আম্মোনাইট নামে আর এক দেবতাকে রাব্বা, আর্গর ও বেসালে পূজা করা হত। কিন্তু এই দেবতা এই পূজায় সন্তুষ্ট না হয়ে উদারহৃদয় সলোমনকে প্ররোচিত করে তাকে দিয়ে সেই ঘৃণ্য পাহাড়ের উপর ভগবানের মন্দিরের পাশে তার একটি মন্দির নির্মাণ করায়। এইভাবে জেরুজালেমের সন্নিকটস্থ সুন্দর হিল্লম উপত্যকাটি বলির রক্তে রঞ্জিত এক নরককুণ্ডে পরিণত হয়।
আর একজনের নাম হলো শেমস। অরোয়া থেকে নেবে ও হেনিবনের দক্ষিণের অরণ্যাঞ্চল পর্যন্ত মোয়াবের অত্যাচারী ভয়াবহ পুত্রেরা তার পূজা করত। এ ছাড়া সেদিন থেকে হয়রানাইম পর্যন্ত বিস্তৃত সিওমের রাজ্য ও তার ওপারে আঙুর গাছে আচ্ছাদিত সিবমার পুষ্পিত উপত্যকায় সে পূজিত হত।
আর একজনের নাম হলো পিওর। সে সিট্রিম্-এ ইহুদীরা যখন নীলনদের তীরে এক জায়গায় অভিযানে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল তখন তাদের তার জন্য অনেক পশুবলি দিতে প্ররোচিত করে। তার ফলে অনেক কষ্টভোগ করতে হয় তাদের। এরপর সে মাউন্ট অলিভ পর্যন্ত পশুবলি ও ধর্মবলির নিষ্ঠুর প্রথা প্রবর্তন করে। সেই সঙ্গে লোকের নরবলির প্রথাও চলতে থাকে। অবশেষে জোসিয়া একদিন মূর্তিপূজা ও নরবলি প্রথার উচ্ছেদ করে।
এরপর এল দু’জন নারী যারা মিশর ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী নদীবিধৌত অঞ্চলে র্যালিস ও এ্যাস্টারথ নামে দুই স্ত্রী-দেবতারূপে পূজিত হয়। দেবদূতদের বিদ্রোহী বিশুদ্ধ আত্মার মধ্যে অস্থিমজ্জা ও মাংসসমন্বিত কোন অবয়বসংস্থান না থাকায় তারা ইচ্ছামত স্ত্রী-পুরুষ যে কোন মূর্তি ধারণ করতে পারে। তারা যে কোন সময়ে সুন্দর বা কুৎসিত রূপ পরিগ্রহ করে মিত্ৰতা বা শত্রুতার দ্বারা তাদের যে কোন উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে। এই সব অপদেবতাদের প্রভাবেই ইহুদীরা তাদের প্রাচীন ধর্মসম্মত দেবতাদের ত্যাগ করে কতকগুলি পাশবিক অপদেবতার উপাসনা করতে থাকে। এই সব পাশবিক দেবদেবীর দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তারা অন্যায় যুদ্ধে রত হয়ে ঘৃণ্য শত্রুদের সাময়িক শক্তির কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়।
ফিনীশীয়রা এই অপদেবী এ্যাস্টারথকে স্বর্গের রানী এ্যাস্তাতে নামে অভিহিত করত। এই দেবীর মাথায় দুটি শিং-এর মত দুটি অর্ধচন্দ্র বিরাজ করত। সিডোনিয়ার কুমারী মেয়েরা চন্দ্রালোকিত রাত্রিতে এই দেবীর বেদীর সামনে পূজা দিত এবং প্রার্থনার গান গাইত।
সিওনেও এই দেবী পূজিত হয় এবং একটি পাহাড়ের উপর তার এক মন্দির ছিল। কোন এক রাজা এই মন্দির নির্মাণ করে। এই রাজার অন্তঃকরণটি বেশ বড় এবং উদার হলেও এই সুন্দরী দেবীমূর্তির অশুভ প্রভাবে যত সব অপদেবতার পূজার্চনা করতে থাকে।
