ইন্সপেক্টর কোনও ভণিতা না করে বলল, কী চান আপনি?
আপনিই কি পুলিশ কমিশনার?
তিনি বাইরে গেছেন। আমি তার জায়গায় আছি।
বিশেষ গোপনীয় ব্যাপার।
বলুন আমাকে।
ব্যাপারটা জরুরিও বটে।
তাড়াতাড়ি বলুন।
তার হিমশীতল কঠোরতা একই সঙ্গে মানুষকে হতবুদ্ধি করে দেয় এবং আশ্বস্ত করে। সে মেরিয়াসের মনে ভীতি আর আস্থার সঞ্চার করছিল।
মেরিয়াস সব কথা খুলে বলল। বলার আগে প্রথমেই বলল তার নাম মেরিয়াস পঁতমার্সি, একজন উকিল। সে বলল, একজন ভদ্রলোককে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভুভদ্রলোক তার শুধু মুখচেনা। সে এই চক্রান্তের ব্যাপারটা সব শুনেছে, কারণ চক্রান্তকারী লোকটি তার পাশের ঘরে থাকে। চক্রান্তকারী শয়তানটার নাম হল জনদ্ৰেত্তে। এ ব্যাপারে তার কিছু সহকারী আছে। এই সব সহকারীদের মধ্যে পানশাদ নামে একটা লোক আছে যে প্রিস্তানিয়ের ও বিগ্রেনেল নামেও পরিচিত। জনদ্ৰেত্তে’র স্ত্রী। ও তার দুই মেয়েও এর সঙ্গে জড়িত আছে। সে পরোপকারী ভদ্রলোকের নাম জানে না। বলে আগে হতে তাঁকে সাবধান করে দিতে পারেনি। ঘটনাটা ঘটবে সন্ধে ছটার সময়। জায়গাটা বুলভার্দ অঞ্চলের ৫০-৫২ নম্বর বাড়িটা।
বাড়িটার কথা শুনে ইন্সপেক্টর মেরিয়াসের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। বলল, ওদের ঘরটা বারান্দার শেষ প্রান্তে?
মেরিয়াস আশ্চর্য হয়ে বলল, হ্যাঁ, আপনি বাড়িটা জানেন?
ইন্সপেক্টর কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবার পর বলল, মনে হয় জানি। মনে হচ্ছে পেট্রন মিনিত্তে এ ব্যাপারে জড়িত আছে।
কথাটায় চৈতন্য হল মেরিয়াসের। সে বলল, এই নামটা কিছুক্ষণ আগে আমি শুনেছি।
এই বলে সে পথে আসতে আসতে দুটো লোকের মুখ থেকে যা যা শুনেছিল তা সব বলল।
ইন্সপেক্টর বলল, চুলওয়ালা লোকটার নাম হয়তো ব্রুজঁ আর দাড়িওয়ালা লোকটা হল ডেনি লিয়ার্দ বা দিউ মিলিয়ার্দ। আপনি শুধু এই দু জনকে দেখেছেন? আর কাউকে দেখেননি?
মেরিয়াস বলল, না।
ইন্সপেক্টর বলল, ওদের সাধারণত দিনের বেলায় দেখা যায় না। আমি বাড়িটা চিনি। কিছুক্ষণ আপন মনে বিড় বিড় করে কী বলার পর ইন্সপেক্টর বলল, একটা কথা বলব, কিছু মনে করবেন না তো?
মেরিয়াস বলল, না, কী কথা?
মেরিয়াসকে একবার ভালো করে দেখে নিয়ে ইন্সপেক্টর বলল, আপনি একজন সাহসী এবং সৎ লোকের মতো কথা বলছেন। সাহসীরা অপরাধীদের ভয় পায় না আর সৎ লোকেরা শাসন কর্তৃপক্ষকে ভয় পায় না।
মেরিয়াস সঙ্গে সঙ্গে বলল, ঠিক আছে। আপনি কী বলতে চান?
ইন্সপেক্টর বলল, ওই বাড়িতে যারা থাকে তাদের বাড়ি ঢোকার সদরদরজার চাবি একটা করে থাকে। আপনার কাছে সেই চাবিকাঠি আছে?
