ইতোমধ্যে গ্রে অনেক সময় অপচয় করে ফেলেছে।
জেরাম-৫২৫ রাখা একটা ড্রামকে জায়গা মতো না পেয়ে গ্রে চিন্তিত হয়ে পড়ল। ড্রামটাকে আমেরিকার ক্ষতি করার কাজে ব্যবহার করা হবে। ওয়াশিংটনকে এ-বিষয়ে জানানো জরুরি। অন্যান্য ড্রামের দিকে আর সময় নষ্ট না করে ওয়াশিংটনকে কীভাবে সতর্ক করে দেয়া সম্ভব সেটা নিয়ে ভাবল গ্রে।
মারশিয়াকে যখন তার সেল থেকে বের করা হয়েছিল তখন তিনি সিকিউরিটি ব্লকে একটা ইমার্জেন্সি শর্টওয়েভ রেডিও দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি জানেন ওটা দিয়ে কার সাথে কথা বলতে হবে। ড. পলা কেইন, তার পার্টনার। ওয়াশিংটনে সতর্কবাণী পৌঁছে দিতে পারবেন পলা। গ্রে ও মারশিয়া দুজনই জানে এখন সেই রেডিও আনতে যাওয়া আত্মহত্যার সামিল। কিন্তু তাছাড়া আর কীইবা করার আছে?
যা-ই হোক, ফিওনা অন্তত নিরাপদ আছে।
দেরি করছেন কেন? মারশিয়া প্রশ্ন করলেন। স্টোরেজ থেকে অ্যাপ্রন বের করে পরলেন তিনি। অন্ধকারে তাকে হয়তো গার্ডরা ল্যাবের গবেষক ভেবে ছেড়ে দেবে।
গ্রের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। হাতে একটা ইমার্জেন্সি ফ্ল্যাশলাইট।
প্রথম লিভারের দিকে গ্রে হাত বাড়াল।
ইতোমধ্যে ওরা সাববেজমেন্টে যাওয়ার জন্য ইমার্জেন্সি সিঁড়িটা কোথায় আছে সেটা বের করে ফেলেছে। সেই সিঁড়ি ধরে ওরা মূল ভবনে চলে যেতে পারবে। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে সিকিউরিটি ব্লকে পৌঁছুতে হলে ওদেরকে একটা কাণ্ড ঘটাতে হবে, যাতে সবার মনোযোগ সেদিকে চলে যায়।
সেটা কীভাবে সম্ভব? উত্তরটা একটু আগেই পাওয়া গেছে। হলওয়ের একটা দরজার সাথে গ্রে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন ও পাওয়ার প্ল্যান্টের কারণে গুঞ্জন ও কাঁপুনি টের পেয়েছে। যদি ওরা মেইন বোর্ডটাকে পুড়িয়ে দিয়ে… হৈচৈ বাঁধিয়ে দিতে পারে… কিছুটা সময়ের জন্য হলেও চোখে ধুলো দেয়া যাবে শক্রদের চোখে… তখন রেডিওটা সংগ্রহ করা সহজ হবে।
রেডি? প্রশ্ন করল গ্রে।
মারশিয়া ফ্ল্যাশলাইট অন করলেন। গ্রের চোখের দিকে তাকালেন তিনি। গভীর দম নিয়ে মাথা নেড়ে বললেন, চলুন, করে ফেলি।
লাইন বন্ধ, বলতে বলতে প্রথম লিভারটা টান দিলো গ্রে।
তারপর পরেরটাও টান দিলো… এভাবে পরেরটা… তারপরেরটা।
.
