পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তন বিষয়টি প্রসঙ্গে আমি এখানে প্রকৃতিবিজ্ঞানীদের একটি উক্তি উল্লেখ করতে পারি–আমাদের গৃহপালিত ভ্যারাইটিরা যখন বন্যাবস্থায় প্রত্যাবর্তন করে, তখন তাদের মধ্যে আদিম বংশের বৈশিষ্ট্যগুলি ক্রমশঃ কিন্তু অনিবার্যভাবে ফিরে আসে। অতএব যুক্তি দেখানো হয় যে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রজাতিদের সঙ্গে জাতসমূহের সম্পর্ক থেকে কোন সিদ্ধান্ত টানা যেতে পারে না। কোন্ চূড়ান্ত তথ্যের ভিত্তিতে উপরোক্ত বক্তব্যটি প্রায়শই এবং জোরের সঙ্গে বলা হয়, তা আবিষ্কার করার নিল চেষ্টা করেছি আমি। এটির সত্যতা নিরূপণ করা অত্যন্ত কষ্টকর। আমরা নিরাপদে সিদ্ধান্ত করতে পারি যে সুচিহ্নিত গৃহপালিত ভ্যারাইটিরা অধিকাংশই বন্যাবস্থায় সম্ভবতঃ বাস করতে পারত না। বহু ক্ষেত্রে আদিম বংশটি কী ছিল আমরা জানি না এবং সে জন্য নিখুঁত প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল কিনা আমরা বলতে পারি না। আন্তঃ সঙ্করণের প্রভাব প্রতিরোধ করতে এটি প্রয়োজন হবে যে কেবল একটি একক নূতন বাসস্থানে বন্ধনমুক্ত হয়ে থাকবে। তা সত্ত্বেও, যেহেতু আমাদের গৃহপালিত ভ্যারাইটিদের কয়েকটি বশিষ্ট্য পূর্বপুরুষীয় আকারে নিশ্চয় হঠাৎ প্রত্যাবর্তন করে, তাই এটি অসম্ভব নয় বলে মনে হয় যে আমরা যদি অনুর্বর মাটিতে (তবে এক্ষেত্রে অনুর্বর মাটির জন্য কিছু ফলাফল আরোপ করা যেতে পারে), ধরা যাক, বাঁধাকপির কয়েকটি জাতকে কয়েক বংশ জুড়ে ভিন্ন পরিবেশের উপযোগী করতে সমর্থ হতাম অথবা চাষ করতে পারতাম, তাহলে এরা অনেকাংশে বা এমনকি সামগ্রিকভাবে বন্য আদিম বংশে প্রত্যাবর্তন করত। পরীক্ষাটি সফল হবে কি হবে না তা আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বের নয়, কারণ পরীক্ষা দ্বারাই জীবন-পরিবেশ পরিবর্তিত হয়। যদি দেখানো যেতে পারত যে আমাদের গৃহপালিত ভ্যারাইটিরা পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তনে অত্যন্ত প্রবণ হয়, অর্থাৎ একই পরিবেশে এবং বিশেষ সংখ্যায় রাখা হলে এরা এদের আহৃত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো হারাতে চায়, যাতে একত্রে মিলনের দ্বারা অবাধ আন্তঃসঙ্করণ এদের গঠনের যে কোন অল্প বিচ্যুতিকে রোধ করতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে প্রজাতি সম্পর্কে গৃহপালিত ভ্যারাইটিদের থেকে কোন সিদ্ধান্ত আমি করতে পারিনি। কিন্তু এই মতের অনুকূল সাক্ষ্যপ্রমাণের কোন চিহ্ন নেহ : অনন্ত বংশপরম্পরা ধরে আমাদের মালবাহী ও ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া, লম্বা ও ছোট শিংওয়ালা গো-মহিযাদি এবং বিভিন্ন জাতের কুকুটাদি গৃহপালিত পাখি ও খাদ্য-উপযোগী সবজি প্রজনন করতে পারতাম না, এটা দাবী করা সমস্ত অভিজ্ঞতার বিরুদ্ধে যাবে।
গৃহপালিত নানা প্রকার ভ্যারাইটির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য; নানাপ্রকার ভ্যারাইটি ও প্রজাতিদের মধ্যে বিভিন্নতা নির্দিষ্ট করার অসুবিধা; এক বা একাধিক প্রজাতি থেকে বিভিন্ন ভ্যারাইটির উৎপত্তি।
আমরা যখন গৃহপালিত প্রাণী ও উদ্ভিদের বংশধর ভ্যারাইটি বা জাতগুলোর দিকে লক্ষ্য করি এবং নিকট সম্বন্ধীয় প্রজাতিদের সঙ্গে এদের তুলনা করি, তখন প্রত্যেক গৃহপালিত জাতে প্রকৃত প্রজাতির তুলনায় কম একরূপত্ব আমরা সাধারণতঃ দেখতে পাই, যা ইতিমধ্যে উল্লিখিত হয়েছে। গৃহপালিত জাতগুলো প্রায়শই কিছুটা অস্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে; যার দ্বারা আমি এই অর্থ করি যে যদিও কয়েকটি তুচ্ছ বৈশিষ্ট্যে এরা পরস্পরের থেকে এবং একই গণের অন্য প্রজাতির থেকে পৃথক হয়, পরস্পরের সঙ্গে এবং বিশেষত প্রাকৃতিক পরিবেশের নিকট সম্বন্ধীয় প্রজাতির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, এরা উভয়ে প্রায়শই যে কোন একটি অঙ্গে চূড়ান্ত মাত্রায় পৃথক। হয়। এগুলো ব্যতীত (সঙ্করিত হওয়ার পর ভ্যারাইটিদের সম্পূর্ণ উর্বরতা–বিষয়টি পরে আলোচিত হবে) একই প্রজাতির গৃহপালিত জাতগুলো পরস্পরের থেকে একই পদ্ধতিতে পৃথক হয়, যে পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশে একই গণের নিকট সম্বন্ধীয় প্রজাতিরা পৃথক হয়, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে পার্থক্যগুলো কম মাত্রায় হয়। এটি অবশ্য সত্য বলে স্বীকার করা উচিত, কারণ কয়েকজন দক্ষ বিচারক প্রাণী ও উদ্ভিদের গৃহপালিত জাতগুলোকে আদিম স্বতন্ত্র প্রজাতির বংশধর হিসেবে গণ্য করেছেন এবং অন্য দক্ষ বিচারকরা এদের কেবলমাত্র ভ্যারাইটি হিসেবে গণ্য করেন। যদি একটি গৃহপালিত জাত এবং একটি প্রজাতির মধ্যে কোন সুচিহ্নিত পার্থক্য থাকে, সন্দেহের এই উৎসটি এভাবে চিরস্থায়ী রূপে আর পুনরায় ঘটবে না। প্রায়শই বলা হয় যে গণীয় মূল্যের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে গৃহপালিত জাতসমূহ পরস্পরের থেকে ভিন্ন হয় না। দেখানো যেতে পারে যে বক্তব্যটি সঠিক নয়; কিন্তু গণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নির্ধারণ করতে প্রকৃতিবিদদের মধ্যে নানাবিধ মতভেদ হয়; এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের মূল্য নির্ধারণ বর্তমানে পরীক্ষাধীন। কেমন করে গণগুলি প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভূত হয় তা ব্যাখ্যা করলে দেখা যাবে যে আমাদের গৃহপালিত জাতগুলোতে পার্থক্যের গণীয় চারিত্রিক পরিমাণ আবিষ্কার করার আশা করার কোন অধিকার আমাদের নেই।
সম্বন্ধযুক্ত গৃহপালিত জাতগুলোর মধ্যে গঠনগত পার্থক্যের পরিমাণ নির্ধারণ করার চেষ্টায়, এরা এক বা একাধিক পিতামাতা প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে কিনা জেনে তৎক্ষণাৎ সন্দেহ করতে শুরু করি আমরা। বিষয়টি পরীক্ষিত হলে, কৌতূহলোদ্দীপক হবে। যেমন, যদি দেখানো যেতে পারত যে গ্ৰেহাউণ্ড, ব্লাডহাউণ্ড, টেরিয়ার, স্প্যানিয়েল এবং বুলডগ কুকুররা যে কোন একটি স্বতন্ত্র প্রজাতির বংশধর ছিল, আমরা জানি এরা এদের সদৃশ বংশধর জন্ম দেয়, তাহলে এইসব তথ্য অসংখ্য নিকট সম্বন্ধীয় প্রাকৃতিক প্রজাতির অপরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে আমাদের সন্দেহ উদ্রেক করতে বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকবে-যা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী অসংখ্য শিয়াল সম্পর্কে খাটে। আমি বিশ্বাস করি না যে–যেটি আমরা এখানে দেখবো-কুকুরদের কয়েকটি জাতের মধ্যেকার সমস্ত পার্থক্য গৃহপালনাধীন অবস্থায় উদ্ভূত হয়েছে; স্বল্প পার্থক্য স্বতন্ত্র প্রজাতি থেকে উদ্ভবের জন্য দায়ী, এটা আমি বিশ্বাস করি। অন্য কয়েকটি গৃহপালিত প্রজাতির স্পষ্টচিহ্নিত, জাতগুলোর ক্ষেত্রে, অনুমিত অথবা এমনকি জোরাল সাক্ষ্যপ্রমানাদি রয়েছে যে সকলে একটি স্বতন্ত্র বন্য প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে।