মাননীয় রেভারেণ্ড ডব্লিউ. হার্বাট, পরবর্তীকালে যিনি ম্যানচেস্টারের ডিন হন, ১৮২২ সালে প্রকাশিত তাঁর হর্টিকালচারাল ট্রানজাকশনস’ গ্রন্থের চতুর্থ খণ্ডে এবং ‘অ্যামারিলিভেসি’র ওপর তার গবেষণামূলক রচনায় (১৮২৭, পৃঃ ১৯, ৩৩৯) ঘোষণা করেন, “উৎপাদন সংক্রান্ত পরীক্ষা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করেছে যে উদ্ভিদ প্রজাতিসমূহ কেবলমাত্র একটি উচ্চতর এবং স্থায়ী ভ্যারাইটি। প্রাণীদের ক্ষেত্রেও একই মত প্রকাশ করেন তিনি। ডিন মহাশয় বিশ্বাস করেন যে প্রত্যেক গণের একটি প্রজাতি প্রথমে অতি নমনীয় অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছিল এবং এগুলি প্রধানতঃ আন্তঃসঙ্করণ দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে, বর্তমানে আমাদের সমস্ত প্রজাতিদের বিভিন্নতা এই ভাবেই সৃষ্টি হয়েছে।
স্পঞ্জিলার ওপর তার বিখ্যাত গবেষণাপত্রের (‘এডিনবার্গ ফিলোসফিক্যাল জার্নাল’, খণ্ড ১৪, পৃঃ ২৮৩) উপসংহার অনুচ্ছেদে তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে অন্য প্রজাতি থেকেই একটি প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে এবং রূপান্তরের ফলে এরা উন্নত হয়েছে! ১৮৩৪ সালে প্রকাশিত ‘ল্যান্সেট’-এ তাঁর ৫৫তম বক্তৃতার এই একই মতামত প্রকাশ করেন তিনি।
১৮৩১ সালে মিঃ প্যাট্রিক ম্যাথিউ ‘নাভাল টির অ্যাণ্ড আর্বোরিকালচার’-এর ওপর তাঁর গবেষণামূলক রচনাটি প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি প্রজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে একই মত পোষণ করেন, যেমনটা ( এখানে উল্লিখিত হবে) মিঃ ওয়ালেস এবং আমি লিনিয়ান জার্নাল’-এ প্রস্তাব করেছি এবং বর্তমান খণ্ডে পরিবর্ধিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশতঃ একটি ভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণামূলক কাজের পরিশিষ্টের কয়েকটি। বিক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদে মিঃ ম্যাথিউ মতবাদটি প্রকাশ করেছিলেন, ফলে এটি অনেকদিন পর্যন্ত অলক্ষিত অবস্থায় থেকে গিয়েছিল। অবশেষে মিঃ ম্যাথিউ নিজেই ১৮৬০ সালের ৭ই এপ্রিল তারিখের ‘গার্ডেন ক্রনিকল’ পত্রিকায় এ বিষয়ে সকলের দৃষ্টিআকর্ষণ করেন। আমার সঙ্গে ম্যাথিউ-র মতের পার্থক্য খুব একটা উল্লেখযোগ্য নয়। মনে হয় তিনি বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবী পর্যায়ক্রমে প্রায় জনশূন্য হয়ে যেত এবং পরে আবার পূর্ণ হত; এবং তিনি বিপরীত ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে নূতন আকারসমূহ “পূর্বের পুঞ্জীভূত কোন মোল্ড বা জার্মের উপস্থিতি ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে। কয়েকটি অনুচ্ছেদের সারমর্ম আমি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারিনি, তবে মনে হয় তিনি জীবনের পরিবেশের প্রত্যক্ষ প্রভাবের ক্রিয়ার ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তবে প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের বিপুল ক্ষমতা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করেছিলেন তিনি।
প্রখ্যাত ভূতত্ত্ববিদ ও প্রকৃতিবিজ্ঞানী ভন বাখ “ক্যানারী: দ্বীপপুঞ্জের প্রাকৃতিক গঠনের বর্ণনা” (১৮৩৬, পৃঃ ১৪৭) শীর্ষক চমৎকার রচনাটিতে তার বিশ্বাস পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেন যে ভ্যারাইটিরা ধীরে ধীরে স্থায়ী প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়, যা আন্তঃসঙ্করণে আর সমর্থ হয় না।
