সে ঘুরে নিচু দরজা দিয়ে শীতল তাঁবুতে ঢুকল, কেইন আর জর্ডনও তাকে অনুসরণ করল।
ওরা পা ভাজ করে নরম গালিচায় বসে অপেক্ষা করতে লাগল। একটু পর তাঁবুর পেছন দিক থেকে কালো বোরকায় ঢাকা একজন মহিলা একটা তামার ট্রেতে কফিপট, তিনটে কাপ আর এক বোল সিদ্ধ ভাত নিয়ে উপস্থিত হলো।
কেইন আর জর্ডন যথারীতি ভদ্রতা দেখিয়ে কফি খেলো আর মাহমুদের মতো আঙুল ডুবিয়ে একই বোল থেকে ভাত খেলো।
মহিলাটি একটা ভেজা কাপড় এগিয়ে দিতেই ওরা আঙুল মুছলো। কেইন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, তার সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। এখন যাই আলোচনা হোক না কেন, ওরা এখন নিরাপদ। কেননা ওরা গোত্রের মধ্যে থেকে মাহমুদের সাথে খাওয়াদাওয়া করেছে। এখন ওদের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
একটু নিশ্চুপ থেকে মাহমুদ ভদ্রভাবে বলল, বন্ধু, তোমরা অনেক দূর থেকে এসেছো?”
কেইন মাথা নেড়ে সায় দিল। অনেক দূর থেকে খুব তাড়াতাড়ি এসেছি। আমি দুইজন মানুষকে খুঁজছি যারা আমার খুব ক্ষতি করেছে।
একজন মানুষের সম্মানই হলো তার জীবন, মাহমুদ গম্ভীর হয়ে বলল। ‘আল্লাহ তোমার সহায় হোন।
‘আল্লাহ ইতোমধ্যেই আমাকে অনুগ্রহ করেছেন, কেইন উত্তর দিল। ‘আমি যে লোকগুলোকে খুঁজছি তারা আপনার ক্যাম্পেই আছে। আমি তাদের ট্রাকদুটো দেখেছি।
মাহমুদের চেহারায় কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। সে শান্তভাবে মাথা নেড়ে সায় দিল। আমার তাঁবুতে দুজন ইউরোপীয় আছে। আমার বন্ধু। প্রফেসার মূলার আর দাহরান থেকে আসা মোটা লোকটা। কীভাবে ওরা তোমার সম্মানহানি করেছে?
কেইন একইভাবে আবেগহীন কণ্ঠে বলল, ওরা আমার মেয়েমানুষকে হরণ করেছে।
একটু নিরবতা নামল আর বৃদ্ধ মানুষটি আস্তে আস্তে দাড়িতে আঙুল বোলাতে লাগল। এক মুহূর্ত পর সে বলল, “ওদের সাথে অবশ্য একজন মহিলা রয়েছে, মিশ্র রক্তের। এখানে পৌঁছার পর সে একবারও তাবু থেকে বের হয়নি।
‘ইনিই সেই মেয়েমানুষ,’ কেইন বলল।
মাহমুদ সহজভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, একটু অপেক্ষা কর।’ এ কথা বলে সে বাইরে বের হয়ে গেল।
জর্ডন অস্থিরভাবে বলল, ‘এসবের অর্থ কী?
