পরিবৃত্তির কারণ–স্বভাবের প্রভাব এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবহার অথবা অব্যবহার–পরস্পর সম্পর্কযুক্ত পরিবৃত্তি বংশানুসৃতি–গৃহপালিত নানা প্রকার ভ্যারাইটির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য–নানা প্রকার ভ্যারাইটি ও প্রজাতিদের মধ্যে বিভিন্নতা নির্দিষ্ট করার অসুবিধা–এক বা একাধিক প্রজাতি থেকে গৃহপালিত বিভিন্ন ভ্যারাইটির–উৎপত্তি গৃহপালিত পায়রা, এদের পার্থক্য ও উৎপত্তি– প্রাচীন যুগ থেকে অনুসৃত নির্বাচন পদ্ধতি, এদের ফলাফল–নিয়মানুযায়ী এবং অচেতন নির্বাচন–আমাদের গৃহপালিত উৎপাদনগুলির অজানা উৎপত্তিরসূত্র—মানুষের নির্বাচন শক্তির অনুকূল পরিবেশ।
.
পরিবৃত্তির কারণসমূহ
আমাদের কর্ষিত (আবাদী) উদ্ভিদ ও গৃহপালিত প্রাণীদের একই ভ্যারাইটি অথবা। উপ-ভ্যারাইটিদের এককগুলোর তুলনা করার সময় প্রথম যে বিষয়টি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হচ্ছে প্রাকৃতিক অবস্থায় স্থিত যে কোন প্রজাতি অথবা ভ্যারাইটির এককগুলোর তুলনায় এরা পরস্পরের থেকে অধিকতর পৃথক। অতিশয় ভিন্ন আবহাওয়া ও পরিবেশে সমস্ত যুগ জুড়ে পরিবর্তিত হওয়া কৰ্ষিত ও গৃহপালিত উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের বৈচিত্র্যসমূহ বিবেচনা করলে আমরা সিদ্ধান্ত করতে বাধ্য হই যে এই অতি প্রকারণ বা বিভিন্নতা প্রাকৃতিক অবস্থায় অবস্থান রত পিতামাতা প্রজাতির তুলনায় পৃথক ও ভিন্ন অসমরূপ পরিবেশে উদ্ভূত আমাদের গৃহপালিত উৎপাদনসমূহের জন্য হয়। অ্যাণ্ডু নাইটের মতে, এই প্রকারণ বা বিভিন্নতা অংশতঃ অধিক খাদ্য গ্রহণের জন্য হতে পারে। স্পষ্টতঃ মনে হয় যে পরিবৃত্তির যে কোন বিরাট পরিমাণ ঘটাতে গেলে কয়েক বংশপরম্পরায় নূতন পরিবেশে জীবদের অবশ্যই রাখতে হবে। এবং যখন জীবরা পরিবর্তিত হতে শুরু করে, তখন এই পরিবর্তন সাধারণতঃ বংশপরম্পরায় ঘটতে থাকে। পরিবর্তনশীল জীবের গৃহপালনাধীন অবস্থায় পরিবর্তন বন্ধ হয়েছে এমন কোন রেকর্ড নেই। আমাদের প্রাচীনতম আবাদী উদ্ভিদের মধ্যে গমের ক্ষেত্রে এখনও নূতন ভ্যারাইটি বা জাত সৃষ্টি হয়ে চলেছে। আমাদের গৃহপালিত প্রাণীরাও দ্রুত উৎকর্ষলাভ অথবা রূপান্তরে এখনও সমর্থ।
দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি সম্পর্কে অনুশীলনের পর আমার মনে হয়েছে এই জীবনাবস্থা দু-ভাবে কাজ করে–প্রত্যক্ষভাবে সমগ্র জীব সংগঠনের ওপর অথবা কেবল কোন প্রত্যঙ্গের ওপর এবং অপত্যক্ষভাবে জননেন্দ্রিয়কে প্রভাবিত করে। প্রত্যক্ষ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা নিশ্চয় মনে রাখব যে প্রত্যেক ক্ষেত্রে দুটি উপাদান রয়েছে, যেমন অধ্যাপক ভাইসম্যান ইদানিং দৃঢ়তা সহকারে বলেছেন এবং আমি যেমন ‘গৃহপালনাধীন পরিবৃত্তি’ নামক গবেষণামূলক কাজে প্রাথমিকভাবে দেখিয়েছি। উপাদান দুটি হচ্ছে জীবের প্রকৃতি ও পরিবেশের বৈশিষ্ট্য। পূর্বেরটি