১৮৩৬ সালে প্রকাশিত “নিউ ফ্লোরা অফ নর্থ আমেরিকা” গ্রন্থে রাফিনেস্ক লেখেন (পৃঃ ৬): “সমস্ত প্রজাতি এক সময় ভ্যারাইটি হলেও হতে পারত, এবং অনেক ভ্যারাইটি স্থায়ী ও নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে ক্রমশ প্রজাতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। কিন্তু পরে তিনি উল্লেখ করেন (পৃঃ১৮) “গণের আদিম রূপ বা পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে এ-ঘটনা ঘটেনি।”
অধ্যাপক হেল্ডমান ১৮৪৩-৪৪ সালে (“বোস্টন জার্নাল অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি, ইউনাইটেড স্টেটস, খণ্ড ৪, পৃঃ ৪৬৮) প্রজাতিদের ক্রমবিকাশ ও রূপান্তর সম্পর্কিত প্রকল্পসমূহের বিপক্ষে এবং স্বপক্ষে দক্ষতার সঙ্গে অনেক যুক্তি দেখিয়েছেন। সম্ভবত পরিবর্তনের দিকে তার ঝোঁক বেশি।
‘ভেস্টিজেস অফ ক্রিয়েশন’ গ্রন্থটি ১৮৪৪ সালে প্রকাশিত হয়; গ্রন্থটির দশম ও পরিমার্জিত সংস্করণে (১৮৫৩) অনামী লেখক বলেন (পৃঃ ১৫৫): “অনেক বিবেচনার পর এই সিদ্ধান্ত আসা গেছে যে জীবন্ত জীবের সরল ও আদিমতম অবস্থা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালের সর্বোচ্চ রূপ পর্যন্ত দীর্ঘ ক্রমমালা হচ্ছে ঈশ্বরের ইচ্ছাপ্রসূত ফলে, প্রথমতঃ, জীবের আকারগুলিতে প্রদত্ত একটি উদ্দীপনা এদের বংশপরম্পরায় উন্নত করেছে যা জীব সংগঠনের বিভিন্ন ক্রমের মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে ও মেরুদণ্ডী প্রাণীতে পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এই ক্রমবিন্যাস সংখ্যায় অল্প এবং জৈব বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য দ্বারা চিহ্নিত, এদের মধ্যেকার সম্পর্ক নিরূপণ করতে আমাদের বাস্তব অসুবিধা অনুভব করার সম্মুখীন হতে হয়; দ্বিতীয়তঃ, জীবনীশক্তির সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য উদ্দীপক যা বংশানুক্রমে বহিরাবস্থানুসারে জৈবিক কাঠামোগুলিতে রূপান্তরিত করতে প্ররোচিত করে। যেমন, খাদ্য, আবাসস্থলের প্রকৃতি ও মহাকাশীয় উন্নপিণ্ডজাতীয় মাধ্যমগুলি, এগুলি হচ্ছে প্রাকৃতিক ধর্মতত্ত্ববিদের ‘অভিযোজন’।” লেখক স্পষ্টতঃ বিশ্বাস করেন যে আকস্মিক উল্লম্ফন দ্বারা জীব সংগঠনের অগ্রগমন হয়, কিন্তু জীবের। পরিবেশ দ্বারা সৃষ্ট প্রভাব ক্রমান্বয়ী হয়। তিনি জোরের সঙ্গে মত প্রকাশ করেন যে প্রজাতিরা অপরিবর্তনীয় নয়। কিন্তু আমি বুঝতে পারি না কেমন করে অসংখ্য ও সুন্দর সহ-অভিযোজনের জন্য, যা আমরা প্রকৃতির সর্বত্র দেখি, দুটি কল্পিত ‘তাড়না’ বৈজ্ঞানিক অর্থে বিবেচিত হয়। আমি বুঝতে পারি না যে এইভাবে আমরা কোন্ জ্ঞান। লাভ করেছি, উদাহরণস্বরূপ–কেমন করে একটি কাঠঠোকরা পাখি অদ্ভুত স্বভাবে অভিযোজিত হয়েছে। শক্তিশালী ও অত্যুৎকৃষ্ট উপায়ে লেখা হলেও লেখাটি, যদিও এটির পূর্ববর্তী সংস্করণে যথাযথ জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক সতর্কতার বিরাট অভাব ছিল, তৎক্ষণাৎ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল। আমার মতে এটি আমাদের দেশে এ বিষয়ে দৃষ্টিআকর্ষণ করতে, সংস্কারমুক্ত করতে এবং সঠিক মতামত গ্রহণের জন্য পটভূমি তৈরি করতে চমৎকার কাজ করেছে।