কিন্তু অল্প ভৌত পরিবর্তন হচ্ছে এমন একটি দেশের কোন ঘটনা ধরলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের সম্ভাব্য গতি সম্পর্কে ভালভাবে জানতে পারব আমরা। উদাহরণস্বরূপ, জলবায়ুর কথা বলা যেতে পারে। দেশটির অধিবাসীদের আনুপাতিক সংখ্যা প্রায় তৎক্ষণাৎ পরিবর্তিত হবে এবং কতিপয় প্রজাতি সম্ভবতঃ বিলুপ্ত হবে। প্রত্যেক দেশের অধিবাসীরা যে অন্তরঙ্গ ও জটিলভাবে একত্রে আবদ্ধ থাকে, তা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত। করতে পারি যে জলবায়ুর পরিবর্তন নিরপেক্ষভাবে অধিবাসীদের সংখ্যাসূচক অনুপাতের যে কোন পরিবর্তন অন্যদের গুরুতরভাবে প্রভাবিত করে। কোন দেশের সীমান্ত যদি খোলা থাকে, তাহলে নতুন আকারগুলি নিশ্চয় অনুপ্রবেশ করবে এবং এটি এভাবে পূর্বের কয়েকটির সম্পর্ককে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করবে। স্মরণ রাখা উচিত, একটি প্রবর্তিত বৃক্ষ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর কত ক্ষমতা দেখানো হয়েছে। কিন্তু একটি দ্বীপ অথবা প্রতিবন্ধক দ্বারা বেষ্টিত একটি দেশের ক্ষেত্রে, যেখানে নতুন ও সু-অভিযোজিত আকারগুলি অবাধে প্রবেশ করতে পারে না, যদি আদিম অধিবাসীদের কয়েকটি কোনভাবে রূপান্তরিত হয়ে থাকত, তাহলে প্রকৃতিতে তখন অনেক অঞ্চল রয়ে থাকবে যা নিশ্চিতভাবে পরিপূর্ণ হবে। কারণ মুক্ত অঞ্চলটি অনুপ্রবেশের জন্য খুলে দিলে অনুপ্রবেশকারীরা এইসব অঞ্চল দখল নিত। এসব ক্ষেত্রে, পরিবর্তিত পরিবেশে ভালভাবে অভিযোজিত হওয়ার মাধ্যমে যে কোন ভাবে যে কোন প্রজাতির এককদের আনুকূল্য করে অল্প রূপান্তরগুলি সংরক্ষিত হওয়ার প্রবণতাসম্পন্ন হবে এবং আরও উন্নতিসাধনের জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচনের অবাধ সুযোগ থাকবে।
আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে জীবন পরিবেশের পরিবর্তন পরিবৃত্তির বৃদ্ধি করতে জীবকে প্রবণ করে তোলে, যেমনটা প্রথম অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে; এবং পূর্ববর্তী ক্ষেত্রগুলিতে জীবন-পরিবেশে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ফলদায়ক পরিবৃত্তি ঘটানোর একটি ভাল সম্ভাবনা প্রদান করে এটি স্পষ্টতঃ প্রাকৃতিক নির্বাচনের অনুকূল হবে। এগুলি না ঘটলে প্রাকৃতিক নির্বাচন কিছুই করতে পারে না। ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে ‘পরিবৃত্তি’ পদটির মধ্যে কেবল এককীয় পার্থক্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মানুষ যেমন এককীয় পার্থক্যগুলিকে বিশেষ দিকে বৃদ্ধি করিয়ে গৃহপালিত প্রাণী ও উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে ভাল ফল লাভ করতে পারে, প্রক্রিয়াটির জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি সময় নিয়ে আরও সহজভাবে সেইরূপ প্রাকৃতিক নির্বাচনও করতে পারে। অথবা আমি বিশ্বাস করি না যে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে যে কোন বিরাট বিরাট ভৌত পরিবর্তন, যেমন জলবায়ু বা যে কোন অস্বাভাবিক পরিমাণের অন্তরণের প্রয়োজন এই জন্য হয় যে পরিবর্তনশীল অধিবাসীদের কয়েকটিকে উন্নত কোরে প্রাকৃতিক নির্বাচনের জন্য পূর্ণ করতে নূতন ও অদখলীকৃত স্থান পরিত্যক্ত হওয়া উচিত। কারণ যেহেতু প্রত্যেক দেশের অধিবাসীরা সুষম শক্তিগুলির সঙ্গে একত্রে সংগ্রাম করছে, সেহেতু একটি প্রজাতির দেহগঠন ও স্বভাবের অত্যল্প রূপান্তরসমূহ সুফলটিকে ততদিন পর্যন্ত প্রায়শই আরও