এই বইটিই দ্য অরিজিন অব স্পিসিস সংক্ষিপ্ত নামে বিখ্যাত।
প্রকাশের পর মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে বইটির এক হাজার আড়াই শো কপি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।
রক্ষণশীল খ্রিস্টান ও বিজ্ঞানী উভয় মহলেই আলোড়ন সৃষ্টি করল বইটির বক্তব্য।
উদ্ভিজ্জ ও জীবের অপরিণত অবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে তাদের পরিবর্তনশীলতা, মাটির ওপরে তাদের বংশে বিস্তার প্রভৃতি বিবেচনা করে চার্লস সিদ্ধান্ত করেন যে জীবনের সৃষ্টি কোন স্বয়ংসৃষ্ট ব্যাপার নয়। এর উদ্ভবের পেছনে একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
পনেরোটি অধ্যায়ে এই গ্রন্থে গার্হস্থ্য পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবের অবস্থা বিচার, বাঁচবার জন্য তাদের নিরন্তর প্রয়াস, তার প্রাণধারণে প্রকৃতির নির্বাচন অথবা যোগ্য জীবেরই বাঁচার অধিকার, সংজ্ঞা (instinct), সংকরতা প্রভৃতি বিষয়ে পরিচ্ছন্ন আলোচনা ও এ বিষয়ে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ডারউইনের এই গ্রন্থের আলোচনা পদ্ধতি ছিল কাব্যময় ও সরস, ফলে বিষয় বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হলেও সকশ্রেণীর পাঠককেই সমানভাবে আকৃষ্ট করেছিল।
কয়েক বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বহু ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়।
দ্য অরিজিন অব স্পিসিস, যেমন টি.এইচ. হাক্সলির মত বৈজ্ঞানিকের সমর্থন পায় তেমনি বিগল জাহাজের ক্যাপ্টেন ফিজরয়ের মতো রক্ষণশীল খ্রিস্টানদের বিরোধিতাও পায়।
সকল প্রকার বিতর্কের অবসানের জন্য ডারউইন ১৮৮ খ্রি: ও ১৮৭১ খ্রি: দুখানি বই variation of Animals and Plants ও Decent of Man পর পর প্রকাশ করেন।
দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপর গবেষণা চালিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তিনি যে মতবাদ প্রচার করেন, তাই ডারউইনের মতবাদ বা (Darwin’s Theory) প্রাকৃতিক নির্বাচন নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
ডারউইনের সমসাময়িক বিজ্ঞানী আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস স্বাধীনভাবে গবেষণা করে অভিব্যক্তির মূল ঘটনাকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের নীতিতে ব্যাখ্যা করে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের দরুন প্রজাতির উৎপত্তি এই মত প্রকাশ করায় ডারউইনের মতবাদ ডারউইন-ওয়ালেস মতবাদ নামেও পরিচিত।
ডারউইনের মতবাদের মূলকথা Survival of the fittest অর্থাৎ জীবজগতে অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য প্রতিনিয়ত সগ্রাম চলেছে এবং যারা উপযুক্ত তারাই টিকে আছে।
ডারউইনের মতবাদের মূল নীতি হল :
(১) বহুল পরিমাণে বংশবৃদ্ধি।
(২) জীবন সংগ্রাম-এর মধ্যে আছে অন্তঃপ্রকৃতি সংগ্রাম, ভিন্ন ভিন্ন বা আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম ও পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম।
