মহাজ্ঞানী মহাজন অ্যারিস্টটল খ্রি: পূর্ব ৩২২ অব্দে Eubaca-এর অন্তর্গত থালফিস নামক নগরীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁর প্রধান বইগুলোর ইংরাজি নাম Dialogues, On Monarchy, Alexander, The Custom of Barbarians, Natural History, Organon of The Instrument of Currect Thinking, On the Soul, Rhetoric, Logic, Eudemian Ethics, Physics, Metaphysics Politics, Poetics, 158 Constitutions (including The Constitution of Athens) প্রভৃতি।
৮৯. মেরি কুরি (১৮৬৭-১৯৩৪)
বিশ্ববিজ্ঞানের মহানায়িকা মেরি কুরি, মাদাম কুরি নামেই সমধিক পরিচিত। রেডিয়াম ও পোলনিয়াম এই দুই তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কার করে তিনি পদার্থ ও রসায়ন বিদ্যার মহাসম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
মাদাম কুরির সম্পূর্ণ নাম মার্জা ক্লোডোস্কা। তিনি পোল্যাণ্ডের রাজধানী ওয়ারশতে ১৮৬৭ খ্রি: ৭ই নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে মার্কা সর্বকনিষ্ঠ। বাবা স্থানীয় একটি স্কুলের পদার্থ বিদ্যার শিক্ষক। মাও সুশিক্ষিতা, ব্যক্তিত্বময়ী। সংসারের খরচ সংকুলানের জন্য তিনি মেয়েদের পড়াবার জন্য একটা স্কুল খুলেছিলেন।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই লিখতে পড়তে শিখে গিয়েছিলেন মার্জা। তাঁর পড়ার আগ্রহও ছিল প্রবল।
অ্যাডভেঞ্চারের গল্প থেকে শুরু করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই, নানা আবিস্কারের গল্প, যখন যা হাতের নাগালে পেতেন সব গোগ্রাসে গিলতেন।
পনের বছর বয়সের মধ্যেই তিনি রুশ জার্মান দুই ভাষাই ভালভাবে শিখে নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বাবাই ছিলেন উৎসাহদাতা। মাত্র এগারো বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মা মারা গেলেন। সেই সময় এই মারাত্মক রোগের প্রতিষেধক বলতে কিছুই ছিল না।
মার্জার দিদি ব্রনিয়া এবং দাদা জোজিও হাইস্কুলে সেরা ফল করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। মার্জাও একই স্কুল থেকে সবচেয়ে ভাল ফল করে স্নাতক হলেন, পেলেন স্বর্ণপদক।
ছেলেমেয়েদের স্কুলের ফলাফলের জন্যই ক্লোডোস্কার পরিবার অঞ্চলে বিশেষ সুপরিচিত হয়ে উঠেছিল।
ষোল বছর বয়সে স্কুল থেকে বেরিয়ে মার্জা স্থির করলেন প্যারিস যাবেন ডাক্তারি পড়বার জন্য।
কিন্তু বাবার আর্থিক সামর্থ্য ছিল সীমিত। বড়দি ব্রনিয়ারও সাধ প্যারিসে গিয়ে ডাক্তারি পড়বেন। প্যারিসে রেখে দুই মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবার মত সঙ্গতি বাবার ছিল না। বাবার মুখে এই নিদারুণ কথা শুনে মার্জার মন ব্যথিত হলেও হতাশ হলেন না। তিনিই বাবাকে আশ্বস্ত করে জানালেন যে দিদিই আগে প্যারিসে পড়তে যাবে। তাঁর পড়ার খরচ জোগাবার জন্য তিনি এখানে কিছু একটা কাজ জুটিয়ে নেবেন। দিদি পাশ করে দেশে ফিরে এলে তিনি সেখানে যাবেন। তখন তার পড়ার খরচ চালানো দিদির পক্ষে অসম্ভব হবে না।
