বাঁধাকপি, মূলো, পিঁয়াজ ও অন্যান্য উদ্ভিদের কয়েকটি ভ্যারাইটিকে যদি পরস্পরের অতি নিকটে বীজ উৎপাদন করতে দেওয়া হয়, তাহলে আমার দেখা এভাবে উৎপন্ন চারাগাছগুলি সকলেই বর্ণসংকর হয়। পরস্পরের নিকটে জন্মানো বিভিন্ন ভ্যারাইটিদের কয়েকটি গাছের ২৩৩টি চারা বাঁধাকপি গাছ তুলেছিলাম আমি এবং লক্ষ্য করেছিলাম, এদের মধ্যে কেবলমাত্র ৭৮টি আসল বা প্রকৃতই ছিল, এবং এমনকি এদের কয়েকটি নিখুঁতভাবে আসল ছিল না। তথাপি প্রত্যেক বাঁধাকপির ফুলের গর্ভকেশরটি শুধু তার নিজস্ব ছয়টি পুংকেশর দ্বারাই পরিবেষ্টিত নয়, বরং একই গাছের অন্য অনেক ফুলের পুংকেশর দ্বারাও পরিবেষ্টিত; এবং কীটপতঙ্গদের সাহায্য ছাড়াই প্রত্যেক ফুলের পরাগ তার নিজস্ব গর্ভমুণ্ডে সহজেই যায়, কারণ যত্নসহকারে পতঙ্গদের হাত থেকে সুরক্ষিত উদ্ভিদরা যে অসংখ্য শুটি উৎপাদন করে তা আমি লক্ষ্য করেছি। তা হলে অসংখ্য চারাগাছ বর্ণসংকর সদৃশ হয় কী করে? এর অর্থ এই যে ফুলের নিজস্ব পরাগের ওপর একটি ভিন্ন ভ্যারাইটির পরাগের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে, এবং একই প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন এককদের আন্তঃসঙ্করণের মাধ্যমে ভাল জীব উৎপন্ন হয়–এই সাধারণ নিয়মের একটি অংশ এটি। ভিন্ন প্রজাতিরা সংকরিত হলে ফলটি উল্টো হয়, কারণ একটি গাছের নিজস্ব পরাগ বহিরাগত পরাগের চেয়ে প্রায় সর্বদাই শক্তিশালী হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী একটি অধ্যায়ে আলোচনা করব আমি।
অসংখ্য ফুল সম্বলিত একটি বিরাট বৃক্ষের ক্ষেত্রে আপত্তি করে বলা যেতে পারে যে বৃক্ষ থেকে কদাচিৎ পরাগ বাহিত হয়, এবং অন্ততপক্ষে একই বৃক্ষের ফুল থেকে ফুলে এটি ঘটতে পারে। এবং কেবল সীমাবদ্ধ অর্থে একই বৃক্ষের ফুলগুলি ভিন্ন ভিন্ন একক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই আপত্তিটি সঠিক বলেই বিশ্বাস করি আমি, কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রকৃতি পৃথক লিঙ্গ সমেত অসংখ্য ফুল উৎপাদন করতে বৃক্ষকে প্রবল প্রবণতা প্রদান করে। লিঙ্গগুলি যখন পৃথক হয়, যদিও পুং অথবা স্ত্রীফুল একই বৃক্ষে উৎপন্ন হতে পারে, পরাগ নিশ্চয়ই ফুল থেকে ফুলে নিয়মিতভাবে বাহিত হবে এবং গাছ থেকে গাছে মাঝেমাঝে পরাগ বহনের ভাল সম্ভাবনা প্রদান করবে। এই দেশে আমি দেখেছি যে সমস্ত বর্গের অন্তর্ভুক্ত বৃক্ষদের লিঙ্গগুলি অন্য উদ্ভিদের তুলনায় প্রায়শই ভিন্ন হয়। আমার অনুরোধে ডঃ হুঁকার নিউজিল্যান্ডের এবং ডঃ আসা গ্রে ইউনাইটেড স্টেট্রক্স এর বৃক্ষদের তালিকা তৈরি করেছিলেন, এবং আমি যেভাবে আশা করেছিলাম এটি তারই ফলশ্রুতি। বিপরীতক্রমে, ডঃ হুঁকার আমাকে জানান যে নিয়মটি অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে খাটে না, তবে অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত বৃক্ষগুলি অসমপরিণত হলে একই ফল হবে, যেন এরা পৃথকীকৃত লিঙ্গ সুমেত ফুল উৎপাদন করে। এ বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য বৃক্ষদের সম্বন্ধে কেবল কয়েকটি কথা বলেছি আমি।
