শেষতঃ, যদিও অনেক ক্ষেত্রে কল্পনা করা অতিশয় কষ্টকর যে কোন্ কোন্ সংক্রমণ বা উত্তরণগত ধাপগুলির দ্বারা অঙ্গগুলি বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে, তথাপি, বিলুপ্ত ও অজ্ঞাতগুলির তুলনায় বর্তমান ও জ্ঞাত আকারগুলির অনুপাত কত কম তা বিবেচনা করে, আমি বিস্মিত হয়েছি যে কী উপায়ে কদাচিৎ একটি অঙ্গের নামকরণ করা যেতে পারে, যে বিষয়ে কোন সংক্রমণগত ধাপ জানা নেই। এটি নিশ্চিত সত্য যে কোন বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হওয়া নূতন অঙ্গগুলি কোন জীবে কদাচিৎ আবির্ভূত হয় অথবা কখনই আবির্ভূত হয় না–যেমন প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক ইতিহাসে ঐ পুরানো অথচ কিছুমাত্রায় অতিরঞ্জিত প্রবাদ “প্রকৃতি কখনও লম্ফ দেয় না”-তে দেখানো হয়েছে। প্রায় প্রত্যেক অভিজ্ঞ প্রকৃতিবিদের লেখায় এটির স্বীকৃতি খুঁজে পাই আমরা। মিলনে এডওয়ার্ড সুন্দরভাবে বলেছেন যে বৈচিত্র্যে প্রকৃতির দান অপরিমিত, কিন্তু নূতনত্বের প্রবর্তনে কৃপণ। সৃষ্টিতত্ত্বানুযায়ী কেন এত বেশি বৈচিত্র্য এবং এত অল্প প্রকৃত অভিনবত্ব থাকবে? অনেক ভিন্ন জীবের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি, যা প্রকৃতিতে তার উপযুক্ত স্থানের জন্য মনে হয় পৃথকভাবে সৃষ্টি হয়েছে, পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলির দ্বারা একত্রে এত সাধারণভাবে যুক্ত হবে কেন? দেহগঠন থেকে দেহগঠনে কেন প্রকৃতি হঠাৎ লম্ফ দেবে না? প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বানুযায়ী আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে কেন সে এটি করবে না; কারণ এটি প্রাকৃতিক অল্প ধারাবাহিক পরিবৃত্তিসমূহের সুফল গ্রহণ করেই শুধুমাত্র কার্যকরী হয়, সে কখনও একটি বিরাট ও আকস্মক লক্ষ্য দেয় না, কিন্তু অল্প ও নিশ্চিত অথচ মন্থর ধাপগুলির দ্বারা অগ্রসর হয়।
প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা প্রভাবিত আপাত অল্প গুরুত্বের অঙ্গসমূহ
যেহেতু জীবন ও মৃত্যু দ্বারা, সর্বোত্তমের উদ্বর্তন দ্বারা এবং কম উপযুক্ত এককদের ধ্বংসসাধন দ্বারা প্রাকৃতিক নির্বাচন কার্যসম্পন্ন করে, তাই অল্প গুরুত্বের প্রত্যঙ্গগুলির উৎপত্তি ও গঠন সম্বন্ধে বুঝতে আমি কোন কোন সময় বিরাট অসুবিধা বোধ করি; অবশ্য অতি ভিন্ন প্রকৃতির সবচেয়ে নিখুঁত ও জটিল অঙ্গগুলির ক্ষেত্রেও বিরাট অসুবিধা বোধ করি।
প্রথমতঃ, কোন জীবের সমগ্র দেহগঠন সম্বন্ধে কোন্ কোন্ রূপান্তরগুলি গুরত্বপূর্ণ হবে বা হবে না, এ সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান অতি অল্প। পূর্ববর্তী একটি অধ্যায়ে তুচ্ছ। বৈশিষ্ট্যগুলির উদাহরণ দিয়েছি, যেমন ফলের নরম ক্ষুদ্র রোম ও তার শাঁসের রং, চতুষ্পদ প্রাণীদের চামড়ার রং ও লোম, এগুলি জৈবিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত