দেরীতে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে প্রতীয়মান হয় যে ১৮৫১ সালে ডঃ ফ্ৰেক (ডাবলিন মেডিক্যাল প্রেস, পৃঃ ৩২২) একটি তত্ত্বের প্রস্তাব করেছিলেন যে একটি আদিম প্রকার থেকে সমস্ত জীবের উদ্ভব হয়েছে। তার বিশ্বাসের কারণ ও বিষয়টির বর্ণনা আমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা; কিন্তু যেহেতু ডঃ ফ্রেক ‘ জৈবিক সাদৃশ্য দ্বারা প্রজাতির উৎপত্তি’ নামে একটি রচনা এখন (১৮৬১) প্রকাশ করেছেন, তাই তার মতবাদের উপর কোন ধারণা দেওয়ার কষ্টকর চেষ্টা আমার পক্ষে নিষ্প্রয়োজন।
মিঃ হার্বার্ট স্পেনসার একটি প্রবন্ধে ( প্রথমে ১৮৫২ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত “লিডার পত্রিকায় এবং ১৮৫৮ সালে তাঁর রচনাবলীতে পুনঃপ্রকাশিত) জীবের সৃষ্টি ও ক্রমবিকাশের তত্ত্বসমূহ সম্বন্ধে অত্যন্ত দক্ষতা ও ক্ষমতার সঙ্গে বিপরীত মত প্রকাশ করেছেন। গৃহপালিত উৎপাদনের উপমা, অসংখ্য প্রজাতির সূণের পরিবর্তন, প্রজাতি ও ভ্যারাইটিদের পার্থক্য করার অসুবিধা এবং সাধারণ ক্রমোন্নতির সূত্র থেকে তিনি যুক্তি দেখান যে প্রজাতিরা রূপান্তরিত হয়েছে; এবং তিনি বলেন রূপান্তরগুলি পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য হয়েছে। ক্রমবিন্যাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মানবিক ক্ষমতা ও সামর্থ্য অর্জনের নীতির উপর ভিত্তি করে মনোবিজ্ঞান আলোচনা করেছেন তিনি।
বিশিষ্ট উদ্ভিদবিজ্ঞানী এম. নডিন ১৮৫২ সালে প্রজাতির উৎপত্তি সম্বন্ধে একটি চমৎকার গবেষণাপত্রে (রিভিউ হর্টিকোলে, পৃঃ ১৩২; তারপর ‘নউভেলেস আর্কাইভস ডু মিউজিয়াম, খণ্ড ১, পৃঃ ১৭১-এ অংশতঃ পুনঃপ্রকাশিত) স্পষ্টভাবে তার বিশ্বাস ব্যক্ত করেন যে গৃহপালনাধীনে ভ্যারাইটিরা যেভাবে সৃষ্ট হয়, সেই একই উপায়ে প্রজাতিগুলি সৃষ্ট হয়। পরবর্তী পর্যায়ে মানুষের নির্বাচনী ক্ষমতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি। প্রকৃতিতে কেমন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল হয় তা তিনি উল্লেখ করেন নি। ডিন হার্বার্টের মতো তিনিও বিশ্বাস করেন যে বর্তমানের তুলনায় জায়মান অবস্থায় প্রজাতিরা আরও নমনীয় ছিল। তার কথিত পরিণামের নীতির উপর অতিশয় গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি, “ একটি রহস্যময় শক্তি, যা তাদের অলক্ষ্য ও নিয়তি, এই প্রকৃতি তাদের দিয়ে সেইসব কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে করিয়ে নিচ্ছে যা তাদের জন্য নির্ধারিত। কোন্ পরিবেশে তারা বেড়ে উঠবে, কোন্ পরিবেশ তাদের পক্ষে উপযুক্ত, সে সবই নির্ধারণ করে থাকে প্রকৃতি। প্রকৃতির এই লীলাখেলাকে অনুসরণ করেই তাদের বেড়ে উঠতে হয়। প্রকৃতির এই রহস্যময়তার মধ্যেই তাদের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাদৃশ্যজনিত আকারে বেড়ে ওঠে। যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলির দ্বারা তাদের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। প্রকৃতির এই রহস্যময় ঘূর্ণাবর্তে সাধারণ জীবকূলের সমস্ত রকম ক্রিয়া সম্পাদিত হয়ে থাকে এবং সেই একই কার্য তাদের শাবকদের উপরেও প্রযুক্ত হয়।” (৩)
