ইংরাজি নাম – স্প্যানিশ নাম
এবিংডেন – পিন্টা
বিনজলে – মার্চেনা
টাওয়ার – জেনোভেসা
জেমস – সালভাদর
ইন্ডিফ্যাটিগেবল – সান্তাক্রুজ
চ্যাথাম – ক্রিস্তোব্যাল
চার্লস – সান্তামারিয়া
এলবেমার্লে – ইসাবেলা
নারবরো – ফার্নান্দিনা
গ্যালাপাগো দ্বীপুঞ্জের মাত্র পাঁচটি দ্বীপে লোকবসতি রয়েছে। অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা কৃষি ও মৎস্যশিকার। এখানকার আদিম প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৫০০ পাউন্ড ওজনের অতিকায় কচ্ছপ। এগুলো স্প্যানিশ নাম গ্যালাপ্যাগো। এই থেকেই দ্বীপুঞ্জের নামকরণ।
প্রাচীনকালে সমুদ্রের চোরাস্রোতে পড়ে জাহাজ ইত্যাদি এই অঞ্চলে এমনভাবে ঘুরপাক খেতো যে নাবিকদের চোখের সামনে থেকে দ্বীপ মাঝে মাঝে অদৃশ্য হয়ে যেত।
সেইকারণে স্প্যানিশদের দেওয়া আর একটি নাম হল লা আইলাস এনক্যালনটাডাস। ইংরাজি নাম দ্য এনচেড়ে আইসল।
এখানকার জলবায়ু বিচিত্র। ভূ-বিষুবরেখা দ্বীপপুঞ্জের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে, সেইকারণে এখানে সূর্যকিরণ অতীব প্রখর।
অথচ দক্ষিণ মেরু থেকে প্রবাহিত অতি শীতল হমবোল্ট সমুদ্রস্রোতের দরুণ নিরক্ষীয় সমুদ্র থেকে এখানকার সমুদ্র ৯৫ থেকে ২০ বেশি ঠান্ডা।
ডিসেম্বর থেকে মার্চ অবধি ঝড়-বৃষ্টি, তারপর আগ্নেয়গিরিজাত পর্বতসঙ্কুল দ্বীপমালা মরুভূমি-সদৃশ।
ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে কুমেরু অঞ্চল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত এলাকা বহু বিচিত্র প্রাণীর লীলাভূমি।
পানামার বিশপ টমাস ডি বারলাঙ্গা, ১৫৩৫ খ্রি: এই দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। কনটিকি অভিযান-খ্যাত থর হায়ারঙাল ১৯৫৩ খ্রি: এখানে এসে যে সব প্রমাণ পান তার থেকে তিনি ধারণা করেন ১৫৩৫ খ্রি: আগেই এখানে মানুষের পদার্পণ ঘটেছে।
প্রাগৈতিহাসিক কালের সরীসৃপের মধ্যে এখানে এখনো পর্যন্ত বহাল তবিয়তে বেঁচে রয়েছে জলচর ও স্থলচর গোসাপ বা গিরগিটি শ্ৰেণীর ইগুয়ানা। পৃথিবীর আর কোথাও এই প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। নারবরো (ফার্নান্দিনা) দ্বীপের জলচর ইগুয়ানা লম্বায় তিন ফুট, ওজন ২০ পাউন্ড।
এখানকার এক একটি দ্বীপে এক এক প্রজাতির ফিঞ্চ পাখি রয়েছে। জীবনধারণের জন্য সংগ্রাম করতে করতে ১৩ প্রজাতির ফিঞ্চ পাখির অাকার বিশেষতঃ ঠোঁটের গঠন বিভিন্ন প্রকারের হয়ে গেছে।
অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে বৃহদাকার কচ্ছপ, ফারসীল, সিন্ধুঘোঁটক, লাল কাঁকড়া ও ড্রোমিকাস প্রজাতির সাপ উল্লেখযোগ্য।
পাখি রয়েছে বহুপ্রকার, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ববি, পায়রা, বাজপাখি, পেঙ্গুইন, পেলিক্যান,পরমোর্যান্ট, ফ্লেমিংগো, মকিংবার্ড, ফ্রিগেট, নীল হেরন, ফ্লাইক্যাচার ও ফ্লিগেটবার্ড।
