পিতামাতা সম্পর্কে প্রাকৃতিক নির্বাচন তরুণদের গঠন রূপান্তরিত করবে এবং তরুণদের সম্পর্কে পিতামাতাদেরও। সামাজিক প্রাণীদের ক্ষেত্রে, যদি নির্বাচিত পরিবর্তনটির দ্বারা সম্প্রদায় লাভবান হয়, প্রাকৃতিক নির্বাচন সমগ্র সম্প্রদায়ের উপকারের জন্য প্রত্যেক এককের গঠনকে অভিযোজিত করবে। প্রাকৃতিক নির্বাচন যা করতে পারে না তা হচ্ছে অন্য প্রজাতির ভালর জন্য কোন সুবিধা প্রদান না করে একটি প্রজাতির গঠনকে রূপান্তরিত করা। প্রাকৃতিক ইতিহাসের গবেষণায় এই সংক্রান্ত বক্তব্য দেখা যেতে পারে, আমি একটিও উদাহরণ দেখতে পাইনি যা পরীক্ষার যোগ্য। একটি প্রাণীর জীবনে কেবল একবার ব্যবহৃত একটি গঠন যদি তার পক্ষে অতিশয় প্রয়োজনীয় হয়, তাহলে গঠনটি প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা যে কোন পর্যায় পর্যন্ত রূপান্তরিত হয়ে থাকবে; উদাহরণস্বরূপ, কোন কোন পতঙ্গের বিরাট চোয়াল গুটি খুলতে কেবল ব্যবহৃত হয় অথবা পাখিদের ঠোঁটের শক্ত অগ্রভাগ ডিম ভাঙ্গতে ব্যবহৃত হয়। জোরের সঙ্গে বলা হয় যে ডিম ফুটে বেরোনোর পূর্বেই সর্বোত্তম অসংখ্য হ্রসচক্ষুবিশিষ্ট লোটন পায়রা ডিমেই নষ্ট হয়; সেইজন্য পাখিরসিক বা প্রেমিকরা ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করতে সাহায্য করে। এখন যদি প্রকৃতি পাখির সুবিধার জন্য পূর্ণবয়স্ক পায়রার ঠোঁট অতিশয় ছোট করত, তাহলে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি অতিশয় মন্থর হবে এবং ডিমের মধ্যে অতিশয় শক্তিশালী ও খুব শক্ত ঠোঁটওয়ালা সমস্ত তরুণ পাখিদের যুগপৎ কঠোর নির্বাচন হবে, ফলে দুর্বল ঠোঁটওয়ালারা সকলে অনিবার্যভাবে ধ্বংস হবে; অথবা আরও নরম ও সহজেই ভাঙ্গা যায় এমন খোলকরা নির্বাচিত হয়ে থাকবে–জানা গেছে যে খোলকের পুরুত্ব অন্য প্রত্যেক গঠনের মতোই পরিবর্তিত হয়।
এখানে বলে নেওয়া ভাল যে আকস্মিকভাবে সমস্ত জীবের ব্যাপক বিনাশ হতে পারে, যা প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অল্প প্রভাব ফেলে অথবা আদৌ কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, অসংখ্য ডিম ও বীজ প্রতিবছর খেয়ে ফেলা হয়, যেগুলি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে রূপান্তরিত হতে পারত একমাত্র তখনই যখন এরা এমনভাবে পরিবর্তিত হত যাতে করে শত্রুদের হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। তবুও যারা বেঁচে আছে তাদের যে কোনটির তুলনায়, ধ্বংস না হলে, এইসব ডিম ও বীজদের অনেকেই জীবন-পরিবেশে ভালভাবে অভিযোজিত, এককদের বোধহয় উৎপাদন করে থাকবে। এভাবে জীবন-পরিবেশে খুব ভালভাবে অভিযোজিত হোক আর না-ই হোক, বিরাট সংখ্যক প্রাণী ও উদ্ভিদ আকস্মিক কারণের জন্য প্রতিবছর নিশ্চয় ধ্বংস হবে, প্রজাতির পক্ষে উপকারী হবে এমন দেহকাঠামো ও জৈবসংগঠনে কোন পরিবর্তনের মাধ্যমে এদের তীব্রতা হ্রাস হবে না। কিন্তু ধরা যাক বয়স্কদের ধ্বংসসাধন কখনও খুব বেশি হয়, যে কোন জেলায় অবস্থানরত সংখ্যাটি যদি এরূপ কারণগুলির দ্বারা সামগ্রিকভাবে সংযত না রাখা হয়, অথবা ধরা যাক বীজ ও ডিমগুলির ধ্বংসসাধন এক বিরাট হয় যে কেবল শতাংশ বা সহস্রাংশ বেড়ে ওঠে–সেক্ষেত্রেও যারা বেঁচে থাকে, অনুকূল দিকে যে কোন বিভিন্নতা/পরিবর্তনশীলতা রয়েছে এটি মনে করে, এদের মধ্যে সবচেয়ে ভালভাবে অভিযোজিত এককরা সাধারণভাবে অভিযোজিতদের তুলনায় অধিক সংখ্যায় নিজেদের বংশধর উৎপাদন করতে প্রবণ হবে। এইমাত্র উল্লিখিত কারণের দ্বারা সংখ্যাটি সামগ্রিকভাবে সংযত রাখা হলে, যা প্রায়ই ঘটে থাকে, প্রাকৃতিক নির্বাচন কোন এক হিতকর দিকে কাজ করতে ক্ষমতাহীন হবে; কিন্তু অন্য সময়ে ও অন্য দিকে এরা দক্ষতা সম্পর্কে এটি কোন যুক্তিসংগত আপত্তি নয়, কারণ অনেক প্রজাতি একই সময়ে একই অঞ্চলে কখনও রূপান্তরিত হয় ও উন্নত হয় এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই।
যৌন নির্বাচন।
যে কারণে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলি গৃহপালনাবস্থায় একটি লিঙ্গে প্রায়শই আবির্ভূত হয় ও ঐ লিঙ্গেই বংশানুক্রমিক হয়, সেইরূপে নিঃসন্দেহে প্রকৃতিতেও এটি ঘটে। জীবনের বিভিন্ন স্বভাব সম্পর্কে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে দুটি লিঙ্গের রূপান্তর হওয়া এভাবে সম্ভবপর হয়, যেটি কখনও কখনও ঘটে; অথবা অন্য লিঙ্গের সম্পর্কে একটি লিঙ্গের রূপান্তর যেমন সাধারণভাবে ঘটে। এটিই আমাকে কয়েকটি কথা বলতে প্রভাবিত করেছে, যাকে আমি যৌন নির্বাচন বলেছি। অন্য জীবদের বা পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে অস্তিত্বের সংগ্রামের ওপর এটি নির্ভর করে না, কিন্তু অন্য লিঙ্গকে অধিকার করার জন্য একটি লিঙ্গের, সাধারণতঃ পুরুষদের, এককদের মধ্যে সংগ্রামের ওপর এটি নির্ভর করে। পরিণামে অকৃতকার্য প্রতিযোগীর মৃত্যু হয় না, বরং অল্প কয়েকটি বংশধর উৎপন্ন হয় অথবা একেবারেই হয় না। অতএব প্রাকৃতিক নির্বাচনের তুলনায় যৌন নির্বাচন কম কঠোর। প্রকৃতিতে ভালভাবে মানিয়ে নিয়েছে এমন সবল পুরুষরাই সাধারণতঃ বেশি বংশধর উৎপাদন করবে। অনেক ক্ষেত্রে জয়লাভ কিন্তু সাধারণ সবলতার ওপর নির্ভর করে না। সেটা সাধারণ অস্ত্র হিসেবে পুরুষদেরই থাকে। একটি শিংহীন হরিণ বা স্পারহীন মোরগের অসংখ্য বংশধর উৎপাদন করার কম সম্ভাবনা থাকে। সেরা মোরগদের যে পদ্ধতিতে নির্বাচন করে নিষ্ঠুর মোরগ-লড়িয়েরা, অনেকটা সেভাবেই সর্বদা বিজয়ীদের বংশবিস্তারের সুযোগ দিয়ে স্পার সমেত পায়ে আঘাত করতে যৌন নির্বাচন অদম্য সাহস, স্পারের (কাটা) দৈর্ঘ্য ও ডানার বল নিশ্চয় প্রদান করতে পারত। প্রকৃতির মানদণ্ড অনুযায়ী সংগ্রামের নিয়মটি কত নিম্নগামী হয় তা আমি জানি না। পুরুষ অ্যালিগেটরদের (চীন ও আমেরিকার কুমীর) সম্পর্কে বলা হয়েছে যে রেডইন্ডিয়ানদের যুদ্ধনৃত্যের মতই স্ত্রীদের অধিকার করার জন্য এরা লড়াই-গর্জন করতে করতে স্ত্রীদের চারদিকে ঘুরে বেড়ায়; দেখা গেছে পুরুষ স্যালমনরা সারাদিন লড়াই করে; পুরুষ স্ট্যাগ বিটলরা অন্য পুরুষদের বিরাট পার্শ্বীয় চোয়াল দ্বারা কোন কোন সময় আহত হয়; অননুকরণীয় পর্যবেক্ষক এম.ফেবার প্রায়শই লক্ষ্য করেছেন যে কোন কোন হাইমেনপ্টে রা পতঙ্গরা একটি বিশেষ স্ত্রীর জন্য সংগ্রাম করছে, ঐ স্ত্রীটি সংগ্রাম সম্পর্কে নির্বিকার থাকে এবং বিজয়ীর সঙ্গে প্রস্থান করে। বহুগামী প্রাণীদের ক্ষেত্রে সংগ্রামটি বোধ হয় কঠোর হয় এবং প্রায়শই এরা বিশেষ হাতিয়ার দ্বারা সজ্জিত হয়। মাংসাশী প্রাণীদের পুরুষরা সর্বদাই হাতিয়ার দ্বারা সজ্জিত। যৌন নির্বাচনের পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে এদের ও অন্যদের আত্মরক্ষার বিশেষ উপায় প্রদান করা যেতে পারে; যেমন সিংহের কেশর, পুরুষ স্যালমনদের হুঁকাকার চোয়াল–কারণ যুদ্ধজয়ের জন্য তরবারি অথবা বর্শার মতো ঢালেরও প্রয়োজন হতে পারে।