১৮৫৩ সালে কাউন্ট কেইসারলিং নামে একজন ভূবিজ্ঞানী (বুলেটিন ডে লা সোস, জিয়ে!লাজ’, ২য় ক্রম, খণ্ড ১০, পৃঃ ৩৫৭) প্রস্তাব করেন যে যেমন নূতন রোগসমূহ, যা পৃতিবাপ দ্বারা সংঘটিত হয় বলে মনে হয়, উদ্ভূত হয়েছে এবং সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত হয়েছে, সেইভাবে কোন যুগে বর্তমান প্রজাতিদের জীবাণু একটি বিশেষ পরিবেষ্টক অণুদের দ্বারা রাসায়নিকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারে এবং নূতন আকার ধারণ করতে পারে।
ঐ একই বৎসরে, ১৮৫৩ সালে, ডঃ শ্যাফহাউসেন একটি চমৎকার পুস্তিকা প্রকাশ করেন, (ভারহ্যান্ড, ডেস ন্যাচারিস্ট ভেরেইনস্ ডার প্রিউস. রাইনল্যান্ডস, ইত্যাদি) যাতে তিনি পৃথিবীতে জৈব আকারগুলোর ক্রমবিকাশ উল্লেখ করেন। তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে অনেক প্রজাতি দীর্ঘদিনব্যাপী বিশুদ্ধ থাকে, পক্ষান্তরে কিছু প্রজাতি রূপান্তরিত হয়। মধ্যবর্তী ক্রমিক আকারগুলির ধ্বংসসাধন দ্বারা প্রজাতির পার্থক্য ব্যাখ্যা করেন তিনি। “এইভাবে নূতন সৃষ্টির দ্বারা অধুনালুপ্তদের থেকে জীবন্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীরা পৃথক হয় না, কিন্তু এদেরকে অনবরত জননের মধ্য দিয়ে তাদেরই বংশধর হিসেবে গণ্য করা দরকার।”
সুপরিচিত ফরাসী উদ্ভিদবিজ্ঞানী এম. লেকক ১৮৫৪ সালে লেখেন (এটুডেস সুর জিয়োগ্রাফ.বট’, খণ্ড ১, পৃঃ ২৫০), “কিছু প্রজাতির পশুদের পরস্পরের মধ্যে যে স্বতন্ত্রতা থাকে তা তাদের মন বা ধারণার স্বতন্ত্রতার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে– এই ধারণা আমরা দুই বিখ্যাত মণীষী জিওফ্রয় সেন্ট হিলারে ও গেটের গবেষণা থেকে যথারীতি লাভ করেছি।” এম. লেখকের বিশাল গ্রন্থের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা কয়েকটি অনুচ্ছেদে প্রজাতির রূপান্তর সম্বন্ধে তাঁর মতবাদ কিছু সন্দেহ জাগায়।
১৮৫৫ সালে প্রকাশিত “জগতের ঐক্যসংক্রান্ত প্রবন্ধসমূহ’-তে রেভারেণ্ড ব্যাডেন পাওয়েল সৃষ্টির দর্শন’ অতি সুনিপুণভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। নতুন প্রজাতির প্রবর্তন “একটি নিয়মিত অথচ আকস্মিক ঘটনা নয়” এটি তিনি যেভাবে দেখিয়েছেন তার তুলনায় আর কোন কিছুই অধিকতর চিত্তাকর্ষক হতে পারে না।
‘লিনিয়ান সোসাইটির জার্নাল’-এর তৃতীয় খণ্ডে মিঃ ওয়ালেস ও আমার রচিত এবং ১৮৫৮ সালের ১লা জুলাই তারিখে পঠিত গবেষণাপত্রে, যা এই খণ্ডের ভূমিকায় বলা হয়েছে, মি. ওয়ালেস প্রশংসনীয় দক্ষতায় এবং স্পষ্টভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্ব উপস্থাপিত করেছেন।