পোপ পল আবার ডেকে পাঠালেন। এবার দায়িত্ব পড়ল অসমাপ্ত সেন্ট পীটার্স গীর্জার কাজ শেষ করতে হবে।
কাজ শুরু হল। কি উদ্যম আর পরিশ্রম। হু হু করে কাজ এগিয়ে চলল। দেরি করার মত আর সময় নেই। এমন সময় খবর এল ভিত্তোরিয়া মৃত্যুশয্যায়। মিকেলেঞ্জেলো ছুটে গেলেন। অচেতন হয়ে শুয়ে আছেন ভিত্তোরিয়া। কাগজের মত সাদা তবু মনে হল তার মধ্যে ফুটে উঠেছে এক অপার্থিব সৌন্দর্য।
হঠাৎ পোপ তৃতীয় পল মারা গেলেন। নতুন পোপ হলেন চতুর্থ পল। মাইকেলেঞ্জেলোর প্রতি তার গভীর ঘৃণা আর বিদ্বেষ। পোপ হয়েই তিনি আদেশ দিলেন শেষ বিচারের ছবি অশ্লীল। এ ছবি সিসটাইন চ্যাপেলের দেওয়াল থেকে মুছে ফেলে দেওয়া হোক।
কিন্তু প্রতিবাদের ঝড় তুললেন রোমের শিল্পীরা। বেঁনেসার নব চেতনা তাদের মনের সব অন্ধকার দূর করে এক নতুন আলোয় রাঙিয়ে দিয়েছে। তাই আদেশ দিলেন শেষ বিচার। (Last Judgment) মুছে ফেলা হবে না। শুধু ছবির নগ্নতা ঢেকে দিতে হবে পোশাকের আবরণে। আর এ কাজের ভার পড়ল মাইকেলেঞ্জেলোর ছাত্র দানিয়েল দ্য ভলতেরার উপর। চারদিকে ভলতেরার নাম ছড়িয়ে পড়ল।
কৌতুকভরে কিম্বা কট্টরপন্থীদের যোগ্য জবাব দেবার জন্যেই আঁকলেন লেডা ও হাঁস। তার কোন সৃষ্টিতেই কামনার প্রকাশ নেই। এ ছবিতেই প্রথম আঁকলেন নগ্ন লেডা শুয়ে আছে আর হাসরূপী দেবতা তাকে জড়িয়ে আছে। মিলনের আনন্দে তারা বিভোর। কিন্তু ধর্মীয় গোড়ামিতেও এ ছবি চিরকালের মত হারিয়ে গিয়েছে।
লেডা ও হাঁসের মত মিকেলেঞ্জেলোর আরো অনেক সৃষ্টিই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তাঁর যে সৃষ্টি কালকে অতিক্রম করে বেঁচে আছে তাতেই তিনি মহত্তম শ্রেষ্ঠতম।
জীবন শুরু করেছিলেন ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে। তারপর চিত্রকর, তারপর কবি, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হলেন সেন্ট পিটার্স গীর্জার স্থপতি।
১৫৬৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, গীর্জার কাজ শেষ হয়ে এসেছিল। অসুস্থ মাইকেলেঞ্জেলো বিছানা থেকে জানলা দিয়ে দীর্জার দিকে তাকালেন।
মাইকেলেঞ্জেলোর মনে হল শিল্পের মধ্যে দিয়ে তিনি সমস্ত জীবন ধরে যে পরিপূর্ণ মুক্তির অন্বেষণ করেছেন, এতদিনের তার পালা শেষ হয়েছে। এবার পরিপূর্ণ বিশ্রাম। পরম তৃপ্তিতে চোখ বুজলেন মাইকলেঞ্জেলো।