প্রথমেই বলে রাখি, আমি এত বিপুল সংখ্যক তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং এত সংখ্যক। পরীক্ষা করেছি যা প্রজননকারীদের প্রায় সার্বজনীন বিশ্বাস অনুসারে দেখায় যে প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষেত্রে, ভিন্ন ভিন্ন ভ্যারাইটির অথবা একই ভ্যারাইটির কিন্তু অন্য জাতের। এককদের মধ্যে একটি সঙ্করণ তাদের বংশধরকে সবলতা ও উর্বরতা প্রদান করে; এবং বিপরীতক্রমে নিকট আন্তঃপ্রজনন সবলতা ও উর্বরতা হ্রাস করে; এসব তথ্য থেকে। মনে হয় এটি প্রকৃতির একটি সাধারণ নিয়ম যে কোন জীব বংশবিস্তারের জন্য নিজেই নিষিক্ত হয় না; কিন্তু অন্য এককের সঙ্গে একবার সঙ্করণ, সম্ভবতঃ বিরাট সময়ের ব্যবধানে, সাধারণভাবে অপরিহার্য।
এটিকে প্রকৃতির একটি নিয়ম বলে ধরে নিলে নিচে বর্ণিত কয়েকটির মত অসংখ্য তথ্যকে বুঝতে পারি আমরা, যা অন্য কোন মতের দ্বারা ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। প্রত্যেক সংকরায়ণকারী জানে একটি ফুলের নিষেকের পক্ষে আর্দ্রতা কত প্রতিকূল হয়, তা সত্ত্বেও অসংখ্য ফুলের পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ড আবহাওয়ায় সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত থাকে। প্রয়োজনভিত্তিক সংকরণ অপরিহার্য হলেও উদ্ভিদের নিজস্ব পরাগধানী ও গর্ভকেশর স্ব নিষেক সুনিশ্চিত করার জন্য পরস্পরের এত কাছে অবস্থিত যে অন্য একক থেকে পরাগরেণু প্রবেশের পূর্ণ স্বাধীনতা অঙ্গদের উন্মুক্ততার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে। বিপরীতক্রমে, অনেক ফুলে নিষেকের অঙ্গগুলি গুপ্তভাবে পরিবেষ্টিত থাকে, যেমন দেখা যায় প্যাপিলিয়োনেসি বা মটর গোত্রে; কিন্তু পতঙ্গদের পরিদর্শনের জন্য এদের সুন্দর ও অদ্ভুত অভিযোজন প্রায় অপরিবর্তনীয়ভাবেই উপস্থিত থাকে। অনেক প্যাপিলিয়োন্যাসিয়াস ফুলে মৌমাছিদের ভ্রমণ এত প্রয়োজন যে এদের আগমন যদি বাধাপ্রাপ্ত হলে এই ফুলেদের উর্বরতা ভীষণভাবে হ্রাস পায়। এখন উদ্ভিদটির মঙ্গলের জন্য পতঙ্গদের ফুল থেকে ফুলে উড়ে আসা এবং একটি থেকে অন্যটিতে পরাগরেণু বহন না করা মোটেই সম্ভবপর নয়। পতঙ্গরা একটি ক্যামেল হেয়ার পেন্সিলের মত কাজ করে এবং নিষেক নিশ্চিত করার জন্য একটি ফুলের পরাগধানী ও তার পর অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ড একই ব্রাস দ্বারা ঠিকভাবে স্পর্শ করাই যথেষ্ট; কিন্তু এটা মনে করা উচিত নয় যে মৌমাছিরা এভাবে ভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য সংকর সৃষ্টি করবে। গার্টনার দেখিয়েছেন যে যদি একটি উদ্ভিদের নিজস্ব পরাগরেণু এবং অন্য প্রজাতির পরাগরেণু একই গর্ভমুণ্ডে স্থাপন করা হয়, তাহলে পূর্বেরটি এত শক্তিশালী হবে যে এটি অনিবার্যভাবে ও সম্পূর্ণভাবে বহিরাগত পরাগরেণুর প্রভাবকে ধ্বংস করবে।
