এই প্রবন্ধের জন্য তিনি এডামস পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
ম্যাক্সওয়েল একাধিক মূল্যবান গ্রন্থও রচনা করেছিলেন, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম ট্রিটিজ অন ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড ম্যাগনেটিজম। তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি বিখ্যাত গবেষণাগার ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটারি প্রতিষ্ঠা। তার উদ্যোগ ও তত্ত্বাবধানেই এই গবেষণাগার গড়ে উঠেছিল।
দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলে অল্প বয়সেই ম্যাক্সওয়েল রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ১৮৭৯ খ্রি: তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।
৯১. চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২)
জীবনের রহস্য এবং সৃষ্টির মূল নিয়মকে বিশ্লেষণ করে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন চার্লস ডারউইন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন উদ্ভিদ ও প্রাণীর দৈহিক পরিবর্তন পরিবেশের সঙ্গে তাদের প্রতিক্রিয়ার ফল।
তিনিই প্রথম অসংখ্য উদাহরণের মাধ্যমে প্রাণীজগতের অভিব্যক্তি প্রক্রিয়া বর্ণনা করেন।
জীববিজ্ঞানের বিখ্যাত অভিব্যক্তিবাদ তিনিই প্রবর্তন করেছিলেন। সেই কারণে জীববিজ্ঞানে তিনি গুরু স্থানীয় বলে বিবেচিত হন।
মানবোৎপত্তির ব্যাখ্যাতা, প্রকৃতিবিদ, দার্শনিক চার্লস ডারউইনের জন্ম ১৮০৯ খ্রি:। তাঁর পিতামহ ইরাসমাস ডারউইন ছিলেন সুখ্যাত নিসর্গবিদ, কবি ও দার্শনিক এবং পিতা ও বড় ভাই দুজনেই ছিলেন চিকিৎসক।
বাল্যকাল থেকেই চার্লস ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির ও প্রকৃতি প্রেমিক, রূপময় প্রকৃতির চিত্রময় অভিব্যক্তির মধ্যে তন্ময় হয়ে যেতেন। বিশেষ করে চারপাশের উদ্ভিদ ও জীবদের নিয়েই তিনি বেশি ভাবনা চিন্তা করতেন।
তরুণ বয়সেই তাঁর মনে এমন প্রশ্ন উদিত হয়েছিল প্রকৃতির কোলে লালিত জীবকুল কোথা থেকে এসেছে?
আবার এরা যায়ই বা কোথায়? মৃত্যুর পর কি এদের কোনরূপ অস্তিত্বই পৃথিবীতে থাকে না?
স্পষ্টতঃই পিতামহর প্রবল প্রভাব পড়েছিল বালক চার্লস-এর ওপর। সেই বয়সেই তিনি বিশ্বজগৎ ঘুরে দেখার কথা ভাবতেন।
প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্য ও রহস্য নিয়ে ডুবে থোকলেও লেখাপড়ায় বরাবরই ভাল ছিলন তিনি।
প্রথমে তাকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়েছিল ডাঃ বাটলারের বিদ্যালয়ে। এখানকার পড়া শেষ হলে ডাক্তারি পড়ার জন্য তাঁকে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান হয়।
কিন্তু ডাক্তারি পড়া চার্লস-এর ভাল লাগল না। একথা পিতাকে জানালে তিনি ছেলেকে ধর্মযাজক করবেন বলে ঠিক করলেন। সেই উদ্দেশ্যে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হল কেমব্রিজে।
আঠারো বছর বয়সে চার্লস ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। এখানে পড়ার সময় হামবোল্ড-এর লেখা Personal Narrative বইটি পড়ে তিনি নিসর্গবিদ্যার প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন।
উদ্ভিদবিদ্যার বিখ্যাত অধ্যাপক ছিলেন ডঃ হনসলো। এখানে চার্লস তার গভীর সংস্পর্শে আসেন এবং তার জীবনে দিক পরিবর্তনের সূচনা হয়।
ক্রাইস্ট কলেজ থেকে স্নাতক উপাধি লাভের পর চার্লস কিছুদিন ভূ-বিদ্যাপাঠ করেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পর্যটনের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
এই সময়ে আকস্মিকভাবেই একটা সুযোগও এসে গেল। এই সময়ে H.M. Beagle নামে একটি ভ্রাম্যমাণ জাহাজের জন্য একজন নিসর্গবিদের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের গাছপালা ও জীবজন্তু দর্শনের জন্য চার্লস খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি অধ্যাপক হনসলো-এর চিঠি নিয়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন ফিররে-এর সঙ্গে দেখা করলেন।
জাহাজের উক্ত গবেষক পদটি ছিল অবৈতনিক। চার্লস কোন আপত্তি করলেন না এবং কর্মনিযুক্ত হলেন।
বির্গল জাহাজ ১৮৩১ খ্রি: ২৭ ডিসেম্বর ইংলন্ড থেকে আমেরিকার দিকে যাত্রা করে।
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে জাহাজটি দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল অঞ্চল, আগ্নেয়গিরি সঞ্চিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ, তাইহিতি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, তাসমানিয়া, মালদিভ দ্বীপপুঞ্জ, সেন্ট হেলেনা প্রভৃতি স্থান পরিভ্রমণ করেছিল।
এই দীর্ঘ সময়ের বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করে পুরোদস্তুর প্রাণিতত্ত্ববিদ হয়ে চার্লস দেশে ফিরলেন।
এবারে তিনি আরম্ভ করলেন গবেষণা আর নিজস্ব ধ্যানধারণার কথা পুস্তিকাকারে প্রচার করতে লাগলেন।
এই সকল পুস্তিকা তেমন সাড়া জাগাতে না পারলেও ভূ-তত্ত্ববিদ চার্লস লায়ারের সঙ্গে চার্লস-এর পরিচিত হবার সুযোগ ঘটে। এতে তিনি যথেষ্ট লাভবান হন।
ত্রিশ বছর বয়সে চালর্স এমমা ওয়েজউডকে বিয়ে করেন। এই দম্পতি ক্রমে পাঁচ পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান লাভ করেন।
দীর্ঘ ষোল বছর ধরে পঠন-পাঠন ও গবেষণার মাধ্যমে চার্লস বিবর্তনবাদকে আয়ত্ত করবার চেষ্টা করেন।
এই সময় তিনি প্রখ্যাত প্রকৃতিবিদ ও তথ্যানুসন্ধানী অ্যালফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের কাছ থেকে একটি চিঠি পান।
সেই চিঠিতে জানা যায় পরস্পরের অতি পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও উভয়েই একই বিষয়ে গবেষণা করে একই সিদ্ধান্ত পৌঁছেছেন।
এই আশ্চর্য সমাপতনে চার্লস বিস্মিত হন এবং নিজের গবেষণার কথা ওয়ালেসকে জানালেন।
উত্তরে ওয়ালেস আশ্চর্য ঔদার্যের সঙ্গে জানালেন “I withdraw from the field leaving it open to you.”
১৮৫৮ খ্রি: ১ জুলাই লন্ডনের লিনিয়ান সোসাইটিতে ডারউইন তাঁর প্রবন্ধ পাঠ করেন। এটিই এক বছর পরে The origin of species by means of Natural Selection or the Preservation of the Favoured Races in the Struggle for Life এই দীর্ঘ নামে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়।