কেইন দ্রুত উত্তর দিল, এভাবেই আমরা স্কিরোজকে বের করে আনতে পারি। একজন নারী একজন বেদুঈনের ঘরের আসবাবের মতো হতে পারে। কিন্তু এ পর্যন্তই, তারপর মিলটা এখানেই শেষ। কারও ঘরের নারীকে হরণ করা এদের মাঝে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ মনে করা হয়।’
‘ঠিক আছে বুঝলাম সেটা, জর্ডন অধৈর্য হয়ে বলল। কিন্তু তারপরও আমি বুঝতে পারছি না এটা আমাদের কীভাবে সাহায্য করবে।
কেইন এ কথার কোন উত্তর দেবার আগেই, মাহমুদ তাঁবুতে ঢুকল, পেছন পেছন মুলার আর স্কিরোজকে নিয়ে।
কেইন আর জর্ডন দুজনেই উঠে দাঁড়াল, কেইন সামনে এক পা এগোলো। মুলারের চেহারায় হতাশার ভাব দেখে হাস্যকর মনে হচ্ছে, কিন্তু স্কিরোজের কোন ভাবান্তর নেই। আমরা তোমাদেরকে আসতে দেখেছি। মনে হচ্ছে। অলৌকিক ঘটনা এখনো ঘটে থাকে। সম্ভবত সেলিমের আসতে দেরি হয়েছে।’
‘আমার মনে হয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য, কেইন উত্তর দিল।
‘তোমরা পুরোনো বন্ধু মনে হচ্ছে, মাহমুদ মৃদুস্বরে বলল।
স্কিরোজ তাকে জানাল। মোটেই না,’ এই লোক আমার অনেক ক্ষতি করেছে। একদিক দিয়ে বলতে পার সে এমনকি তোমার আর তোমার গোত্রের লোকজনেরও ক্ষতি করেছে। তার কর্মকান্ডের কারণে মুলার আর আমাকে এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। সীমান্তের উপজাতীয় গোষ্ঠীরা আর অস্ত্র পাবে না।
‘এটা সত্যি খুবই দুর্ভাগ্যজনক আর আমার গোত্রের লোকজন একথা শুনলে মোটেই খুশি হবে না,’ মাহমুদ বলল, “তবে কেন আমার তাবুতে একজন মেহমান, অতএব তার নিরাপত্তা রক্ষা করা আমার কর্তব্য, যেরকম তোমাদের নিরাপত্তা আমি দিয়েছি।’
স্কিরোজ কাঁধ ঝাঁকাল। সেটা তোমার নিজস্ব ব্যাপার। তবে আমি মনে করি তোমাকে সাবধান করে দেওয়া উচিত যে এই লোক তোমার শত্রু।
মাহমুদ কয়েক পা পায়চারি করল, তাকে গভীর চিন্তামগ্ন মনে হচ্ছে। “তোমাদের তাবুতে যে মেয়েটি আছে সেকি তোমাদের?
স্কিরোজের দেহ হঠাৎ আড়ষ্ট হয়ে গেল আর মুলার কাঁপা কাঁপা হাতে মুখ থেকে ঘাম মুছলো।
‘এ বিষয়ের সাথে মেয়েটার কি সম্পর্ক?’ মুলার জিজ্ঞেস করল।
মাহমুদ কণ্ঠস্বর শান্ত রেখে বলল, কেইন বলেছে মেয়েটা তোমাদের নয়। তোমরা তাকে তার কাছ থেকে অপহরণ করেছ।
স্কিরোজ বলল, আমি এটাই আশা করেছিলাম যে, সে একথাই বলবে।’
“আচ্ছা তাই নাকি, মাহমুদ চিন্তাযুক্ত স্বরে বলল, একই বিষয়ের দু-ধরনের মতামত, দুটোই আলাদা ধরনের। তার মানে কেউ না কেউ সত্যি কথাটা লুকাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সত্য জানার কেবল একটি উপায় আছে।
সে হাততালি দিল, বাইরে কারও নড়াচড়ার আভাস পাওয়া গেল। তারপর মেরি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে ওদের সামনে এসে দাঁড়াল। ভেতরের অন্ধকারে একটু চোখ পিট পিট করল, তারপর কেইনকে দেখতে পেল। সে প্রথমে অবাক হয়ে গেল তারপর বিস্ময়ে চেঁচিয়ে ছুটে গেল কেইনের দুবাহুর মাঝে।
সে তাকে শক্ত করে ধরে তার কালো চুলের উপর হাত বুলিয়ে বলল, ‘তুমি ঠিক আছো?’
‘আমি ঠিক আছি, সে ধীরভাবে তার মুখ ছুঁলো। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।’
মাহমুদ মেরির কাঁধে হাত রেখে তাকে তার মুখোমখি ফেরালো। তোমার নাম কি বাছা?’
সে মাহমুদের মুখোমুখি হয়ে চিবুক উঁচু করে বলল, ‘মেরি পেরেট।