———
১. হেরাক্লিটাস্, Heraclitus (খ্রিঃ পূঃ ৫৩৫-৪৭৫), প্রাচীন গ্রীসের বস্তুবাদী, অজ্ঞেয় এবং অলৌকিক তত্ত্বের বিরুদ্ধবাদী দার্শনিক।
২. লেবনিজ, Leibniz Gottfried (১৬৪৬-১৭১৬)। জার্মান গণিতবিদ, পদার্থবিদ্যা এবং দর্শনেও তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়।
৩. হাইজেনস, Christian Huygens (১৬২৯-১৬৯৫)। জন্ম নেদারল্যান্ডে। বিখ্যাত পদার্থ এবং গণিতবিদ। জ্যোতির্বিজ্ঞানেও তাঁর অবদান অসামান্য।
৪. নিউটন, Sir Issac Newton (১৬৪২-১৭২৭), বস্তুজগতের ক্রিয়াশীল মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের আবিষ্কারক। তাঁকে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
৫. সেন্ট সিমিয়ান স্টাইলাইটস, St Simeon stylites (খ্রিঃ পূঃ ৩৯০-৪৯৫), সিরিয়ার সিসানে জন্ম। সিরিয়ার আলেপ্লেতে একটি স্তম্ভের ওপর উপবিষ্ট হয়ে একইভাবে ৩৭ বছর সাধনা করেছিলেন।
৬. নেপোলিয়ন, পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
৭. সীজার, Julias Caesar (খ্রীঃ পূঃ ১০২-৪৪), রোমের অদ্বিতীয় বীর জুলিয়াস সীজার। ইতিহাসে তাঁর মতো চরিত্রের দেখা খুব কম মেলে।
৮. আলেকজান্ডার, Alexander (খ্রীঃ পূঃ ৩৫৬-৩২৩), বিশ্বের দিগ্বিজয়ীদের তালিকায় প্রথম নাম–Alexander the Great।
৯. হারকিউলিস, Hercules, গ্রীক পূরাণের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। গ্রীক পুরাণে তাকে উপদেবতার (Demigod) মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
০৭. পাপের চেতনা
পাপের চেতনা সম্পর্কে প্রথম অধ্যায়ে কিছু আলোচনার সুযোগ হয়েছিল আমাদের। এবার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ মূলগত মনস্তাত্ত্বিক কারণে অসন্তোষ দেখা দেয়, পাপের চেতনা তাদের মধ্যে অন্যতম।
পাপ নিয়ে ঐতিহ্যগত ধর্মীয় মানসিকতা একটা রয়েছে, কিন্তু কোনও আধুনিক মনস্তত্ত্ববিদ তা স্বীকার করেন না। মনে করা হত, বিশেষভাবে প্রোটেস্ট্যান্টরা, কেউ কোনও কাজ করতে প্রলুব্ধ হলে, বিবেকই তাকে বলে দেয় কোন্ কাজ পাপময়। সে কাজ শেষ হলে তার দুটি বেদনাদায়ক অনুভূতি হয়– প্রথমটি হচ্ছে মর্মবেদনা, যার কোনও মূল্য নেই; অপরটি হচ্ছে অনুশোচনা, যা তার পাপকে মুছে ফেলতে পারে। প্রোটেস্ট্যান্ট দেশসমূহে যারা এই মতবাদে বিশ্বাস হারিয়েছে, তাদের মধ্যেও অনেক কমবেশি পরিবর্তন করে পাপ বিষয়ে রক্ষণশীল মতটি গ্রহণ করেছে অবশ্য কিছুকালের জন্যে। আমাদের কালে অংশত মনঃসমীক্ষার ফলে সব বিপরীত হয়ে গেছে। অরক্ষণশীলরাই যে শুধু প্রাচীন পাপ-তত্ত্ব মানেন না তা নয়, যারা এখনো নিজেদের রক্ষণশীল বলে বিশ্বাস করেন তারাও অনেকে মানেন না। বিবেককে এখন আর কোনও রহস্যময় কিছু বলে মনে করা হয় না। কারণ এতদিন তা রহস্যময় ছিল বলেই ঐশীবাণী বলে মনে করা হত। আমরা জানি যে বিবেক বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বিভিন্নভাবে ক্রিয়া করে এবং উদারভাবে বলতে গেলে সব জায়গায় উপজাতিদের সংস্কৃতির সাথে তা অঙ্গাঙ্গী জড়িত, তা হলে কোনও ব্যক্তিকে যখন বিবেক দংশন করে তখন প্রকৃতপক্ষে কী ঘটে?
