তবে এটি উপেক্ষা করা ঠিক হবে না যে একই রকম জৈব সংগঠনের ওপর একইভাবে কাজ করার জন্য কোন কোন স্পষ্টচিহ্নিত পরিবৃত্তি, যাদের কেউ কেবলমাত্র এককীয় পার্থক্য হিসাবে গণ্য করবে না, প্রায়শই পুনঃ পুনঃ ঘটতে থাকবে–আমাদের গৃহপালিত উৎপাদনগুলির ক্ষেত্রে যাদের অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল এককটি যদি তার বংশধরে নূতনভাবে অর্জিত বৈশিষ্ট্যটি প্রকৃতই বংশগতভাবে প্রেরণ না করত, যতদিন বিদ্যমান জীবন-পরিবেশ একইরূপ থাকে, সন্দেহাতীতভাবে এটি একইভাবে পরিবর্তিত হওয়ার আরও প্রবলতর প্রবণতা বংশগতভাবে প্রেরণ করবে। এখানেও অল্প সন্দেহ থাকতে পারে যে একই উপায়ে পরিবর্তিত হওয়ার প্রবণতা প্রায়শই এত প্রবল হয় যে একই প্রজাতির সকল একক কোন প্রকার নির্বাচনের সাহায্য ছাড়াই একইভাবে রূপান্তরিত হয়। অথবা এককদের কেবল তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম বা দশম অংশ এভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকবে, যার কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। গ্র্যাবা হিসেব করে দেখিয়েছেন যে ফারো দ্বীপপুঞ্জের গিলমট পাখিদের প্রায় এক পঞ্চমাংশই হচ্ছে একটি এত স্পষ্টচিহ্নিত ভ্যারাইটি যে পূর্বে এটিকে ইউরিয়া ল্যাক্রিম্যান্স নামে একটি ভিন্ন প্রজাতি হিসাবে গণ্য করা হত। এসব ক্ষেত্রে, পরিবৃত্তিটি যদি উপকারী প্রকৃতির হয়, প্রাথমিক আকারটি যোগ্যতমের উদ্বর্তনের মাধ্যমে শীঘ্রই রূপান্তরিত আকারটির দ্বারা স্থানচ্যুত হবে।
সমস্ত প্রকার পরিবৃত্তি অপসারণ করতে এই অর্থে আন্তঃসঙ্করণ সম্পর্কে আমার আরও কিছু বলা উচিত। কিন্তু এখানে বলা যেতে পারে যে অধিকাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদরা। তাদের উপযুক্ত বাসস্থানে বসবাস করে এবং তারা অপ্রয়োজনীয়ভাবে ঘুরে বেড়ায় না; এমনকি যাযাবর পাখিদের ক্ষেত্রেও আমরা লক্ষ্য করি যে এরা প্রায় সর্বদাই পূর্ব বাসস্থানে ফিরে আসে। ফলস্বরূপ নূতন সৃষ্ট প্রত্যেকটি ভ্যারাইটি সাধারণতঃ প্রথমে স্থানীয় হবে, যাকে প্রাকৃতিক অবস্থায় ভ্যারাইটিদের ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম বলে মনে হয়। অতএব একইরূপে রূপান্তরিত এককরা শীঘ্রই ছোট ছোট দলবদ্ধভাবে একত্রে অবস্থান করবে, প্রায়শই একত্রে সন্তান উৎপাদন করবে। নূতন প্রকারটি যদি জীবনসংগ্রামে কৃতকার্য হত, তাহলে একটি ক্রমাগত বৃদ্ধিশীল চক্রের কিনারায় অবস্থিত অপরিবর্তিত এককদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং জয় করে এটি একটি কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করত।
