- বইয়ের নামঃ ব্ল্যাক অর্ডার ( (সিগমা ফোর্স – ৩)
- লেখকের নামঃ জেমস রোলিন্স
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রহস্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
ব্ল্যাক অর্ডার ( (সিগমা ফোর্স – ৩)
০১. রুফ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড
ব্ল্যাক অর্ডার – জেমস রোলিন্স / রূপান্তর : সাঈম শামস্ – নিউ ইয়র্ক টাইমস্ বেস্টসেলার
সিগমা ফোর্স # ৩
জীববিজ্ঞানের মেরুদণ্ড হলো বিবর্তনবাদ। এই অংশ বিজ্ঞানের একটি উন্নত থিওরির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এখন প্রশ্ন হলো, বিবর্তনবাদ বিজ্ঞান নাকি বিশ্বাস?
–চার্লস ডারউইন
বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম পঙ্গু, ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান অন্ধ।
–আলবার্ট আইনস্টাইন
কে বলে আমি ঈশ্বরের বিশেষ নিরাপত্তায় নেই?
–অ্যাডলফ হিটলার
.
ইতিহাস থেকে
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষ কয়েক মাসে যখন জার্মানির অবস্থা একেবারে শোচনীয় তখন কে কার আগে নাৎসি বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন প্রযুক্তি লুঠ করবে তা নিয়ে মিত্রবাহিনীর মধ্যে নতুন এক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এই লুঠ প্রতিযোগিতায় নেমেছিল ব্রিটিশ, আমেরিকান, ফ্রেন্স এবং রাশিয়ানরা। যে যার মতো করে নিজের দেশের জন্য লুঠপাট চালিয়েছিল। অনেক পেটেন্ট লুষ্ঠিত হয়েছিল তখন। যেমন : নতুন ভ্যাকুয়াম টিউব, চমকপ্রদ কেমিক্যালস, প্লাস্টিকস্ এমনকী ইউ ভি লাইটসহ পাস্তুরিত তরল দুধ! কিন্তু স্পর্শকাতর অনেক পেটেন্ট স্রেফ গায়েব হয়েছিল। যেমন : অপারেশন পেপার ক্লিপ; একশ নাৎসি ভি-২ রকেট বিজ্ঞানীদেরকে গোপনে নিযুক্ত করে আমেরিকায় নিয়ে আসা হয়েছিল তখন। পরে অপারেশন পেপার ক্লিপ সম্পর্কে তেমন কিছু আর জানা যায়নি।
তবে নিজেদের প্রযুক্তি বিনা যুদ্ধে সপে দেয়নি জার্মানরা। গোপন প্রযুক্তি ও পরবর্তী রাইখ প্রজননর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য তারা অনেক চেষ্টা করেছিল। বিজ্ঞানীদের খুন করা, রিসার্চ ল্যাব ধ্বংস করে দেয়া থেকে শুরু করে গুহায় প্রিন্ট লুকিয়ে রাখা, লেকের পানিতে ডুবিয়ে দেয়া, ভূগর্ভস্থ কোটরে পুঁতে দেয়ার মতো নানান পদক্ষেপ নিয়েছিল তারা। আর এসবই ছিল মিত্রবাহিনীর হাত থেকে নিজেদের প্রযুক্তি রক্ষা করার বিভিন্ন কৌশল।
নির্বিচারে লুণ্ঠন অভিযান চলেছিল। নাৎসিদের রিসার্চ এবং অস্ত্রের ল্যাব ছিল সংখ্যায় শত শত। কতগুলো ছিল মাটির নিচে, বাকিগুলো জার্মানের বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো-ছিটানো। এছাড়াও অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া এবং পোলান্ডেও তাদের অস্তিত্ব ছিল। তারমধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় ছিল ব্রিসলাউ শহরের বাইরে অবস্থিত একটি রূপান্তরিত খনি। রিসার্চ ফ্যাসিলিটির কোড নাম ছিল “দ্য বেল”। এই রিসার্চ ফ্যাসিলিটির আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন সময় রিপোর্ট করেছিলেন, অদ্ভুতুড়ে আলো দেখা, রহস্যময় মৃত্যু ও বিভিন্ন অজানা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা।
রাশিয়ান ফোর্স খনিতে পৌঁছেছিল সবার আগে। তারা গিয়ে রিসার্চ ফ্যাসিলিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পায়। এই প্রজেক্টের সাথে জড়িত ৬২ জন বিজ্ঞানীর সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। আর ফ্যাসিলিটির বাদ বাকি সব সরঞ্জাম কোথায় গায়েব হয়েছিল সেটা এক ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ জানে না।
সে যা-ই হোক, তবে এতটুকু নিশ্চিত “দ্য বেল”-এর অস্তিত্ব সত্যি সত্যিই ছিল।
.
প্রস্তাবনা
১৯৪৫ ৪ঠা মে, সকাল ৬:২২ মিনিট।
ফরট্রেস সিটি অফ বিসলাউ, পোল্যান্ড
পয়ঃনিষ্কাশন পাইপের ভেতরে থাকা নোংরা পানিতে একটা ছেলের লাশ ভাসছে। ফুলে কেঁপে উঠেছে লাশটা। জুতোর ফিতে, প্যান্ট, শার্ট এগুলোতে দাঁত বসাচ্ছে ইঁদুর। সেনাবাহিনী হামলার স্বীকার এ-শহরের কোনকিছুই অপচয় হয় না।
লাশটার পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার সময় নাক কুঁচকালো জ্যাকব স্পোরেনবার্গ। নাড়ি-ভূড়ি, বিষ্ঠা, রক্তের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওয়েট মাস্ক নাকে-মুখে জড়িয়ে রেখেছে। যুদ্ধের তিক্ত স্বাদ পাচ্ছে ও। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ দিয়ে এখন তুলনামূলক কম লাশ যাচ্ছে। জ্যাকবের এখানে কিছু করার নেই। কিন্তু ওপর থেকে নির্দেশ দেয়া আছে, থাকতে হবে।
মাথার ওপরে এক জোড়া রাশিয়ান কামান শহরের বারোটা বাজিয়ে দেয়ার কাজ করছে। প্রতিটি গোলা বিস্ফোরণের সময় পুরো শরীরসহ নাড়ি-ভূড়ি কেপে উঠছে জ্যাকবের। রাশিয়ানরা গেট ভেঙ্গেছে, বোমা মেরেছে এয়াপোর্টে। কাইসারট্র্যাসে সাধারণ পরিবহন নেমে গেছে এমন অবস্থাতেও তাদের ট্যাংকগুলো সড়কগুলোতে দুলকিচালে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রধান সড়ককে রূপান্তর করা হয়েছে ল্যান্ডিং স্ট্রিপে। আড়াআড়ি তেলের ব্যারেল বসিয়ে ব্যারেল থেকে ধোয়া তৈরি করে করা হচ্ছে কাজটা। ব্যারেলগুলো থেকে বেরুনো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে ভোরের সকাল। আকাশ আজকে ভোর থেকে আর সকালে রূপান্তরিত হতে পারছে না। প্রতিটি রাস্তায়, গলিতে যুদ্ধ হচ্ছে। প্রতিটি বাড়ির বেসমেন্ট থেকে শুরু করে চিলেকোঠা পর্যন্ত যুদ্ধে জর্জরিত।
প্রতিটি বাড়ি যেন একেকটি দূর্গে পরিণত হয়।
সাধারণ জনতার উদ্দেশে গাউফিফটার হ্যাঁঙ্কস-এর শেষ নির্দেশ ছিল এটা। শহরকে যতক্ষণ সম্ভব নিজেদের কজায় রাখতে হবে। এর ওপর জার্মানির তৃতীয় প্রজন্ম নির্ভর করছে।
জ্যাকব স্পেরেনবার্গের ওপরেও নির্ভর করছে অনেক কিছু।