(৩) প্রকরণ ও বংশগতি এবং
(৪) প্রাকৃতিক নির্বাচন।
প্রাকৃতিক নির্বাচন বলতে বোঝায় যে কোন প্রাণী যে সংখ্যায় বাঁচতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাণী জন্ম নেয়। যেহেতু ক্রমাগত জীবন সংগ্রাম চলছে, এ থেকে ধারণা করা যায় যে, কোন প্রকরণ যদি কোন প্রাণীর এবং পরিবেশের তুলনায় সুবিধার হয় তাহলে প্রজাতির ঐ প্রাণী বেঁচে থাকবার সুযোগ বেশি পায়। এভাইে প্রাকৃতিক নির্বাচন সাধিত হয়।
প্রাণীর বংশগতির মূল ধারণা থেকেই এ বিশ্বাস আসে যে নির্বাচিত প্রকরণ বংশগতি লাভ করে থাকে।
ডারউইনের যুগান্তকারী প্রাকৃতিক নির্বাচন-তত্ত্ব বিশ্বের বিজ্ঞানীদের দ্বারা অভিব্যক্তির প্রমাণরূপে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯০০ খ্রি: ক্রিশের পরিব্যক্তিতত্ত্ব প্রকাশিত হবার পর এবং গোল্ডস্মিথ, মূলার মার্সাল ফিশার প্রভৃতি প্রজননবিদদের নতুন নতুন তত্ত্ব প্রকাশিত হবার ফলে প্রাকৃতিক নির্বাচনই জীবনের অভিব্যক্তির মূল কারণ, এই ধারণার পরিবর্তন ঘটে।
বর্তমান বিজ্ঞানীরা পরিব্যক্তিবাদের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে ডারউইনের মতবাদের দুর্বল অংশগুলোকে সংশোধন করে এক নতুন তত্ত্ব সৃষ্টি করেছেন।
এই সংশোধিত তত্ত্ব নয়া-ডারউইনবাদ {New Darwinism) নামে পরিচিত। এই মতবাদের মূল কথা হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন ও মিউটেশনের মিলিত প্রচেষ্টায় অভিব্যক্তি ঘটে থাকে।
অভিব্যক্তবাদ প্রকাশের পর ডারউইন আরও কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য Fertilization of Orchids (১৮৬২) ও Formation of Vegetable Mould through the Action of Wom (১৮৮১ খ্রি:) প্রভৃতি।
আজীবন গবেষণাকাজে লিপ্ত ছিলেন ডারউইন। জীবের প্রতি ভালবাসা ছিল তাঁর চরিত্রের মহান বৈশিষ্ট্য। ১৮৮২ খ্রি: ১৯ এপ্রিল এই মহান বিজ্ঞান-সাধকের জীবনাবসান হয়।
১৮৩৫ খ্রি: ১৫ সেপ্টেম্বর চার্লস ডারউইন এইচ এম, এস বিল জাহাজে বৈজ্ঞানিক গবেষণার উদ্দেশ্যে গ্যালাপোগাস দ্বীপপুঞ্জে যান। এখানকার বহু বিচিত্র প্রাণীজীবন সম্পর্কে তিনি বিপুল তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। প্রাণের ক্রমবিবর্তনধারা নিরূপনে এই সব তথ্যই ছিল তাঁর বিখ্যাত মতবাদের অন্যতম ভিত্তিভূমি। নিচে আগ্নেয়শিলাজাত দ্বীপপুঞ্জের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হল।
গ্যালাপোগাস দক্ষিণ আমেরিকার অন্তর্গত ইকোয়েডরের শাসনাধীন দ্বীপপুঞ্জ। ইকোয়েডরের থেকে দূরত্ব ১,০০০ কি.মি এবং ৬০০ মাইল পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। পনেরটি বড় এবং অসংখ্য ছোটছোট দ্বীপ মিলিয়ে মোট আয়তন ৭,৯৬৪ বর্গ কি.মি।
প্রথমে স্পেনীয়রা এই দ্বীপগুলোর নামকরণ করে। দ্বিতীয়বারে এদের নামকরণ করে সপ্তদশ শতকে ইংরাজ জলদস্যুরা। তাই অধিকাংশ দ্বীপেরই দুটি করে নাম। কয়েকটি প্রধান দ্বীপের স্প্যানিশ নাম ও ইংরাজি নাম এরকম–