প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্য আরও জটিল একটি উদাহরণ দেওয়া সময়োপযোগী হতে পারে। আপাত দৃষ্টিতে প্রাণরস থেকে ক্ষতিকর কোন কিছু অপসারণের জন্য কোন কোন উদ্ভিদ মিষ্টরস নিঃসরণ করে; কোন কোন শুটি জাতীয় উদ্ভিদের উপপত্রের গোড়ায় ও সাধারণ লরেল জাতীয় উদ্ভিদের পাতার পৃষ্ঠদেশে এই ধরনের নিঃসরণ গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড থাকে। পরিমাণে অতি অল্প হলেও এই রস পতঙ্গদের নিকট অতি লোভনীয়; কিন্তু এদের পরিদর্শন উদ্ভিদের কোন উপকারে আসে না। এখন মনে করা যাক যে রস বা মধু যে কোন প্রজাতির কিছু সংখ্যক উদ্ভিদের ফুলের অভ্যন্তর থেকে নিঃসৃত হয়েছিল। মধুর খোঁজে এসে কীটপতঙ্গরা পরাগরেণু দ্বারা আবিষ্ট হবে এবং প্রায়শই একটি ফুল থেকে অন্য ফুলে বহন করবে। একই প্রজতির দুটি ভিন্ন এককের ফুলগুলি এভাবে সঙ্করিত হবে; এবং সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ করা যেতে পারে যে সঙ্করণ প্রক্রিয়া সবল চারাগাছের জন্ম দেয়, ফলস্বরূপ এদের প্রচুর পরিমাণে জন্মানোর ও বেঁচে থাকার উত্তম সম্ভাবনা থাকবে। বৃহত্তম নিঃসারক গ্রন্থি ও মধুগ্রন্থি সমেত ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদগুলিতে প্রায়শই কীটপতঙ্গরা আসবে এবং প্রায়শই সঙ্করিত হবে; এবং এভাবে পরিণামে কর্তৃত্ব লাভ করবে ও একটি স্থানীয় ভ্যারাইটি সৃষ্টি করবে। পরাগরেণুর পরিবহনের জন্য কিছু সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিশেষ পতঙ্গটির আকার ও স্বভাব সম্পর্কে পুংকেশর ও গর্ভকেশরের বিশেষ অবস্থান সম্বলিত ফুলগুলি পতঙ্গদের বিষয়টি আমাদের গ্রহণ করা উচিত ছিল। কেবলমাত্র নিষেকের জন্য পরাগরেণু সৃষ্ট হয় বলে এর বিনাশ সম্ভবতঃ উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর; তথাপি যদি পরাগরেণু ভক্ষণকারী পতঙ্গদের দ্বারা প্রথমে আকস্মিকভাবে ও তারপর স্বভাবগতভাবে ফুল থেকে ফুলে অল্প বাহিত হত ও এভাবে সঙ্করিত হত, যদিও পরাগরেণুর দশভাগের নয়ভাগ নষ্ট হয়ে থাকে, উদ্ভিদটির পক্ষে এটি বিরাট লাভ হয়ে থাকবে; এবং বেশি বেশি করে পরাগরেণু উৎপাদনকারী ও বড় পরাগধানী সম্বলিত এককরা নির্বাচিত হবে।
উপরোক্ত প্রক্রিয়া চলার পর, যখন আমাদের উদ্ভিদটি পতঙ্গদের কাছে আকর্ষণীয় হয়, তখন এরা অনিচ্ছাকৃতভাবে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে নিয়মিতভাবে. পরাগরেণু বহন করে এবং এরা এটি সার্থকভাবে করে। উল্লেখযোগ্য তথ্যের সাহায্যে বিষয়টি আমি। সহজেই দেখতে পারতাম। আমি কেবল একটি উদাহরণ দেব, যা এভাবে উদ্ভিদের লিঙ্গগুলির পৃথকীকরণের একটি ধাপকে ব্যাখ্যা করে। হোলি নামে এক প্রকার চিরসবুজ গুল্মে কেবল পুং-ফুল হয়, যাদের অল্প পরিমাণ পরাগরেণু উৎপাদনকারী চারটি পুংকেশর থাকে ও একটি অবর্ধিত গর্ভকেশরও থাকে; অন্য হোলি গুল্মে কেবল স্ত্রীফুল হয়; এদের পূর্ণ আকারের গর্ভকেশর ও কুঞ্চিত পরাগধানী সমেত চারটি পুংকেশর থাকে, যাতে পরাগরেণুর একটিও রেণু খুঁজে বার করা যায় না। একটি পুরুষ গাছের ঠিক ষাট গজ দূরে একটি স্ত্রী গাছ দেখে তার বিভিন্ন শাখা থেকে কুড়িটি ফুল সংগ্রহ করেছিলাম আমি ও এদের গর্ভমুণ্ডগুলি অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করে দেখেছিলাম যে ব্যতিক্রমহীনভাবে সবগুলিতেই অল্প কয়েকটি পরাগরেণু এবং অন্য কয়েকটিতে প্রচুর পরাগরেণু ছিল। কয়েকদিন ধরে স্ত্রী গাছের দিক থেকে পুরুষ গাছের দিকে বায়ুর প্রবাহ। থাকা সত্ত্বেও পরাগরেণু বাহিত হয়নি। আবহাওয়া খুব ঠাণ্ডা ও প্রচণ্ড ছিল, অতএব মৌমাছিদের পক্ষে এটি সুবিধাজনক ছিল না, তা সত্ত্বেও আমার পরীক্ষিত প্রত্যেক স্ত্রীফুল মৌমাছিদের দ্বারা কার্যকরভাবে নিষিক্ত হয়েছিল, যারা মধুর খোঁজে এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে বেড়াত। বরং আমাদের কল্পিত বিষয়ে ফিরে আসা যাক: নিয়মিতভাবে পরাগরেণু এক ফুল থেকে অন্য ফুলে বহনের জন্য যে মুহূর্তে উদ্ভিদটি পতঙ্গদের নিকট এত আকর্ষণীয় হয়েছিল যাতে করে অন্য একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকবে। কোন প্রকৃতিবিজ্ঞানী সুবিধাটি সম্পর্কে সন্দেহ করে না যাকে “শ্রমের শারীরবৃত্তিয় বিভাজন” বলা হয়েছে; সুতরাং আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে একটি উদ্ভিদের পক্ষে এটি সুবিধাজনক হবে এবং অন্য ফুলে অথবা অন্য গাছে কেবলমাত্র গর্ভকেশরগুলির উদ্ভব ঘটাতে সুবিধাজনক হবে। চাষের জন্য ব্যবহৃত ও নূতন পরিবেশে স্থাপিত উদ্ভিদগুলিতে, কোন কোন সময় পুরুষ ও কোন কোন সময় স্ত্রী অঙ্গগুলি কম অথবা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়; এখন যদি আমরা মনে করি প্রাকৃতিক অবস্থায় এটি অল্পমাত্রায় হলেও ঘটে, এর পর যেহেতু আমাদের উদ্ভিদের লিঙ্গগুলির আরও সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ শ্রমের বিভাজনের নীতি অনুসারে সুবিধাজনক হবে, আরও বেশি বেশি করে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এই প্রবণতা সমেত এককরা অনবরত মনোনীত ও নির্বাচিত হবে, যতক্ষণ না লিঙ্গদের সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ কার্যকরী হয়ে থাকবে। দ্বিরূপতা ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমের বিভিন্ন ধাপগুলি দেখাতে অনেক জায়গা লাগবে, যার দ্বারা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদে লিঙ্গগুলির পৃথকীকরণ আপাতত এখন ঘটে চলেছে। কিন্তু এখানে আমি বলতে পারি যে আশা গ্রে-র মতে দক্ষিণ আমেরিকার হোলি উদ্ভিদের কয়েকটি প্রজাতি ঠিক মধ্যবর্তী অবস্থার হয়, যাকে তিনি ভিন্নবাসী-মিশ্রবাসী উদ্ভিদ আখ্যা দিয়েছেন।