অনেক নিয়ম পরিবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলোর কয়েকটিকে অস্পষ্টভাবে দেখা যেতে পারে এবং এখানে এগুলো সংক্ষেপে আলোচিত হবে। আমি এখানে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত পরিবৃত্তি বিষয়ে উল্লেখ করব। ভুণে ও শূককীটে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সম্ভবতঃ বয়স্ক প্রাণীদের পরিবর্তন ঘটাবে। বিকৃতাঙ্গ জীবের সম্পূর্ণ পৃথক প্রত্যঙ্গদের মধ্যে পারস্পরিক সম্বন্ধ অত্যন্ত অদ্ভুত প্রকৃতির; ইসিডোরে জিওফ্রয় সেন্ট হিলারের বিরাট গ্রন্থে এ বিষয়ে অনেক উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রজননকারীরা বিশ্বাস করেন যে লম্বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো প্রায় সর্বদাই লম্বাটে মস্তকের সঙ্গে সহবর্তমান। পারস্পরিক সম্বন্ধের কয়েকটি উদাহরণ খাপছাড়া ধরনের, যেমন সম্পূর্ণ সাদা ও নীলবর্ণের চোখওয়ালা বিড়ালেরা সাধারণত বধির হয়; কিন্তু মিঃ টেট সম্প্রতি বলেছেন যে এটি কেবল পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বর্ণ ও দেহগত বিন্যাসের বিশেষত্বগুলো একই সঙ্গে চলে, প্রাণী ও উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে এ সম্বন্ধে অনেক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারত। হিউসিনজারের সংগৃহীত তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে সাদা ভেড়া ও শূকররা কয়েকটি উদ্ভিদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু কৃষঃবর্ণের এককগুলো নিষ্কৃতি পায়। অধ্যাপক উইম্যান এ বিষয়ে একটি ভাল উদাহরণ সম্প্রতি আমাকে জানিয়েছেন। ভার্জিনিয়ার কয়েকজন কৃষককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তাদের শূকররা কেন কৃষ্ণবর্ণের হয়। উত্তরে তারা তাকে জানিয়েছিল যে তাদের শূকররা রঙ্গিন শিকড় (ল্যাকনানথেস) খেয়ে থাকে, যা এদের হাড়কে পাটল বর্ণ করে দেয়, এবং কালো রঙের ভ্যারাইটিগুলো ছাড়া অন্য সকলের পায়ের ক্ষুর লোপ পায়; এবং দন্তী মানুষদের (অর্থাৎ ভার্জিনিয়া স্কোয়াটার্স) মধ্যে একজন বলেন, “শাবকদের মধ্যে কালোগুলোকে আমরা নির্বাচিত করি কেবলমাত্র এদের বাঁচার সম্ভাবনা বেশি বলে।” লোমহীন কুকুরদের দাঁত অসম্পূর্ণ হয়; মোটা লোমযুক্ত প্রাণীদের লম্বা অথবা অনেক শিং থাকে; পালকওয়ালা পায়ের পাতা সমেত পায়রাদের পায়ের পাতায় বাইরের আঙ্গুলগুলোর মধ্যে চামড়া থাকে; ছোট ঠোঁটযুক্ত পায়রার পা ছোট হয় এবং লম্বা ঠোঁটওয়ালাদের পা বড় হয়। অতএব মানুষ যদি কোন বৈশিষ্ট্যকে নির্বাচিত করতে থাকে এবং তার বৃদ্ধি ঘটাতে থাকে, তাহলে পারস্পরিক সম্পর্কের রহস্যময় নিয়মগুলির দরুন সে প্রায় নিশ্চিতভাবেই দেহের অন্য প্রত্যঙ্গগুলোকে অনিচ্ছাকৃতভাবে রূপান্তরিত করবে।
পরিবৃত্তির বিভিন্ন, অজ্ঞাত অথবা অস্পষ্টভাবে জানা নিয়মগুলোর ফলাফল অত্যন্ত জটিল ও বিচিত্র। প্রাচীন যুগ থেকে আবাদী কয়েকটি উদ্ভিদ, যেমন হায়াসিন্থ, আলু, এমনকি ডালিয়া প্রভৃতি সম্বন্ধে লেখা কয়েকটি প্রবন্ধ যত্নসহকারে অধ্যায়ন করা খুবই প্রয়োজনীয়; এবং দেহকাঠামো ও দেহগত বিন্যাসের অনন্ত বিষয়সমূহ লক্ষ্য করা অতিশয় বিস্ময়কর, কারণ ভ্যারাইটি ও উপভ্যারাইটিদের মধ্যে পার্থক্য অতি অল্প। সমগ্র জৈব সংগঠনটি সম্ভবতঃ নমনীয় হয়েছে এবং পিতামাতা বৈশিষ্ট্যগুলোর থেকে অল্প। মাত্রায় ব্যতিক্রম ঘটেছে।
বংশানুক্রমিক নয় এমন পরিবৃত্তি আমাদের কাছে গুরত্বহীন। কিন্তু দেহগঠনের বংশগত বিচ্যুতি সংখ্যা ও বিচিত্রতা, যারা অল্প এবং যাদের শরীরবৃত্তীয় বিশেষ গুরুত্ব থাকে, তা অনন্ত। বিষয়টির ওপর ডঃ প্রসপার লুকাসের লেখা দুটি বিরাট গ্রন্থ সর্বোত্তম এবং সম্পূর্ণ। কোন প্রজননকারীই সন্দেহ করে না বংশানুসৃতিতে প্রবণতা কত প্রবল। সদৃশ প্রাণী সদৃশ প্রাণীরাই জন্ম দেয়, এটাই হচ্ছে তাদের মৌলিক বিশ্বাস; তাত্ত্বিক লেখকরাই কেবল এই সূত্র সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেন। দেহগঠনের কোন বিচ্যুতি যখন প্রায়শই আবির্ভূত হয় এবং আমরা সেটি পিতা ও শিশুর মধ্যে দেখি, তখন আমরা বলতে পারি না একই কারণ উভয়ের ওপর কার্যকরী হয় কিনা। কিন্তু যখন পরিবেশের কয়েকটি অস্বাভাবিক জোটের জন্য আপাততভাবে একই পরিবেশের প্রভাবাধীন এককগুলোর মধ্যে যে কোন অতি বিরল বিচ্যুতি পিতামাতায় আবির্ভূত হয়–ধরুন কয়েক লক্ষ এককের মধ্যে একবার–এবং এটি শিশুটির মধ্যে পুনরাবির্ভূত হয়, তখন এটির পুনরাবির্ভাবের সম্ভাব্যতার একমাত্র কারণকে বংশানুসৃতির ওপর আরোপ করতে অনেকাংশে বাধ্য হই আমরা। একই গোত্রের সদস্যদের শরীরে ধবলতা, কাঁটাময় চামড়া, লোমাবৃত শরীর ইত্যাদি বিষয়ের কথা নিশ্চয় প্রত্যেকে শুনে থাকবেন। যদি দেহের অদ্ভুত ও বিরল বিচ্যুতিগুলো আনুবংশিক হয়, তাহলে কম অদ্ভুত ও সাধারণ বিচ্যুতিগুলোকে বংশগত বলে অনায়াসেই স্বীকার করা যেতে পারে। সমগ্র বিষয়টি লক্ষ্য। করার সঠিক উপায় হচ্ছে–নিয়ম যাই হোক না কেন, প্রত্যেক বৈশিষ্ট্যকে বংশগত হিসেবে দেখা এবং বংশগত নয় এমন বৈশিষ্ট্যকে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখা।
বংশগতি নিয়ন্ত্রণের নিয়মগুলো অধিকাংশ সময় অজ্ঞাত। কেউ বলতে পারে না। কেন একই প্রজাতির অথবা ভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন এককগুলোতে একই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কোন কোন সময় আনুবংশিক হয় কোন কোন সময় হয় না; কেন শিশুর মধ্যে পিতামহ অথবা মাতামহীর অথবা আরও দূরবর্তী পূর্বপুরুষের কিছু কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রায়শই পুনরাবির্ভূত হয়; কেন একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এক লিঙ্গ থেকে উভয় লিঙ্গে, অথবা কেবল একটি লিঙ্গে, আরও বিশেষভাবে কোন সদৃশ লিঙ্গে নয়, প্রায়শই পরিবাহিত হয়। এটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের গৃহপালিত জাতগুলোর পুরুষ লিঙ্গে আবির্ভূত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয় স্বতন্ত্রভাবে অথবা আরও বেশি মাত্রায় কেবলমাত্র পুরুষদের মধ্যে প্রায়শই বংশগতভাবে পরিবাহিত হয়। আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি, যা বিশ্বাসযোগ্য বলেই মনে হয়, সেটি হচ্ছে জীবনের কোন বিশেষ বয়সে একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রথমে আবির্ভূত হয়, বংশধরের অনুরূপ বয়সে এটি পুনরাবির্ভূত হতে চেষ্টা করে, যদিও কোন কোন সময় আরও আগেও তা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে এটি অন্যরূপে হয় না। এইরূপে গো-মহিযাদির শিংগুলোতে বংশগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ কেবল পরিণত বয়সেই বংশধরে আবির্ভূত হতে পারে; রেশমকীটের বৈশিষ্ট্যগুলো শুয়োপোকা অথবা রেশমগুটির সমরূপ দশায় আবির্ভূত হয় বলে জানা গেছে। কিন্তু বংশগত রোগ এবং অন্য কয়েকটি বিষয় আমাকে বিশ্বাস করায় যে নিয়মটির ব্যাপক বিস্তৃতি আছে, এবং কেন একটি বৈশিষ্ট্য কোন বিশেষ বয়সে আবির্ভূত হবে তার আপাত কোন কারণ না থাকলেও পিতামাতার মধ্যে প্রথম যে বয়সে এই পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল, বংশধরের মধ্যেও সেই বয়সেই দেখা যায়। ভূণবিদ্যার নিয়মসমূহ ব্যাখ্যা করতে এই নিয়মটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমি বিশ্বাস করি। এই মন্তব্যগুলো নিশ্চয়ই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রথম আবির্ভাবের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ এবং প্রাথমিক কারণে নয় যা ডিম্বক অথবা পুরুষ-উপাদানের ওপর কার্যকরী হয়ে থাকতে পারে; প্রায় একইভাবে একটি লম্বা শিংওয়ালা ষাঁড়ের ছোট শিংওয়ালা গাভী থেকে উৎপন্ন বংশধরের শিঙের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত দৈর্ঘ্য স্পষ্টতই পুরুষ-উপাদানের জন্য হয়, যদিও তা বেশি বয়সে আবির্ভূত হয়।