ও পতঙ্গদের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সৃষ্ট, এবং এগুলির উপর নিশ্চয় প্রাকৃতিক নির্বাচন কার্যকরী হবে। জিরাফের লেজটি কৃত্রিমভাবে নির্মিত মাছি ধরার চেপ্টা যন্ত্রের মতো দেখতে হয়, এবং প্রথমে এটি অবিশ্বাস্য বলেই মনে হয় যে মাছিদের তাড়ানোর মতো একটি তুচ্ছ বিষয়ের জন্য ক্রমশ উৎকৃষ্ট এবং উৎকৃষ্টতরভাবে উপযোগী পর্যায়ক্রমিক অল্প রূপান্তরগুলির দ্বারা এটি এর বর্তমান উদ্দেশ্যের জন্য অভিযোজিত হয়েছে; তথাপি এক্ষেত্রে দৃঢ় প্রত্যয়শীল হওয়ার পূর্বে আমাদের সাময়িক বিরত থাকা উচিত, কারণ আমরা জানি যে দক্ষিণ আমেরিকায় গো-মহিষাদি এবং অন্য প্রাণীদের বিস্তার ও অবস্থান পতঙ্গদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষমতার ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে, যাতে করে এইসব ক্ষুদ্রাকার শত্রুদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম এককরা নূতন চারণভূমিতে বিচরণ করতে সমর্থ হত এবং এভাবে বিরাট সুবিধা লাভ করত। এর অর্থ এই নয় যে বড় চতুষ্পদ প্রাণীরা মাছিদের দ্বারা প্রকৃতই ধ্বংস হয়েছে (কতিপয় বিরল ঘটনা ছাড়া), বরং এরা অনবরত হয়রান হয়েছে ও এদের ক্ষমতা হাস পেয়েছে, সেইজন্য এদের রোগাক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে, অথবা অভাবের সময় খাদ্যের সন্ধান করার জন্য বা শিকারি পশুদের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য এরা ভালভাবে সমর্থ হয় না।
বর্তমানে তুচ্ছ বৈশিষ্ট্যের অঙ্গগুলি সম্ভবতঃ কয়েকটি ক্ষেত্রে একটি আদিম পূর্বপুরুষের ক্ষেত্রে উচ্চ গুরুত্বের হয়ে থাকবে, এবং পূর্ববর্তী কোন যুগে ধীর গতিতে নিখুঁত হওয়ার পর প্রায় একই অবস্থায় বর্তমান প্রজাতিগুলিতে বংশগতভাবে প্রেরিত হয়েছে, যদিও এটি এখন নিতান্ত অল্প গুরুত্বসম্পন্ন; কিন্তু এদের দেহগঠনে যে কোন প্রকৃত ক্ষতিকর বিচ্যুতি নিশ্চয় প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকবে। অধিকাংশ জলজ প্রাণীদের লেজটির মতো একটি ভ্রমণ-অঙ্গ যে কত গুরুত্বের হয় তা লক্ষ্য করে অসংখ্য স্থলচর প্রাণীর ক্ষেত্রে এর সাধারণ অবস্থান এবং অসংখ্য উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার, যাদের ফুসফুস ও রূপান্তরিত পটকারা এদের জলজ উৎপত্তি প্রমাণ করে, বোধহয় এভাবে সন্তোষজনকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। একটি জলজ প্রাণীর লেজটি উন্নত হওয়ার পর, পরবর্তী সময়ে এটি সকল উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়-যথা মাছি তাড়ানোর পাখা, আঁকড়ে ধরার উপযোগী যন্ত্র, অথবা কুকুরের ক্ষেত্রে উল্টোদিকে ঘোরার যন্ত্র, যদিও শেষোক্ত যন্ত্রটি (লেজ) নিশ্চয় অল্প সাহায্যের হবে, কারণ যাদের কোন লেজ নেই বললেই চলে এমন শশকরা আরও দ্রুতহারে উল্টোদিকে ঘুরতে পারে।