১৮৪৬ সালে অভিজ্ঞ ভূ-বিজ্ঞানী এম. জে. ডি’ ওমালিয়াস ডি’ হালয় তার চমৎকার অথচ সংক্ষিপ্ত গবেষণাপত্রে (বুলেটিনস ডে লাকাদ, রয়, ব্রাক্সেলেস্ টম. ১৩, পৃঃ ৫৪১) মতামত প্রকাশ করেন যে পৃথক ভাবে সৃষ্টির তুলনায় পরিবর্তনের পথ বেয়ে। নূতন প্রজাতিদের উদ্ভব ঘটাই অধিকতর সম্ভবপর। লেখক এই মতবাদ সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে প্রচার করেছিলেন।
১৮৪৯ সালে (নেচার অফ লিম্ব, পৃঃ ৮৬) অধ্যাপক ওয়েন নিচের অংশটি লেখেন: “এই গ্রন্থে সমস্ত প্রাণী প্রজাতিদের অবস্থানের বহু পূর্বে, বিচিত্র এইরূপ রূপান্তরের মধ্যে প্রাণীদের আদিরূপের ধারণা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়েছিল। কোন্ প্রাকৃতিক নিয়ম এবং গৌণ কারণানুসারে এইরূপ জৈব ঘটনার সুশৃঙ্খল অনুগমন ও গ্রগতি ঘটে থাকতে পারে, সে সম্পর্কে আমরা এখনও অজ্ঞ।” ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে অভিভাষণে, তিনি “সৃজনশীল ক্ষমতার অবিচ্ছিন্ন ক্রিয়াকলাপের স্বতঃসিদ্ধ সত্যতার অথবা জীবন্ত দেহের নির্দেশমতো আবির্ভাবের কথা বলেন। ভৌগলিক বিস্তার উল্লেখ করে, তিনি আরও যোগ করেন, “এই সব ঘটনা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাসকে নাড়া দেয় যে নিউজিল্যাণ্ডের অ্যাপ্টেরিক্স এবং ইংল্যান্ডের লাল জংলি হাঁসেরা যথাক্রমে ঐ সব দ্বীপগুলির জন্যই পৃথকভাবে সৃষ্টি হয়েছিল। সর্বদা মনে রাখা দরকার যে সৃষ্টি’ শব্দটির দ্বারা এই প্রাণীবিজ্ঞানী বোঝাতে চেয়েছেন একটি প্রক্রিয়া যা তার অজানা। তিনি তার এই ধারণা ব্যাখ্যা করেন এটি যোগ করে যে লাল জংলি হাঁসের মত এই সব ঘটনা “এই দ্বীপগুলির মধ্যে পাখিটির স্বতন্ত্র সৃষ্টির সাক্ষ্য হিসাবে প্রাণীবিজ্ঞানীদের দ্বারা পরপর উল্লিখিত হয়েছে, তারা মূলতঃ বলতে চেয়েছেন যে কেমন করে লাল জংলি হাঁসেরা সেখানে এবং কেবলমাত্র সেখানেই এসেছিল তা তারা জানেন না; উল্লেখযোগ্য যে তাঁদের এরূপ অজ্ঞতার প্রকাশ তাঁদের এই বিশ্বাসই ব্যক্ত করে যে পাখিটি এবং দ্বীপগুলি উভয়েই একটি প্রথম সৃজনশীল কারণ অর্থাৎ ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিল।” একই অভিভাষণে প্রদত্ত এই সমস্ত বাক্যগুলো যদি আমরা একের পর এক ব্যাখ্যা করি, তাহলে মনে হয় তার দৃঢ় বিশ্বাসে নাড়া লেগেছিল, তিনি ১৮৫৮ সালে অনুভব করেছিলেন যে অ্যাপ্টেরিক্স ও লাল জংলি হাঁসেরা সর্বপ্রথম তাদের নিজেদের দেশে আবির্ভূত হয়েছিল, “তিনি জানতেন না কেমন করে বা কোন্ পদ্ধতির দ্বারা “সেটাও অজানা”।
এখানে উল্লিখিত প্রজাতির উৎপত্তি সম্বন্ধে মিঃ ওয়ালেস এবং আমার গবেষণাপত্র লিনিয়ান সোসাইটিতে পড়ার পর এই বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছিল। যখন এই গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল, তখন “সৃজনশীল ক্ষমতার নিরবচ্ছিন্ন কার্যপ্রণালী র মতো কথাগুলিতে অন্য অনেকের মতো আমিও এত প্রতারিত হয়েছিলাম যে আমি অধ্যাপক ওয়েনকে অন্যান্য জীবাশ্মবিদদের অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম, যাঁরা প্রজাতির অপরিবর্তনশীলতায় বিশ্বাসী, কিন্তু এটি (অ্যানাট, অফ ভার্টেব্রটস’, খণ্ড ৩, পৃঃ ৭৯৬) আমার পক্ষে অস্বাভাবিক ভুল বলে প্রতীয়মান হয়। এই গ্রন্থের সর্বশেষ সংস্করণে “নিঃসন্দেহে টাইপ-আকারটি’ ইত্যাদি শব্দ দ্বারা শুরু একটি অনুচ্ছেদ (ঐ, খণ্ড ১, পৃঃ ৩৫) থেকে আমি সিদ্ধান্ত করেছিলাম এবং সিদ্ধান্তটি এখনও আমার সঠিক বলেই মনে হয়, যে অধ্যাপক ওয়েন স্বীকার করেছিলেন যে একটি নূতন প্রজাতির উৎপত্তিতে প্রাকৃতিক নির্বাচন কিছু ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে; কিন্তু দেখা যায় (ঐ, খণ্ড ৩, পৃঃ ৭৯৮) এটি ভুল এবং প্রমাণহীন। আমি লন্ডন রিভিউ-এর সম্পাদক এবং অধ্যাপক ওয়েনের মধ্যে পত্রবিনিময় থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম, যা থেকে সম্পাদক ও আমরা নিকট এটি স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয় যে অধ্যাপক ওয়েন আমার. পূর্বে প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব প্রচারের দাবীদার। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত পুস্তকের অনুচ্ছেদগুলো থেকে যেটুকু বোঝা যায় (ঐ, খণ্ড ৩, পৃঃ ৭৯৮), তাতে মনে হয় আমি অংশতঃ অথবা সামগ্রিকভাবে আবার ভুল করেছি। এটি আমার পক্ষে সান্ত্বনাদায়ক যে অন্যান্যরা অধ্যাপক ওয়েনের বিতর্কিত লেখাগুলো বুঝতে ও মীমাংসা করতে আমার মতোই। অসমর্থ। কেবল প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতির ঘোষণা বিষয়ে যতদূর বলা যায়, এটি সম্পূর্ণ অনাবশ্যক যে অধ্যাপক ওয়েন আমার পূর্ববর্তী ছিলেন কি ছিলেন না, কারণ আমাদের উভয়ের বহু পূর্বে ডঃ ওয়েলস্ এবং মি. ম্যাথিউ যে কথা বলেছিলেন তা এই ঐতিহাসিক রূপরেখায় বর্ণিত হয়েছে।
এম. ইসিডোরে জিওফ্রয় সেন্ট-হিলারে তার ১৮৫০ সালের বক্তৃতায় (যার সারসংকলন ১৮৫১ সালের জানুয়ারি মাসের ‘রিভিউ এট ম্যাগ, ডে জুলজ’-এ প্রকাশিত হয়েছিল) বলেছেন যে “প্রতিটি প্রজাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য খুবই দৃঢ় থাকে সেই পরিবেশের মধ্যে, যে পরিবেশের মধ্যে সে তার জীবনকে গড়ে তুলতে পেরেছে। কিন্তু যদি তাদের জীবদ্দশায় তাদের পরিবেশের মধ্যে কোনরকম পরিবর্তন আসে, তবেই তারা নিজেদের পরিবর্তন করে থাকে। পর্যবেক্ষণ করে যা দেখা গেছে তা সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয়, নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে কিছু প্রজাতির পশুরা যথারীতি নিজেদের মধ্যে একটা পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এইসব পর্যবেক্ষকদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেখা গেছে যে বন্য পশুকে গৃহপালিত পশু বা পোষমানানো পশুতে রূপান্তরিত করা যায়, অন্যদিকে পোষ মানানো পশুকে পুনরায় বন্য পশু বা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া যায়। এই একই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে প্রমাণিত হয় যে বিভিন্ন গণগত বৈশিষ্ট্য প্রজাতিদের মধ্যে কোন অপরিবর্তনীয় স্বতন্ত্রতা গড়ে তোলে না।” তিনি তার হিস্ট, ন্যাচ. জেনারেল (খণ্ড ২, পৃঃ ৪৩০, ১৮৫৯) গ্রন্থে সদৃশ সিদ্ধান্তসমূহ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন।