- বইয়ের নামঃ প্রতিযোগী
- লেখকের নামঃ কাজী শাহনূর হোসেন
- সিরিজঃ ওয়েস্টার্ন সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী বই
- বিভাগসমূহঃ ওয়েস্টার্ন
প্রতিযোগী
০১. কোন্ড ক্রীক পেরোনর সময়
কোন্ড ক্রীক পেরোনর সময় যথারীতি লাগাম টেনে ধরল রয় সলটার। বক্স ডব্লিউ এর ফোরম্যান সে। একত্রিশ বছর বয়স, দীর্ঘদেহী, শক্তসমর্থ।
এ জায়গাটা খুব পছন্দ ওর। এখানেই কোথাও ছোট্ট একটা কাঠের বাড়ি বানাবে সে। সংসার পাতবে। ইচ্ছেটা বহুদিনের তার, মেয়েও ঠিক করে রেখেছে। মনে মনে। সে উদ্দেশ্যে গত তিন বছর ধরে বেতন আর বোনাসের একাংশ জমিয়ে চলেছে।
ওয়াগনারের র্যাঞ্চে বছর ছয়েক যাবৎ ফোরম্যানের দায়িত্ব পালন করছে সলটার। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই। এ র্যাঞ্চের এক পাল গরু। অ্যাবিলেন-এ নেয়ার পথে মারা যান তিনি।
জর্জ ওয়াগনার নতুন ফোরম্যান নিয়োগ করার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাননি। বাবার মৃত্যুর পর ছেলের কাঁধে তুলে দিয়েছেন দায়িত্ব। তাঁকে হতাশ করেনি রয় সলটার। লোকের কাছ থেকে কিভাবে কাজ আদায় করতে হয় জানা আছে তার। সবাই পছন্দও করে ওকে। সেজন্যে কৃতজ্ঞ সে সবার কাছে।
বাফেলো ফ্ল্যাটের দিকে আবার রওনা দিল ও। নীল চোখ দুটো সরু হল বিরক্তিতে। জর্জ ওয়াগনারের ছেলে জোহানকে খুঁজে আনার জন্যে শহরে চলেছে সে। প্রায়ই যেতে হয়। গত রাতে আবারও ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে গেছে জোহান। বাপের সঙ্গে ঝগড়া করে। র্যাঞ্চের বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস চাপল সলটার। জর্জ ওয়াগনার বদলে গেছেন কেমন যেন। ছেলে বড় হলে একটু-আধটু অবাধ্য তো হতেই পারে। কিন্তু সেটা কিছুতেই মানতে পারছেন না ওয়াগনার। ওয়াগনারের মেয়ে তানিয়ার কথা মনে পড়তেই চোখজোড়া আরও সরু হল সলটারের। তানিয়াকে পছন্দ করে সে। বিয়ে করতে চায়। গত তিন বছর ধরে। বলব বলব করেও ওকে বলা হয়নি কথাটা।
জর্জ ওয়াগনার ওকে বলেছিলেন ভবিষ্যতে কোল্ড ক্রীকে হেডকোয়ার্টার বানাতে পারে সে। প্রায় একশো ষাট একর চারণভূমি রয়েছে জায়গাটার চারপাশে। নতুন র্যাঞ্চ শুরু করতে পারে-‘বক্স এস’ নাম দিয়ে।
তানিয়া সব সময়ই পছন্দ করত ওকে। খুব ঘনিষ্ঠ ছিল ওরা। একসাথেই বড় হয়েছে। সলটারের বাবা তখন এ র্যাঞ্চের ফোরম্যান ছিলেন। কিশোর সলটারের পিছু ছাড়ত না কিশোরী তানিয়া। নিজেকে ছেলে ভাবতে পছন্দ করত সে। ও কথা ভেবে এখন হাসি পেল সলটারের। বেশ ভালভাবেই কেটে যাচ্ছিল। তারপর ঘটল সেই দুর্ঘটনা। গরুর পাল নিয়ে বেরোনর ঠিক পাঁচ দিন পরেই লাশ হয়ে ফিরে এলেন বাবা। খুব ভোরবেলাকে যেন গুলি করে তাকে। তন্ন তন্ন করে। খুঁজেও হত্যাকারীকে বার করতে পারেনি ওরা। বাবার মৃত্যুতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে সলটার।
বাবার মৃত্যুশোক সামলে ওঠার আগেই তানিয়া চলে গেল পুবে। তিন বছর পর ফিরে এল সম্পূর্ণ নতুন এক মেয়ে। আগের সেই চপলা কিশোরীটিকে খুঁজে পাওয়া গেল না তার মাঝে।
সলটারের ধারণা ছিল যতই বদলে যাক ওকে ভুলতে পারেনি তানিয়া। কিন্তু হঠাৎ কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল উইলবার অসকার। কিনে নিল জেমস হার্বার্টের র্যাঞ্চ। ‘র্যাফটার ও’ নাম দিল ওটার।
তানিয়ার সঙ্গে ক্যানসাস সিটিতে পরিচয় হয়েছিল অসকারের। র্যাঞ্চ কিনলেও সেদিকে মোটেও মন নেই তার। ফোরম্যান ম্যাকগ্র-র হাতে র্যাঞ্চ ছেড়ে দিয়ে সময় কাটাতে লাগল তানিয়ার সঙ্গে। ঘনিষ্ঠতা বাড়ল ওদের। কপাল কুঁচকে উঠল সলটারের।
তানিয়ার চেয়ে বছর দশেকের বড় হবে অসকার। মেয়ে পটানর বিদ্যা ভালই জানা আছে তার। ইতোমধ্যেই প্রচুর টাকা উড়িয়েছে। তানিয়াকে দেখিয়েছে তার টাকার জোর।
বাফেলো ফ্ল্যাট এখান থেকে বারো মাইল দূরে। দ্রুত ঘোড়া দাবড়াল সলটার। কেমন যেন অসহিষ্ণ লাগছে ওর। তিক্ততায় ভরে আছে মন। যে-কোন কিছু পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, ভাবল সে। হোক সে মেয়েমানুষ বা র্যাঞ্চ। সবাই তো আর অসকারের মত ভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি। দাঁতে দাঁত পিষল সলটার।
অসকার লেন কাউন্টিতে আসার পর থেকে তানিয়ার সঙ্গে ওর দূরত্ব বেড়ে গেছে কয়েক যোজন। সরাসরি কিছু বলেনি তানিয়া। সলটারের সঙ্গ এখনও উপভোগ্য তার কাছে। তবে ওর কথা বলার ভঙ্গি আর চাহনি বলে দেয় অনেক কিছু। পাত্র হিসেবে অসকার ওর চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য। এমনকি জর্জ ওয়াগনার পর্যন্ত ওর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে এখন আর কিছু বলেন না। কোল্ড ক্রীকে বাড়ি বানাবার কথা সলটার ছাড়া আর কারও যেন মনেই নেই। সে ও ঠিক করেছে যোগ্যতা অর্জনের পর তানিয়াকে প্রস্তাব দেবে, তার আগে কখনই নয়।
হঠাৎ গুলির শব্দে চিন্তার জাল ছিঁড়ে গেল ওর, বেশ দূর থেকে এসেছে শব্দটী। ক্রু কুঁচকে উঠল সলটারের। চাইল চারদিকে। মনে হয় শিকার করছে কেউ।
ঘোড়ার পেটে স্পার দাবাল সে। শহরে যেতে হবে। এ ছাড়া আর কারও সাধ্য নেই জোহানকে ফিরিয়ে আনে। খানিক দূর এগোতেই পরপর কয়েকটা গুলি হল। দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রতিধ্বনি তুলল শব্দগুলো। লাগাম টেনে ধরল সলটার। শিকারি নয়। কেউ বোধহয় বিপদে পড়েছে। দুটো অস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণ চলছে। কোল্ট আর উইনচেস্টার। গুলির শব্দ লক্ষ্য করে ঘোড়া ছোটাল সে। এই অঞ্চলে গত কয়েক মাস ধরে গরু চুরি যাচ্ছে। আশেপাশের প্রত্যেকটা র্যাঞ্চই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জর্জ ওয়াগনারের র্যাঞ্চও বাদ যায়নি। শেরিফ রজার হার্পার চোর ধরার জন্যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও কিছু করতে পারছে না।