রচুর বই জড়ো করা ছিল সেই ঘরে।
নিউটন সেই সব বইতে ডুবে গেলেন। সব কি আর বুঝতে পারেন, তবু পড়ার নেশায় পড়ে যান।