মেরিয়াস বলল, হ্যাঁ আছে।
তা হলে আমাকে সেটা দিন।
মেরিয়াস পকেট থেকে চাবিকাঠিটা বার করে সেটা দিয়ে বলল, আমার কথা যদি শোনেন তা হলে সেখানে একা যাবেন না।
ইন্সপেক্টর এমনভাবে মেরিয়াসের দিকে তাকাল যাতে সে বোঝাতে চাইল কোনও গ্রাম্য স্কুলমাস্টারের পক্ষে ভলতেয়ারের মতো লোককে কর্তব্য সম্বন্ধে বক্তৃতা দিয়ে বোঝাতে যাওয়া যেমন অবাস্তব ও হাস্যাস্পদ ব্যাপার তেমনি তার মতো একজন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারকে তার নিরাপত্তা সম্বন্ধে উপদেশ দিতে যাওয়াও অবান্তর ও এক হাস্যাস্পদ ব্যাপার। এবার সে তার বড় কোটটার পকেট থেকে দুটো পিস্তল বার করে বলল, এই দুটো রেখে দিন। এর মধ্যে দুটো করে গুলি ভরা আছে। এখন বাড়ি গিয়ে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকুন যাতে ওরা বুঝতে পারে আপনি বাইরে আছেন। সেই ফুটোটা দিয়ে ওদের ঘরটার ভেতর লক্ষ রাখবেন, তারা এলে ওরা যা করে করবে। ওদের করতে দেবেন। যখন দেখবেন বাড়াবাড়ি হচ্ছে, ঘটনা আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে তখন পিস্তল থেকে একটা গুলি করবেন। তার পর আমি হস্তক্ষেপ করব। সব ভার নেব। ছাদের দিকে অথবা ঘরের যে কোনও জায়গায় গুলি করবেন। তবে দেখবেন তাড়াহুড়ো করে কিছু করবেন না। ওদের কিছু একটা করা চাই। কারণ সাক্ষ্যপ্রমাণের দরকার। আপনি একজন উকিল। আমি কী বলতে চাইছি তা আপনি জানেন।
মেরিয়াস পিস্তল দুটো নিয়ে তার জামার পাশপকেটে রাখল।
ইনসপেকটার বলল, পকেট থেকে দেখা যাচ্ছে। আপনি ও দুটো কোমরে গুঁজে রাখুন।
মেরিয়াসকে যা বলা হলো তাই করল।
ইন্সপেক্টর বলল, আর সময় নষ্ট করলে চলবে না। এখন সময় কত? আড়াইটা। ওরা কখন আসবে, সাতটায় না?
না, ছটায়।
ঠিক আছে, আমি বেশকিছুটা সময় পেলাম। তবে আমি যা বললাম ভুলবেন না। একটা গুলি পিস্তল থেকে করবেন।
মেরিয়াস ঘর থেকে চলে যাবার উদ্যোগ করে বলল, আমি তা করব।
ইন্সপেক্টর বলল, আর একটা কথা। তার আগে যদি আমাকে প্রয়োজন বোঝেন তা হলে আপনি চলে আসবেন অথবা কাউকে পাঠাবেন। আমার নাম জেভার্ত।
.
১৫.
বেলা তিনটের সময় কুরফেরাক র্যু মুফের্দ অঞ্চলে বোসেতের সঙ্গে বেড়াচ্ছিল। তখন বরফ পড়ছিল। বোসেত বলছিল, তুষারকণা দেখে মনে হচ্ছে যেন অসংখ্য সাদা সাদা প্রজাপতি ঝাঁকে ঝাঁকে এসে আমাদের হেঁকে ধরছে।
হঠাৎ রাস্তায় মেরিয়াসকে ব্যারিয়েরের পথে লম্বা লম্বা পা ফেলে হেঁটে যেতে দেখে কথা থামিয়ে দিল কুরফেরাক। বলল, মেরিয়াসকে দেখছি। এখন ওর সঙ্গে কথা বলা
ঠিক হবে না।
বোসেত বলল, কেন বলা উচিত হবে না?
দেখছ না, ও খুব ব্যস্ত?
কিন্তু ও কী করছে?