অসভ্য মানুষের পোষা গৃহপালিত প্রাণীদের সম্পর্কে এটি উপেক্ষা করা উচিত নয় যে অন্ততঃ কোন কোন মরসুমে এদের খাদ্যের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। এবং ভিন্ন পরিবেশের দুটি দেশে, জৈবিক গঠন ও কাঠামোয় অল্প পার্থক্যযুক্ত একই প্রজাতির এককগুলি অন্যটির তুলনায় একটি দেশে প্রায়শই সফলতা লাভ করবে এবং এইরূপে ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ প্রক্রিয়াটি দ্বারা দুটি উপজাত সৃষ্টি হয়ে থাকবে, যে বিষয়ে পরে ভালভাবে আলোচনা করা হবে। বোধ হয় এটি অংশতঃ ব্যাখ্যা করে কেন অসভ্য মানুষদের পোষা ভ্যারাইটিগুলি সভ্য দেশে পোষা ভ্যারাইটিদের তুলনায় বিশুদ্ধ প্রজাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বেশির ভাগের অধিকারী হয়, যেটি অনেক বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন।
মানুষের দ্বারা নির্বাচন প্রক্রিয়াটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখানে প্রদত্ত এই মতবাদটি অনুসারে এটি তৎক্ষণাৎ স্পষ্ট হয় যে কেন মানুষের প্রয়োজন ও শখের জন্য আমাদের গৃহপালিত জাতগুলো স্বভাবে ও দেহগঠনে অভিযোজিত হয়। আমি মনে করি গৃহপালিত জাতগুলির প্রায়শই উদ্ভূত অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ধারণ সম্পর্কে আমরা বুঝতে পারি এবং এভাবেও বাইরের বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য এত বিরাট ও ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এটি আপেক্ষিকভাবে কত অল্প তা-ও বুঝতে পারি। প্রত্যক্ষভাবে দৃষ্টিগোচর হয় এমন বিচ্যুতি ছাড়া জৈবিক গঠনের কোন বিচ্যুতি মানুষ কদাচিৎ নির্বাচন করে বা কেবল কষ্টসাধ্যভাবে নির্বাচন করে। বাস্তবিকপক্ষে ভিতরের গঠনের দিকে সে কদাচিৎ মন দেয়। অল্পমাত্রায় প্রাকৃতিক অবস্থায় উৎপন্ন পরিবৃত্তিগুলি ছাড়া সে কখনও নির্বাচনের কাজটি করতে পারে না। অস্বাভাবিকভাবে অল্পমাত্রায় বর্ধিত লেজ সমেত অথবা অস্বাভাবিক আকারের গলার থলি সমেত পায়রাদের না দেখে কোন মানুষ লক্কা বা পাউটার পায়রা সৃষ্টির কোন চেষ্টাই করবে না; এবং প্রথম আবির্ভাবে কোন বৈশিষ্ট্য যত বেশি অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত হয়, তত বেশি এটি তার মনোযোগ আকর্ষণ করবে। কিন্তু একটি লক্কা পায়রা সৃষ্টিতে যে মত প্রকাশ করা হয়, কোন সন্দেহ নেই। সেটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে ত্রুটিপূর্ণ। একজন মানুষ যখন অল্প বড় লেজওয়ালা একটি পায়রা নির্বাচন করে, তখন ঐ পায়রাটির বংশধররা অংশতঃ অচেতন ও অংশতঃ নিয়মানুগ অবিরাম নির্বাচনের মাধ্যমে হয়েছিল কি না সে কখনও এই অলীক কল্পনা করেনি। বর্তমানের জাভা দেশীয় লক্কা পায়রা বা অন্য এবং ভিন্ন জাতের এককদের মতো, যাদের কম করেও সতেরোটি লেজের পালক গণনা করা হয়েছে, বোধ হয় সব লক্কা পায়রাদের পিতামাতা পাখিটির কেবল চোদ্দটি কিছু পরিমাণ প্রসারিত লেজ পালক ছিল। বর্তমানের টারবিট পায়রারা যেভাবে তাদের অন্ননালীর উপরের অংশ ফোলায় তার তুলনায় বোধ হয় প্রথম সৃষ্ট পাউটার পায়রাটি তার গলার থলি আরও বেশি ফোলাতো না–এই স্বভাবটিকে সব পাখিরসিকরা অবজ্ঞা করে, কারণ নূতন জাত সৃষ্টির পক্ষে এটি কোন প্রয়োজনীয় বিষয় নয়।
ধরে নেওয়া উচিত হবে না যে দেহগঠনের কোন বিরাট বিচ্যুতি পাখিপ্রেমিকদের চোখে লাগার জন্য প্রয়োজন হবে : সে অতি অল্প পার্থক্যকেও চিনতে পারে এবং মানুষের প্রবৃত্তি হল যত অল্পই হোক যে কোন নূতনত্বকে মূল্য দেওয়া। একই প্রজাতির এককদের অল্প পার্থক্যকে পূর্বে যে মূল্য দেওয়া হতো, কয়েকটি জাতের সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেই মূল্য দেওয়া নিশ্চয় বিচারযোগ্য নয়। অনেকেরই জানা আছে। যে পায়রাদের মধ্যে অনেক অল্প পরিবৃত্তি অনিয়মিতভাবে আবির্ভূত হয়, কিন্তু এগুলি প্রত্যেক জাতের নিখুঁততার মান থেকে বিচ্যুত বা অসম্পূর্ণ বলে বাতিল করা হয়। সাধারণ রাজহাঁস বা কোন স্পষ্ট চিহ্নিত ভ্যারাইটি উৎপাদন করে না; এই কারণে টাউলাউস ও সাধারণ জাতটি সাম্প্রতিক কালে গৃহপালিত পাখিদের প্রদর্শনীতে স্বতন্ত্র পাখি হিসেবে প্রদর্শিত হয়, যা কেবল সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী বৈশিষ্ট্য বর্ণের দ্বারা পৃথক করা হয়।
এইসব মতবাদ বোধ হয় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে যে আমাদের যে কোন গৃহপালিত জাতগুলোর উৎপত্তি ও ইতিহাস সম্বন্ধে আমরা কদাচিৎ কিছু জানি। কিন্তু, আসলে কোন ভাষার একটি উপভাষার মতো একটি জাতের উৎপত্তিও স্বতন্ত্রভাবে হয়েছে, এটি কদাচিৎ বলা যেতে পারে। দেহগঠনের অল্প বিচ্যুতি সমেত একটি একককে মানুষ সংরক্ষণ করে ও তার বংশবৃদ্ধি ঘটায় বা তার সর্বোত্তম প্রাণীদের খুঁজে বের করতে প্রচলিত পন্থার চেয়ে বেশি যত্ন নেয়, এবং এভাবে তাদের উন্নত করে এবং উন্নত প্রাণীরা সন্নিহিত পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়। কিন্তু তখন পর্যন্ত এদের কোন স্বতন্ত্র নাম কদাচিৎ হয়ে থাকবে, এবং এদের অল্প উপযোগিতার মূল্য না দিয়ে এদের ইতিহাসকে অবজ্ঞা করা হয়ে থাকবে। একই মন্থর ও ক্রমিক প্রক্রিয়া দ্বারা আরও উন্নত। হলে এদের আরও ব্যাপকভাবে বিস্তার ঘটবে, এবং ভিন্ন ও মূল্যবান জাত হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং সম্ভবতঃ সর্বপ্রথম একটি প্রাদেশিক নাম পেয়ে থাকবে। অল্প অবাধ যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে এমন অর্ধসভ্য দেশগুলিতে একটি নূতন উপ-জাতের বিস্তার মন্থর গতিতে ঘটবে। উপযোগিতার প্রশ্নটি যে মুহূর্তে স্বীকৃতি লাভ করে, যেটিকে আমি বলি অচেতন নির্বাচন, প্রক্রিয়াটি–যেহেতু জাতটির বৈশিষ্ট্যে উত্থান ও পতন হয়, বোধ হয় অন্য পর্যায়ের তুলনায় এক পর্যায়ে আর বেশিভাবে অধিবাসীদের সভ্যতা অনুসারে, সম্ভবতঃ অন্য জেলায় আরও বেশি ভাবে–যদি জাতটিতে নূতন বৈশিষ্ট্য ধীরে ধীরে যোগ করে, তাহলে প্রক্রিয়াটি সর্বদাই চালিত হবে। কিন্তু এরূপ মন্থর, ভিন্ন প্রকার, অচেতন পরিবর্তনগুলির সংরক্ষণের সম্ভাবনা নিতান্তই নগণ্য।