এর পর আসে থাম্মাজ। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালের কোন এক তিথিতে সিডোনিয়ার কুমারীরা যার আঘাতের জন্য শোকাহত হয়ে বিলাপ করতে থাকে সকরুণ সুরে। প্রতি বছর ভেনাসের প্রেমিক এ্যাডনিসের আঘাতে একবার করে আহত হয় থাম্মাজ আর তার রক্তে রঞ্জিত হয়ে এ্যাডনিস ছুটে গিয়ে ঝাঁপ দেয় সমুদ্রের জলে। তার ব্যর্থ প্রেমের কাহিনীর দ্বারা সিয়নকন্যার হৃদয় সংক্রামিত হয়।
এরপর আর একজন এল। সে সত্যি সত্যিই বিলাপ করছিল তাঁর দুঃখে। একটি জাহাজের আঘাতে মন্দিরের মধ্যেই বিকৃত হয়ে যায় তার মৃর্তিটি। তার মাথা আর হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দেহ থেকে। বেদীর উপর মূর্তিটি পড়ে যায়। ভক্তেরা লজ্জিত হয়। ভেগন নামে সে এক সমুদ্রদানব। তার উপর দিকটা মানুষের আকৃতি আর নিচের দিকটা মাছের মত। তথাপি প্যালেস্টাইনের দক্ষিণভাগে উপকূলবর্তী এ্যাজোটাস নামে এক শহরে এই দানবদেবতার এক সুউচ্চ মন্দির নির্মিত হয়। প্যালেস্টাইনের সমস্ত উপকূলভাগ, গথ ও এ্যাসকাসনে এই দেবতা ভয়ের সঙ্গে পূজিত হয়। একারন ও গাঁজার সীমান্ত অঞ্চলেও এই দেবতা পূজিত হয়।
এরপর আসে সিরিয়ার অন্যতম দেবতা রিম্মন। দামাস্কাসের একটি সুন্দর মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয় তার বিগ্রহমূর্তি। আব্বানা ও ফারফর নামে দুটি নদীর তীরবর্তী উর্বর ভূখণ্ডে সে পৃজিত হয়। জামন নামে সিরিয়ার সেনাপতি জন নদীতে স্নান করে কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্ত হয়ে ইহুদীদের দেবতার ভক্ত হয়ে ওঠে। আহাজ নামে জুড়ার এক রাজা সিরিয়ার সেনাপতিকে পরাজিত করে তার পুত্রদের পুড়িয়ে মারে। প্রথমে সিরিয়ার দেবতাদের অবমাননা করার পর শেষে সেই দেবতাদের ভক্ত হয়ে সিরিয়ার ধর্ম গ্রহণ করে।
এরপর আসে ওরিসিস, আইসিস ও ওরাস। তারা ভয়ঙ্কর দৈত্যের আকার ধরে এসে মিশরের ধর্ম ও পুরোহিত সম্প্রদায়কে অবজ্ঞা ও অপমান করতে থাকে। মিশরীয় ইহুদীরা গরুদের মৃতি মন্দিরে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে দেবতারূপে পূজা করত। এ্যারন একটি সোনার বাছুর মন্দিরে দেববিগ্রহরূপে প্রতিষ্ঠা করে। রাজা জেরিবোয়ামও দুটি সোনার বাছুরমূর্তি বিগ্রহরূপে প্রতিষ্ঠা করে মন্দিরে। ওরিসিস, আইসিস ও ওরাস দৈত্যরূপে মিশরের গরুগুলোকে ভ্রাম্যমাণ ঘৃণ্য দেবতা ভেবে ধরতে যায়।
ইহুদীরা মিশরীয়দের গরু পূজা থেকেই গরুর মূর্তি মন্দিরে মন্দিরে পূজা করতে থাকে। চারণরত বলদকে তারা পরমস্রষ্টা বলে মনে করে। পরে ইহুদীদের ঈশ্বর জেহোভা মিশর থেকে চলে যাবার সময় বহু গরুকে বধ করে।
সবশেষে এল বিলায়েল। তার আত্মা সবচেয়ে বেশি হিংসাপরায়ণ। সে মন্দির ও বেদী পছন্দ করত না। তবু তার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দিরবেদীতে। সে সবচেয়ে হিংসাকে ভালবাসত। মন্দিরের পুরোহিতরাও নাস্তিক হয়ে যায় তার প্রভাবে।