পরিশেষে, আবার আমাদের ধন্যবাদ পুস্তকটির অনুবাদক ও প্রকাশককে।
হীরেন দাশগুপ্ত
কে. জি. দাস রোড
বারুইপুর
দঃ ২৪ পরগণা
.
পুস্তকটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে প্রজাতির উৎপত্তি সম্বন্ধীয় মতামতের অগ্রগতির একটি সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক রূপরেখা
.
আমি এখানে প্রথমেই প্রজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামতের অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেব। সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত অধিকাংশ প্রকৃতিবিজ্ঞানীর বিশ্বাস ছিল যে প্রজাতির এক অপরিবর্তনীয় উৎপাদন এবং এরা সৃষ্টি হয়েছিল পৃথক পৃথক ভাবে। অনেক প্রবক্তা এই মতকে দৃঢ়তার সঙ্গে সমর্থন করেন। অন্যদিকে কোন কোন প্রকৃতিবিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে প্রজাতিরা রূপান্তরিত হয় এবং জীবের বর্তমান আকারগুলি পূর্বে অবস্থিত আকারগুলির বংশধরদের বিশুদ্ধ উৎপাদন। এ বিষয়ে ধ্রুপদী লেখকদের কথা বাদ দিলেও, বর্তমানে যিনি প্রথম এ বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বলার চেষ্টা করেছেন তিনি হলেন বুফন(১)। কিন্তু তাঁর মতামত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছিল এবং যেহেতু তিনি প্রজাতির রূপান্তরের কারণ ও উপায়গুলি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেননি, তাই আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না।
লামার্কই হলেন প্রথম প্রকৃতিবিদ যাঁর এই বিষয়ের সিদ্ধান্তগুলি গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এই প্রখ্যাত প্রকৃতিবিজ্ঞানী ১৮০১ সালে সর্বপ্রথম তার মতামত প্রকাশ করেন এবং ১৮০৯ সালে তার ফিলসফি জুলোজিক এবং ১৮১৫ সালে হিস্ট্রি ন্যাচারালিস ডেস অ্যানিম্যাক্স স্যান্স ভার্টেব্রেস’-এর ভূমিকায় নিজের মতামত আরও স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন তিনি। মানুষ-সহ সমস্ত প্রজাতি অন্যান্য প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে এই মতবাদ তিনি তার এই সমস্ত লেখায় সমর্থন করেছিলেন। জৈব ও অজৈব জগতের সমস্ত পরিবর্তন কিছু নিয়মানুসারে হয়, কোন অলৌকিক হস্তক্ষেপ দ্বারা নয়–এই কথা বলে সকলের দৃষ্টিআকর্ষণের গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন তিনি।
প্রজাতি ও প্রকারগুলির মধ্যে পার্থক্য করতে সমর্থ হয়ে, কয়েকটি গোষ্ঠীতে আকারদের প্রায় নিখুঁত ক্রমবিন্যাস এবং গৃহপালিত উৎপাদনের সঙ্গে সাদৃশ্য লক্ষ্য করেই সম্ভবত লামার্ক প্রজাতির ক্রমিক পরিবর্তন সম্পর্কে তার সিদ্ধান্তে উপনীত হন। রূপান্তরের উপায়গুলি সম্পর্কে, জীবনের ভৌত অবস্থায় প্রত্যক্ষ ক্রিয়াকলাপে ও বর্তমান আকারগুলির মধ্যে সঙ্করণে কিছু এবং বেশির ভাগই ব্যবহার এবং অব্যবহারে অর্থাৎ অভ্যাসের প্রভাবের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রকৃতিতে সুসম অভিযোজনের জন্য তিনি শেষের মাধ্যমটির উপর সম্ভবত বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন–যেমন জিরাফের লম্বা গলার কারণ হচ্ছে উঁচু গাছের ডালপালা খেতে পারা। কিন্তু একইভাবে তিনি প্রগতিমূলক বিকাশের নিয়মেও বিশ্বাস করতেন। এবং যেহেতু বর্তমান কালের সরল উৎপাদনগুলির অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে জীবনের সমস্ত ধরণগুলি ক্রমাগত উন্নত হয়েছে, সেহেতু তিনি বলেছিলেন যে আকারগুলি বর্তমানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্ভূত হয়(২)। তাঁর পুত্রের লেখা জীবনীতে উল্লিখিত হয়েছে যে ১৭৯৫ সালের