প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে নূতন আকারের উদ্ভব ঘটানোর জন্য অনুকূল অবস্থাসমূহ
এটি একটি অত্যন্ত জটিল বিষয়। যে পদটির মধ্যে এককীয় পার্থক্য সর্বদা অন্তর্ভুক্ত হয় এমন প্রচুর পরিমাণ প্রকারণ বা বিভিন্নতা স্পষ্টতঃ অনুকূল হবে। যে কোন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাভজনক বিভিন্নতা বা পরিবৃত্তির আগমন বা আবির্ভাবের জন্য ভাল। সম্ভাবনা প্রদান করে এককদের বিরাট সংখ্যা প্রত্যেক এককের অল্পতর পরিমাণ বিভিন্নতার ক্ষতিপূরণ করবে, এবং আমি বিশ্বাস করি কৃতকার্য হওয়ার পক্ষে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যদিও প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাজের জন্য প্রকৃতি দীর্ঘ সময় দেয় না, সে অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষাও করে না। কারণ যেহেতু সমস্ত জীবকূল। প্রকৃতিমণ্ডলে নিজস্ব স্থান অধিকার করার চেষ্টা করছে, তাই কোন প্রজাতি তার প্রতিযোগীদের তুলনায় সমমাত্রায় উন্নত ও রূপান্তরিত না হলে প্রজাতিটি নিশ্চিহ্ন হবে। অনুকূল পরিবৃত্তির কয়েকটি অন্ততঃ বংশধরে যতক্ষণ না প্রেরিত হচ্ছে, ততক্ষণ প্রাকৃতিক নির্বাচন কার্যকরী হতে পারে না। পূর্বানুবৃত্তির প্রবণতা প্রায়শই নিয়ন্ত্রণ করে অথবা বাধা দেয়; কিন্তু এই প্রবণতা নির্বাচনের মাধ্যমে অসংখ্য গৃহপালিত জাত সৃষ্টি করতে মানুষকে নিবৃত্ত করেনি, কাজেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের বিরুদ্ধে কেন এটি প্রভাব বিস্তার করবে।
নিয়মানুগ নির্বাচনের ক্ষেত্রে, একজন প্রজননকারী কিছু বিশেষ উদ্দেশ্যে নির্বাচন করে, এবং এককদের অবাধে আন্তঃসঙ্করণের সুযোগ দেওয়া হলে তার কাজ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবে। কিন্তু যখন জাতটিকে পরিবর্তনের উদ্দেশ্য ছাড়া অনেক মানুষের উৎকর্ষতার প্রায় একটি সাধারণ মান থাকে, সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণীদের সংগ্রহ ও প্রজনন করতে সকলে চেষ্টা করে, তখন নির্বাচিত এককদের বিচ্ছিন্নতা না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনের এই অচেতন প্রক্রিয়া থেকে নিশ্চিতভাবে ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটে। এভাবে এটি প্রকৃতির মধ্যেও ঘটে, কারণ প্রকৃতির রাজ্যে সম্পূর্ণভাবে অনধিকৃত কোন স্থান সমেত একটি সীমাবদ্ধ অঞ্চলে, সঠিক দিকে, যদিও বিভিন্ন মাত্রায়, পরিবর্তনশীল সমস্ত একক সংরক্ষিত হতে চেষ্টা করবে। কিন্তু অঞ্চলটি বিরাট হলে তার কয়েকটি জেলায় জীবন-পরিবেশ নিশ্চয় ভিন্ন হবে, এবং তখন একই প্রজাতি যদি ভিন্ন জেলায় রূপান্তরিত হয়, তাহলে নূতন সৃষ্ট ভ্যারাইটিরা নিজস্ব সীমার মধ্যে আন্তঃসংকরিত হবে। কিন্তু ষষ্ঠ অধ্যায়ে আমরা দেখব যে মধ্যবর্তী জেলাগুলিতে বসবাসকারী মধ্যবর্তী ভ্যারাইটিরা পার্শ্ববর্তী ভ্যারাইটিদের একটি দ্বারা অবশেষে স্থানচ্যুত হবে। অন্তঃসঙ্করণ মূলতঃ সেই সব প্রাণীদের প্রভাবিত করবে যারা প্রত্যেকটি জন্মের জন্য মিলিত হয়, অতিশয় ঘুরে বেড়ায় এবং অত্যধিক দ্রুতহারে প্রজনন করে না। অতএব এই প্রকৃতির প্রাণীদের যথা পাখিদের ক্ষেত্রে, ভ্যারাইটিরা ভিন্ন ভিন্ন দেশে সীমাবদ্ধ থাকবে; এবং এটিই হয় বলে আমি লক্ষ্য করেছি। উভলিঙ্গী প্রাণীদের ক্ষেত্রে যারা মাঝেমধ্যে সংকরিত হয় এবং এভাবে প্রাণীদের ক্ষেত্রে যারা প্রত্যেকটি জন্মের জন্য মিলিত হয়, যারা অল্প ঘুরে বেড়ায় এবং দ্রুতহারে বৃদ্ধি পেতে পারে, সেসব ক্ষেত্রে একটি নূতন ও উন্নত ভ্যারাইটি যে কোন স্থানে দ্রুত সৃষ্টি হয়ে থাকবে, সেখানে একত্রে লালিতপালিত হয়ে থাকবে এবং পরবর্তী সময়ে বিস্তৃত হয়ে থাকবে, ফলে নূতন ভ্যারাইটির এককরা মূলতঃ সংকরিত হবে। এই পদ্ধতি অনুসারে বাগানমালীরা বিরাট সংখ্যক উদ্ভিদ থেকে বীজ সংরক্ষণ পছন্দ করে, কেননা এতে আন্তঃসঙ্করণের সম্ভাবনা এভাবে হ্রাস পায়।
এমনকি প্রাণীদের ক্ষেত্রে যারা প্রত্যেকটি জন্মের জন্য মিলিত হয় ও দ্রুতহারে বংশবৃদ্ধি করে না, তাদের ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চয় মেনে নেব না যে অবাধ আন্তঃসঙ্করণ প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রভাবকে সর্বদা অপসারিত করবে; কারণ অসংখ্য তথ্য দ্বারা আমি দেখাতে পারি যে একই অঞ্চলে একই প্রাণীর দুটি ভ্যারাইটি বিভিন্ন স্থানে বারংবার। যাতায়াত করে, অল্প ভিন্ন মরশুমে বংশবৃদ্ধি করে, অথবা প্রত্যেক ভ্যারাইটির এককদের একত্রে মিলিত হওয়ার প্রবণতা থেকেও, দীর্ঘদিন গুণগতভাবে ভিন্ন থাকতে পারে।
প্রকৃতিতে একই প্রজাতি বা একই ভ্যারাইটির এককদের বৈশিষ্ট্যে বিশুদ্ধ ও একইরূপে রাখতে আন্তঃসঙ্করণ অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একবার জন্মদানের জন্য মিলিত হয় এমন সব প্রাণীদের ক্ষেত্রে এটি এভাবে স্পষ্টতঃ আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে। কিন্তু আমরা আগেই বলেছি, আমাদের বিশ্বাস করার যুক্তি আছে যে সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে আন্তঃসংকরণ ঘটে থাকে। এমন কি যদি এগুলি কেবল দীর্ঘ সময় অন্তর অন্তর ঘটে থাকে, তাহলে এভাবে উৎপন্ন তরুণটি দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকা স্ব-নিষেকের ফলে উৎপন্ন বংশধরের তুলনায় এত জীবনীশক্তি ও উর্বরতা লাভ করবে যে বাঁচার ও নিজের মত বংশবৃদ্ধির ভাল সম্ভাবনা তার থাকবে এবং এভাবে অবশেষে তার পরিণামে সংকরণগুলির প্রভাব বিরাট হবে, এমনকি বিরল বিরতির পরেও। যারা যৌন দিক থেকে বংশবৃদ্ধি করে না অথবা যাদের যুগ্ম প্রজনন হয় না এবং যারা সম্ভবতঃ আন্তঃসংকরিত হতে পারে না, এমন সব নিম্নস্তরের জীবদের ক্ষেত্রে, কেবল বংশগতির নিয়মের মাধ্যমে এবং প্রকৃত রূপ থেকে বিচ্যুত যে কোন এককদের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে একই জীবন-পরিবেশে বৈশিষ্ট্যের সমরূপতা বজায় রাখতে পারে। যদি জীবন-পরিবেশ পরিবর্তিত হয় এবং আকারটি রূপান্তরিত হয়, তাহলে সদৃশ অনুকূল পরিবৃত্তিগুলিকে সংরক্ষণ করে শুধুই প্রাকৃতিক নির্বাচনের দ্বারা বৈশিষ্ট্যের সমরূপতা রূপান্তরিত বংশধরে প্রেরিত হতে পারে।