ব্রন এবং সম্প্রতি ব্রোকা আরও গুরুতর একটি আপত্তি উপস্থিত করেছেন। আপত্তিটি হল–যারাই অধিকারী হোক না কেন, অনেক বৈশিষ্ট্যের আপাতভাবে কোন মূল্য নেই এবং সেজন্য এরা প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে না। ব্রন শশক ও ইঁদুরের বিভিন্ন প্রজাতির কান ও লেজের দৈর্ঘ্য, অনেক প্রাণীর দাঁতের এনামেলের জটিল ভাজ এবং এরূপ অসংখ্য ঘটনার কথা উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করেছেন। একটি প্রশংসনীয় প্রবন্ধে উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলোচনা করেছেন নাজেলি। তিনি স্বীকার করেছেন যে প্রাকৃতিক নির্বাচন খুবই কার্যকরী, কিন্তু তিনি জোরের সঙ্গে বলেন যে উদ্ভিদদের গোত্রগুলি অঙ্গসংস্থানীয় বৈশিষ্ট্যে পরস্পরের থেকে মূলতঃ পৃথক হয়, যা সম্ভবত প্রজাতিদের মঙ্গলের পক্ষে সম্পূর্ণরূপে অপ্রয়োজনীয়। ফলস্বরূপ তিনি প্রগতিমূলক এবং আরও নিখুঁত বিকাশের দিকে একটি সহজাত প্রবৃত্তিতে বিশ্বাস করেন। উদাহরণ হিসাবে তিনি কলাগুলিতে কোষগুলির এবং কাণ্ডের ওপর পাতার বিন্যাস উল্লেখ করেছেন, যেগুলিতে প্রাকৃতিক নির্বাচন কার্যকরী হয়ে থাকতে পারে না। এগুলির সঙ্গে আরও কিছু যোগ করা যেতে পারে, যেমন ফুলের অংশগুলিতে সংখ্যাগত বিভাগ, ডিম্বকগুলির অবস্থান, বীজের আকার, যখন এগুলি ছড়িয়ে পড়ার কাজে লাগে না, ইত্যাদি।
উপরের আপত্তিটি বেশ জোরালো। তা সত্ত্বেও প্রথমেই আমাদের সিদ্ধান্ত করতে অতিশয় সতর্ক হওয়া উচিত যে কোন কোন দেহগঠন প্রত্যেক প্রজাতির বর্তমানে অথবা পূর্বে উপকারী হয় অথবা হয়েছিল। দ্বিতীয়তঃ, সবসময় মনে রাখা উচিত যে যখন একটি প্রত্যঙ্গ পরিবর্তিত হয়, তখন কোন অস্পষ্ট কারণের জন্য অন্য প্রত্যঙ্গগুলিও রূপান্তরিত হয়, যেমন একটি প্রত্যঙ্গে কম অথবা বেশি পুষ্টিকর খাদ্যের প্রবাহ, পারস্পরিক চাপ, প্রথমে বিকশিত একটি অংশ, পরবর্তী সময়ে অন্য অংশকে বিকশিত হতে প্রভাবিত করে ইত্যাদি এবং অন্য কারণগুলির মাধ্যমে যা সহ-সম্পর্কের অনেক রহস্যজনক ঘটনার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে, যা আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বুঝতে পারি না। সংক্ষেপে, বৃদ্ধির নিয়মগুলির মধ্যে এই মাধ্যমগুলিকে একত্রে দলবদ্ধ করা যেতে পারে। তৃতীয়তঃ, জীবনের পরিবর্তিত পরিবেশের প্রত্যক্ষ ও নির্দিষ্ট ক্রিয়া এবং সুপরিচিত স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনগুলিকে আমাদের স্বীকার করা উচিত, যাতে করে পরিবেশের প্রকৃতি আপাতভাবে একটি গৌণ ভূমিকা পালন করে। কুঁড়ির পরিবর্তনগুলি, যেমন সাধারণ গোলাপের ওপর মস গোলাপের আবির্ভাব, পিচ গাছে মধুর আবির্ভাব স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনের ভাল উদাহরণ উপস্থিত করে। কিন্তু এমনকি এইসব ক্ষেত্রেও জটিল গলসৃষ্টিতে এক বিন্দু বিষের ক্ষমতার কথা যদি আমরা মনে রাখি, তাহলে আমরা। নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না যে ওপরের পরিবর্তনগুলির পরিবেশের কোন পরিবর্তনের দরুন প্রাণরসের প্রকৃতিতে কোন স্থানীয় পরিবর্তনের প্রভাব নয়। এককীয় প্রতিটি অল্প পরিবর্তন এবং হঠাৎ হঠাৎ উদ্ভূত আরও স্পষ্টচিহ্নিত পরিবর্তনের অন্য কোন ফলপ্রদ কারণ অবশ্যই থাকবে; এবং অজ্ঞাত কারণটি অনবরত ক্রিয়া করলে, এটি প্রায় নিশ্চিত যে প্রজাতির সমস্ত এককগুলি একইভাবে রূপান্তরিত হবে।