প্রকৃতি যেন তার আদিমরূপের একটা সংক্ষিপ্ত সংস্করণ এখানে স্বকীয় প্রযত্নে সংরক্ষণ করে চলেছে।
৯২. উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট (১৮৭১-১৯৪৮) (১৮৬৭-১৯১২)
যে সকল প্রতিভাবান অনুসন্ধিৎসু মানুষের চিন্তা ও কর্ম মানব সভ্যতার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে, উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট–এই দুই সহোদর তাদের মধ্যে অন্যতম। রাইট ভ্রাতৃদ্বয় নামেই তারা সারা বিশ্বে পরিচিত।
আজকের পৃথিবীতে দূর হয়েছে নিকট পৃথিবী আজ আমাদের হাতের মুঠোয় বলতে গেলে। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে মানুষের আবিষ্কৃত বিমানপোত।
আর তা আবিষ্কার করেছিলেন উইলবার ও অরভিল দুই ভাই। নিজেদের তৈরি যন্ত্রযানে চেপে তারাই প্রথম আকাশে উড়ে মানুষের ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন।
আমেরিকার ইন্ডিয়ানা প্রদেশে ১৮৬৭ খ্রি: উইলবারের জন্ম। অরভিলের জন্ম ১৮৭১ খ্রি:।
পিঠোপিঠি দুই ভাই ছেলেবেলা থেকেই ছোট যন্ত্রপাতি নিয়ে মেতে থাকতেন। কখনও নিজেরাই কিছু একটা বানাতেন। অসীম ধৈর্য নিয়ে নাওয়া খাওয়া ভুলে লেগে থাকতেন নিজেদের সেইসব কাজে।
পড়াশুনা শেষ করে দুই ভাই মিলে নিজেদের পছন্দমত একটা কারখানা তৈরি করলেন। প্রথমে ছাপার যন্ত্র ও পরে বাইসাইকেল নিয়ে কি করে এগুলোর আরো উন্নতি করা যায় তার চেষ্টা করলেন।
সেই সময় অটো লিলিয়েনথাল নামে একজন জার্মান ইঞ্জিনিয়ার উড়ন্তযান নিয়ে গবেষণা করছিলেন। কয়েক বছরের চেষ্টায় তিনি অনেকটা সফলও হলেন। কিন্তু হঠাৎ ভদ্রলোকের মৃত্যু হওয়ায় তাঁর গবেষণার কাজ সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়। রাইট ভাইয়েরা তখন লিলিয়েনথালের অসমাপ্ত কাজের বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করলেন।
লিলিয়েনথালের উড়ন্ত যানের নক্সা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার ত্রুটি খুঁজে বার করলেন তাঁরা। তারপর আরম্ভ করলেন এই নিয়ে গবেষণার কাজ।
উড়ন্ত যান নিয়ে ইতিপূর্বে যত কাজ হয়েছিল প্রথমেই তারা সেই সব বিবরণ সংগ্রহ করলেন। সেসব পরীক্ষা করে বুঝতে পারলেন কেবলমাত্র বাতাসের গতিবেগের ওপর নির্ভর করে উড়ন্ত যান বেশিদূর চালানো সম্ভব নয়। এজন্য দরকার শক্তি চালিত ইঞ্জিনের। গতি সঞ্চার করতে না পারলে এই যানের কোন ব্যবহারিক মূল্য থাকবে না।
তারপর দুই ভাই মিলে চিন্তা শুরু করলেন ইঞ্জিনের বিষয় নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন। কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারলেন না।
বারবার ব্যর্থ হয়ে হতাশ হয়ে পড়লেন দুজনে। তখন বুঝতে পারলেন এ বিষয়ে তাদের জ্ঞান যথেষ্ট সীমিত। সাফল্যের জন্য দরকার বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান।