বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে তুলে ধরার জন্য এখানে উপস্থিতক্ষেত্রে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার একটি উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে। মানুষের দেহগত বিবৃতি খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। দেহবিকৃতির একটি সাধারণ ব্যাধি মঙ্গোলিজম’ নামে পরিচিত। আধুনিক প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা থেকে জানা গেছে, এই ব্যাধির দরুন যে বিকৃতি ঘটে থাকে, তার প্রধান কারণ হচ্ছে, জন্মসূত্রে প্রাপ্ত একটি বিকৃত ক্রোমোজম। বিকৃত এই ক্রোমোজমটি সাধারণ ক্রোমোজম অপেক্ষা তিনগুণ বড়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এই ক্রোমোজমের নাম দিয়েছেন ক্রোমোজম-২১ এবং এই ব্যাধির নাম দেয়া হয়েছে ট্রাইজোমি-২১।
সর্বাধুনিক গবেষণার ফলাফল থেকে আরো জানা গেছে, এই বিকৃত ক্রোমোজমের মধ্যে যেসব জিন অবস্থান করে, সেইসব জিনই এই ব্যাধি তথা বিকৃতির জন্য দায়ী। বৈজ্ঞানিক জরিপে আরো ধরা পড়েছে, যে-সব মা ৪০ বছরের বেশি বয়সে সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন, তাঁদের সন্তানেরাই সাধারণত অধিকমাত্রায় এই ব্যাধি তথা বিকৃতিতে আক্রান্ত হয়।
এই ব্যাধির লক্ষণ, শৈশবে দৈহিক বৃদ্ধির অভাব ও বুদ্ধিবৃত্তির ঘাটতি। তছাড়াও, এই ক্রোমোজম তথা জিনধারী ছেলেমেয়েরা দেহগত এমনসব বিকৃতির শিকার হয় যা জন্মকালে আদৌ বুঝা যায় না। কিন্তু বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে সে-সব বিকৃতি প্রকট হয়ে দেখা দেয়।
তবে, ব্যাধির কারণ যাই হোক, দেখা গেছে, গর্ভাধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই রোগের মূল বীজ বা কারণ গর্ভস্থ শিশুর দেহে সঞ্চারিত হয়।
এটা গেল বিবৃতির উদাহরণ ও অনুরূপভাবে জাতিগত ক্ষেত্রে মানুষের যে ইতিবাচক দৈহিক সংশোধন, পরিবর্তন ও রূপান্তর, তাও ঘটে থাকে একইধারায় সুষ্ঠু ক্রোমোজম তথা পরিপুষ্ট জিন-এর মাধ্যমে। আর এই পরিবর্তনের কাজটা শুরু হয় গর্ভধারণের সাথে সাথে, এবং জন্মগ্রহণের পরেও শিশু যতদিন পূর্ণবয়স্কে পরিণত না হয় ততদিন এই পরিবর্তন ও রূপান্তরের কাজটা তারমধ্যে থাকে ক্রিয়াশীল।
আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ট্রালোপিথেকাস-মানব থেকে আধুনিক মানুষের সময়ের ব্যবধান সুদীর্ঘ (প্রায় ১০,০০০ পুরুষ)। এই সুদীর্ঘ কাল ধরে পুরুষানুক্রমে এই একইধারায় ইতিবাচক এই পরিবর্তন, বিবর্তন ও রূপান্তরের কাজটা চলে এসেছে। প্রতিটি পুরুষের এই ইতিবাচক রূপান্তরের কাজটা ঘটেছে হয়তোবা অতিসামান্য পরিমাণে। কিন্তু কয়েক হাজার পুরুষ ধরে চলতে চলতে এই অতিবাচক রূপান্তরেরধারা ক্রমান্বয়ে দানা বেঁধে বেঁধে একটি চূড়ান্ত পরিণতিতে পৌঁছে গেছে। আর এভাবে ক্রমান্বয়ে ঘটে-যাওয়া পরিবর্তনের চূড়ান্ত পরিণতিতে সম্পূর্ণভাবে রূপান্তরিত হয়ে আবির্ভূত হয়েছে, এখনকার আধুনিক মানুষ।
সুতরাং ভ্রূণাবস্থার পরিবর্তন ও রূপান্তর এবং জন্ম-পরবর্তী রূপান্তর ও পরিবর্তন যত সামান্যই হোক, একদিকে যেমন তুচ্ছ করে দেখার উপায় নেই; তেমনি অন্যদিকে ভ্রূণাবস্থার পরিবর্তনকেও জন্ম-পরবর্তী পরিবর্তনের সাথে বিচ্ছিন্ন করে দেখা চলে না। বরং, মানবজাতির গোড়া থেকেই সর্বাবস্থায় এই পরিবর্তন, বিবর্তন ও রূপান্তরের কাজটা চলে এসেছে নীরবে, নিরবচ্ছিন্ন এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কোরআনে আল্লাহর ইচ্ছার কথা বলে, মাতৃগর্ভে এবং জন্ম পরবর্তী পর্যায়ে মানুষের পরিবর্তন, বিবর্তন ও রূপান্তরের যে বক্তব্য স্পষ্টভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে। আধুনিক জীবাশ্ম-বিজ্ঞানের ধারায় সুপ্রমাণিত তথ্যের এটাই যে শুধু গ্রহণযোগ্য ও যথাযথ ব্যাখ্যা তাতে কোনও সন্দেহ নেই।