‘বিবেক’ শব্দটি স্বাভাবিকভাবে কয়েকটি আলাদা অনুভূতির অর্থবোধক, যার সহজতমটি হচ্ছে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়। পাঠক, আপনি নিশ্চয় সম্পূর্ণ দোষহীন জীবন কাটিয়েছেন, কিন্তু আপনি যদি এমন কোনও মানুষের কাছে জানতে চান, যিনি কোনও সময় এমন অন্যায় কিছু করেছেন ধরা পড়লে যার শাস্তি হত। ধরা পড়া অবধারিত জানলেও অন্যায় কাজের জন্যে তিনি অনুতপ্ত হয়েছেন। আমি বলি না যে পেশাগত চোর সম্বন্ধেও একথা মিলে যাবে, কারণ কিছু পরিমাণ কারাবাসকে সে পেশাগত ঝুঁকি হিসাবেই গ্রহণ করবে। কিন্তু একথা প্রযোজ্য হতে পারে সম্মানিত অপরাধীদের বেলায়। যেমন কোনও ব্যাঙ্কের ম্যানেজার, যিনি অবস্থার চাপে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন অথবা কোনও ধর্মযাজক যিনি প্রবৃত্তির বশীভূত হয়ে ইন্দ্রিয়কে সংযত করতে পারেননি। ধরা পড়ে যাওয়ার আশংকা কম থাকলে তারা অপরাধের কথা বিস্মৃত হতে পারেন। কিন্তু ধরা পড়লে অথবা পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে তাদের মনে হয় ন্যায়ের পথেই তাঁদের থাকা উচিত ছিল এবং এই ইচ্ছা তাদের পাপের গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের মনে প্রখর চেতনা জাগিয়ে তোলে। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ভয়ও এই অনুভূতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। যে ব্যক্তি তাস খেলায় প্রতারণা করে অথবা প্রতিশ্রুত ঋণ পরিশোধ করে না সে যদি ধরা পড়ে, তাহলে দলবদ্ধ লোকের তিরস্কারের বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে নিজের মধ্যে কিছুই খুঁজে পায় না। এ বিষয়ে সে ধর্মসংস্কারক, রাজদ্রোহী বা বিপ্লবীর সাথে তুলনীয় নয়। কারণ তারা মনে করেন বর্তমানে যেভাবে তাদের পরিত্যাগ করছে, আগামীদিন তাদের সেভাবেই শ্রদ্ধা জানাবে। বর্তমানে তাদের ভাগ্যে যাই ঘটুক আগামীদিন তাদের সমর্থন করবে। এই ব্যক্তিবর্গ জনগণের বিরুদ্ধতা সত্ত্বেও নিজেদের অপরাধী মনে করেন না। কিন্তু যারা প্রচলিত নৈতিকতা সম্পূর্ণ স্বীকার করেও তার বিরুদ্ধচারণ করেন, তারা খুবই দুঃখ ভোগ করেন। যদি সমাজ তাদের বহিষ্কৃত করেন এবং এই বিপদের ভয়ে অথবা বিপদ ঘটে গেলে যে দুঃখ পান, তাতে সহজেই তাঁরা মনে করতে পারেন যে তাদের কাজই ছিল পাপ-পূর্ণ।
কিন্তু সর্বাধিক গুরুত্ববাহী যে পাপের চেতনা তার মূল খুব গভীরে। এই মূল খুঁজতে হবে অবচেতনের ভিতর। জনগণের অননুমোদনের ভয়ে তা চেতনের ভিতর দেখা দেয় না। চেতন অবস্থায় কিছু কাজ পাপরূপে চিহ্নিত হয় কিন্তু অন্তদৃষ্টির সাহায্যে তাকে দেখা যায় না। যখন একজন মানুষ এই ধরনের কাজ করেন তখন তিনি অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন। কিন্তু কেন তা বুঝতে পারেন না। তাঁর ইচ্ছা হয় এইরকম লোক হওয়াই তার উচিত ছিল যিনি পাপ বলে যা বিশ্বাস করেন তা থেকে দূরে থাকতে পারেন। তিনি নৈতিকতার দিক থেকে শুধু তাদেরই শ্রদ্ধা করেন, যাদের অন্তর তিনি পবিত্র বলে মনে করেন। তিনি কমবেশি দুঃখের সাথে বুঝতে পারেন যে তাঁর পক্ষে সন্ত হওয়া সম্ভব নয়। এই সাধুত্ব সম্পর্কে তাঁর যা ধারণা তা সম্ভবত এই যে, তা সাধারণ দৈনন্দিন জীবনে পালন করা প্রায় অসম্ভব। ফলে একটা পাপবোধ নিয়েই তিনি জীবন কাটিয়ে দেন। মনে করেন যা কিছু মহৎ তা তার জন্যে নয় এবং মনে করেন ভাবাবেগপূর্ণ অনুতাপের মুহূর্তগুলিই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত।