প্রত্যেক দেশের বৃহত্তর গণের প্রজাতিরা ক্ষুদ্রতর গণের প্রজাতিদের তুলনায় প্রায়শই বেশি পরিবর্তনশীল
যে কোন উদ্ভিকুলে বর্ণিত একটি দেশের সমগ্র উদ্ভিদকুলকে যদি দুটি সমানভাগে ভাগ করা হয়, একদিকে বৃহত্তর গণের উদ্ভিদদের ( যেখানে অনেক উদ্ভিদ প্রজাতি থাকে) এবং অন্য দিকে ক্ষুদ্রতর গণের উদ্ভিদদের রাখা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে পূর্বের ভাগে অতিশয় সুলভ এবং অধিক পরিমাণে পরিব্যাপ্ত অথবা প্রভাবশালী প্রজাতিরা তাধিক সংখ্যায় থাকে। এটাই প্রত্যাশিত, কারণ যে কোন দেশে বসবাসকারী একই গণের অনেক প্রজাতি থাকার বিষয়টি কেবল দেখায় যে ঐ দেশটির জৈব ও অজৈব পরিবেশে গণটির পক্ষে অনুকূল কিছু রয়েছে, এবং বৃহত্তর গণগুলিতে অথবা অধিক প্রজাতি সম্বলিত গণগুলিতে প্রভাবশালী প্রজাতিদের বড় ধরণের আনুপাতিক সংখ্যা দেখার আশা করতে পারতাম আমরা। কিন্তু এটিকে অস্পষ্ট করে তুলতে অনেক কারণ দায়ী, আমি আশ্চর্যান্বিত হই যে আমার সারণী দেখায় যে বৃহত্তর গণের দিকে এমনকি প্রজাতিদের সংখ্যাধিক্য অল্প, দুর্বোধ্যতার দুটি কারণ এখানে আমি পরোক্ষভাবে। উল্লেখ করব। স্বাদুজল ও লবণপ্রিয় উদ্ভিদদের বিস্তার সাধারণতঃ বেশি এবং এরা। অতিশয় পরিব্যাপ্ত হয়, কিন্তু সম্ভবতঃ এদের বাসস্থানের প্রকৃতি বা ধরনের সঙ্গে এটি সম্পর্কিত, এবং প্রজাতিরা যে গণগুলির অন্তর্গত তার আকারের সঙ্গে এটির কোন সম্পর্ক নেই বা অল্প সম্পর্ক থাকে। দেহগঠনের মাত্রার দিক থেকে নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদরা সাধারণতঃ উচ্চশ্রেণীর উদ্ভিদদের তুলনায় খুব বেশি পরিমাণে পরিব্যাপ্ত হয় এবং এখানেও আবার গণেদের আকারের সঙ্গে এর কোন গভীর সম্পর্ক নেই। নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদদের ব্যাপক বিস্তারের কারণটি ভৌগোলিক বিস্তারের অধ্যায়ে আলোচিত হবে।
স্পষ্টচিহ্নিত প্রজাতি ও সুসংজ্ঞায়িত ভ্যারাইটিদের লক্ষ্য করে আমি প্রত্যাশা করেছিলাম যে প্রত্যেক দেশের বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতিরা ক্ষুদ্রতর গণগুলির প্রজাতিদের তুলনায় প্রায়শই ভ্যারাইটি উৎপাদন করে; কারণ যেখানেই অনেক নিকট সম্পকীয় প্রজাতি (অর্থাৎ একই গণের প্রজাতিরা) সৃষ্ট হয়, সেখানে সাধারণ নিয়মানুসারে অনেক ভ্যারাইটি বা জায়মান প্রজাতি সৃষ্টি হতে থাকবে। যেখানে বড় বড় বৃক্ষ জন্মায় সেখানেই ছোট্ট ছোট্ট চারাগাছও জন্মায়, এটা দেখতে আমরা অভ্যস্ত। পরিবৃত্তির মাধ্যমে যেখানে একটি গণের অনেক প্রজাতির সৃষ্টি হয়, সেখানেই পরিবেশগত অবস্থা পরিবৃত্তির অনুকূল হয়; এবং অতএব আশা করতে পারতাম যে পরিবেশগত অবস্থা তখনও সাধারণতঃ পরিবৃত্তির অনুকূল হয়ে থাকবে। পক্ষান্তরে প্রজাতিকে যদি আমার সৃষ্টিকর্মের বিশেষ প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, সেখানে আপাতঃ কোন কারণ থাকে না কেন অল্প প্রজাতি সম্বলিত একটি গোষ্ঠীর তুলনায় অনেক প্রজাতি সম্বলিত একটি গোষ্ঠী আরও বেশি ভ্যারাইটি সৃষ্টি করবে।
এই প্রত্যাশার সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য, বারটি দেশের উদ্ভিদ ও দুটি জেলার কলিওপ্টেরাস পতঙ্গদের বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতিদের একদিকে এবং ক্ষুদ্রতর গণগুলির প্রজাতিদের অন্যদিকে দুটি প্রায় সমানভাবে বিভক্ত করে। বিন্যস্ত করেছি আমি এবং প্রমাণিত হয়েছে যে একদিকের ক্ষুদ্রতর গণগুলির তুলনায় অন্যদিকের বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতিদের এক বিরাট অংশ ভ্যারাইটিদের উৎপাদন করেছে। অধিকন্তু ক্ষুদ্রতর গণগুলির প্রজাতিদের তুলনায় যে কোন সংখ্যক ভ্যারাইটি উৎপাদনক্ষম বৃহত্তর গণগুলির প্রজাতিরা গড়ে বেশি সংখ্যক ভ্যারাইটি উৎপাদন করে। যখন অন্য আর একটি ভাগ করা হয় এবং এক থেকে চারটি প্রজাতি সম্বলিত ক্ষুদ্র গণগুলিকে সারণী থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হয়, তখন উভয় ক্ষেত্রেই ফল একই হয়। এইসব তথ্যের সরল তাৎপর্য হচ্ছে যে প্রজাতিরা হল স্পষ্টচিহ্নিত ও স্থায়ী ভ্যারাইটি; কারণ যেখানেই একই গণের অনেক প্রজাতি সৃষ্টি হয়েছে অথবা যেখানে, আমরা যদি অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করতে পারি যে প্রজাতিদের উৎপাদন সক্রিয় রয়েছে, প্রজাতি সৃষ্টির প্রক্রিয়া এখনও চলছে এটি সাধারণতঃ আমরা দেখতে পাব, আরও বিশেষভাবে আমাদের বিশ্বাস করার কারণ আছে যে নূতন প্রজাতির উদ্ভব প্রক্রিয়া অতি মন্থর। এবং ভ্যারাইটিদের যদি জায়মান প্রজাতি হিসেবে দেখা হয়, তাহলে এটি নিশ্চয়ই সঠিক; কারণ সাধারণ নিয়মানুসারে আমার সারণী স্পষ্ট করে দেখায় যে যেখানেই একটি গণের অনেক প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে, সেখানেই ঐ গণের প্রজাতিরা কিছু সংখ্যক ভ্যারাইটি অর্থাৎ জায়মান প্রজাতি সৃষ্টি করে। এর অর্থ এই নয় যে সমস্ত বড় গণগুলি এখন সবচেয়ে বেশি পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এভাবে এদের প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথবা ক্ষুদ্রতর গণগুলি এখন পরিবর্তিত হচ্ছে না ও বৃদ্ধি পাচ্ছে না; কারণ তা ঘটলে সেটি আমার তত্ত্বের পক্ষে সাংঘাতিক হয়ে উঠত। ভূবিজ্ঞান আমাদের দেখায় যে ক্ষুদ্রতর গণগুলি দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর প্রায়শই বিরাটাকারে বৃদ্ধি পায় এবং বৃহত্তর গণগুলি প্রায়শই শেষ সীমায় পৌঁছায়, ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ও অন্তর্হিত হয়। আমরা যা দেখাতে চাই তা হল–একটি গণের যখন অনেক প্রজাতি সৃষ্টি হয়েছে, তখন গড়ে আরও অনেক সৃষ্টি হচ্ছে এবং এটা নিশ্চয়ই সঠিক।