প্রাণীদের দিকে সংক্ষেপে দৃষ্টি দেওয়া যাক। বিভিন্ন স্থলচর প্রজাতির উভলিঙ্গের হয়, যেমন স্থলচর শম্বুক বা কম্বোজজাতীয় প্রাণী ও কেঁচো; কিন্তু এরা সকলে যুগলে মিলিত হয়। আমি এখনও পর্যন্ত একটিও স্থলচর প্রাণী দেখিনি যে নিজেই নিষিক্ত হয়। এই উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি স্থলচর উদ্ভিদদের তুলনায় প্রবল বৈসাদৃশ্য প্রদান করে। একটি আকস্মিক মিলন অপরিহার্য, এই মত স্বীকার করলে এটি বোধগম্য হয়। কারণ গর্ভনিষেক উপাদানের স্বভাবের জন্য প্রত্যঙ্গদের ক্রিয়া প্রক্রিয়া ও উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে বায়ুসদৃশ কোন উপায় নেই যার দ্বারা দুটি এককের মিলন ব্যতিরেকে ভূচর প্রাণীদের একটি আকস্মিক সংকরণ ঘটানো যেতে পারে। জলচর প্রাণীদের মধ্যে অসংখ্য স্ব নিষেককারী উভলিঙ্গী আছে, কিন্তু এখানে আকস্মিক মিলন ঘটাতে জলপ্রবাহ নিশ্চয় একটি বিশেষ উপায়। ফুলের বিষয়ের মত, সর্বোচ্চ বিশেষজ্ঞদের অন্যতম একজন প্রফেসর হাক্সলের সঙ্গে আলোচনার পর, আমি এখনও পর্যন্ত একটিও উভলিঙ্গী প্রাণী আবিস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছি, তাদের জনন-অঙ্গগুলি এমন নিখুঁতভাবে পরিবেষ্টিত যে শূন্য থেকে প্রবেশ এবং একটি ভিন্ন এককের আকস্মিক প্রভাব বাস্তবিকপক্ষে দেখানো অসম্ভব। এই মতের পক্ষে সিরিপেডদের ঘটনা দেখানো অতিশয় কষ্টকর বলে আমার দীর্ঘদিন মনে হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমি প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছি যে দুটি একক কোন কোন সময় গর্ভধারণের জন্য মিলিত হয়, যদিও উভয়েই স্ব-নিষেককারী উভলিঙ্গী।
এই অদ্ভুত ব্যতিক্রম নিশ্চয় অধিকাংশ প্রকৃতিবিদদের বিমুগ্ধ করে যে উদ্ভিদ ও প্রাণীর উভয় ক্ষেত্রে সামগ্রিক জৈব সংগঠনে পরস্পরের সঙ্গে অধিকভাবে সদৃশ একই গোত্রের ও এমনকি একই গণের কিছু প্রজাতি উভলিঙ্গী ও কিছু একলিঙ্গী হলেও প্রকৃতপক্ষে সমস্ত উভলিঙ্গীরা মাঝেমধ্যে আন্তঃসঙ্করিত হয়। কার্যকলাপের ক্ষেত্রে যতদূর বিবেচনা করা যায়, এদের ও উভলিঙ্গী প্রজাতিদের মধ্যে পার্থক্য অতি অল্প।
এইসব বিচার-বিশ্লেষণ ও আমার সংগৃহীত অসংখ্য বিশেষ তথ্য (যা আমি এখানে। উপস্থিত করতে পারছি না) থেকে মনে হয় যে প্রাণী ও উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন এককদের মধ্যে একটি সময়োচিত আন্তঃসঙ্করণ প্রকৃতির একটি অতি সাধারণ নিয়ম, যদি সার্বজনীন না-ও হয়।