সম্ভবতঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যতদূর আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারি তাতে মনে হয় অসদৃশ পরিবেশে কোন কোন সময় সদৃশ পরিবৃত্তির উদ্ভব ঘটে এবং বিপরীতক্রমে প্রায়-সদৃশ বলে মনে হয় এমন পরিবেশে অসদৃশ পরিবৃত্তির উদ্ভব হয়, বংশধরদের ওপর এর প্রভাব কখনও নির্দিষ্ট, কখনওবা অনির্দিষ্ট। নির্দিষ্ট হিসেবে এটি বিবেচিত হতে পারে যখন কয়েক বংশপরম্পায় কোন নির্দিষ্ট পরিবেশের প্রভাবাধীন এককদের সব বা প্রায় সব বংশধররা একইভাবে রূপান্তরিত হয়। এরূপে নির্দিষ্টভাবে প্রবর্তিত পরিবর্তনের সীমা সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো অত্যন্ত কষ্টকর। তবে, অনেক অল্প পরিবর্তন সম্বন্ধে খুব একটা সন্দেহ থাকত না, যেমন খাদ্যের পরিমাণ থেকে আকার, খাদ্যের বৈশিষ্ট্য থেকে বর্ণ, আবহাওয়া বা জলবায়ু থেকে চামড়া ও রোমের বেধ ইত্যাদি। মোরগ-মুরগীদের পালকগুলোকেও আমাদের দেখা সীমাহীন প্রকারণগুলোর প্রত্যেকটি কোন না কোন উপযুক্ত কারণের জন্য হয়ে থাকবে; এবং অনেক এককের ওপর দীর্ঘ বংশপরম্পায় একই কারণ ক্রিয়াশীল হলে সকলে সম্ভবতঃ সমরূপেই রূপান্তরিত হত। গল (gall) সৃষ্টিকারী একটি কীটের দ্বারা বিন্দুর আকারে বিষ প্রবেশ করানোর সাহায্যে উৎপন্ন জটিল ও অসাধারণ উপবৃদ্ধিগুলো সমেত এরূপ তথ্য আমাদের দেখায়-উদ্ভিদদের ক্ষেত্রে প্রাণরসের বৈশিষ্ট্যে একটি রাসায়নিক পরিবর্তন থেকে কী অনন্য রূপান্তর ঘটে থাকে।
নির্দিষ্ট পরিবৃত্তির তুলনায় পরিবর্তিত পরিবেশে অনির্দিষ্ট পরিবৃত্তি আরও অনেক বেশি ফলদায়ক এবং সম্ভবতঃ আমাদের জাতগুলো সৃষ্টিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা সীমাহীন অল্প অল্প বৈশিষ্ট্যগুলোতে সুনির্দিষ্ট পরিবৃত্তি দেখি, যা একই প্রজাতির এককদের পৃথক করে এবং যাকে উভয় পিতামাতার যে কোন একটি অথবা আরও দূরবর্তী কোন পূর্বপুরুষের থেকে বংশানুসৃতির দ্বারা বিচার করা যাবে না। এমনকি সুচিহ্নিত পার্থক্যগুলো একই বংশধরের শাবকে এবং একই বীজাধার থেকে চারাগাছে হঠাৎ আবির্ভূত হয়। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে, একই দেশে লালিত-পালিত ও একই ধরনের খাদ্য খাওয়ানোর ফলে লক্ষ লক্ষ এককে দেহগঠনের বিচ্যুতি এত ব্যাপক ও সুস্পষ্ট যে এদের অঙ্গবিকৃতি হয়েছে বলে মনে করা হয়। স্বল্পতর পরিবৃত্তি থেকে অঙ্গবিকৃতিগুলোকে কোন স্বতন্ত্র রেখার দ্বারা পৃথক করা যায় না। অতি অল্প বা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত দেহগঠনের এইসব পরিবৃত্তি, যা একত্রে বসবাসকারী অনেক এককে আবির্ভূত হয়, প্রত্যেক একক জীবের ওপর জীবন-পরিবেশের অনির্দিষ্ট প্রভাব হিসেবে বিচার করা যেতে পারে। প্রায় একই পদ্ধতিতে দেহের গঠনবিন্যাস বা ধাত অনুসারে বিভিন্ন মানুষকে অনির্দিষ্টভাবে শৈত্য প্রভাবিত করে, যার ফলে ঠাণ্ডা লাগে সর্দি ও বাতরোগ হয় এবং বিভিন্ন অঙ্গের প্রদাহ ঘটে।