দুপুর ২ টা ৩ মিনিট।
ফিওনা দেখল সবকটি লাইট দপ দপ করে অফ হয়ে যাচ্ছে।
ও খোদা…
সেন্ট্রাল কোর্টইয়ার্ডে একটা ছোট ঝরনার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ও। দরজা তালা বন্ধ হয়ে গেছে দেখতে পেয়ে ভিন্ন পথ খোঁজার জন্য এদিকে এসেছিল। বের হওয়ার বিকল্প আরেকটা পথ তো থাকার কথা।
কিন্তু এখন ও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
পুরো রুম জুড়ে হঠাৎ সুনসান নীরবতা। খাঁচায় থাকা প্রাণীগুলো হয়তো কোনো পরিবর্তন টের পেয়েছে। এতক্ষণ পাওয়ারের মৃদু গুঞ্জন আওয়াজ ছিল এখন সেটা নেই। কারেন্টের পাওয়ার নেই… হয়তো এখন ওদের পাওয়ার চালু হবে।
ওর পেছনের একটা দরজা আওয়াজ করে উঠল।
ধীরে ধীরে ঘুরল ফিওনা।
দানবীয় হায়না নাক দিয়ে ঠেলা দিতেই একটা খাঁচার দরজা খুলে গেছে। পাওয়ার চলে যাওয়ায় অকেজো হয়ে গেছে দরজার তালাগুলো। খাঁচা থেকে বের হয়ে এলো দানবটা। ওটার ঠোঁট থেকে রক্ত চোয়াচ্ছে। এই হায়না নিশ্চয়ই এতক্ষণ মাংস খাচ্ছিল। মৃদুস্বরে গর্জন করল ওটা।
ফিওনার পেছনে অন্যান্য প্রাণী মৃদু আওয়াজ করে নিজেদের মধ্যে চুপচাপ যোগাযোগ সেরে নিলো। দানব সমৃদ্ধ চিড়িয়াখানার সব দরজা খুলে গেল এক এক করে।
ফিওনা তবুও ঝরনার কাছে দাঁড়িয়ে রইল। পানির পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ঝরনার পানিও বন্ধ। নিথর, স্তব্ধ পানি দেখেও ভয় করল ওর।
নিচের কোথাও থেকে বিকট চিৎকার ভেসে এলো। মানুষের চিৎকার। ফিওনা ভাবল, এটা হয়তো সেই লোকটার… যাকে ইসকি একটু আগে ধমকে গেছে। মনে হচ্ছে সে নিজেই প্রাণীগুলোর জন্য রক্তমাখা টাকটা মাংস হয়ে যাচ্ছে। ফিওনার দিকে কারও এগিয়ে আসার শব্দ শোনা গেল। তারপর আবার চিৎকার, আর্তনাদ… গর্জন।
নিজের কান চেপে ধরল ফিওনা। দানবগুলো এখন লোকটাকে খেতে শুরু করেছে।
প্রথমে যে দানবটা বেরিয়েছে সেটার দিকে এখনও তাকিয়ে আছে ফিওনা।
রক্তাক্ত মুখ নিয়ে এগোল ওটা। ফিওনা দানবটার গায়ে থাকা সাদা স্পট দেখে চিনতে পারল। সাদা পশমের ওপর সাদা স্পট, প্রায় বোঝাই যায় না। জঙ্গলে এই দানবটাকে দেখেছিল ও।
ইসকির পোষা জানোয়ার।
স্কাল্ড।
এর আগে খাঁচায় রাখা খাবারটা (ফিওনাকে) স্কাল্ড খেতে পারেনি।
এবার আর সেটা হচ্ছে না।
.
দুপুর ২টা ৪০ মিনিট।
আমাদেরকে সাহায্য করুন… মেজর ব্রুকসকে সাথে নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকলো গানথার।
লিসা পেইন্টারের বুক থেকে স্টেথোস্কোপ সরিয়ে উঠে দাঁড়াল। পেইন্টারের বুকের আওয়াজ পর্যবেক্ষণ করছিল ও। গত ১২ ঘণ্টায় পেইন্টারের অনেক অবনতি হয়েছে। স্বাস্থ্যের এদ্রুত অবনতি লিসা এর আগে কখনও দেখেনি। লিসা আশংকা করল ক্রোর হৃদপিণ্ডের ভালবের আশেপাশে কিছু জমেছে। সেটার প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে শরীরে, এমনকি ওর চোখের তরলেও সেটার প্রভাব পড়েছে।
পেইন্টার এতক্ষণ শুয়েছিল, কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে উঠে বলল, কী হয়েছে?
জবাব দিলো মেজর ব্রুকস, ওনার বোন, স্যার। তার… হার্টঅ্যাটাক টাইপের কিছু একটা হয়েছে।
মেডি কিট নিলো লিসা। পেইন্টার একা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু ব্যর্থ হয়ে লিসার সাহায্য নিতেই হলো ওকে। তুমি এখানেই থাকো। বলল লিসা।