বর্ধিত করবে, যতদিন পর্যন্ত প্রজাতিটি জীবনের একই পরিবেশে অবস্থান করবে এবং জীবনধারণ ও আত্মরক্ষার একইরূপ উপায়গুলির দ্বারা সুফল লাভ করবে। এমন একটিও দেশের নাম করা যেতে পারে না যেখানে সমস্ত স্থানীয় অধিবাসীরা এখন এত নিখুঁতভাবে পরস্পরের সঙ্গে এবং বেঁচে থাকার উপযুক্ত ভৌত অবস্থার সঙ্গে অভিযোজিত হয়েছে যে তাদের মধ্যে কেউই আরও নিখুঁতভাবে অভিযোজন ও উন্নতিসাধন করতে পারত না; কারণ সব দেশেই ভিন্ন পরিবেশে অভিযোজিতরা দেশজদের এতটা পরাজিত করেছে যে দেশজরা কতিপয় বিদেশিদের জমির অধিকার ছেড়ে দিয়েছে। এবং এভাবে প্রত্যেক দেশে বিদেশিরা দেশজদের পরাজিত করেছে বলে আমরা নিরাপদে সিদ্ধান্ত করতে পারি যে প্রাধান্যের জন্য দেশজদের রূপান্তর ঘটে থাকতে পারে, যাতে করে তারা অনুপ্রবেশকারীদের ভালভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।
মানুষ যেহেতু নিয়মানুগ ও অচেতন নির্বাচন পদ্ধতির দ্বারা বিরাট ফল উৎপাদন করতে পারে এবং নিশ্চয়ই করেছে, তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচন কি তা করতে পারে না? বহিঃস্থ ও দৃষ্টিগোচর বৈশিষ্ট্যদের ওপরই মানুষ কেবল কাজ করতে পারে; প্রাকৃতিক সংরক্ষণে অথবা যোগ্যতমের উদ্বর্তনকে নরত্ব আরোপ করতে আমাকে যদি অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে বলা যায় জীবের ক্ষেত্রে যতখানি উপযোগী হবে এমনগুলি ছাড়া প্রকৃতি বাহ্যরূপকে গ্রাহ্য করে না। অন্তঃস্থ অঙ্গের প্রত্যেকটির, জৈবসংগঠনীয় পার্থক্যের প্রত্যেক বৈচিত্র্যের, জীবনের সমগ্র তন্ত্রটির ওপর সে কাজ করতে পারে। মানুষ শুধুমাত্র নিজের ভালর জন্যই নির্বাচন করে, প্রকৃতি শুধুমাত্র জীবের সেইটির ওপর কাজ করে যাকে সে কোন লক্ষ্যে চালিত করে। প্রত্যেক নির্বাচিত বৈশিষ্ট্যকে সে পুরোপুরি কাজে লাগায়, যেটি এদের নির্বাচনের ঘটনার দ্বারা আভাসে-ইঙ্গিতে বোঝা যায়। মানুষ একই দেশে বহু ধরনের জলবায়ুতে অভ্যস্ত দেশজদের প্রতিপালন করে; প্রত্যেক নির্বাচিত বৈশিষ্ট্যকে কদাচিৎ সে কোন বিশেষ ও উপযুক্ত প্রথায় ব্যবহার করে; লম্বা ও ছোট চঞ্চুওয়ালা পায়রাকে সে একই খাবার খাওয়ায়; সে কোন বিশেষ পদ্ধতিতে লম্বা পৃষ্ঠদেশ বা লম্বা পাওয়ালা চতুষ্পদকে কাজে লাগায় না; লম্বা ও ছোট উল সমেত ভেড়াদের একই আবহাওয়ার মধ্যে রাখে। স্ত্রীদের জন্য সংগ্রাম করতে অতি শক্তিশালী পুরুষদের অনুমতি দেয় না সে। নিকৃষ্ট প্রাণীদের সে নির্বিচারে হত্যা করে না, বরং প্রত্যেক পরিবর্তনশীল ঋতুতে সে তার ক্ষমতানুসারে তার সমস্ত উৎপাদনকে রক্ষা করে। কোন অর্ধ অঙ্গবিকৃতিমূলক আকারের অথবা অন্ততঃ চোখে দেখা যায় এমন যথেষ্ট লক্ষণীয় কিছু রূপান্তরের অথবা সরলভাবে তার উপকারে লাগে এমন সব ক্ষেত্রে সে প্রায়শই তার নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রাকৃতিক অবস্থায় দেহগঠন ও বিন্যাসের অল্পতম পার্থক্য জীবন-সংগ্রামে সুষম মানদণ্ডকে ঘুরিয়ে দিতে পারে এবং সেইজন্যই সংরক্ষিত হয়। মানুষের ইচ্ছা ও চেষ্টা কত ক্ষণস্থায়ী! কত অল্প তার সময়! এবং ফলস্বরূপ সমগ্র ভূতাত্ত্বিক যুগ ধরে প্রকৃতি দ্বারা সঞ্চিত ঐ সব ফলগুলির তুলনায় তার কার্যকাল কতই সামান্য! আমরা কি এই ভেবে বিস্ময় বোধ করতে পারি যে মানুষের উৎপাদনগুলির তুলনায় প্রকৃতির উৎপাদনগুলি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অনেক সঠিকতর’ হবে, বা তারা সবচেয়ে জটিল জীবন-পরিবেশে সীমাহীনভাবে অভিযোজিত হবে বা সরলভাবে উচ্চতর দক্ষতার ছাপ বহন করবে?