এই ব্যবস্থা মতই দিদি ব্রনিয়া প্যারিস চলে গেলেন। আর তাঁর পড়ার খরচ চালাবার জন্য মার্জা ওয়ারশতেই এক ধনী পরিবারে গভর্নেসের চাকরি নিলেন। সেখানে বাড়ির কত্রী ছিলেন খুবই বদমেজাজী। ফলে মার্জা বছরখানেকের বেশি টিকে থাকতে পারলেন না। কিন্তু কাজ ছাড়া থাকবার তো উপায় ছিল না। দিদিকে প্যারিসে নিয়মিত খরচের টাকা পাঠাতে হয়।
চেষ্টা চরিত্র করে এবারে এক রুচিসম্পন্ন ভদ্র পরিবারে কাজ পেলেন–সেই গভর্নেসেরই। এখানে পরিবারের আবহাওয়ার সঙ্গে সহজেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিলেন।
কিন্তু সুখ তো বেশিদিন কপালে সয় না! মার্জারও তাই হল। ঘটনাক্রমে পরিবারের এক সুদর্শন যুবকের সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়েন। কিন্তু বিয়ে সম্ভব হল না।
অভিজাত পরিবারের ছেলের সঙ্গে সামান্য বেতনভূক পরিচারিকার বিবাহ যে অকল্পনীয় ব্যাপার।
যুবকটি তাঁর অভিভাবকদের কথা জানিয়ে মার্জার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এতেই শেষ হয় না। পরিবারে কর্তারা কাজ থেকে ছাঁটাই করলেন মার্জাকে।
চরম হতাশা ও অপমান নিয়ে আবার নতুন করে কাজের সন্ধানে নামতে হল মার্জাকে।
এমনি জীবন-সংগ্রামের কঠিন পথে চলতে চলতে মার্জা অল্প বয়সেই যথেষ্ট পরিণত হয়ে উঠলেন। প্রতিকূলতার মধ্যে মর্যাদার সঙ্গে লড়াই করবার প্রেরণা তিনি এভাবেই লাভ করেছিলেন।
পাঁচ বছর প্যারিসে পড়াশোনা করে দিদি ব্রনিয়া ডাক্তার হলেন। কিন্তু তিনি আর দেশে ফিরলেন না। সেখানেই এক যুবককে বিয়ে করে সংসার পাতলেন।
গোটা পরিকল্পনাটাই পাল্টে গেল। মার্জার আর ডাক্তারী পড়তে প্যারিস যাওয়া সম্ভব হল না। খরচ যোগাবে কে?
উনিশ শতকের শেষ দিকে পোল্যাণ্ড ছিল রাশিয়ার জারতন্ত্রের শাসনাধীন। মার্জার তরুণী বয়সকালে পোল্যাণ্ড রুশ-বিরোধী স্বাদেশিকতার আবহাওয়া জোরদার হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতার আন্দোলনে মাজার শিক্ষক পিতা ছিলেন অন্যতম পুরোধা পুরুষ। মার্জাও বাবার সঙ্গে আন্দোলনে ভিড়ে গেলেন।
পোল্যাণ্ডের নানাস্থানে গোপনে স্বদেশী স্কুল গড়ে উঠেছিল। তেমনি একটি স্কুলে মার্জা শিক্ষয়িত্রীর কাজ করতে লাগলেন। তিনি ছাত্রদের পড়াতেন অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন। এইভাবে দুবছর কাটল। ১৮৯১ খ্রি: প্যারিস থেকে দিদি ব্রনিয়া হঠাৎ চিঠি পাঠালেন পত্রপাঠ সেখানে চলে যাবার জন্য। মার্জার ডাক্তারী পড়ার খরচ তিনিই জোগাবেন। এতদিন পরে আশার আলো আবার মার্জার্কে আশান্বিত করে তুলল। কোনরকমে পথ খরচ সংগ্রহ করে তিনি প্যারিসে রওনা হয়ে পড়লেন। প্যারিসে পৌঁছে মার্জা কিন্তু দিদির সঙ্গে দেখা করলেন না।