একটি ফুলের পুংকেশররা যখন গর্ভকেশরের দিকে হঠাৎ আবির্ভূত হয়, বা ধীরে ধীরে একের পর এক তার দিকে অগ্রসর হয়, তখনই মনে হয় যে কেবলমাত্র স্ব-নিষেক নিশ্চিত করার জন্যই কৌশলটি অভিযোজিত হয়েছে; এবং নিঃসন্দেহেই এটি এই উদ্দেশ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। যেমন বারবেরির ক্ষেত্রে কোয়েলরয়টার দেখিয়েছেন যে পুংকেশরদের সামনের দিকে আবির্ভাব ঘটাতে পতঙ্গদের সাহায্য প্রায়শই প্রয়োজন হয়, স্ব-নিষেকের জন্য বিশেষ কৌশলবিশিষ্ট এই গণটির ক্ষেত্রে এটি সুপরিচিত যে, নিকট সম্পর্কীয় আকার ও ভ্যারাইটিদের পরস্পরের নিকটে বসানো হলে বিশুদ্ধ চারাগাছ জন্মানো কদাচিৎ সম্ভবপর হয়, স্বাভাবিকভাবে সংকরায়নের ফলে যা বিরাটভাবে ঘটে। অন্যান্য অসংখ্য ক্ষেত্রে, স্পেনজেল ও অন্যদের গবেষণামূলক কাজ থেকে এবং আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে আমি দেখাতে পারতাম যে স্ব-নিষেককে উৎসাহ দেওয়ার পরিবর্তে এমন অসংখ্য কৌশল থাকে যা নিজের ফুলের পরাগরেণু পেতে গর্ভমুণ্ডকে কার্যকরভাবে বাধা দেয়। যেমন, লোবেলিয়া ফুলজেন্স-এ প্রকৃতই সুন্দর ও বিশদ কলাকৌশল থাকে যার দ্বারা এটি নিজস্ব ফুলের গর্ভমুণ্ড পাওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়ার পূর্বে অসংখ্য পরাগরেণু প্রত্যেক ফুলের সংযুক্ত পরাগধানী থেকে দ্রুতবেগে ধাবিত হয়; এবং যেহেতু এই ফুলে পতঙ্গরা কখনই আসে না, অন্ততঃ আমার বাগানে, তাই এরা কখনই বীজ উৎপাদন করে না, যদিও এক ফুলের পরাগ অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে ছড়িয়ে অংসখ্য চারাগাছের জন্ম দিয়েছি আমি। লোবেলিয়ার অন্য একটি প্রজাতি আমার বাগানে অবাধে বীজ উৎপাদন করে, যাতে আবার মৌমাছিরাও আসে। আরও অনেক ক্ষেত্রে, যদিও একই ফুল থেকে পরাগ গ্রহণের জন্য গর্ভমুণ্ডকে বাধা দেওয়ার কোন বিশেষ কলাকৌশল নেই, তথাপি স্প্রেনজেল এবং আরও সম্প্রতি হিলডেব্র্যান্ড ও অন্যরা দেখিয়েছেন, যা আমি সত্য বলে স্বীকার করি, যে হয় নিষেকের জন্য গর্ভমুণ্ড প্রস্তুত হওয়ার আগেই পরাগধানী বিস্ফোরিত হয়, নয়তো ঐ ফুলের পরাগ প্রস্তুত হওয়ার আগেই গর্ভমুণ্ড প্রস্তুত হয়, সেই জন্যই অসম বা বিষম পরিণত উদ্ভিদ নামে খ্যাত এইসব উদ্ভিদে পৃথক লিঙ্গ থাকে এবং এরা স্বাভাবিকভাবে সংকরিত হয়। পূর্বে উল্লিখিত পারস্পরিক দ্বিরূপক ও ত্রিরূপক উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও এরূপ হয়। এইসব তথ্য কতই না বিচিত্র! কত অদ্ভুত যে স্ব-নিষেকের জন্য অতি নিকটে অবস্থিত একই ফুলের পরাগ, গর্ভমুণ্ডের পৃষ্ঠদেশ অনেক ক্ষেত্রে পরস্পরের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়। একটি ভিন্ন এককের সঙ্গে আকস্মিক সংকরণ সুবিধাজনক ও অপরিহার্য, এই মত সম্বন্ধে এইসব তথ্য কত সরলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।