এই সময় প্রকাশিত হল কিটসের তৃতীয় ও শেষ কাব্য সংকলন ১৮২০। এই কবিতাগুচ্ছ কিটসকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিদের পাশে স্থান দিয়েছে।
এই সংকলনে একদিকে ছিল কিছু বড় কবিতা অন্যদিকে ছোট কবিতা, সনেট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইসাবেলা। Isabella or the pot of Basil 1818) Hyperion। গ্রীক পূরাণের কাহিনী অবলম্বন করে লেখা দীর্ঘকাব্য।
The Eve of st, Agnes (1818) ইভ অব সেন্ট অ্যাগানিস।
কিটসের আরেকটি বড় কবিতা The Eve of Saint Mark…. এটিও অসমাপ্ত।
এই সব দীর্ঘ কবিতার পাশাপাশি রচিত তাঁর ছোট কবিতা (ode) গুলির মধ্যে ফুটে উঠেছে এক অনন্য সৌন্দর্য।
এই ছোট কবিতাগুলোর মধ্যে আছে। (ode) Ode to a Nightingale, ode on a Grecian Urn, ode to Autumn.
Ode to Autmun- এ মানব জীবনেরই এক রূপক। এখানে জীবন মৃত্যুর স্রোত পাশাপাশি বয়ে চলেছে।
Ode to Autmn-এ এক বিপরীত ধারণা ফুটেছে, এখানে কবি প্রকৃত সৌন্দর্য খুঁজে বেরিয়েছেন।
কবিতা ছাড়া কিটস্ কোন গদ্য লেখার চেষ্টা করেননি। তাঁর কাব্য জীবন ছিল মাত্র ছয় বছর ১৮১৪-১৮১৯। অর্থাৎ ঊনিশ থেকে চব্বিশ বছর বয়স। ১৮২০ সাল। কিটসের দেহ ক্রমশই ভেঙে পড়ছিল। তাঁকে নিয়ে আসা হল ফ্যানিদের বাড়িতে। ইটালিতে যাবার আগে এক মাস তিনি ফ্যানির নিবিড় সান্নিধ্য পেয়েছিলেন।
১৮২০ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর কিটস্ রওনা হলেন ইটালির দিকে। দীর্ঘ সমুদ্র পথ পার হতে ছয় সপ্তাহ লাগল। জাহাজে যেতে যেতে কিটস মুক্ত আকাশের দিকে চেয়ে থাকতেন। চোখে পড়ত ধ্রুবতারা। মনে হত মৃত্যুর পর তিনি ঐ ধ্রুবতারার সাথে একাত্ম হয়ে যাবেন। ধ্রুবতারাকে নিয়ে লিখলেন একটি কবিতা, এটিই কিটসের জীবনের শেষ কবিতা। ২১ অক্টোবর জাহাজ এসে ভিড়ল ইটালি নেপলস্ বন্দরে।
অচেনা অজানা ইটালিতে কোথায় থাকবেন কিছুই স্থির করতে পারেননি কিটস। এমন সময় বন্ধু শেলীর চিঠি পেলেন। শেলী তখন ছিলেন পিসায়। কিন্তু বন্ধুর এই বিপদের দিনে সব কিছু ভুলে তাঁকে আমন্ত্রণ করলেন, তুমি পিসায় চলে এস। আমি তোমাকে সুস্থ করে তুলব।
ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিটসকে যেতে হল রোমে। কারণ সে সময় ক্ষয়রোগের সবচেয়ে বড় চিকিৎসক ডাক্তার ক্লার্ক থাকতেন রোমে। রোমে ঘর ভাড়া নেয়া হল। শুরু হল কিটসের চিকিৎসা। কিন্তু কোন উপকার পাওয়া গেল না। ক্রমাগত শরীর ভেঙে পড়ছিল। কাশির সাথে রক্তবমি হতে আরম্ভ করল।
২৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ১৯২১ সাল। সমস্ত দিন কেমন আচ্ছন্ন ছিলেন কিটস রাত তখন প্রায় এগারোটা, মাথার পাশে বসেছিল বন্ধু সেভার্ন। আস্তে আস্তে কিস বললেন, “আমাকে তুলে ধর আমার মৃত্যু এগিয়ে এসেছে। আমি শান্তিতে মরতে চাই, তুমি ভয় পেও না- ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, অবশেষে মৃত্যু এল।” সেভার্নের কোলেই চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়লেন চিরসুন্দরের কবি কিটস।
পরদিন রোমের এক সমাধিক্ষেত্রে তাঁকে সমাধি দেয়া হল।
দু-বছর পরে এই সমাধিক্ষেত্রেই সমাধি দেওয়া হয় আরেক তরুণ কবি শেলীকে।
৯৮. প্লেটো (খ্রীস্টপূর্ব ৩২৭-খ্রীস্টপূর্ব ৩৪)
সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল- মানুষের চিন্তা আর জ্ঞানের জগতে তিন উজ্জল নক্ষত্র। সক্রেটিসের মধ্যে যে চিন্তার উন্মেষ ঘটেছিল; প্লেটো, অ্যারিস্টটল তাকেই সুসংহত দর্শনের রূপ দিলেন। এঁরা শুধু যে গ্রীসের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক তাই নয়, সমগ্র ইউরোপের জ্ঞানের জগতে যুগপুরুষ।
প্লেটো ছিলেন সেই সব সীমিত সংখ্যক মানুষদের একজন যারা ঈশ্বরের অকৃপণ করুণা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম হয়েছিল সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারে। অপরূপ ছিল তার দেহলাবণ্য, সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞানের প্রতি আকাঙ্ক্ষা, সক্রেটিসের মত গুরুর শিষ্যত্ব লাভ করা, সব কিছুতেই তিনি ছিলেন সৌভাগ্যবান।
পিতা ছিলেন এথেন্সের বিশিষ্ট ব্যক্তি। কিন্তু আভিজাত্যের কৌলিন্য তাকে কোনদিন স্পর্শ করেনি। রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে তিনি বরাবরই ছিলেন উদাসীন। বাস্তব জীবনের জটিলতা, সমস্যার চেয়ে জ্ঞানের সীমাহীন জগৎ তার মনকে আরো বেশি আকৃষ্ট করত। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ভাবুক আর কল্পনাপ্রবণ। এক সময় এথেন্স সর্ববিষয়ে সমৃদ্ধ। প্লেটো যখন কিশোর সেই সময় সিসিলির সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এথেন্স। এই যুদ্ধের পর থেকেই শুরু হল সেই সময় সিসিলির সাথে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ে এথেন্স। এই যুদ্ধের পর থেকেই শুরু হল এথেন্সের বিপর্যয়। দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করে প্রতিষ্ঠিত হল স্বৈরাচারী শাসন। সমাজের সর্বক্ষেত্রে দেখা দিল অবক্ষয় আর দুর্নীতি।
প্লেটো বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে শিক্ষা লাভ করেছে। তাদের কারোর কাছে শিখেছেন সংগীত, কারোর কাছে শিল্প, কেউ শিখিয়েছেন সাহিত্য আবার কারো কাছে পাঠ নিয়েছেন বিজ্ঞানের। সক্রেটিসের প্রতি ছেলেবেলা থেকেই ছিল প্লেটোর গভীর শ্রদ্ধা। সক্রেটিসের জ্ঞান, তার শিক্ষাদানের পদ্ধতির প্রতি কিশোর বয়সেই আকর্ষণ অনুভব করেছিলেন। কুড়ি বছর বয়সে তিনি সক্রেটিসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন।
তরুণ প্লেটো অল্পদিনের মধ্যেই হয়ে উঠলেন সক্রেটিসের সবচেয়ে প্রিয় শিষ্য। গুরুর বিপদের মুহূর্তেও প্লেটো ছিলেন তার নিত্য সঙ্গী।