১৮৬৯ খ্রি: অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরের বছরই মাত্র ৫৮ বছর বয়সে ১৮৭০ খ্রি: ৯ই জুন তাঁর মৃত্যু হয়।
চার্লস ডিকেন্সের প্রিয় বই ছিল ডেভিড কপারফিল্ড। তিনি নিজেই বলেছেন ‘of all books I like this the best’.
সমাজের কুশ্রীতা, কদর্যতা, নীচতার বিরুদ্ধে তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে নির্মম কশাঘাত করেছেন। দ্য মিস্ট্রি অব এডুইন ডুড হল চার্লসের সর্বশেষ রচনা। কিন্তু সম্পূর্ণ করবার মত আয়ু পাননি। তাই যে রহস্য নিয়ে বলতে শুরু করেছিলেন তার সমাধান বা শেষ কথা আর বলে যেতে পারেননি। তার আগেই প্রিয় পৃথিবীর মায়াকাটিয়ে চলে যেতে হয়েছিল। একসময় চার্লস ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তাঁর শৈশবের স্বপ্নভূমি কেন্টের গির্জা সংলগ্ন সমাধি ক্ষেত্রে তাকে যেন সমহিত করা হয়।
চ্যাথাম আর রচেস্টারের মাঝে কেন্টের গ্যাডস হিল প্লেসই ছিল তাঁর শেষ আবাসস্থল। এখানে তাঁর সঙ্গে থাকতেন তাঁর দুই কন্যা মেমি ও কেটি। তাঁর শেষ ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাকে সমাহিত করা হয়েছিল ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের পোয়েটনে কর্নারে।
৯৫. ম্যাক্সিম গোর্কি (১৮৬৮-১৯৩২)
বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিকদের অন্যতম ম্যাক্সিম গোর্কির প্রকৃত নাম ছিল আলেক্সেই ম্যাকিমভিচ পেশকভ।
প্রথম জীবনের বিপর্যস্ত, ক্ষুব্ধ, হতাশ যুবক তার নিজের পরিবেশ ও সময়কালের প্রতি এতই বীতশ্রদ্ধ ছিলেন যে পরবর্তীকালে তিনি যখন লেখকরূপে আত্মপ্রকাশ করেন, ছদ্মনাম গ্রহণ করেন গোর্কি। শব্দটির বাংলা অর্থ হল তপ্ত বা ক্ষুব্ধ। নিজের জীবনের প্রতি তীব্র ক্ষোভে ও বিতৃষ্ণার একসময় তিনি এতটাই ভেঙ্গে পড়েছিলেন যে নিজের হাতে গুলি করে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চেয়েছিলেন।
জীবনের নিম্নতম ধাপ থেকে কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পথ চলতে হয়েছিল গোর্কিকে। জীবনের শুরু থেকেই তাকে সইতে হয়েছিল লাঞ্ছনা, পীড়ন ও অপমান। বিচিত্র এবং ভিন্নমুখী অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হয়েছে বারংবার।
কিন্তু অদম্য মনোবল আর সুদৃঢ় সংগ্রামী প্রয়াস তাঁকে একদিন বিশ্ব-সংস্কৃতির চূড়ান্ত সম্মানের স্থানে পৌঁছে দিয়েছিল।
জীবনের বিতৃষ্ণ অধ্যায় ও অভিজ্ঞতাগুলোই হয়ে উঠেছিল তাঁর অমর সাহিত্যের মূল্যবান উপকরণ।
গোর্কির জন্ম হয় ১৮৬৮ খ্রি: ১৬ই মার্চ রাশিয়ার নিজনি নভগরদে। তাঁর বাবা জাহাজ কোম্পানির কাজে আস্তাখানে বাস করতেন। সেখানেই গোর্কির শৈশব কাটে।
বাল্য বয়সেই তিনি পিতৃহারা হয়ে নিজনিতে দাদুর বাড়িতে চলে আসেন। তাঁর মা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে নতুন সংসারে চলে যান।
কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য বেশি দিন কপালে সইল না তাঁর। দাদুর ব্যবসায় মন্দা দেখা দিল, সংসারেও নেমে এলো অভাবের ছোবল। সেই সঙ্গে গোর্কির জীবনেও দেখা দিল অনিশ্চয়তা।
মাতামহীর স্নেহ মমতা লাভ করেছিলেন, গোর্কি। তাঁরই উদ্যোগে ভর্তি হয়েছিলেন একটি স্কুলে।
সেই স্কুলের পড়া এবারে বন্ধ হয়ে গেল। মাত্র আট বছর বয়সেই তাঁকে দাদুর অভাবের সংসারের চাপে রোজগারে নামতে হল।
এই সময়ে তাকে করতে হয়েছিল বিভিন্ন রকমের কাজ। কখনো জুতোর দোকানের সহকারী, কখনো স্টীলের বাসন মাজার কাজ, কখনো কোন চিত্র শিল্পীর গৃহভৃত্যের কাজ করে সংসারের দৈনন্দিনের অভাবের মোকাবিলা করতে হয়েছে।
এই তুচ্ছাতি তুচ্ছ কাজের মধ্যেই গোর্কি আলোর সন্ধান পেয়েছিলেন। জাহাজে বাসন মাজার কাজ যখন করতেন, সেই সময় এক পাঁচকের সঙ্গে তার আলাপ হয়। সেই মানুষটির ছিল নানারকম বই পড়ার আগ্রহ। গোর্কি তার কাছে পড়ালেখা শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।
শিশু গোর্কির শ্রমিক জীবন ছিল খুবই ভয়াবহ। সামান্য পারিশ্রমেিকর বিনিময়ে করতে হতে উদয়াস্ত কঠোর পরিশ্রম।
পেট ভরে দুবেলা খাবারও জুটত না। ময়লা ছেঁড়া কাপড়চোপড়ের বেশি পরার জন্য জোটাতে পারতেন না। লাঞ্ছনা, গঞ্জনার সঙ্গে মাঝে মধ্যে চড়চাপড়ও জুটতো।
রাশিয়ার শ্রমিকজীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এইভাবেই লাভ হয়েছিল গোর্কির। যন্ত্রণাময় শৈশব জীবনের কথা তিনি কোনদিন ভুলতে পারেননি।
পরবর্তী জীবনে সমাজের নিম্নতম স্তরের জীবনের এই দুর্বিসহ অভিজ্ঞতাকেই তিনি তাঁর সাহিত্যের উপজীব্য করেছিলেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সর্বহারাদের দুঃখবেদনা আর যন্ত্রণা-বুভুক্ষার কথা তার সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছিল।
আঠারো বছর বয়সে গোর্কি নিজনি থেকে চলে এলেন কাজানে। একটা রুটি তৈরির কারখানায় কাজ নিলেন।
এখানকার হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম তাঁকে এতই হতাশাগ্রস্ত আর ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল যে তিনি জীবনের যন্ত্রণা জুরোতে চেয়েছিলেন আত্মহত্যা করে।
এই আত্মহননের ইচ্ছা জেগেছিল তার দুটি কারণে। একদিকে ছিল আশৈশবের সঙ্গী দারিদ্র। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল দারিদ্র-মুক্তি প্রয়াসের হতাশা।
গোর্কি তাঁর দিনমজুরের কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে বইপত্র পড়ার অভ্যাসটা বজায় রেখেছিলেন। এই সময় রুশ বিপ্লবের আদর্শ ও কর্মপদ্ধতি তাঁকে অনুপ্রাণিত করে।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ঘটে। তিনি বুঝতে পারেন, মানুষের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম। এই কথা তিনি মনে মনে বিশ্বাস করলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই নিজের বিশ্বাসের কথা অন্য সমব্যথীদেরও বোঝাতে চেষ্টা করতে লাগলেন।