এই গ্রন্থের পূর্বের সংস্করণগুলিতে আমি স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনশীলতার জন্য রূপান্তরের গুরুত্ব ও বারংবার সংঘটনকে কম গুরুত্ব দিয়েছিলাম, যা প্রত্যেক প্রজাতির জীবন-স্বভাবের সঙ্গে এত ভালভাবে অভিযোজিত হয়েছে যে এরূপ অসংখ্য দেহগঠনে এই কারণ আরোপ করা অসম্ভব। বর্তমানে আমি আর বিশ্বাস করতে পারি না যে একটি ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া অথবা গ্ৰেহাউণ্ড কুকুরের ভালভাবে অভিযোজিত আকারটি, যা মানুষের দ্বারা নির্বাচনের পদ্ধতিকে ভালভাবে বোঝার পূর্বে প্রবীণ প্রকৃতিবিদদের মনে বিপুল বিস্ময় উৎপাদন করেছিল, তাকে এইরূপে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
পূর্ববর্তী বক্তব্যগুলির কয়েকটির ব্যাখ্যা করা সময়োপযোগী হতে পারে। বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তথাকথিত অপ্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এটি লক্ষ্য করার কদাচিৎ প্রয়োজন হয় যে এমনকি উচ্চতর ও সুপরিচিত প্রাণীদেরও এমন অনেক দেহগঠন আছে যা এত উচ্চমাত্রায় বিকশিত যে সেগুলির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কেউ সন্দেহ করে না; তথাপি এদের ব্যবহার নির্ধারিত হয়নি অথবা সম্প্রতি নির্ধারিত হয়েছে। যেহেতু গঠনের পার্থক্য হিসাবে–যদিও নিতান্তই তুচ্ছ এবং কোন বিশেষ ব্যবহার নেই–ইঁদুরদের কয়েকটি প্রজাতির লেজ ও কানের দৈর্ঘ্যের বিষয়ে ব্রন উল্লেখ করেছেন, সেহেতু আমি উল্লেখ করতে পারি যে ডঃ স্ক-এর মতানুসারে, সাধারণ ইঁদুরের বহিঃকর্ণের স্নায়ুগুলি অস্বাভাবিকভাবে বিন্যস্ত, যা থেকে বোঝা যায় এগুলি স্পর্শানুভূতি সংক্রান্ত অঙ্গ হিসাবে কাজ করে; সুতরাং কানগুলির দৈর্ঘ্য কখনই সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় হতে পারে না। বর্তমানে আমরা আরও দেখি যে কয়েকটি প্রজাতির ক্ষেত্রে লেজটি ধারক-অঙ্গ হিসেবে অতিশয় প্রয়োজনীয় এবং এর ব্যবহার এর দৈর্ঘ্যের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।
উদ্ভিদের প্রসঙ্গে, নাজেলির প্রবন্ধ সম্পর্কে নিচের বক্তব্যের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখব আমি। এটা অনস্বীকার্য যে অর্কিডের ফুলগুলি অসংখ্য ধরনের গঠনের হয়, যা কয়েক বছর পূর্বেও কোন বিশেষ কার্য ব্যতিরেকে কেবলমাত্র অঙ্গ-সংস্থানীয় পার্থক্য হিসেবেই বিবেচিত হত; কিন্তু এখন জানা গেছে যে পতঙ্গদের দ্বারা প্রজাতিদের নিষেকের জন্য এগুলি অতিশয় উপকারী এবং সম্ভবতঃ প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমেই এগুলি অর্জিত হয়েছে। সম্প্রতিকাল পর্যন্ত কেউ কল্পনাও করেনি যে দ্বিরূপক এবং ত্রিরূপক উদ্ভিদসমূহে পুংকেশর ও স্ত্রীকেশরের বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের এবং এদের বিন্যাসের কোন উপকার থাকতে পারে, কিন্তু এখন আমরা জানি যে এদেরও ব্যবহার আছে।