প্রায় প্রারম্ভে জিওফ্রয় সেন্ট-হিলারে মনে করতেন যে আমরা যাকে প্রজাতি বলি তা আসলে একই টাইপের বিভিন্ন অধঃপতিত রূপ। ১৮২৮ সাল অবধি তিনি তার মতামত দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেননি যে সমস্ত বস্তুর উৎপত্তির সময় থেকেই একই আকারগুলি চিরস্থায়ী হয়নি। সম্ভবত জিওফ্রয় জীবনের পরিবেশ বা ‘মনডে অ্যাম্বিয়ান্ট’-কে পরিবর্তনের কারণ বলে। মূলতঃ বিশ্বাস করতেন। কোন সিদ্ধান্তে আসার ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন তিনি এবং বিশ্বাস করতেন না যে বর্তমান প্রজাতিরা রূপান্তরিত হচ্ছে, এবং যেমন তাঁর পুত্র বলেছেন, “যে কোন প্রজাতিকে সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষণ করাটাই একটা গভীর সমস্যা, কেননা সব প্রজাতিই ভবিষ্যতে অসম্ভবরূপে পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে চলেছে। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ডঃ ডব্লিউ. সি. ওয়েলস রয়াল সোসাইটির সম্মুখে “জনৈক শ্বেতকায় মহিলার চর্মের কিছু অংশ নিগ্রোসদৃশ” নামে একটি গবেষণাপত্র পাঠ করেন;
কিন্তু ১৮১৮ সালে তাঁর “ডিউ এ্যাণ্ড সিঙ্গল ভিশন সংক্রান্ত দুটি প্রবন্ধ” প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত পূর্বের প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়নি। এই গবেষণাপত্রে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচনের নীতিকে স্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দেন, এবং এটিকে প্রথম স্বীকৃতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, কিন্তু একে তিনি কেবলমাত্র মানবজাতির ক্ষেত্রে এবং কয়েকটি চরিত্রের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন। নিগ্রো ও মূলাটোরা কয়েকটি ক্রান্তীয় রোগের সংক্রমণ থেকে মুক্ত, এ-কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমতঃ, সমস্ত প্রাণীরাই কোন-না কোন মাত্রায় পরিবর্তনপ্রবণ হয়, এবং দ্বিতীয়তঃ, কৃষিবিদরা নির্বাচন দ্বারা তাদের গৃহপালিত প্রাণীদের উন্নত করেন, সেই কাজটি প্রকৃতিতে কিছুটা মন্থরগতিতে হলেও সমান দক্ষতায় সম্পন্ন হয়েছে–হয়েছে কোন নির্দিষ্ট দেশে বসবাসের পক্ষে উপযুক্ত মনুষ্যসৃষ্টির প্রক্রিয়ায়। মানুষের আকস্মিক ভ্যারাইটিদের মধ্যে, যা আফ্রিকার মধ্যভাগে বিচ্ছিন্ন অধিবাসীদের মধ্যে প্রথমে ঘটেছে, সেইসব দেশের বিভিন্ন অসুখ সহ্য করার ব্যাপারে অন্যদের তুলনায় কোন একটি জাত অধিকতর উপযুক্ত হবে। পরিণামে সেই জাতটি সংখ্যায় বৃদ্ধি পাবে, যখন অন্যরা সংখ্যায় হাস পাবে। এই হ্রাস পাওয়ার কারণ কেবলমাত্র রোগাক্রমণ থেকে বাঁচার অক্ষমতাই নয়, সুস্থ-সবল প্রতিবেশীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম না হতে পারাও তার কারণ হিসেবে কাজ করে। ইতিমধ্যে যা বলা হয়েছে তা থেকে আমি বিনা বিচারেই স্বীকার করে নিচ্ছি যে এই সবল জাতিটির বর্ণ হবে কালো। কিন্তু ভ্যারাইটি সৃষ্টির এই প্রবণতা বিদ্যমান থাকলে কালক্রমে কৃষ্ণ থেকে কৃতর জাতির উদ্ভব ঘটবে, এবং যেহেতু কৃষ্ণতমরা আবহাওয়াটিতে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত হবে, সেহেতু সেই বিশেষ দেশটিতে তারা একমাত্র জাত না হলেও কালক্রমে সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতে পরিণত হবে। তিনি তারপর শীতল আবহাওয়ার শ্বেতকায় অধিবাসীদের ক্ষেত্রে এই একই মতামত ব্যক্ত করেছেন। মিঃ ব্রেসের মাধ্যমে ডঃ ওয়েলসের গ্রন্থের উপরিউক্ত রচনাংশটি সম্বন্ধে আমার দৃষ্টিআকর্ষণ করার জন্য আমি ইউনাইটেড স্টেট~এর মিঃ রোলের নিকট কৃতজ্ঞ।